ভোরের প্রথম আলোয় শিউলি ফুলের মন মাতানো মিষ্টি গন্ধই শুধু নয়, ভোরের বাতাসেও অকারণ পুলকের স্পন্দন। পাড়ায় পাড়ায় বাঁশ আর কাপড়ের স্তূপ। যেন উৎসবের আর উৎসাহের জোয়ার। মায়ের আগমনী বার্তা বয়ে নিয়ে আসে এইসব খুঁটিনাটির অনুষঙ্গগুলো।
দুর্গাপুজোর মহাসপ্তমী। এই দিন প্রথমে গৃহকর্তা পুরোহিতকে কাপড় ও নানা দ্রব্য দিয়ে বরণ করে নেবেন। তারপর নবপত্রিকা স্নান। গঙ্গা বা কোনও জলাশয়ে নবপত্রিকাকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে যথাযথ মন্ত্র উচ্চারণ করে দুর্গামণ্ডপে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
মহাস্নানের পর আরম্ভ হয় দেবীর পুজো। আরাধনার প্রথম ধাপ সুস্থ দেহ ও স্থির মন। সর্বাগ্রে এটি করা প্রয়োজন, না করলে দেবতার অধিষ্ঠান হতে পারে না। শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলতেন, ‘প্রতিমায় আবির্ভাব হতে গেলে তিনটি জিনিসের দরকার— প্রথম পূজারীর ভক্তি, দ্বিতীয় প্রতিমার সৌন্দর্য, তৃতীয় গৃহস্বামীর ভক্তি।’
মা আনন্দময়ীর আগমন। বর্ষে বর্ষে আসেন তিনি। আমাদের ঘরে-বাইরে তাঁর ছড়ানো সংসারে। শারদীয়া দেবীর আবির্ভাবের মধ্য দিয়েই জাতির আত্মশক্তির উদ্বোধন। ব্রত-পার্বণ উৎসবময় ভাবালোকে মাতৃমূর্তির এই আবির্ভাব।
শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্তশত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত সাফল্য।প্রতিকার: ... বিশদ
সুস্মিতা রুদ্রপাল মিত্র: এক দশক মানে প্রায় বারো বছর হয়ে গেল সুস্মিতা রুদ্রপাল মিত্র প্রতিমা তৈরি করা শুরু করেছেন। সুস্মিতার বেড়ে ওঠা কুমোরটুলির এক মৃৎশিল্পীর পরিবারে। বাড়িতে বাবা-দাদাদের কাজ দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন সুস্মিতা। কিন্তু কোনওদিন ভাবেননি যে তিনি এই শিল্পকর্মে যুক্ত হবেন। সুস্মিতা তখন পড়াশোনা করছেন, হঠাৎই তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর কিছুদিন পরেই ছিল দুর্গাপুজো, আর তখনও দুর্গা ঠাকুরের চোখ আঁকা সম্পূর্ণ হয়নি। হঠাৎ করেই ডাক পড়ল বাড়ির পড়ুয়া মেয়েটির। প্রথমে একটু ভয় পেলেও মা-ঠাকুমা সহ বাড়ির সকলের উৎসাহে এঁকে ফেলেন দুর্গা ঠাকুরের চোখ। আর নিজের অজান্তেই সুস্মিতা পারিবারিক শিল্পকলাতে নিজেকে যুক্ত করে ফেলেন। মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করলেও ভালোলাগার স্বাদ এড়াতে পারেননি সুস্মিতা। এরপর পুরোপুরি প্রতিমা গড়ার কাজে নিজেকে সঁপে দেন তিনি। কুমোরটুলির মহিলা মৃৎশিল্পী হিসেবে তাঁর জীবন শুরু হয়। একবার একটি প্রতিমার চোখ আঁকতে গিয়ে দারুণ এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন সুস্মিতা। সেবার এক সতেরো ফুট লম্বা প্রতিমার পেটে মাচা বেঁধে, তার উপরে দাঁড়িয়ে তুলির টানে মায়ের চোখ আঁকছিলেন সুস্মিতা। বড় ঠাকুর হওয়ার জন্য বড় রাস্তার পাশেই প্রতিমাটি তৈরি করা হচ্ছিল। রাস্তা দিয়ে বহু গাড়িও যাচ্ছিল। যাই হোক, সেদিকে মন ছিল না সুস্মিতার। হঠাৎ করে কী মনে হতে চোখ আঁকা থামিয়ে সুস্মিতা পিছন ঘুরে তাকান। আর তাকিয়েই অবাক হয়ে যান। তিনি দেখেন যে একশোর উপরে লোক সেখানে দাঁড়িয়ে গেছে। তারা সকলেই অবাক হয়ে সুস্মিতার চোখ আঁকা দেখছে। এই ঘটনাটা সুস্মিতা কোনওদিনই ভুলতে পারবেন না। বর্তমানে বিয়ে হয়ে গিয়েছে সুস্মিতার। শ্বশুরবাড়ির সকলে চাকরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও সুস্মিতার এই প্রতিমা তৈরি করায় উৎসাহ দেন। সুস্মিতার বর বিয়ের আগে থেকেই এই কাজের জন্য সুস্মিতাকে উৎসাহ দিতেন, এখনও দেন। পুজোর আগে সুস্মিতা বাপের বাড়ি চলে আসেন এবং দাদার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে প্রতিমা গড়া শুরু করেন। তবে এই বছর সুস্মিতা নতুন মা হয়েছেন। তাঁর কয়েক মাসের ছেলেকে নিয়ে এ বছর প্রতিমা তৈরি করতে পারেননি তিনি। তবে দাদার গড়া সব প্রতিমার চোখ তিনিই আঁকবেন। সুস্মিতা চান তাঁর ছোট ছেলেটি ভবিষ্যতে এই পেশায় যেন আসে। এ বিষয়ে তাঁর স্বামীরও কোনও আপত্তি নেই। মৃৎশিল্পের মতো পুরুষ কেন্দ্রিক জীবিকাগুলোতে সুস্মিতাদের মতো মেয়েরা অনায়াসে এখন জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
কাকলি পালবিশ্বাস
