উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
সাল ১৯২৪, ১১ মার্চ ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশন বিদ্যালয়ে সেদিন বিশিষ্ট দেশব্রতী নাগরিকদের সমাবেশ। ‘দক্ষিণ কলিকাতা সেবাশ্রম’ তার যাত্রা শুরু করল। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সুভাষচন্দ্র বসু ও কোষাধ্যক্ষ নির্মলচন্দ্র চন্দ। প্রথম অফিসটি ছিল ৪১ নম্বর বেলতলা রোডে। কালীঘাট ও মনোহরপুকুর রোডের ভাড়া বাড়ি ছেড়ে বর্তমানের গৃহ ৯৩ ও ৯৭, শরৎ বসু রোডের তেরো কাঠা জমিতে গড়ে ওঠে। ১৯৩২ সালে কলকাতা পুরসভা জমিটি লিজ দেয়। সে দিনের দোতলা বাড়িটি সম্পূর্ণ করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ময়ূরভঞ্জের মহারানি ও পারিজাত ট্রাস্ট। সেবাশ্রমটি ১৯২৮ সালে নিবন্ধীকরণ হলেও প্রতিষ্ঠার কিছুদিনের মধ্যেই সুভাষচন্দ্রের গ্রেপ্তার ও দেশবন্ধুর আকস্মিক প্রয়াণে সেবাশ্রমের কাজকর্মে বিপর্যয় নেমে আসে। ওই বছর আবাসিক ছাত্র সংখ্যা ছিল ১২ ও মূলধন ছিল ২ হাজার ২৮২ টাকা। উল্লেখ্য সুভাষচন্দ্র কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক হিসাবে প্রাপ্য তিন হাজার টাকা বেতনের অর্ধেক গ্রহণ করতেন। সেই দেড় হাজার টাকাতেই রাজনৈতিক কাজ, দুঃস্থ দেশকর্মীদের সাহায্য, দক্ষিণ কলিকাতা সেবকসমিতি ও সেবাশ্রমের জন্য ব্যয় করে নিজের জন্য অতি সামান্য অর্থ রাখতেন।
সেবা ও আশ্রম এই দুই শব্দ যুগলের মধ্যে নেই কোনও অর্থ লাভের বাসনা, নেই অহংবোধ কিংবা আধিপত্য বিস্তারের ভাবনা। দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমের নিঃস্বার্থ ভক্তির অর্ঘ্য রূপেই সুভাষচন্দ্রের স্বপ্ন ছিল এই সেবাশ্রম।
ব্রিটিশ সরকার যখন তাঁকে গ্রেপ্তার করে, তখন জেলে যাওয়ার আগে সুভাষচন্দ্র মেজদা শরৎ বসুকে বলেন— ‘আমি জেলে যাচ্ছি ক্ষতি নেই, কিন্তু দয়া করে দেখবেন আমার সেবাশ্রমের কাজ যেন ব্যাহত না হয়।’ শুধু তাই নয়, অনাথ শিশুদের যাতে কোনওরকম সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে বিপদের মুখে পড়তে না হয়। সেবাকার্য ব্যাহত না হয় সে উদ্দেশে দেশবাসীকে সংবাদপত্র মারফত বার্তা দিয়ে গেলেন— ‘আমি আজ ১৮১৮ সনের আইন অনুসারে গ্রেপ্তার হইয়া চলিলাম। আমার বড়ই কষ্ট হইতেছে যে, আমি মাস মাস ছাত্রদিগকে যে সাহায্য দিতাম তাহা আর এখন দেওয়া সম্ভবপর হইবে না; আমি আশা করি তাহারা অন্য প্রকার বন্দোবস্ত করিতে সমর্থ হইবে। আমি কতকগুলি প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করিব বলিয়া প্রতিশ্রুত আছি, কিন্তু এ অবস্থায় আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা অসম্ভব। দক্ষিণ কলিকাতা সেবকসমিতি; দক্ষিণ কলিকাতা সেবাশ্রম প্রভৃতি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সহিত আমি সাক্ষাৎভাবে সংশ্লিষ্ট। আমার অনুপস্থিতিতে এই প্রতিষ্ঠান সমূহের বিশেষ ক্ষতির সম্ভাবনা। অন্ততঃ আমি ফিরিয়া না আসা পর্যন্ত ইহাদের সাহায্য করিবার জন্য সহৃদয় দেশবাসীদিগকে অনুরোধ জানাইতেছি।’ প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই ১৯২৪-এর অক্টোবরে তরুণ সুভাষচন্দ্র গ্রেপ্তার হন। তিনি লিখছেন— ‘জেলে আছি—তাতে দুঃখ নাই। মায়ের জন্য দুঃখভোগ করা সে তো গৌরবের কথা! Suffering-এর মধ্যে আনন্দ আছে, এ কথা বিশ্বাস করুন।
