পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
প্রথমবার জামাইষষ্ঠীর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
গৌরব: আমাদের বাড়িতে জামাইষষ্ঠীর রীতিটা সেভাবে পালন করা হয়নি কখনও। তাই ছোটবেলা থেকে আমি জামাইষষ্ঠী দেখিনি। তার কারণ আমার মায়ের বাপের বাড়ি দিল্লিতে। ওখানে বছরে আমরা সবাই এমনিই একবার করে যেতাম। আর বাবার বাড়ির দিকেও জামাইষষ্ঠীর রীতি পালন করা হতো না। বিয়ে হওয়ার পরে শ্বশুরবাড়িতে যখন আসি, আমার শাশুড়ি মা আমাকে প্রথম জামাইষষ্ঠী খাওয়ান। একটা জিনিস মনে হয়েছে, রীতি-রেওয়াজের থেকেও সেখানে বেশি বড় ব্যাপার ছিল আদর আপ্যায়ন। উনি যেটা করতে খুবই ভালোবাসতেন। আমাকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসতেন। জামাইষষ্ঠী ওঁর পছন্দের অনুষ্ঠান ছিল। প্রথমবার জামাইষষ্ঠীর খাওয়া খেয়ে আমার যা অবস্থা হয়েছিল, সে ভোলার নয়। এত এলাহি আয়োজন, এত খাওয়াদাওয়া ভাবা যায় না। আমি তো সেদিন খেয়ে তারপর আর কিছু খেতেই পারিনি। আবার পরের দিন খাওয়ার কথা ভাবতে হয়েছিল!
কী কী সেই ছিল সেই ভোজে?
গৌরব: তোমার মনে আছে ঋদ্ধিমা কী কী খেয়েছিলাম!
ঋদ্ধিমা: (একটু ভেবে) চিংড়ি মাছের মালাইকারি, ফিশ ফ্রাই, মাটন। এগুলো তো ছিলই। প্রতি বছরই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হয় এসব। মা নেই এখন, কিন্তু বাবা সেই ঐতিহ্য এখনও পালন করেন।
বিয়ের সাত বছর পরের জামাইষষ্ঠীতে শ্বশুরমশাই কতটা প্রশ্রয় দিচ্ছেন?
গৌরব: ওরে বাবা! উনি এমনিতেই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ঋদ্ধিমার সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ারও আগে ওর বাবার সঙ্গে আলাপ। ‘রংমিলান্তি’ ছবির শ্যুটে ঋদ্ধিমার সঙ্গে আউটডোরে ওঁর বাবা আসতেন। উনি খুবই মিশুকে, সকলের সঙ্গে হইহই করেন। তার ফলে ওঁর সঙ্গে সহজেই বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। এসবের পরে ঋদ্ধিমার সঙ্গে বন্ধুত্ব, প্রেম। বিয়ের পরেও বাবার সঙ্গে সেই রসায়নটা একই রকম রয়ে গিয়েছে। শাশুড়ি মায়ের অনুপস্থিতিতে বাবা ভীষণভাবে চেষ্টা করেন। মা যেভাবে করতেন, একেবারে সেটাই যেন করা হয়। সব রীতি রেওয়াজ মেনে সেই খাবার, সেই বাসনেই যেন পরিবেশন করা হয়, সবটা বাবা দেখেন।
ঋদ্ধিমা: আর একটা বিষয় এখানে বলার... মা এটা যেমন গৌরবের জন্য করতেন, পাশাপাশি আমার জন্যও করতেন। শুধু জামাইকেই আপ্যায়ন করা হয়েছে, এমন নয়।
গৌরব: আমি প্রচণ্ড ভাগ্যবান এ ব্যাপারে। জামাই আদর নয়, আমি তো বলব, একেবারে নিজের ছেলের মতো করে যত্ন করা।
ঋদ্ধিমা: ওর জন্য স্পেশাল একটা রুপোর বাসনের সেট আছে, যাতে জামাইষষ্ঠীতে খাবার পরিবেশন করা হয়। মানে প্রতিবছর ওগুলো গৌরবের জন্যই বের করা হয়! প্রচুর সাজিয়ে গুছিয়ে ওকে খেতে দেওয়া হয়। বাবা এবারও নিশ্চয়ই সব প্ল্যান করে ফেলেছেন। এখনও আমি জানি না! শুধু জানি, মেনুতে মাটন আর মিষ্টি দই থাকবেই থাকবে। কারণ ওটা গৌরবের ফেভারিট। আর এবার আমাদের খাওয়ার সময়ে বলেছি একটা ছোট রুপোর বাটি আর চামচ দিতে। ধীরও আমাদের সঙ্গে বসবে খেতে! একটা কুর্তা-পাজামা পরাব।
ষষ্ঠী তো সন্তানের মঙ্গলার্থেই। ঋদ্ধিমা কি এখন ধীরের জন্য ষষ্ঠী পালন করছেন?
