আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সমাগমে আনন্দ বৃদ্ধি। চারুকলা শিল্পে উপার্জনের শুভ সূচনা। উচ্চশিক্ষায় সুযোগ। কর্মক্ষেত্রে অযথা হয়রানি। ... বিশদ
মাধ্যমিক ২০২১ আসন্ন। হাতে কমবেশি একমাস সময়। তোমরা সবাই যে নিজেদের সাধ্যমতো প্রস্তুতি নিয়েছ, জানি। তবে, গতবছর স্কুলের ক্লাস হয়নি, টেস্ট পরীক্ষা হয়নি। ফলে, ধরে নেওয়া যায় নিজেদের প্রস্তুতি যাচাই করবার তেমন সুযোগ হয়নি তোমাদের। আসলে যে কোনও পরীক্ষার একটি দিক হচ্ছে নিজের প্রস্তুতি। যেমন ধরো পড়াশোনা, প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করা ইত্যাদি, আর অন্যদিক হল, বারবার অনেকের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়া। এতে নিজেদের প্রস্তুতিটা দেখে নেওয়া যায়।
এবারের মাধ্যমিক কিন্তু বাড়তি সময়ে তুলনামূলকভাবে কম প্রস্তুতির পরীক্ষা। কারণ, ফেব্রুয়ারির পরীক্ষা হবে জুন মাসে, আবার সিলেবাসও কমেছে। কিন্তু, সেটা হাল্কাভাবে নিলে চলবে না। সিলেবাস কমেছে মানে, প্রতিটি অধ্যায় থেকে আরও খুঁটিয়ে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে, মনে রেখো। প্রশ্নের ধাঁচ ও প্রশ্নের মান যেহেতু অপরিবর্তিত, ফলে, আরও বেশি করে জোর দিয়ে প্রতিটি অধ্যায়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রয়োগমূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে নজর বেশি দিতে হবে। প্রশ্নের ধরন ভাগ করে, কোনটি জ্ঞানমূলক, কোনটি বোধমূলক, এভাবে তো আমরা ভাবি না, কাজেই, প্রশ্নের ধাঁচ বুঝে নেওয়ার সময় যদি পাও, এইসময় সেটা কাজে লাগাতে পারো। সেটা খুব কঠিন কাজ নয়। তাতে লাভ হবে এই, যে, তোমরা প্রশ্ন দেখলেই বুঝতে পারবে ঠিক কী জানতে চাওয়া হয়েছে। উত্তরটাও সেভাবে লিখতে পারবে। লক্ষ করলে দেখবে, মাধ্যমিকের কয়েক বছরের প্রশ্নে, কীভাবে ‘কমন সেন্স’ নির্ভর প্রশ্নের সংখ্যা বেড়েছে। যেমন, ধরো যদি প্রশ্ন থাকে, তোমার স্থানীয় এলাকায় পরিবেশ দূষণ কি কি কারণে হয়, তা লেখ। বুঝতেই পারছ, তোমার এলাকার দূষণের কারণ বিশেষ করে তো আর বইতে লেখা থাকবে না, সেখানে সাধারণ কিছু কথা লেখা থাকবে। কাজেই এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর নির্ভর করে তোমার পরিবেশ সচেতনতা আর পর্যবেক্ষণের ওপর। সেটা ভাবনায় রেখে উত্তর দিতে হবে। ফলে এর অনুশীলন থাকা দরকার। এইবার পাঠ্যাংশের প্রসঙ্গে আসি।
প্রথম অধ্যায় থেকে, ট্রপিক ট্যাকটিক ও ন্যাস্টিক চলনের তুলনামূলক আলোচনা ও উদাহরণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিদ ও প্রাণী হরমোনের কাজ, ক্ষরণস্থান মনে রেখো। প্রতিবর্ত চাপ, মস্তিস্কের গঠনের প্রাথমিক ধারণা ও বিভিন্ন অংশের কাজ জেনে রেখো। মানুষের চোখের গঠন ও তার ছবি খুব দরকারি অংশ। মায়োপিয়া, হাইপারমেট্রোপিয়া, লেন্সের অ্যাকোমোডেশন কি, তা দেখবে। জীবনের প্রবহমানতা অধ্যায়টি খুব যত্ন নিয়ে দেখবে, কারণ এর বিভিন্ন অংশ থেকে নানারকম প্রশ্ন আসতে পারে। বিশেষ করে উদ্ভিদের অঙ্গজ জনন ও তার উদাহরণ, মাইক্রোপ্রোপাগেশন বা অণুবিস্তারণ, উদ্ভিদের দ্বিনিষেক, ছবিসহ দেখে রাখবে। বংশগতি অধ্যায়টি খুঁটিয়ে পড়তে হয়। মনোহাইব্রিড, ডাইহাইব্রিড ক্রসগুলি ভালো করে তৈরি করবে। বংশগত রোগ অধ্যায় থেকে আলাদা করে প্রতিটি রোগের কারণ ফলাফল ও প্রতিকার কি কি ধারণা রেখো। থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণ ও প্রকার এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন আগেও বলেছি, প্রস্তুতির এই পর্বে, তোমরা যা পড়েছ এতদিন, তার ওপর নিজেদের ভাবনার অংশটি জুড়ে নিতে পারো। এইসময় ‘থট রিডিং’ খুব কাজের। বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা, একসঙ্গে প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যাপারটা চালানো যেতে পারে। সেটা অনলাইনেও হতে পারে।
মনে রাখবে, গত একবছর অনলাইন পড়াশোনায় লেখার অভ্যাস আমাদের কমেছে। মোবাইলে টাইপ করা আর পরীক্ষার খাতায় উত্তর লেখা এক নয়। লেখার অভ্যাসে আমাদের ফিরতে হবে। হাতের লেখায় যত্ন নিতে হবে, লেখার সময় ধৈর্য হারালে চলবে না। ধীর স্থির ভাবটা পরীক্ষার ক্ষেত্রে খুব দরকার। কাজেই যত পারো এইসময়, পরীক্ষা দিয়ে যাও। ছবির প্রশ্নে, দেখে নাও এবারের জন্য কী কী ছবি অনুশীলন করে যাবে। সেই ধারণা পুরনো প্রশ্ন থেকে পাবে। সাধারণভাবে ছবি আঁকবে। পরীক্ষার জন্য আউটলাইন ডায়াগ্রাম দরকার। পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নের নম্বর অনুসারে পরপর করবে। উত্তর সঠিক হতে হবে, আর সেটা একটু চেষ্টা করলেই করা যায় এটা মনে রেখো। তোমাদের সবার পরীক্ষা ভালো হোক, এই শুভেচ্ছা রইল।