পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা’— লিখেছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশ। তিনি একা নন। চুলের সৌন্দর্য নিয়ে বহু কবি, সাহিত্যিক অনেক শব্দ খরচ করেছেন। চুলের যত্নে আধুনিকারাও উৎসাহী। নিত্যনতুন ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে দেন অনেকে। কিন্তু তার কতটা সঠিক, কতটাই বা আপনার জন্য প্রয়োজন তা জানেন কি?
‘কেরাস্মুদ’— রূপচর্চা করতে যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁরা হয়তো আধুনিক এই নামটির সঙ্গে পরিচিত। খুবই ট্রেন্ডিং এই ট্রিটমেন্ট। এই ধরনের ‘হাঁসজারু’ নাম দেখে অবাক হবেন না। বরং জেনে নেওয়া যাক বিষয়টি ঠিক কী? হেয়ার এক্সপার্ট অভিরূপ নন্দী বললেন, ‘কেরাটিন আর স্মুদনিং দুটো ট্রিটমেন্ট একসঙ্গে করতে চাইলে সেটাকে কেরাস্মুদ বলা হয়। ধরুন পাঁচ মাস আগে স্মুদনিং এবং চুলে রং করার পর চুল অনেকটা রুক্ষ হয়ে গিয়েছে। এই সমস্যা নিয়ে কেউ স্যাঁলোতে এলে আমরা স্মুদনিং করতে পারি। এতে চুল স্ট্রেট হবে।
কিন্তু রাফ হয়ে যাবে। চুল আরও বেশি স্পর্শকাতর হয়ে যাবে। তখন কেরাটিন করানোর বিষয়টা ভাবা যেতে পারে।’
একটু ভিন্ন মত পোষণ করলেন হেয়ার এক্সপার্ট জলি চন্দা। তাঁর কথায়, ‘ট্রেন্ডে আছে বলেই সেটা করে ফেলতে হবে, আমি সেটা মনে করি না। আপনার জন্য কোনটা প্রয়োজন সেটা একজন হেয়ার এক্সপার্টের থেকে জেনে নিন। কেরাটিন এবং স্মুদনিং দুটো আলাদা ট্রিটমেন্ট। চুলের আলাদা আলাদা সমস্যায় এগুলো করা হয়। কারও যদি দু’ধরনের সমস্যাই থাকে, যাতে কেরাটিন এবং স্মুদনিং করালে সমাধান হবে, তবে আলাদা আলাদাভাবে করাতে হবে। দুটো ট্রিটমেন্ট একসঙ্গে না করানোই ভালো। অবশ্যই গ্যাপ দিয়ে করাতে হবে।’ বিরতি নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করলেন অভিরূপও। তাঁর কথায়, ‘একদিনে দুটো ট্রিটমেন্ট করানো যাবে না। কারণ এই ট্রিটমেন্টে স্ট্রাকচারাল চেঞ্জ করা হয়। প্রথমে স্মুদনিং করাতে হবে। তার ৪৮ ঘণ্টা পরে প্রথম ওয়াশ করা হয়। দু’দিন পর যখন ওয়াশ করাতে যাবেন, সেদিন বা আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করে কেরাটিন করানো যেতে পারে। কেরাটিন করার ২৪ ঘণ্টা পরে স্যালোঁতে গেলে আয়রনিং ওয়াশ এবং ড্রাই করে দেওয়া হয়। যে কোনও ধরনের চুলের ক্ষেত্রেই কেরাটিন সঙ্গে সঙ্গে করিয়ে নিতে হবে, এমন নয়। চুলের স্বাস্থ্যের কথা ভাবলে কয়েকটা দিন বিরতি নেওয়ারই পরামর্শ দেব।’
নতুন এই ট্রেন্ডের হাল হকিকত বুঝিয়ে দিলেন অভিরূপ। সকলেই উজ্জ্বল চুল পছন্দ করেন। যাঁদের কোঁকড়া চুল, স্বাভাবিকভাবেই তা সাধারণত শুষ্ক হয়। এক্ষেত্রে স্মুদনিং করানো যায়। তারপর বিরতি নিয়ে কেরাটিন করালে চুল আরও বেশি চকচক করবে। মনে রাখতে হবে কেরাটিন একটা প্রোটিন ট্রিটমেন্ট। তিনি বললেন, ‘অত্যন্ত খারাপ চুল থেকে মাঝামাঝি খারাপ চুলের যত্নে প্রথমে স্মুদনিং এবং পরে কেরাটিন করাতে পারেন। এতে চুলের শুষ্কতা ভ্যানিশ হয়ে যাবে না। কিন্তু সেটার চিকিৎসা হবে। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে ফলাফল এক হতে পারে না। কেউ ৬০ শতাংশ, কেউ বা ৮০ শতাংশ ফল পাবেন।’
