শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্তশত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত সাফল্য।প্রতিকার: ... বিশদ
শংকরহাটি গ্রামে থাকেন কালো বেগম। অল্প বয়স থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রবল ইচ্ছে তাঁর। তাই ছোট থেকে নানারকম হাতের কাজ শিখেছেন। জরি সেলাইয়ের ব্যবসাও শুরু করেছিলেন। কিন্তু সে ব্যবসা তেমন চলেনি। ব্যবসা চালানোর জন্য পুঁজি চাই যে। তারই বড্ড অভাব হয়ে পড়েছিল কালোর। এরপর ঋণ নিয়ে নতুন ব্যবসা শুরু করলেন কালো বেগম। ভ্রমণের ব্যবসা। প্রথমেই বড় অঙ্কের ঋণ মঞ্জুর হয়নি। তাই ছোট করেই শুরু হল ব্যবসা। প্রথমবারের ঋণ শোধ হলে আবারও ঋণের আবেদন করলেন তিনি। এবার আর একটু বড় অঙ্কের ঋণ। তার ফলে ব্যবসা আরও বাড়ল। রোজগারও বেশি হল। কালো বেগম এখন ভ্রমণের ব্যবসায় বেশ নাম করে ফেলেছেন।
মামনি দাস থাকেন ইসলামপুরে। বড়সড় ফুলের বাগান আছে তাঁর। প্রথমে বাড়ির উঠনে ছোট্ট একটা বাগান করেছিলেন। তারপর ভাবলেন এই বাগান থেকেই যদি রোজগার হয় তো মন্দ কি? ভাবনাটা ভালোই ছিল কিন্তু বাগান যে বাড়াবেন জমি কই? তখনই ভাবলেন ঋণ নেবেন। বিভিন্ন ঋণ প্রকল্প ঘেঁটে শেষ পর্যন্ত এক জায়গায় অনুমোদন হল তাঁর ঋণ। শুরু হল জমি কিনে ফুলের ব্যবসা। ব্যবসা তাঁর এতই বেড়ে গিয়েছে যে তা সামলানোর জন্য তিনি আরও দশটি মেয়েকে নিয়োগ করেছেন। আর তাদের রোজগার কত জানেন? মাসিক প্রায় সাড়ে নয় থেকে দশ হাজার টাকা।
বন্দনা পালের বাড়ি হাওড়ার পাতিহাল গ্রামে। খুব সূক্ষ্ম হাতের কাজ তাঁর। আঁকা ছিল তাঁর ছোটবেলার নেশা। শুধু আঁকাই নয়, মাটি দিয়ে মূর্তি গড়া, তাতে রং করা, পটচিত্র আঁকা সবেতেই বন্দনা পারদর্শী। কিন্তু হাতের কাজ দিয়ে কি পেট ভরে? আজ্ঞে ভরে। যদি সেই হাতের কাজের সাহায্যে সঠিক ব্যবসায় নামা যায় তাহলে অবশ্যই ভরে। আর সেই সঠিক ব্যবসার সন্ধান পেয়েছেন বন্দনা। তাই তিনি পুজো ও অন্যান্য সময় মূর্তি গড়ে, পট এঁকে বা ছবি বেচে আয় করেন।
এই যে এতজনের গল্প শোনালাম এঁদের সকলের মধ্যে একটা সাধারণ যোগসূত্র আছে। সেই যোগসূত্রটার নাম ভিলেজ ফিনানশিয়াল সার্ভিস। গ্রামের অল্প রোজগেরে মহিলাদের ঋণ দিয়ে স্বনির্ভর করে এই সংস্থা। সংস্থাটি শুরু করেছিলেন ডঃ কুলদীপ মাইতি ২০০৬ সালে। মাইক্রো ফিনান্স সংস্থা হিসেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন প্রাপ্ত এই সংস্থা। ঋণ দিয়ে রোজগার প্রকল্পটা তিনি শুরু করেছিলেন মহিলাদের উন্নয়নের উদ্দেশ্য নিয়ে। সংস্থাটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটি অবশ্য এখন তাঁর পুত্র অজিতই করছেন। এই মুহূর্তে মোট চার লক্ষ নয় হাজার মহিলা এই সংস্থায় ঋণ নিয়ে নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলেছেন। আপাতত এই সংস্থার মোট ২৪০টি শাখা। শুধুই ঋণ দিয়েই কাজ শেষ করে না এই সংস্থা। তার সঙ্গে মহিলাদের রোজগারের বিভিন্ন পথও তাদের সামনে তুলে ধরে। প্রয়োজনে ট্রেনিং দিয়ে মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলা হয় সংস্থারই তরফে। তারপর ঋণ দিয়ে তাদের রোজগেরে করার উপায়ও করে দেয় ভিলেজ ফিনানসিয়াল সার্ভিস।