পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
রুপোর মতো দেখতে। কিন্তু রুপো নয়। এমন তো আকছার দেখা যায়। আগে ঝুটো গয়না বলতে লোকে বুঝত কস্টিউম, ইমিটেশন বা অক্সিডাইজড জুয়েলারি। এখন সে রূপ বদলে আরও সূক্ষ্ম হয়ে এসেছে লুক-অ্যালাইক জুয়েলারি। এসেছে শুধু নয়, বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
এই ধরনের গয়না সেলিব্রিটিরাও পছন্দ করেন। অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেন বললেন, ‘সিলভার লুক অ্যালাইক গয়না পছন্দ করি। আমি খুব মলমলের শাড়ি পরি। আর ওই শাড়িগুলোর সঙ্গে এই লুক অ্যালাইক জুয়েলারি ভীষণ ভালো ম্যাচ করে। সবসময় পিওর সিলভার তো পরা হয় না। ঝুটো গয়না হালকা ওজন, সহজে পাওয়া যায় বলে এগুলো পরতে ভালোই লাগে।’
এই প্রজন্মের আর এক অভিনেত্রী অঙ্গনা রায়েরও পছন্দ ঝুটো গয়না। তাঁর কথায়, ‘এগুলো সহজে পরা যায়, ক্যারিও করা যায় আর দেখতেও সুন্দর। অনলাইনে এরকম প্রচুর কিনি। ঝুমকো খুব ভালো লাগে। হুপ ইয়াররিংসও পরি খুব। জাঙ্ক জুয়েলারি ছোট থেকেই ভালো লাগত। সিলভার লুক অ্যালাইক জুয়েলারিও তাই। এখন আমার অনেক বন্ধুই নানারকম এগজিবিশন করে এসব গয়না নিয়ে। সেখান থেকে কিনি। আমার সিলভার বা গোল্ডেন জুয়েলারির ফেজ যায় বলতে পারেন। মানে কখনও সিলভার লুক অ্যালাইক গয়নাই বেশি পরছি। আবার গোল্ডেও এমন অনেক লুক অ্যালাইক থাকে, যেগুলো পরি। আর সত্যি বলতে কি এখন আর লোকে ওইরকম ভাবেই না যে আসল রুপো পরলাম কি না। দেখতে ভালো লাগাটাই বড় কথা। সবচেয়ে বড় কথা বাজেট ফ্রেন্ডলি জিনিস সকলেরই পছন্দ। তাই এই বিকল্প সবসময় ভালো। হাতের কাছে পাওয়া যায়। সিলভার লুক অ্যালাইকে কিছু চোকার হয়, এথনিক এবং ওয়েস্টার্ন সবেতেই দারুণ মানায়।’
২০১৪ সাল থেকে হ্যান্ডমেড থেকে শুরু করে বিভিন্ন জুয়েলারি নিয়ে কাজ করছেন শ্রাবণী দাস। তাঁর ব্র্যান্ড ‘আত্রেয়ী ক্রিয়েশনস’-এ নানা ধরনের গয়নার সম্ভার। লুক অ্যালাইক জুয়েলারি নিয়ে তাঁর কী মত? কীভাবে এই গয়না মহিলাদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিল? শ্রাবণী বললেন, ‘দশ বছর আগে প্রথম গয়না বানাতে শুরু করি। ট্রেন্ডে তখন ছিল পেপার কুইলিং-এর জুয়েলারি। তারপর শুরু হয় ফিউশন। সঙ্গে জুড়ে যায় মেটাল, পুঁতি বা গ্লাস পার্ল অথবা পোড়ামাটি। ২০১৫-’১৭ সালে এগুলো ট্রেন্ড ছিল। এই সময়েই জার্মান সিলভার নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু। প্রসঙ্গত বলি, সোনা-রুপোর দোকানে যে জার্মান সিলভার পাওয়া যায়, তার সঙ্গে কস্টিউম জুয়েলারির যে জার্মান সিলভার থাকে, সেটা সম্পূর্ণ আলাদা।’