তা না হলে লোক পাগল হয়ে যেত, তা না হলে কষ্টের মধ্যে লোক হৃদয়ের আনন্দে ভরপুর হয়ে হাসে কী করে? যে বস্তুটা বাহির থেকে Suffering বলে বোধ হয়—তার ভিতর থেকে দেখলে আনন্দ বলেই বোধ হয়।’ এরপর সুভাষচন্দ্র বঙ্গজননীর চরণপ্রান্তে বৈষ্ণবের ভাষায় নিবেদন বার্তা লিখেছিলেন—
‘তোমারই লাগিয়া কলঙ্কের বোঝা
বহিতে আমার সুখ।’
রাজনৈতিক দলাদলির তির তাঁকে নানা সময়ে বিদ্ধ করেছে। এক সময় রাজনীতি থেকে তিনি সরে যাবেন ভেবেছিলেন। পরাধীন জাতির কথা চিন্তা করে তিনি ‘মন চল নিজ নিকেতনে’-র ভাবনা সাময়িক ভাবে ত্যাগ করেছিলেন। অন্তরে লালন করেছেন সেবা ধর্মের ব্রত। সেবাশ্রমের পাশাপাশি ভবানীপুরে সেবকসমিতির ভাবনাচিন্তা ও কার্যপ্রণালীর নানা কথা তাঁর চিঠিপত্রগুলির ভিতর খুঁজে পাওয়া যায়। চরিত্র গঠন ও মানসিক উন্নতির জন্য তাঁর বাস্তবমুখী নানা নিদান দিয়েছেন। আশ্রমের ছেলেরা যাতে হাজরা পার্কে খেলাধুলো করতে পারে তার ব্যবস্থা করা থেকে শুরু করে আশ্রমের পাঠাগার নিয়ে তাঁর সুচিন্তিত পরামর্শ, শিক্ষা, হাতের কাজ প্রভৃতি বিষয়ে নানা ভাবনা চিন্তা সুভাষচন্দ্রের খাঁটি দেশভক্তির প্রকৃত স্বরূপ চেনাতে সাহায্য করে। গত পঞ্চাশ বছর ধরে সেবাশ্রমের সঙ্গে যুক্ত বর্তমান সম্পাদক শুভেন্দু মৌলিক জানিয়েছেন যে, এই আশ্রমটিতে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী, জ্ঞানীগুণী, পণ্ডিত মানুষজন বিভিন্ন সময়ে এসেছেন। এসেছেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জৈল সিং, আজাদ হিন্দ বাহিনীর লক্ষ্মী সায়গল, আবিদ হাসান প্রমুখ। কিন্তু সবচেয়ে গর্বের বিষয় সেবাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা দেশবন্ধু ও নেতাজি। সরকারি অনুদান আর সাধারণ মানুষের ভালোবাসার দানে এই আশ্রম এগিয়ে চলেছে ৭০ জন আবাসিককে নিয়ে। শিশুমঙ্গল হাসপাতালের ঠিক পাশেই দক্ষিণ কলিকাতা সেবাশ্রমটি এখন ত্রিতল ও আগের চেয়ে অনেক বড়। কাছেই রাজ্য সরকার পোষিত সাউথ ক্যালকাটা ন্যাশনাল স্কুল। সেটিরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন দেশবন্ধু ও নেতাজি এবং সেখানে ড্রিল শিক্ষক ছিলেন শহিদ যতীন দাস। দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী মূল্যবোধের আবহে দক্ষিণ কলকাতা সেবাশ্রমের পথচলা শুরু হয়েছিল। এই সব কাজে হরিচরণ, অমৃতলাল, অনিলচন্দ্র প্রমুখের মতো সেবাব্রতী মানুষজনকে পাশে পেয়েছিলেন নেতাজি। ইউরোপের মাটিতে তাঁকে দেশান্তরিত হয়ে থাকতে হয়েছে বহু বছর, কারাগারেও কেটেছে অনেকগুলো দিন। রাজনৈতিক লড়াইয়ের মাঝেও সেবাশ্রমের কাজকর্ম তাঁকে আকর্ষণ করেছে। এমনকী, আজাদহিন্দ-এর রাষ্ট্রপ্রধান নেতাজি সিঙ্গাপুরের রামকৃষ্ণ মিশনের আবাসিক বালক-বালিকাদের গৃহ নির্মাণের জন্য ৫০ হাজার ডলার তুলে দিয়েছিলেন। যুদ্ধের কালোবাজারি আবহে যাতে খাদ্যবস্ত্র ঠিকমতো তারা পায় তার ব্যবস্থা করেছেন।
