সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় সাফল্য প্রাপ্তি। কর্মে দায়িত্ব বৃদ্ধিতে মানসিক চাপবৃদ্ধি। খেলাধূলায় সাফল্যের স্বীকৃতি। শত্রুর মোকাবিলায় সতর্কতার ... বিশদ
শান্তিনিকেতনে আশ্রম-বিদ্যালয় গড়ে উঠছে। অর্থ সংকটে জেরবার রবীন্দ্রনাথ। কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী নিজের গায়ের গয়না খুলে তুলে দিয়েছিলেন কবির হাতে। তারপরও রক্ষা পায়নি কবির অত্যন্ত প্রিয় সোনার পকেট ঘড়িটি। ঘড়িটি বিয়েতে যৌতুক পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। খাঁটি সোনায় তৈরি পকেট ঘড়িটি দেখতেও ছিল অভিনব। দু’দিকে দু’টো ডালা, মাঝখানে একটা বোতাম। বোতাম টিপলেই টুক করে একটা শব্দ হতো আর খুলে যেত ঘড়িটা। ডালার ভেতর দিকে রবীন্দ্রনাথের নামের আদ্যক্ষর খোদাই করা ছিল। বিয়ের পর থেকেই রবীন্দ্রনাথ সযত্নে পকেটে রাখতেন ঘড়িটি। শেষমেশ প্রিয় ঘড়িটি কবি বিক্রি করে দিয়েছিলেন আশ্রমের জন্য। কিনেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের বন্ধু অক্ষয়কুমার চৌধুরীর স্ত্রী শরৎকুমারী। তিনি জানতেন সোনার ঘড়িটি কবির বিয়ের যৌতুক এবং অত্যন্ত প্রিয়। নিজের কাছে পরম যত্নে রেখেছিলেন ঘড়িটি। গল্প এখানেই শেষ নয়। এই ঘটনার বেশ কিছু বছর পরে কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথের বিয়েতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন অক্ষয়কুমার ও শরৎকুমারী। উপহার হিসেবে নিয়ে গিয়েছিলেন ছোট্ট বাক্সে ভরে রবীন্দ্রনাথের সেই সোনার ঘড়িটি। বাবার বিয়ের ঘড়ি নিজের বিয়েতে উপহার পেয়ে আনন্দে বিহ্বল হয়েছিলেন রথীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ বিস্ময়ে কোনও কথা বলতে পারেননি।
শুধু কবিগুরুই নন, অনেক বিশিষ্ট মানুষের জীবনেই ঘড়ি নিয়ে নানারকম সুখ-দুঃখের স্মৃতি রয়েছে। রয়েছে আমাদেরও। জীবনে প্রথম পাওয়া হাতঘড়িটি সকলেই যত্নে রাখেন, তা সে চলুক আর না-ই চলুক। এক সময় এইচএমটি ও অ্যাংলো সুইস কোম্পানির ঘড়ি বাজার দখল করেছিল। এদেশে আটের দশকের মাঝামাঝি টাটা কোম্পানি পা রেখেছিল রিস্টওয়াচের আঙিনায়। টাইটান ব্র্যান্ড নিয়ে বাজারে এসেই তখনকার নতুন প্রজন্মের মন জিতেছিল। দম দেওয়া ঘড়ি নয়, ব্যাটারিচালিত এই কোয়ার্টজ ঘড়ির ডিজাইনও অত্যন্ত স্মার্ট। তাই পছন্দ হয়েছিল রুচিশীল মধ্যবিত্ত থেকে বিত্তবান মানুষের। এছাড়াও তখন থেকেই কম দামে নানা ধরনের কোয়ার্টজ ঘড়ি ভারতের বাজারে আসতে শুরু করে। শুধু মেটাল বডি নয়, প্লাস্টিক বডির ঘড়িও স্ট্রিট মার্কেটে ছেয়ে যায়। এখনও হকার্স কর্নার ও স্ট্রিট মার্কেটে এই ধরনের রিস্ট ওয়াচের রমরমা। ডিজাইন ও রঙের বাহার আকর্ষণ করে কমবয়সিদের। বিদেশি নামী ব্র্যান্ডের রিস্ট ওয়াচের ডিজাইন পুরোপুরি নকল করে তৈরি ঘড়িগুলোর দাম একটু বেশি।