বিশেষজ্ঞ বুঝিয়ে দিলেন, এই ধরনের ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয় কর্টেক্সে। যা চুলের দ্বিতীয় স্তর। প্রথম স্তর হল হেয়ার কিউটিক্যাল। যা মাছের আঁশের মতো। খুলে যায়, বন্ধ হয়ে যায়। একে ডোর টু হেয়ার বা চুলের প্রবেশপথ বলতে পারেন। এটা না খুললে ভিতরের কর্টেক্সে ঢোকা যাবে না। আর কোর্টেক্সে ঢোকা খুবই জরুরি কারণ সেই স্তরেই রং হবে, গঠনগত পরিবর্তন হবে। তৃতীয় স্তর মেডিউলা। এটা যত মোটা হবে, চুলও ততই মোটা হবে। এর সঙ্গে কসমেটিকাল কোনও সম্বন্ধ নেই। আমাদের কাজ মূলত কর্টেক্সে। এটা খারাপ হয়ে গেলে চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। কিউটিক্যাল যত ভালো থাকে, চুলের স্বাস্থ্য তত ভালো হবে। অর্থাৎ দরজা বন্ধ না হলে দ্বিতীয় স্তর খোলা থাকবে। তাতে দূষণ ঢুকবে’, বললেন অভিরূপ।
কেরাটিন আদতে প্রোটিন। প্রতিদিনের ব্যবহারে তা ধীরে ধীরে ধুয়ে যেতে থাকে। ফলে এর দীর্ঘস্থায়ী ফল পেতে আপনাকে সালফেট এবং প্যারাবেন ফ্রি শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। তবে কেরাটিন এবং স্মুদনিং দুটোরই কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। সেটা ঠিক কেমন? অভিরূপ জানালেন, যখন চুলে রং করা রয়েছে, অর্থাৎ প্রসেস করা রয়েছে কিছু দিয়ে, তখন স্মুদনিং করা যাবে না। এতে চুল ভেঙে যাবে। কিন্তু কেরাটিন সাধারণত সব ধরনের চুলে করা যায়। তবে এই ট্রিটমেন্টে চুল স্ট্রেট করা যায় না। কেরাটিন চুলের শুষ্কতা, জট পড়ে যাওয়া, চুল ভেঙে যাওয়ার চিকিৎসা করে। এই দুটোর মিলমিশে ইদানীং ‘কেরাস্মুদ’ নামে একটি হেয়ার থেরাপি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
স্মুদনিংয়ের প্রাথমিক ধাপে শ্যাম্পু করার পর স্মুদনিং ক্রিম লাগানো হয়। চুলের ভিন্নতা অনুযায়ী প্রসেসিংয়ের সময়টা কত হবে, তা ঠিক করেন একজন পেশাদার। এরপর একটা টেকনিক্যাল চেক করা হয় প্রসেসিং ঠিক হয়েছে কি না, দেখার জন্য। প্রসেস হওয়ার আগে ধুয়ে ফেললে কী হবে, আর বেশিক্ষণ প্রসেস করলে কী হবে এটা পেশাদারকে জানতে হবে। এরপর ওয়াশ করে ব্লো ড্রাই করিয়ে নিয়ে আয়রনিং করা হয়। এরপর নিউট্রিলাইজার লাগানো হয়।
অন্যদিকে কেরাটিনে পিএইচ শ্যাম্পু লাগানো হয়। এতে কিউটিক্যাল খুলে যায়। এরপর কর্টেক্সে কেরাটিন দেওয়া হয়। এটা জেলির মতো একটা লিক্যুইড। কেরাটিন যেন কোনও ভাবে স্ক্যাল্পে না লেগে যায়। সেটা দেখতে হবে। এরপর ক্লিন র্যাপ সেলোফেনের মতো দিয়ে পুরো মাথায় আধ ঘণ্টা ঢেকে রাখতে হবে। আধঘণ্টা পর সেটা খুলে তার উপর ড্রায়ার এবং আয়রনিংয়ের মাধ্যমে হিট দেওয়া হয়।