বছর যত এগিয়েছে, কস্টিউম জুয়েলারিতে ট্রেন্ড বদলেছে। নিজেকে সময়ের সঙ্গে গড়েপিটে নিয়েছেন শ্রাবণীও। তাঁর কথায়, ‘পেপার কুইলিং-এর দিন শেষ হল। ওই সময় হ্যান্ডমেড জুয়েলারি নিয়ে এতটা ক্রেজ ছিল না। ২০১৮-’১৯ নাগাদ এই চাহিদা মারাত্মক বাড়ে। জার্মান সিলভার তো চাইতেনই ক্রেতারা। সঙ্গে পাল্লা দেওয়া শুরু করে হাতে তৈরি গয়না। গোড়ার দিকে জার্মান সিলভার আসত চীন থেকে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পরে ভারতেই এই ধাতু তৈরি শুরু হয়। ২০২০-তে এল কোভিড আর লকডাউন। অবসরে লোকজন বেশি করে ইন্টারনেট দেখত। শুরু হল অনলাইন কেনাকাটার ধুম। এই সময়েই দেখেছি ব্ল্যাক পলিশ করা গয়না এবং সিলভার লুক অ্যালাইক জুয়েলারি বাজারে ঢুকতে শুরু করে। এগুলো কিছুটা আগেই হয়তো শুরু হয়েছিল। কিন্তু ঘরবন্দি অবস্থায় অনলাইনে দেখে দেখে চাহিদাটা বেড়ে গিয়েছিল।’
শ্রাবণী জানালেন, ব্ল্যাক পলিশ গয়নার মধ্যে যেগুলো বেশি ভারী ও প্রচুর কাজসমৃদ্ধ, সেগুলো অনেকে পছন্দ করতেন। সঙ্গে গোল্ড প্লেটেড বা কপারে গোল্ড পলিশ গয়নাও পছন্দ অনেকের। সোনার দাম নিয়ে তো কথা না বলাই ভালো! তাছাড়া দূরে কোথাও যেতে হলে আগে মহিলারা সিটি গোল্ড জাতীয় গয়নাই শুধু পেতেন। এখন এই ধরনের গোল্ড লুক অ্যালাইক গয়না কিন্তু ডিজাইনের দিক থেকে অনেক বেশি সূক্ষ্ম ও উন্নত অথচ সস্তা। নিশ্চিন্তে পরে যেতে পারেন কোনও দূরের অনুষ্ঠানে। তাই এগুলোরও চাহিদা বেড়েছে। কপার জুয়েলারি এখন আলাদা করে অনেকে চান। এটা একেবারে সাম্প্রতিক ট্রেন্ড। কেউ কেউ বলেন, আনফিনিশড কপারে তৈরি গয়না চাই। কারণ তাঁদের ওই লুকটাই পছন্দ। যাতে কপারের অরিজিন্যাল লুকটা থাকে। এর সঙ্গে আফগান ধাঁচে তৈরি জাঙ্ক জুয়েলারিও অনেকের পছন্দ। অরিজিনাল আফগানি জুয়েলারির অনেক বেশি দামি। তাই ওজনে হালকা আফগান লুক অ্যালাইক গয়নাও জনপ্রিয় হতে শুরু করে
দ্রুত। তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে শ্রাবণী বললেন, আফগান জুয়েলারি নিয়ে মাতামাতি এখনও কমেনি। কেউ কেউ দাম দিয়েও অরিজিনাল কিনতে চান। ভারী হওয়া সত্ত্বেও। আর্টিফিশিয়াল আফগান লুক অ্যালাইক গয়না বেশি চায় কমবয়েসি মেয়েরা।
এখনকার ট্রেন্ড কী বলছে? শ্রাবণী বললেন, তাঁর কাছে ক্রেতারা বেশি চান অফিসওয়্যারের সঙ্গে হালকা লুক অ্যালাইক সিলভার জুয়েলারি। এতে সববয়সি মহিলাই আগ্রহী। এগুলোর মধ্যে নোয়াও পাওয়া যাচ্ছে। তরুণীদের মধ্যে জনপ্রিয় অ্যাঙ্কলেট বা নূপুর, ছোট ইয়াররিংস, ফলস নোজপিন। এছাড়া কানের বুগাডি। সঙ্গে নাকে সেপ্টাম বা নোলক। অফিস শুধু নয়, কলেজ পাঠরতা মেয়েদের কাছে এই ধরনের গয়না খুব আকর্ষণীয়।
পার্ল-এর ক্ষেত্রেও এসেছে অন্য বিকল্প। অরিজিনাল পার্ল-এর দাম বেড়েই চলেছে, তাই ‘শেল পার্ল’ মহিলারা পছন্দ করছেন। পার্টি বা অনুষ্ঠানে পরতে পারেন। শ্রাবণীর মতে, এখনকার ক্রেতাও অনেক সচেতন। তাঁদের অনেকেই বোঝেন, কোনটার সঙ্গে কোনটা ভালো মানাবে। বছর দশেক আগেও মহিলারা এতটা সচেতন ছিলেন না। জুয়েলারি সম্পর্কে পরামর্শ চাইতেন বিক্রেতার কাছে। সেই প্রবণতা এখন কমেছে। আর বয়স হয়ে গেলে জুয়েলারি পরা যায় না, এই ধারণাও ভাঙছেন অনেকে, বললেন শ্রাবণী। ষাটোর্ধ্ব মহিলাও এই জুয়েলারি পরছেন। নকশার উপর নির্ভর করে অলঙ্কারপ্রিয় নারীর মন ছুঁয়েছে আসল-নকল সব গয়নাই!