উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
বনগাঁর ছয়ঘরিয়া গ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি। মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে তাঁর জন্ম হলেও বনগাঁর সঙ্গে কীভাবে তাঁদের সম্পর্ক তৈরি হল তা নিয়ে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট মতভেদ। রাখালবাবুর বাবা মতিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রথিতযশা আইনজীবী। তাঁর মা কালীমতিদেবী ছিলেন কোচবিহার রাজার দেওয়ানের মেয়ে। অনেকের মতে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও মিরজাফরের সৈন্যদল বহরমপুর জুড়ে লুঠতরাজ শুরু করায় বাধ্য হয়ে কালীমতিদেবীকে নিয়ে পারিবারিক ভৃত্য ছয়ঘরিয়া এলাকার আত্মীয় বাড়িতে চলে আসেন। সেখানে নতুন করে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বাড়ি তৈরি হয়। আবার আর একদল বলেন, আগের যুগের নিয়ম অনুযায়ী কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার পর তাঁকে বাপের বাড়িতে আনা যেত না। ছয়ঘরিয়া গ্রামে কালীমতিদেবীর বাপের বাড়ি স্থানান্তর হয়ে এসেছিল। মেয়েকে বাড়িতে আনার জন্য নিজের বাড়ি ও জমির একাংশ মতিলালবাবুকে লিখে দিয়েছিলেন কালীমতিদেবীর বাবা। এই দুই তত্ত্বই মানতে নারাজ বনগাঁর অনেক মানুষই। তাঁদের দাবি, মতিলালবাবুরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির থেকে এই এলাকার জমিদারি নিয়েছিলেন। তাঁরা তিন ভাই পৃথক ঘর তৈরি করিয়েছিলেন ছয়ঘরিয়া এলাকায়।
ছয়ঘরিয়া গ্রামে বর্তমানে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির ভগ্নপ্রায় অংশে থাকেন মাঝ বয়সি অমিয়নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। দালান জুড়ে হরেক গাছের চারা তৈরি করে জীবনযুদ্ধ লড়ছেন অমিয়বাবু। কথায় কথায় বললেন, আমার পূর্বপুরুষ গৌরহরি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সম্পর্কে রাখালদাসবাবুর ছোটদাদু হতেন। আমাদের বাড়ির পিছনে রাখালবাবুদের বাড়ি ছিল বলে শুনেছি। ছোটবেলাতেও ওই বাড়ি আমি দেখিনি। তবে বাড়ির ভাঙা অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। এখনকার মতো আগের রাস্তায় পিচ বা মোরাম ছিল না। কাদা রাস্তায় ভালো করে যাতায়াতের জন্য গ্রামের মানুষ ওই ভাঙা বাড়ির ইট ও কাঠ বিছিয়ে দিত। কেউ কেউ ওইসব ইট বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পুকুর ঘাটেও দিয়েছে। এখন ওই বাড়ির কোনও স্মৃতিচিহ্ন নেই। ওই জায়গায় জঙ্গল হয়ে গিয়েছে। আগে আমাদের বাড়িতে বড় করে দুর্গাপুজো হতো। শুনেছি, রাখালদাসবাবু দুর্গাপুজোর সময় এই বাড়িতে আসতেন। বস্ত্রদান ও প্রসাদ বিতরণ করতেন নিজের হাতে। কিন্তু এখন ওঁর উত্তসূরিরা কে কোথায় থাকেন কিছুই জানি না। কারওর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। তবে, গত বছর আমাদের এই বাড়িকে হেরিটেজ ঘোষণা করেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। অনেক আগে থেকে এই উদ্যোগ নিলে রাখালদাসবাবুর স্মৃতিচিহ্ন এইভাবে হারিয়ে যেত না।
বড় সিংহদুয়ার সহ জমিদারবাড়ির নানান স্মৃতিচিহ্ন আজও বয়ে বেড়াচ্ছে ছয়ঘরিয়া। আসলে ইতিহাস কখনও মুছে যায় না, এ তো সুদূর মহেঞ্জোদারোতে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন রাখালদাস নিজেই।
রাখালদাসের পৈতৃক ভিটে।
ছবি: প্রতিবেদক