হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
বন্দনা বাহাদুরের জীবনটা শুরু হয়েছিল নেহাতই সাধারণভাবে। গ্রামের মেয়েটির গ্রামেই বিয়ে হল। তাও বেশ অল্প বয়সে। অচিরেই তিন সন্তানের জননী। সাধারণ এক গৃহবধূ। তবু তিনি স্বপ্ন দেখতেন বড় কিছু করার। সেই স্বপ্নে ভর দিয়েই শুরু করলেন পড়াশোনা। মধ্যপ্রদেশের খানখাণ্ডবি গ্রামের বন্দনার বরাবরই পড়াশোনার প্রতি অগাধ আগ্রহ। আর তাই মা হওয়ার পরেও বাচ্চাদের দেখভাল করার ফাঁকে ফাঁকে নাইট স্কুল, গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশোনা ইত্যাদি সমানতালে চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। পড়াশোনা শিখতে শিখতেই তার মনে হয়েছিল অর্জিত বিদ্যা কাজে লাগানোর কথা। স্রেফ ইচ্ছে আর আত্মবিশ্বাসের জোরে গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান পদে নাম লেখালেন। গ্রামের ‘সমাজ’ তো বন্দনার এমন পদক্ষেপে রীতিমতো অবাক। কিন্তু গ্রামের মহিলারা তাঁর পাশে দাঁড়ালেন। ভোট দিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের মুখ্য পদে বসালেন বন্দনা বাহাদুরকে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। প্রথমেই গ্রামের বাচ্চাদের ইংরেজি শেখানোর জন্য একটা স্কুল চালু করলেন তিনি। মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন শহর থেকে শিক্ষকের আবেদন করে তাঁদের দিয়ে শুরু করলেন ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল। শিক্ষক সকলেই পার্টটাইম। কেউ হয়তো এক মাস থাকে, কেউ বা এক সপ্তাহ। প্রথম দিকে এইভাবেই চলছিল। তারপর বন্দনা ভাবলেন একটা স্থায়ী উপায় দরকার। এমন কিছু করতে হবে যাতে শহুরে শিক্ষকেরা সহজেই বাড়ি থেকে যাতায়াত করতে পারেন। তার জন্য চাই রাস্তাঘাটের উন্নতি। সেই আবেদন নিয়ে সরকারের কাছে চিঠি লিখলেন। সাড়াও পেলেন যথাসময়ে। তৈরি হল পাকা রাস্তা। তারপর ভালো স্কুল। এখন বন্দনা নিজেই গ্রামের মহিলাদের উন্নয়নের কাজে লেগে পড়েছেন। সংসারের বাইরেও যে একটা জগৎ আছে, তা তাঁদের দেখাতে চান তিনি। তাই রোজ রাতে সভা করেন, সরকারি প্রকল্প বিষয়ে তাঁদের অবগত করেন। বন্দনা বলেন, ‘শুধুই নিজের ইচ্ছের জোরে অনেক দূর এগিয়েছি। তবে এখনও বিস্তর পথ বাকি। গ্রামের মেয়েরা যেদিন উন্নততর জীবনযাপন করতে শিখবে, সেদিন আমার কাজ সফল হয়েছে বলে মনে করব।’
বাচ্চাদের খুশির খোঁজে মঞ্জরী
বয়স বাড়লেও তাঁর শৈশব কাটেনি এখনও। তাই তো বাচ্চাদের মনের মতো গল্প লেখেন, তাদেরই জন্য ছবি বানান। আর সেই কাজেই নিজের জীবনের আনন্দ খুঁজে পানে মঞ্জরী প্রভু। কেরিয়ারের শুরুতে তিনি টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সময় বাচ্চাদের জন্য কিছু বিনোদন, কিছু জ্ঞানভিত্তিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন তিনি। অনেকটা ইনফোটেনমেন্ট প্রোগ্রাম। খেলতে খেলতে পড়াশোনা শেখানোর মতো অনুষ্ঠান। বাচ্চাদের কাছে এই ধরনের অনুষ্ঠান বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু সেই কাজে তাঁর মন টেকেনি বেশি দিন। মাত্র কুড়িটি অনুষ্ঠান পরিচালনার পরেই সেই কাজে ইতি টেনেছিলেন মঞ্জরী। তার বদলে তিনি বেছে নেন লেখালিখির কাজ। পুরোপুরি শিশু সাহিত্যিক হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘ছোট থেকেই এনিড ব্লাইটনের গল্প, উপন্যাস পড়ে বড় হয়েছি। তখন থেকেই লেখালিখির জগতের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করি। মোটামুটি সাত বছর বয়সেই স্থির করেছিলাম বড় হয়ে লেখক হব। শিশুসাহিত্য আমার বরাবরের প্রিয় বিষয়। তাই সুযোগ যখন এল তখন শিশুদের বই লেখার দিকেই এগিয়ে গেলাম।’ তাঁর লেখা দ্য কসমিক ক্ল্যু, দ্য অ্যাস্ট্রাল অ্যালিবাই, দ্য অ্যাডভেঞ্চার্স অব মিঠু, দ্য জার্নি অব আ ম্যাজিক্যাল কিটেন ইত্যাদি বইগুলো ইতিমধ্যেই শিশুদের প্রিয় হয়ে উঠেছে।
মঞ্জরী বলেন, শিশুসাহিত্য লিখতে গিয়ে তিনি খুব সচেতন থাকেন যাতে গল্পের প্লট একই না হয়ে যায়। ফলে প্লট নিয়ে সারাক্ষণ ভাবেন তিনি। তার জন্য নানা ধরনের বই পড়েন, তাছাড়াও চোখ কান খোলা রাখেন। বাচ্চাদের সঙ্গে মেশেন। তাদের জগৎটাকে কাছ থেকে দেখার, বোঝার চেষ্টা করেন। এইভাবেই নিজের সাহিত্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন মঞ্জরী। বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটানো আর তাদের চোখে খুশির ঝিলিক দেখাই তাঁর আসল উদ্দেশ্য।
নামগের সাফল্যে নতুন দিশা
ভুটানের কন্যা নামগে পেলডন। ছোট থেকে পাহাড়ি শান্ত দেশে বড় হতে হতে কখনও ভাবেননি তিনিই একদিন ইতিহাস তৈরি করবেন। অথচ তেমনটাই হল। ভুটানের একটি ছোট্ট গ্রামে তিনি হয়ে উঠলেন জিইউপি বা ব্লক লিডার। ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রের পথে পদার্পণ করার সময় ভুটানের গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন জিইউপি বা ব্লক লিডার নির্বাচন করা হয়। তাঁদের নেতৃত্বেই ভুটানে গণতন্ত্রের বীজ বপন হয়। সেই জিইউপি-র অন্যতম নামগে পেলডন। ভুটানে গণতন্ত্রই নতুন, সেখানে মহিলাদের সংখ্যাও খুবই কম। ফলে নামগের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায় আরও বেশি সংখ্যক মহিলাকে রাজনীতিতে আকৃষ্ট করে তোলা। কিন্তু শুধুমাত্র সেই কাজেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি তিনি। গ্রামকে উন্নত করার জন্য গ্রামে ভালো হাসপাতাল তৈরি করেছেন, স্কুল গড়েছেন, শিক্ষার আলো ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। নিজে ছিলেন শিক্ষিকা। তাই ছেলেমেয়েদের সঙ্গে, তাদের
বাবা মায়েদের সঙ্গে সহজেই সম্পর্ক গড়ে তলুতে পেরেছিলেন। তাদের বোঝানোও তাঁর পক্ষে সহজ হয়। গতানুগতিক রীতিগুলো ভেঙে অন্য ধরনের সমাজ গড়ে তোলা যে তাঁর পক্ষে সহজ ছিল, তা নয়। কিন্তু অক্লান্ত পরিশ্রম এবং বুদ্ধির দ্বারা তিনি সেই কাজে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। এই পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নামগে তাঁর পরিবারের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন বলেই জানিয়েছেন তিনি। তবে এই কাজে সাফল্য আসায় তিনি আশাবাদী পরবর্তী প্রজন্মের মেয়েরা আরও বেশিমাত্রায় রাজনীতিতে আসবে। নামগে বলেন, ‘মেয়েরা সমাজের শীর্ষস্তরে থাকলে সমাজ অনেক উন্নত হয়। আমরা যতটা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি তা আর কেউ করে না। তবু মহিলাদের উন্নতির পথে এত বাধা। আমরা, মেয়েরাই অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াই। এই মানসিকতা কাটিয়ে বরং মেয়েদের উচিত একে অপরের পাশে দাঁড়ানো। তাহলেই সমাজ আরও উন্নত হবে।’