সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় সাফল্য প্রাপ্তি। কর্মে দায়িত্ব বৃদ্ধিতে মানসিক চাপবৃদ্ধি। খেলাধূলায় সাফল্যের স্বীকৃতি। শত্রুর মোকাবিলায় সতর্কতার ... বিশদ
খুলনা জেলান্তর্গত মহেশ্বর পাশা-নিবাসী জনৈক পত্র লেখকের পত্রের উত্তরে শ্রীশ্রীবাবামণি লিখিলেন,—
‘‘সুস্থির মনে বিচার করিয়া দেখ, তোমার প্রকৃত প্রয়োজন কি কি? বুঝিবার চেষ্টা কর যে, কি না হইলে তোমার জীবনের পূর্ণতা হয় না, কি না পাইলে মানুষের দেহ পাইয়াও তুমি মানুষ নহে, কিসের অভাব ঘটিলে মনুষ্য-সমাজে বাস করিয়াও তুমি মানুষ নামের যোগ্য নহ। বিচার করিয়া দেখ যে, ভগবদ্দত্ত গুণাবলির ভিতরে কোন্গুলির বিকাশ ঘটিলে তোমার জীবনে পূর্ণতা-সাধন সহজতর হয়। মনের সকল সন্তাপ, সকল পরিতাপ, সকল হতাশা, সকল নিরাশা ভুলিয়া গিয়া সরল সহজ অনাবিল মনে এভাবে প্রত্যহ নিজের অন্তরে অবগাহন করিয়া নিজের প্রকৃত অভাব বুঝিবার চেষ্টা কর এবং মাত্র সেই অভাবগুলি দূর করিবার জন্য ভগবানের নিকটে প্রার্থনা জানাও। কি তোমার প্রয়োজন আর কি তোমার অপ্রয়োজনীয়, তাহা না জানিয়া, না বুঝিয়া একধার হইতে অভাবের তালিকা তাঁহাকে জানাইয়া তোমার কি লাভ হইবে? বাজারে হাজার রকমের জিনিষ থাকে, কিন্তু গ্রাহকের কি সকল জিনিষই প্রয়োজন হয়, না, সকল জিনিষ কিনিয়া কেহ ঘরে আনিতে পারে? কতগুলি জিনিষ মাত্র প্রয়োজন হয় এবং মাত্র সেই কয়টীই লোকে কিনিয়া আনিতে প্রয়াস পায়। নিজের প্রকৃত অভাব বুঝিয়া যখন ভগবানের নিকট প্রার্থনা করিবে, তখন সে প্রার্থনা সহজে পূর্ণও হইবে, আর, সেই প্রার্থনায় মনেরও বল বাড়িবে, হৃদয়েরও উৎকর্ষ-বিধান হইবে। ‘চাই’ ‘চাই’ রবে দিঙ্মণ্ডল নিনাদিত করিতে পারিলেই তাহাকে প্রার্থনা বলে না। প্রকৃতই কিসের প্রয়োজন, তাহা সঠিকভাবে বুঝিতে পারাই প্রার্থনার প্রথম ও প্রধান কথা। নিজের অভাব যদি সত্য করিয়া নিজে বুঝিতে পার, তাহা হইলে মুখ ফুটিয়া ভগবানকে তাহা পূরণ করিতে কাতর মিনতি না জানাইলেও উহা প্রার্থনা বলিয়া গণ্য হইয়া থাকে। সুতরাং সে অভাব সেই দয়ার-সাগর অপার দয়ার আস্তে আস্তে দূর করিয়া দেন। তোমার প্রকৃতই কিসের অভাব, তাহা সম্যক বুঝিয়া যদি প্রার্থনা কর, তাহা হইলে সেই প্রার্থনার অনুযায়ী ভাবে জীবনকে পরিচালনও তোমার পক্ষে সহজ হইবে। অনেকেই ত’ ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে,—‘হে প্রভো, জ্ঞান দাও, বল দাও’ কিন্তু যে ভাবে চলিলে জ্ঞানের উন্মেষ হয়, বলের বিকাশ ঘটে, সেভাবে চলে না। তাহার কারণ কি ইহাই নহে যে, জ্ঞানের যে প্রকৃতই প্রয়োজন আছে, বলের যে প্রকৃতই অভাব রহিয়াছে, একথা সম্যক্ উপলব্ধি না করিয়াই তোতাপাখীর মুখস্থ বুলি মাত্র বলা হইয়াছে? অনেক ধার্ম্মিক পরিবারেই ভগবানের নিকটে প্রার্থনা-করা-রূপ অনুষ্ঠানটীকে সদাচার-রূপে পরিগৃহীত হইতে দেখা যায়, কিন্তু প্রকৃত প্রয়োজন-বোধের সহিত এই সকল প্রার্থনার সহযোগ না থাকার দরুণ প্রার্থনানুযায়ী জীবন-যাপন করিবার প্রবল যত্ন বা আবেগময়ী প্রবৃত্তি এই সকল প্রার্থনাকারীদের মধ্যে দেখা যায় না। প্রার্থনাই যদি করিলে, প্রার্থনার অনুযায়ী জীবন যাত্রা পরিচালনের চেষ্টাও তোমাকে করিতে হইবে।’’
কর্ত্তব্যের লঘুত্ব ও গুরুত্ব বিচার
মুর্শিদাবাদ জেলান্তর্গত আজিমগঞ্জ-নিবাসী জনৈক পত্রলেখকের পত্রের উত্তর-এ শ্রীশ্রীবাবামণি লিখিলেন,—
‘‘যখন অন্য কোনও প্রকার কর্ত্তব্যের চাপ থাকিবে না, সেই সময়ে বসিয়া তুমি ভগবানের নামজপ করিবে বলিয়া লিখিয়াছ। কিন্তু বাছা মানব-জীবনে এমন মুহূর্ত্ত কোথায়, যেই মুহূর্ত্তটীর উপরে কোনও না কোনও কর্ত্তব্যের দাবী না রহিয়াছে? ’’
স্বরূপানন্দ পরমহংস দেবের উপদেশ-বাণী অখণ্ড সংহিতা থেকে