টাটার তিন ব্র্যান্ড
টাটা কোম্পানির টাইটান পুরুষ ও মহিলাদের জন্য অসংখ্য ডিজাইনের ঘড়ি বাজারে এনেছে। এদের নিজস্ব ডিজাইনার টিম আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে ডিজাইন বদল করে। গোল্ডেন, স্টিল, গানমেটাল ও রোজ গোল্ড সমানভাবেই চলছে বলে জানা গেল। ঘড়ির ব্যান্ডের ক্ষেত্রে মেটাল এবং লেদার দুইয়েরই চাহিদা সমান। একটু পার্টি লুক বা গর্জিয়াস রিস্ট ওয়াচ চাইলে এদের ‘রাগা’ বা ‘নেবুলা’ কালেকশনে হাত বাড়াতে হবে। স্টোন, ক্রিস্টাল দিয়ে নকশা করা ব্রেসলেট টাইপ ব্যান্ডের ঘড়িগুলো সোনার গয়নার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে।
‘সোনাটা’ টাটার কম দামি রেঞ্জের প্রোডাক্ট। এতেও এখন পুরুষ ও মহিলাদের জন্য অসংখ্য নতুন কালেকশন লঞ্চ হয়েছে। স্টিল, গোল্ডেন, রোজগোল্ড, স্টোন স্টাডেড ডিজাইন পাবেন এতে। আবার ক্যাজুয়াল টাইপ ডিজাইনও রয়েছে।
টাটার ‘ফাস্টট্র্যাক’ ব্র্যান্ডটিও যথেষ্ট জনপ্রিয়। এটি স্পোর্টস ওয়াচ। এর স্টাইলিশ গেটআপ কেতাদুরস্ত মানুষজনের পছন্দ হবেই। ক্যাজুয়াল ও অফিসওয়্যার ডিজাইন রয়েছে ফাস্টট্র্যাকে। ছোটদের জন্য ফাস্টট্র্যাকের বেশ মজাদার কালেকশন (জুপ) রয়েছে। ছোটদের প্রিয় কার্টুন চরিত্র, বার্বি ডল ইত্যাদি রয়েছে মোটিফে।
কেমন ডায়াল, কেমন ব্যান্ড
ঘড়ির গেটআপে আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডের ছোঁয়া লেগেছে বহুদিনই। জানা গেল, এখন রাউন্ড শেপের পাশাপাশি রেকট্যাঙ্গুলার শেপের রিস্টওয়াচের খুব চাহিদা। বিশেষ করে পুরুষদের ঘড়ির ফ্যাশনে রাউন্ড শেপের তুলনায় রেকট্যাঙ্গুলারের চাহিদা বেশি। ডায়ালের রং নিয়েও এখন নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে দেশি-বিদেশি সব ঘড়িতেই। লেডিজ রিস্ট ওয়াচে রোজগোল্ড বডির সঙ্গে ম্যাচ করে রোজগোল্ড ডায়াল এখন তরুণ প্রজন্মের পছন্দের শীর্ষে। সঙ্গে স্টোনস্টাড থাকলে তো কথাই নেই। ব্ল্যাক, গ্রে, মেরুনিশ রেড, ব্লু ডায়ালও ভালো চলছে। তবে যাঁরা এলিগ্যান্ট লুক চান তাঁরা পরিষ্কার সাদা ডায়ালের হাতঘড়িতেই হাত বাড়ান। রোমান হরফে সময়-বিভাজিকা পছন্দ অনেকের। অনেকে ডায়ালে ডিজাইনও ভালোবাসেন।
