সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় সাফল্য প্রাপ্তি। কর্মে দায়িত্ব বৃদ্ধিতে মানসিক চাপবৃদ্ধি। খেলাধূলায় সাফল্যের স্বীকৃতি। শত্রুর মোকাবিলায় সতর্কতার ... বিশদ
একটা সময় ছিল যখন অল্পবয়সি মেয়েদের একটা অংশের ধারণা ছিল, শাড়ি পরলে যেন একটু বয়স্ক মনে হয়! না হলে কেউ কেউ ভাবত, শাড়ি পরার কত যে হ্যাপা। থাক, শাড়ি নয় অন্য কিছুই পরি। গত পাঁচ-ছ’বছরে কিন্তু সেই ধারণাটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। বারো হাতের পোশাক নিয়ে চলেছে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা। কেউ তাকে আপন করে নিয়েছেন স্বমহিমায়, কেউ আবার শাড়ি পরার ট্র্যাডিশনাল রাস্তা ছেড়ে তাতে নিয়ে এসেছেন অন্য লুক। তাঁদেরই একজন মুম্বইয়ের ডিজাইনার পূজা জগদীশ। তিনি শাড়ি ভালোবাসেন আর পাঁচজন সাধারণ মহিলার মতোই। কিন্তু শাড়ির একঘেয়েমি থেকে সরে গিয়ে অন্যভাবে সেজে নজর কেড়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারই সঙ্গে এখনকার মেয়েদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে শান্তিনিকেতনের জয়িতা সেনগুপ্ত দিলেন অভিজাত কিন্তু হালকা শাড়ির সন্ধান।
কেন অন্য লুক
পূজা জগদীশ বললেন, ‘প্রথম দিকে উৎসব-অনুষ্ঠানেই শাড়ি পরতাম বেশি। আমার রোজকার পোশাকের তালিকায় শাড়ি ছিল না। বছর ছয়েক আগে থেকে নিয়মিতভাবে শাড়িতে মন দিয়েছি। এটা এমন একটা পোশাক যার মধ্যে আরাম খুঁজে পাওয়া খুবই সহজ। সারাদিন পরে থাকলেও কোনও ক্লান্তি নেই।’ অন্যরকম কায়দায় শাড়ি পরার কথা মনে হল কেন? পূজা জানিয়েছেন, শাড়ি যতটাই আরামদায়ক সহজ পোশাক, তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো ততটাই চিন্তা বাড়ায়। মানে ঠিকঠাক ফিটিং এবং ম্যাচিং ব্লাউজ চাই। ধরুন একটা শাড়ি পরার ইচ্ছে হল হঠাৎ, কিন্তু ঠিকঠাক অ্যাক্সেসরিজের অভাবে আর পরাই হল না। সেটা ভাবিয়ে তুলেছিল মুম্বইনিবাসী এই ডিজাইনারকে। সেই থেকেই শাড়িকে অন্য কিছুর সঙ্গে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে পরা শুরু। কখনও কনভেনশনাল ব্লাউজের বদলে একটা টপের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া বারো হাতের আভিজাত্য। কখনও আবার লং কটন কোটের সঙ্গে তাকে আলগা জড়িয়ে নেওয়া এমনভাবে, যে কেউ ফিরে তাকাতে বাধ্য!
মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ
চটি-জুতোয় নিয়মিত হিল যাঁরা পরেন না, তাঁদের অনেকের অসুবিধা হয় চিরাচরিত পদ্ধতিতে নিচু করে শাড়ি পরতে। পূজা নিজেও তাই। সেজন্য তাঁর মনে হয়েছিল শাড়িকে একটু উঁচুতে তুলে যদি অন্য লুক দেওয়া যায়। একটা স্কার্টের ওপর সেভাবে পরে দেখলেন, ব্যাপারটা মন্দ লাগছে না। বরং বেশ স্টাইলিশ লাগছে। আরামের প্রশ্নেও আপস নয়। আগে শাড়ি পরতে অন্য আর
একজনের সাহায্য লাগত তাঁর। অল্পবয়সিদের মধ্যেও এই সমস্যাটা অনেকের ক্ষেত্রে হয়। কেউ এগিয়ে না এলে ঠিক করে শাড়ি পরা হয় না। আর তা থেকে শাড়ি পরতে কিছুটা অনীহা এসে যায়। পূজা শাড়ি ভালোবাসেন বলেই আগ্রহটা বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। আর সেজন্যই শাড়িকে অন্যভাবে আপন করে নেওয়া।
অন্য লুকে সঙ্কোচ?