ঋদ্ধিমা: ধীর হওয়ার পরেই একটা ষষ্ঠীপুজো হয়। বাচ্চা হওয়ার কুড়ি-একুশ দিন পরে বোধহয় করতে হয়...। তারপর আমাকে বলা হয়েছিল ষষ্ঠীগুলো করার কথা। আমার বক্তব্য, আমি তো কখনও আমার সন্তানের খারাপ চাইব না। ভালোই চাইব। কিন্তু আমাদের কাজের চাপ বা সময় যেভাবে চলে, তাতে আমি ধরেবেঁধে বলতে চাইনি যে প্রতিটা ষষ্ঠীই আমি পালন করতে পারব। সেই অর্থে উপোস করে পুজো করে যা যা করতে হয়, সেটা সম্ভব না হলেও মন থেকে ধীরের জন্য সবসময় ভালো চাই। আমার হয়ে আমার দিদা ধীরের জন্য এবারের নীল ষষ্ঠী করেছিলেন। আমার সেদিন কিছু কাজ পড়ে গিয়েছিল।
ধীর এই সব পারিবারিক উৎসবের আনন্দ কতটা বুঝছে?
গৌরব: এখনও সেভাবে কিছুই বোঝে না! ন’মাস মাত্র বয়স ওর। কিন্তু বলতে নেই, ও এত ছোট হয়েও সবরকম পরিস্থিতিতে এত সুন্দর করে মানিয়ে নিচ্ছে। ও কান্নাকাটি বায়নাক্কা সেভাবে করে না। ওকে অচেনা কোনও জায়গায় নিয়ে যাওয়া হল বলে ও খুব বিরক্ত হয়ে গেল, এমনটা সাধারণত দেখিনি।
ঋদ্ধিমা: ও কখনও কারও অসুবিধে করে না। এই যে কিছুদিন আগে ওর অন্নপ্রাশন হল... অত লোকের মাঝেও ও একফোঁটা কাঁদেনি। ওর ভালো লাগছে না একটা সময়ে বুঝতে পারছি, এত অচেনা লোক চারপাশে। কিন্তু কোনও সমস্যা হয়নি ওকে নিয়ে। অন্নপ্রাশন পুরো রীতি মেনে হয়েছে। মানে সেই গায়ে হলুদ থেকে মামার হাতে ভাত খাওয়া। সবটাই ও খুব ভালোভাবে সামলেছে। ওর দেড় মাস বয়স থেকে রাতেও পুরোটা ঘুমোয়, সেইদিক থেকেও ওকে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।
সন্তান আসার পরে দাম্পত্যের সমীকরণ কতটা বদলেছে?