‘সেবাশ্রমের পিছনে কত ইতিহাস লুক্কায়িত আছে—কবে এই চিন্তা আমার মধ্যে প্রবেশ করে এবং কেন প্রবেশ করে—কি করিয়া আমি চিন্তারাজ্য ছাড়িয়া কর্মরাজ্যে প্রবেশ করি—যে কথা অন্যসময় বলিব। পত্রে লিখিবার চেষ্টা করিলে গ্রন্থ হইয়া যাইবে।’ এই ভাষাতেই নির্জন কারাকক্ষে বসে তরুণ সুভাষচন্দ্র আরও লেখেন— ‘আপনারা হয়তো জানেন না যে, দক্ষিণ কলিকাতা সেবাশ্রমের ত্রুটির জন্য আমি প্রধানত দায়ী। বাহিরে থাকিতে আমি ভালো রকম Organise করিতে পারি নাই! তারপর হঠাৎ আমার গ্রেপ্তার। যখন সেবাশ্রম কালীঘাটে ছিল তখন বাড়ি ভাড়া ও সহকারী সম্পাদকের বেতন আমি নিজে দিতাম। শুধু বালকদের ভরণপোষণের খরচ সাধারণের দেওয়া চাঁদা হইতে নির্বাহিত হইত। সেবাশ্রম সম্বন্ধে আমার Clear Conscience আছে। কারণ Public-এর দেওয়া টাকার একটি পয়সাও আমি অসদ্ব্যবহার করি নাই। আমার গ্রেপ্তারের পর আমার দেয় অংশ আমার দাদা (শরৎবাবু) দিয়া আসিতেছেন।’ দেশে সুভাষচন্দ্রের অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই সমিতি সেবাশ্রমের নানা সমস্যা সাময়িকভাবে দেখা দিয়েছিল। আশ্রমের আবাসিকদের মানসিক স্তর বা আই কিউ সম্পর্কে তিনি খোঁজখবর নিতেন। ‘আদর্শ লাইব্রেরি’ গঠনের পাশাপাশি শিক্ষা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন— ‘...অতএব প্রকৃতির নিয়ম অনুসরণ করে আমরা যদি সকল ইন্দ্রিয়ের দ্বারা জ্ঞান জন্মাতে পারি তবে ফল লাভ খুব শীঘ্র হবে। পাটিগণিত শেখাবার সময়ে শুধু মুখস্থ না করিয়া যদি কড়ি, marble অথবা ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আমরা যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ প্রভৃতির উদাহরণ দেখাতে পারি তবে সেই সব জিনিস শিশুরা খুব শীঘ্র শিখতে পারবে। আর একটা বড় কথা— শুধু মানসিক শিক্ষা না দিয়ে শিল্প শিক্ষার ব্যবস্থাও সঙ্গে সঙ্গে করা চাই।’ আধুনিক শিক্ষা বিজ্ঞান ও বর্তমান কালের ‘প্রোজেক্ট’ নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার কথা সেইসময় তিনি প্রয়োগের পথে হেঁটে ছিলেন নানা সামাজিক, রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও। তিনি চিঠিতে লিখছেন— ‘Manual training না হলে শিক্ষার গোড়ায় গলদ রয়ে যায়। নিজের হাতে কোনও জিনিস প্রস্তুত করলে যে রূপ আনন্দ পাওয়া যায়, সে রূপ আনন্দ পৃথিবীতে অল্পই পাওয়া যায়। সৃষ্টির মধ্যে গভীর আনন্দ নিবৃত আছে। সেই Joy of Creation শিশুরা অল্প বয়সেই উপভোগ করে। ...এর দ্বারা তাদের Originality বা ব্যক্তিত্বের বিকাশের সুবিধা হবে এবং লেখা-পড়াকে ভয় না করে তারা উপভোগ করতে শিখবে।’ বিস্তারিত ভাবে তিনি আরও লিখেছেন যে, বিলেতের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে কীভাবে ছাত্ররা বাগানের কাজ শেখে, ব্যায়াম চর্চা, ড্রিল, পড়াশোনার মাঝখানে খেলাধুলো, গান-বাজনা শেখে, রুট মার্চ, পথে সংঘবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়ায়, মাটির জিনিস বানাতে শেখে, গল্পচ্ছলে নানা বিষয়, নানা দেশের কথা জানতে পারে। তিনি এ প্রসঙ্গে চিঠি শেষ করেছেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার Fundamental Principal সর্বপ্রথমে শিক্ষককে বুঝতে হবে। তার পর তিনি নূতন প্রণালীতে শিক্ষা প্রবর্তন করতে পারবেন। শিক্ষকের অন্তরের ভালোবাসা ও সহানুভূতির দ্বারা শিক্ষককে ছাত্রের দিক থেকে সব জিনিস দেখতে হবে। ছাত্রের অবস্থায় যদি শিক্ষক নিজেকে কল্পনা করতে না পারে, তবে সে কি করে ছাত্রের difficulty এবং ভুলভ্রান্তি বুঝতে পারবে? সুতরাং Personality of teacher হচ্ছে সবচেয়ে বড়। শিক্ষার প্রধান উপাদান তিনটি— (১) শিক্ষকের ব্যক্তিত্ব (২) শিক্ষার প্রণালী (৩) শিক্ষার বিষয় ও পাঠ্য পুস্তক।’ শিক্ষাবিজ্ঞানের এমন সারকথা সহজভাবে বুঝিয়েছেন সেবাশ্রমের ভাবনাকে সামনে রেখে। উল্লেখ্য, বিলেতে আইসিএস ছাড়ার প্রাক্কালে দেশবন্ধুকে সুভাষচন্দ্র জানিয়েছিলেন যে, তিনি শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতার মাধ্যমে দেশসেবার জন্য প্রস্তুত। দেশবন্ধু তাঁর সুভাষের এ দু’টি ভাবনাকে রাজনৈতিক পরিসরে যুক্ত করেছিলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুট দেশব্রতীদের জাতীয় মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও ‘বাংলার কথা’ পত্রিকার সম্পাদক হয়েছিলেন তরুণ সুভাষচন্দ্র। পরবর্তীকালে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে যুক্ত হবার পরই বস্তি উন্নয়ন, বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি সহ দিন-রাত পরিশ্রম করে নানা কাজ করেছেন। উত্তর কলকাতার ভূ-গর্ভস্থ জল সরবরাহের কাজ তদারকিতে পায়ে গামবুট পরে নিজে নেমেছেন। এমনকী, বহু দীনদুঃখী মানুষকে নীরবে সাহায্য করেছেন তাঁর রাজনৈতিক গুরু দেশবন্ধুর মতোই। পরাধীন দেশে অশিক্ষা, দুঃখ-কষ্ট দেখে স্বামী বিবেকানন্দের মতোই দেশবন্ধুর প্রাণ কেঁদেছে বারংবার। তাঁদের মতোই নিজের জীবন দিয়ে, রিক্ত হয়ে সুভাষচন্দ্র শয়নে স্বপনে দেশমুক্তির প্রয়াসের পাশাপাশি একদল সমাজসেবী কর্মীদল গড়ে তুলেছিলেন, যাঁরা শুধুই নিঃস্বার্থ সেবাকেই জীবনের লক্ষ্য করে তুলেছিলেন। রাজনীতির আবর্তে সুভাষচন্দ্রের জীবন সংগ্রাম অনেকটা প্রকাশ্যে এলেও সেবাব্রতী তরুণ সুভাষের বহু অজানা দিক সামনে আসেনি নানা কারণে। যদিও তার অন্যতম কারণ ব্যক্তিগত ত্যাগ ও সেবা নিয়ে চূড়ান্ত প্রচার বিমুখীনতা।
পরাধীন দেশে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতিকে রাষ্ট্রপতি বলা হতো। দু’বারের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সুভাষচন্দ্র বসুর কর্মকাণ্ড যাঁরা খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন, সেইসব বন্ধু সহকর্মীরা অভিনন্দিত করেছিলেন রাষ্ট্রপতি শ্রীযুক্ত সুভাষচন্দ্র বসুকে। অভিনন্দন বার্তায় তাঁরা লিখলেন— ‘শ্রদ্ধাস্পদেষু বন্ধু, আজ আমরা তোমাকে আমাদের মধ্যে পাইয়া যুগপৎ গর্ব্ব ও আনন্দ অনুভব করিতেছি। এই দক্ষিণ কলিকাতায় অনাথ ভাণ্ডারের চাউল আদায় করিয়াই তুমি তোমার গৌরবময় কর্মজীবন আরম্ভ করিয়াছিলে এবং অনাথ আতুরের কথা তুমি কখনও বিস্মৃত হইতে পার নাই। তাই যখন ভাগ্য দোষে ভবানীপুরস্থিত অনাথ আশ্রমটি ভাঙ্গিয়া পড়িল, তখন কোলাহলময় রাজনীতি ক্ষেত্রে জড়িত থাকিলেও, তুমি ছুটিয়া আসিলে মাথায় তুলিয়া লইতে— অনাথের সেবা, শ্রুশ্রূষা ও শিক্ষার ভার...’ দীর্ঘ এই অভিনন্দন বার্তায় হৃদয়বান সুভাষ-চরিত্রের চিত্র ফুটে উঠেছে। নেতাজির কর্মময় জীবন সাধনাই তাঁকে চিরদিনের নেতাজি করে তুলেছে। নেতাজির জীবনই তাঁর বাণী।