সন্তানের কর্ম সাফল্যে মানসিক প্রফুল্লতা ও সাংসারিক সুখ বৃদ্ধি। আয়ের ক্ষেত্রটি শুভ। সামাজিক কর্মে সাফল্য ... বিশদ
হিন্দুদের কাছে অবতারদের উক্তিগুলি মোটেই পরস্পরবিরোধী নয়—সবগুলিই সত্য এবং দৈবী প্রেরণায় উক্ত। সুতরাং হিন্দুরা বিভিন্ন ধর্মে পূজিত ঈশ্বরের সব মহান পুত্রদের গ্রহণ করে। অবশ্য অবতারদের সত্যতা তাঁদের অপরকে মুক্ত বা ত্রাণ করবার দাবীর উপর নির্ভর করে না। প্রথমতঃ এটা প্রকাশ পায় তাঁদের অপরের ভিতর আধ্যাত্মিক শক্তি সঞ্চালন এবং স্পর্শ, দৃষ্টি ও ইচ্ছার দ্বারা মানুষের জীবন পরিবর্তনের মধ্যে। যীশু প্রাণস্পন্দের দ্বারা এই শক্তি সঞ্চার করে শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরা পবিত্র আত্মাকে প্রাপ্ত হও।” কৃষ্ণ অর্জুনকে দিব্যদৃষ্টি দান করেছিলেন যাতে তিনি ভগবানের বিশ্বরূপ দর্শন করতে পারেন। দ্বিতীয়ত:, অবতারদের সত্যতা প্রকাশ পায় তাঁদের দৈবীসত্তায় রূপান্তর গ্রহণের মধ্যে। পীটার, জেমস ও জনের সামনে যীশু ভিন্নরূপে আবির্ভূত হলেন। গীতার একাদশ অধ্যায়ে বর্ণনা আছে, কৃষ্ণ কিভাবে ভিন্ন রূপে অর্জুনের সামনে আবির্ভূত হলেন। শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনী ও কথামৃতে বহু ঘটনার উল্লেখ আছে যে, তিনি স্পর্শের দ্বারা তাঁর শিষ্যদের ভগবৎ-অনুভূতি এনে দিতেন এবং বহু ভক্তকে তাঁদের ভিন্ন ভিন্ন ইষ্টমূর্তিরূপে দর্শন দিয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, ভগবান কেন একাধিকবার মানুষরূপে আবির্ভূত হন? কি-ই বা প্রয়োজন? এর উত্তর হিন্দুমতে রয়েছে এবং তা ইতিহাস দ্বারা প্রমাণিত। এ আধ্যাত্মিক কৃষ্টি প্রবাহাকারে চলে—কখনও উত্থান আবার কখনও পতন। একটা জাতির অধ্যাত্মজীবনের পতনের পর, যখন মানুষ সত্য ও ধর্মপরায়ণতাকে অবজ্ঞা করে, ভুলে যায়, তখন অবতার জন্মগ্রহণ করেন নির্বাপিতপ্রায় ধর্মের প্রদীপকে পুনঃ প্রদীপ্ত করবার জন্য। শ্রীকৃষ্ণ গীতাতে বলেছেন: “যখন ধর্মের পতন ও অধর্মের অভ্যুত্থান হয় তখন আমি শরীর ধারণ করি। সাধুদের পরিত্রাণের জন্য, দুষ্কৃতকারীদের বিনাশের জন্য এবং ধর্মস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।” তাই মনে হয় কৃষ্ণের প্রতিজ্ঞা পূরণের জন্য বুদ্ধের আবির্ভাব। বুদ্ধের জন্মকালে ভারতের অধ্যাত্মকৃষ্টির অবনতি ঘটেছিল। যাগযজ্ঞ ও পূজা-অনুষ্ঠানাদির মধ্যে ধর্ম সীমিত হয়ে পড়েছিল। ধর্ম যে প্রত্যক্ষানুভূতির ব্যাপার, মানুষ তা ভুলে গিয়েছিল।