গুরুজনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ও মানসিক উদ্বেগ। কাজকর্মে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। বয়স্কদের স্বাস্থ্য সমস্যা ... বিশদ
কুহকের কর্পোরেটে চাকরি। সকাল ১০টায় ল্যাপটপে ঘাড়টি গোঁজে। তোলে সেই রাত ৮টায়। ক্লায়েন্ট কল থাকলে বাড়ি ফিরেও ল্যাপটপ খুলতে হয়। মাসের শুরুতে বেতনের একটা বড় অংশ বাড়িতে তুলে দেওয়াতেই কুহকের কাজ শেষ। সংসারের বাকি দায়দায়িত্ব, কোনটা কীভাবে চলছে এসব নিয়ে ওকে মাথা ঘামাতে হয় না। বাড়ির কাজ করার অভ্যাসও খুব একটা নেই। ওর মা-বাবাই তা তৈরি হতে দেননি। ছেলের হাতের কাছে জলটুকুও জুগিয়ে এসেছেন মা বিনীতা। এর খেসারত দিতে হচ্ছে বিদেশে গিয়ে। বাধ্য হয়েই ঘরের টুকটাক কাজ শিখতে হচ্ছে কুহককে।
সায়ন্তনের আবার কলকাতাতেই সরকারি অফিস। ১০-৫টার চাকরি। সারাজীবন পড়াশোনা আর শখ নিয়ে ব্যস্ত থাকা সায়ন্তনেরও ঘরের কাজ শেখা হয়নি। মা-ঠাকুরমার প্রশ্রয়ও ছিল জীবন জুড়ে। সমস্যা শুরু হল স্ত্রী শর্মিলার একটি অপারেশনের পর। গৃহকাজে সহায়ক লোকজন থাকলেও টুকটাক ঘরের কাজ যে শিখে রাখা প্রয়োজন ছিল, তা এখন সায়ন্তন টের পাচ্ছে।
এই সমস্যা একা কুহক বা সায়ন্তনের নয়। বাঙালি ঘরের বহু সন্তান এই দোষে দুষ্ট। কন্যাসন্তানকে পড়াশোনার পাশাপাশি টুকটাক ঘরের কাজে হাত লাগাতে দিলেও বাড়ির ছেলেকে অনেকেই ঘরের কুটোটি নাড়তে দেন না। ভবিষ্যতে এর ফল হয় মারাত্মক। এই প্রসঙ্গে মনোবিদ ডাঃ অমিতাভ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘অনেক বাঙালি পরিবার এখনও পুরুষতান্ত্রিক। সেখানে ধরেই নেওয়া হয় যে বাড়ির যাবতীয় কাজকর্মের দায় একা মেয়েটির। ঘরের কাজকে খুব একটা মূল্যও দেওয়া হয় না। মনে করা হয়, পুরুষের কাজ কেবল বাইরে খেটে টাকা রোজগার করা। খুব বেশি হলে বাজার-দোকানটুকু করে এনে দেওয়া। কিন্তু এই দ্রুততার যুগে মেয়েরা মোটেই ছেলেদের থেকে পিছিয়ে নেই। বরং বাইরের কাজে ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। তাই ঘরের কাজটিও তারা ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। এতে সংসারে যেমন সাশ্রয় হচ্ছে তেমনই ছোটবেলা থেকেই সন্তানের পরনির্ভরশীলতা দূর হচ্ছে। তাছাড়া কাজের যে কোনও লিঙ্গ হয় না, এই আধুনিক ভাবনা সন্তানের মনে ছোট থেকে রোপন করলে সে ভবিষ্যতে স্বনির্ভর হবে, দায়িত্ববোধও বাড়বে।’ তাঁর কথায়, যে সন্তান এতটাই ছোট যে, একা হাতে খেতে পর্যন্ত পারে না, তারাও টুকটাক কাজে বাবা-মাকে সাহায্য করতে পারে।