আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
উনি যেসব ছবি করেছেন, তা দেখে সেই সময় মানুষ যেমন আনন্দ পেতেন, আজও তেমনই আনন্দ পায়। এমন নির্মল হাসির ছবি ক’জন পরিচালক করতে পারেন! বাঙালি জীবনকে দেখেছিলেন, চিনেছিলেন এবং সেই বাঙালিয়ানাই ছিল তাঁর ছবির বিষয়বস্ত। কী অসাধারণ সব সিকোয়েন্স! ‘ধন্যি মেয়ে’তে ফুটবল নিয়ে বাঙালির আবেগকে তুলে ধরলেন। সেখানে সেই বিয়ের আসরে শ্রাদ্ধের মন্ত্র পাঠ, গাছের উপর থেকে খেলার রিলে করা, পুরুতের রেফারি হওয়ার বিড়ম্বনা— এসব যতবার বাঙালি দেখেছে, সপরিবারে লুটোপুটি খেয়ে হেসেছে। ‘মৌচাক’-এও অমন অসাধারণ সিকোয়েন্স অজস্র আছে।
ঢুলুদার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল স্ক্রিপ্ট লেখায়। একটা এক পাতা, দু’ পাতার গল্পকে নিয়ে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি করে দিতেন। দাদা বনফুল
ছিলেন সাহিত্যিক। ওঁর মধ্যেও ছিল সেই সাহিত্যসত্তা। এমন এক একটা
সিকোয়েন্স তৈরি করেছেন, যার তুলনা নেই। ওঁর একটা ভালো ছবি ‘কিছুক্ষণ’ আমার দেখা হয়নি। সেজন্য খুব আফশোস হয়।
শ্যুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে খুব আড্ডা হতো। সেখানে তিনিই যেন মধ্যমণি। দারুণ কথা বলতেন। কত রকমের গল্প বলতেন। বেশিরভাগই খুব মজার। একদিন বললেন, ‘জানো রঞ্জিত, আমি একদিন রাতে বাসে করে বহরমপুরে যাচ্ছি। হঠাৎ মাঝপথে ডাকাত পড়ল। বাসে উঠে সবাইকে বলল, যার যা আছে দিয়ে দাও। সবাই ভয়ে ভয়ে সব দিয়ে দিল। ডাকাতরা বাস থেকে নেমে গেল কিন্তু বাস আটকে রাখল। একটু পরে একজন ডাকাত বাসে উঠে সবার সব জিনিস ফিরিয়ে দিচ্ছিল। একজন একটু সাহস করে জিজ্ঞাসা করল, ডাকাতদাদা, এসব ফেরত দিচ্ছ কেন? সেই শুনে সেই ডাকাতটা তাকে একটা চড় মেরে বলল, ডাকাতি করে কি আড়াই হাজার টাকা লোকসান দেব! একটা ডাকাতির জন্য ওস্তাদকে দশ হাজার টাকা দিতে হয়। তারপর যা থাকে তা আমাদের। গুণে দেখলাম তোদের থেকে মাত্র সাড়ে সাত হাজার টাকা উঠেছে। এটা নিয়ে গেলে ওস্তাদের কাছে আড়াই হাজার টাকা আমাদের কাছ থেকে দিতে হবে। ভাগ সব এখান থেকে।’ এমন সব গল্প শুনতাম আর শ্যুটিংয়ের মধ্যে আমাদের মনটা আনন্দে ভরে উঠত। আমি ওঁর গোটা সাতেক ছবিতে কাজ করেছি। তার মধ্যে মৌচাক ছাড়াও আছে ‘অজস্র ধন্যবাদ’, ‘প্রায়শ্চিত্ত’ ইত্যাদি। সেসব অভিজ্ঞতা আমার জীবনের সম্পদ।
ঢুলুদার জন্মশতবর্ষে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম। ওঁর চলে যাওয়ার পর চলচ্চিত্র জগতে এমন আর কেউ এলেন না, যিনি অমন ধারার ছবি তৈরি করতে পারেন। এই শূন্যতাই প্রমাণ করে উনি কত বড় পরিচালক ছিলেন।