রোজ পরার জন্য ঘড়ির ব্যান্ডের ক্ষেত্রে লেদার বা সেমি লেদারই চান সকলে। অনেকে পুরো স্টিল বডি রিস্ট ওয়াচও অফিসওয়্যার হিসেবে পছন্দ করেন। তবে কোনও অনুষ্ঠানে বা পার্টিতে পরার জন্য গোল্ডেন কেসের গোল্ডেন ব্যান্ড ঘড়ি অনেকেই রাখেন ওয়ার্ডরোবে। মেয়েরা জুয়েলারির বিকল্প হিসেবে স্টোন স্টাডেড গোল্ডেন ব্যান্ড বা রোজ গোল্ডেন ব্যান্ড ঘড়ি রাখেন তাঁদের পার্টিওয়্যার কালেকশনে।
লাক্সারি ও ক্লাসিক
এ প্রজন্মের অনেকেই মনে করেন লাখ টাকা খরচ করে সোনার গয়না যদি কেনা যায়, তাহলে ঘড়ি কেন নয়? ঘড়িও তো অলঙ্কার। সে-ও তো অলঙ্কারের মতোই আভিজাত্যে অহং প্রকাশ করে। কব্জিতে একটা র্যাডো বা লঁজিনি থাকলে তার গরিমাই আলাদা। এখন ভারতবর্ষ তথা কলকাতায় এমন লাক্সারি ব্র্যান্ডের অজস্র স্টোর রয়েছে। কাছাকাছি স্টোর না থাকলেই বা কী? অনলাইনে কেনার সুযোগ তো সবসময় রয়েছে। এবার কয়েকটি লাক্সারি ব্র্যান্ডের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই আপনাদের।
র্যাডো সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি। ১৯১৭ সাল থেকে নানা ধরনের রিস্টওয়াচ তৈরি করছে। র্যাডোর ‘ডায়াস্টার’ প্রথম স্ক্র্যাচ রেসিসট্যান্ট ওয়াচ। এরাই প্রথম সেরামিক ওয়াচ তৈরি করেছে। র্যাডোর পঞ্চাশতম জন্মদিনে ডিজাইনার জেসপার মরিসন ডিজাইন করেন র্যাডোর সেরামিকা ক্রোনো।
লঁজিনিও সুইস কোম্পানি। শুধু ঘড়ির যন্ত্রাংশের মান নয়, ডিজাইনেও এদের জগৎজোড়া খ্যাতি। ভারতীয় মূল্যে ৫৬ হাজার টাকা থেকে শুরু।
কার্তিয়ের ফরাসি কোম্পানি। যন্ত্রাংশ সুইজারল্যান্ডের, কিন্তু ডিজাইন করেন প্যারিসের নামী ডিজাইনাররা। শুধু সৌন্দর্যেই নয়, ফরাসি আভিজাত্যের গরিমায় কার্টিয়ের নিঃসন্দেহে পয়লা নম্বরে। এদের অ্যাফোর্ডেবল রেঞ্জ ‘ট্যাঙ্ক’। এছাড়াও সুইডেনের ড্যানিয়েল ওয়েলিংটন, জাপানের সেইকো রয়েছে এ প্রজন্মের পছন্দের তালিকায়।
ক্লাসিক রিস্ট ওয়াচ যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের নজর দিতে হবে রোলেক্স, ওমেগা, টুডর ইত্যাদি সুইস কোম্পানির রিস্ট ওয়াচে। প্রতিটি কালেকশনের আভিজাত্য দেখে মুগ্ধ হতে হয়। তবে ভারতীয় মূল্য তিন-চার লক্ষ থেকে শুরু!
স্মার্ট ওয়াচ
স্মার্ট ফোনের সঙ্গে স্মার্ট ওয়াচের বেশ মিল আছে। একের মধ্যে বহু রূপ। অ্যাপল, স্যামসাং, জিওমি, ফিটবিট ইত্যাদি কোম্পানির স্মার্ট ওয়াচ বাজারে রয়েছে নানা মডেলে। এতে প্রেশার, হার্টবিট, ক্যালোরি কাউন্ট ইত্যাদি সবই জানা যায়, ফোন কল ও মেসেজ অ্যালার্টও ডায়ালে ভেসে ওঠে। ওই যে বললাম, এক অঙ্গে বহু রূপ!