শাড়ি পরার চিরকালীন কায়দা থেকে সরে যেতে অনেকে ইতস্তত বোধ করতে পারেন। মনে হতেই পারে, এভাবে ভালো লাগবে তো? পূজা বললেন, ‘এই প্রশ্নটা অনেককেই ভাবায়। আমিও ভেবেছি। তারপর মনে হয়েছে, এত বড় সেলিব্রিটি আমরা কেউ নই, যে সবাই আমার লুক নিয়ে মাথা ঘামাবে। নিজের স্বাচ্ছন্দ্য, নিজের স্টাইলটাই বড় কথা। তাতেই আত্মবিশ্বাস আসে।’ এই ভাবেই তাঁর শাড়ি পরার ধরনে উৎসাহিত হয়েছেন সব বয়সের মহিলা। এখন তাঁর কাছে অনেকে এসে বলেন, আপনার স্টাইল তো দারুণ! অনেকেই এখন তাঁর মতো করে শাড়ি পরে হয়ে উঠতে চাইছেন অনন্যা। ইনস্টাগ্রামে দেখে নিতে পারেন পূজা জগদীশের পেজ।
হালকা শাড়ি
শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা জয়িতা সেনগুপ্ত অনলাইন বুটিক চালান। তিনি জানালেন কিছু হালকা শাড়ির কথা, যা পরে ফেলা যায় নিমেষেই আর ক্যারি করতেও কোনও অসুবিধা হয় না। যেমন বেগমপুরি শাড়ি। যার নকশা আজকাল অনেক পাল্টে গিয়েছে। হালকা শাড়ি, তার মধ্যে সুন্দর কাজ— সেটা পছন্দ করতে পারে এখনকার প্রজন্ম। ‘এই শাড়িতে কিছু পুরনো ডিজাইন আবার ফিরিয়ে এনে তাকে আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি আছে উত্তর-পূর্বের ট্রাইবাল মোটিফ। এর রংও খুব উজ্জ্বল। দিনে বা রাতে যে কোনও সময় পরলেই ভালো লাগবে। বেগমপুরি শাড়িতে মাঠা পাড় (প্লেন বর্ডার) রেখে তাতে নতুনত্ব আনা হচ্ছে। সূক্ষ্ম বুনটের এই শাড়িগুলো সহজেই পরা যায়,’ বললেন তিনি। তাঁর মতে, হালকা শাড়ির মধ্যে পছন্দ হওয়ার মতো ওড়িশারও কিছু নকশা আছে। সে রাজ্যের কোন্ধ জেলার আদিবাসী মহিলারা ডোংরিয়া নকশার পোশাক পরেন। কাপড়টা একটু মোটা ধরনের কিন্তু ওজন বেশি নয়। লুঙ্গির মতো একটি পোশাক নীচে পরেন তাঁরা। আর ওপরে চাদরের মতো কাপড় জড়িয়ে নেন। নিয়ামগিরি পাহাড়ে এভাবেই দিনযাপন ওঁদের। পাহাড়-নদীই ওঁদের ঈশ্বর। চাদরের সেই নকশা এখন তুলে আনা হয়েছে শাড়িতে। এগুলোও খুব উজ্জ্বল রঙের হয়। বর্ডারে পাহাড়ি পাড়। এগুলোও খুব সূক্ষ্ম সুতোর কাজ। কালোর ওপরে হলুদ, লাল, সবুজ কম্বিনেশনে শাড়ি হচ্ছে। এত সুন্দর রং যে সহজেই নজর কাড়ে। সিল্ক ও তসর দুইয়েই পাবেন।
আরও হালকা শাড়ির মধ্যে আছে ডোলাবেদি। এগুলোও ওড়িশার কাজ। দোলপূর্ণিমায় শ্রীকৃষ্ণের যে রথ সাজানো হয়, তার নকশা আঁচলে বোনা হয়। এগুলোও পাবেন ভাইব্র্যান্ট কালারে। ডোলাবেদি তসর এবং সিল্কেও পাওয়া যায়। খুব গরম বা শীত, সব ঋতুতেই পরতে পারেন। টেক্সচারও অপূর্ব। সঙ্গে দেখতে পারেন অসমের রাভা উইভ। এই সুতির শাড়ির বর্ডার আলাদা তৈরি করা হয়। তারপর শাড়ি বোনা হয়ে গেলে বর্ডারটা শাড়ির ওপরে সেলাই করে দেওয়া হয়। এটাও পাহাড়ি মহিলাদের মধ্যে পরার চল রয়েছে। এগুলো সহজে যেমন পরা যাবে, তেমনই ধোয়াকাচাতেও ঝামেলা নেই।