গৌরব: অনেকটাই বদলেছে। একে অপরের জন্য সময় অবশ্যই কমেছে। তার কারণ ধীরের দেখাশোনা করতে হয়। আর ঋদ্ধিমা খুবই ভালো মা... সারাক্ষণ ওর দিকে মনোযোগ। বাড়িতে বাচ্চা দেখার জন্য লোক আছে বলে সবটাই তার হাতে ছেড়ে দিলাম, এটা ও করতেই পারে না। ওকে তেল মাখানো, চান করানো, খাওয়ানো থেকে সমস্ত ছোট ছোট ব্যাপারে ও খেয়াল রাখে। সবটা ও নিজে করে।
ঋদ্ধিমা: আমি একটা জিনিস বুঝেছি, ওর মাত্র ন’মাস বয়স হচ্ছে। কীভাবে যে এতটা সময় চলে গেল দেখতেই পেলাম না। প্রতি মুহূর্তে তাই মনে হয়, এই তো ও বড় হয়ে যাচ্ছে..আর তো ক’টা দিন আরও বড় হয়ে যাবে। তাই প্রতিটা মুহূর্তে আমি ওর পাশে থাকতে চাই।
গৌরব: হ্যাটস অফ টু ঋদ্ধিমা! আমার যদি বা কখনও মনে হয়, যে আমাদের হেল্প করার জন্য যিনি আছেন, তিনি তো ধীরকে খাওয়াচ্ছেন, আমরা একটু বসি। ঋদ্ধিমা বলবে, না ওখানেই বসব। আমি খাওয়াব ধীরকে। আমি যদি সামান্যতম উদাসীনও হই ধীরের ব্যাপারে, ঋদ্ধিমা একবারের জন্যও নয়।
এর মধ্যে কাজকর্ম সামলাতে অসুবিধা হচ্ছে না?
ঋদ্ধিমা: আমি সেট থেকে ধীরকে ভিডিও কল করতাম, কিন্তু দেখলাম তাতে ও কান্নাকাটি করছে। ও এখন বুঝতে পারে মা কাছে নেই। তাই ভিডিও কল এখন করি না। এক এক সময়ে আমারই খুব অসুবিধে হয়। ওকে মিস করি। কিন্তু আমি এখন যে রান্নার শো-তে কাজ করছি তাতে টানা অনেক দিন মানে, মাসে ১৫-২০ দিনের শ্যুট নেই। অল্প সময়ে হয়ে যাচ্ছে। সেটা একটা সুবিধা। এইভাবে নিজেকে বোঝাচ্ছি আর কি! ক’টা দিন শ্যুট করব, বাকি সময়টা ধীরের জন্য আছে। এক্ষেত্রে আমার নিজেরই বেশি খারাপ লাগা থাকে।
গৌরব: অনুষ্ঠানটি যেখানে করছি, সেখানে চ্যানেল কর্তৃপক্ষও আমাদের সঙ্গে খুবই সহযোগিতা করছেন, এটা বলতেই হবে।
আপনারা দু’জনেই তো বেড়াতে ভালোবাসেন। বিশেষ করে জঙ্গল। এখন কীভাবে বেড়ানো হচ্ছে খুদেকে নিয়ে?
গৌরব: দার্জিলিং, থাইল্যান্ড আর দিল্লি। এর মধ্যে তিনটে ট্রিপ ধীরকে নিয়ে হয়ে গিয়েছে। ও বেড়াতে খুবই ভালোবাসে। জঙ্গলে তো যাবই। আগে বছরে একটা ট্রিপ জঙ্গলে আমি আর ঋদ্ধিমা যেতামই। বাবা-মায়ের সঙ্গে গেলে আর একটা। সেটা এখন বন্ধ ধীরের জন্য। তবে যখন ও বুঝবে, জঙ্গলে গিয়ে চুপ করে সব দেখতে হয়— তখনই আমরা বেরিয়ে পড়ব!
ঋদ্ধিমা: আর শুধু জঙ্গল নয়। পুরো দুনিয়াটা আমি ওর সঙ্গে দেখতে চাই। আমি আর গৌরব যতটা বেড়াতে ভালোবাসি, আমার মনে হয় ও-ও তাই হবে। ওকে নিয়ে আমরা যখন দার্জিলিং যাই, তখন প্রবল ঠান্ডা আর ওর দু’মাস বয়স। তাতেও ওর কোনও সমস্যা হয়নি। ফ্লাইটে ও দিব্য ছিল। ওই সময়টা আমাদের বিবাহবার্ষিকী ছিল। প্রতিবার ওই সময়টা আমরা ঘুরতে যাই। এবারও সেই প্ল্যান ছিল। আমার ইচ্ছে ছিল, ধীরের প্রথম বেড়ানোটা দার্জিলিঙেই হোক। কারণ ‘রংমিলান্তি’র শ্যুটে গৌরব আর আমি দার্জিলিঙে এসেছিলাম। তাই হুট করে প্ল্যান করে ধীরের ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে বেরিয়ে পড়ি। এরপরে থাইল্যান্ডেও বেড়াতে গিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি।
ছবি: সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে