কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
(গঞ্জালেস-পেনাল্টি, শুভ) (প্লাজা ২, রবার্ট, বক্কর)
জয় চৌধুরি, কল্যাণী : রবিবার দুপুর থেকে কল্যাণী স্টেডিয়ামে শিয়ালদহ থেকে আসা ট্রেনগুলিতে মোহন বাগান সমথর্কদের স্রোত। হাল্কা শীতে প্রিয় দলের ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়াম প্রায় ভরে গিয়েছিল। কিন্তু দিনের শেষে তাঁরা প্রবল যন্ত্রণা ও ব্যথা নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। ম্যাচের দু’মিনিটের মধ্যে গোল হজম করলেও চার্চিল ব্রাদার্স মাঝমাঠে একজন যোগ্য ব্লকার না থাকার জন্য মোহন বাগান ম্যাচে ফিরে এসেছিল।
ম্যাচের ৮ থেকে ২৩ মিনিট পর্যন্ত কল্যাণী স্টেডিয়ামের ক্যানভাসে ছিল সবুজ মেরুন ঝড়। ওই ঝড়ে চাপে পড়ে গিয়েছিলেন আবু বক্কর আর রবার্টের মতো দীর্ঘদেহী ফুটবলাররা। চার্চিল গোলরক্ষক অনভিজ্ঞ জাফর মণ্ডল তখন ভয়ে কাঁপছেন। ভিভিআইপি বক্সে বসা চার্চিল আলেমাও ওই চাপ থেকে মুক্তি পেতে বারবার প্রার্থনা করছেন প্রভু যীশুর কাছে। আর তখনই সিসের দুরন্ত কর্নারে রিচার্ডের হেডে চার্চিলের দ্বিতীয় গোলটি ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে গেল। কল্যাণী লেকের পাশেই স্টেডিয়াম। আর সেই লেকের জলেই ডুবে গেল মোহন বাগানের পালতোলা নৌকা। এর জন্য প্রধান দায়ী গোলরক্ষক দেবজিৎ মজুমদার আর চার ডিফেন্ডার আশুতোষ মেহতা, ড্যানিয়েল, মোরান্তে ও গুরজিন্দর কুমার। মোহন বাগান রক্ষণে বল উড়ে এলেই রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের মধ্যে দেখা গিয়েছে আতঙ্ক। চার্চিলের চারটি গোলের মধ্যে তিনটি হয়েছে হেডে। বক্সে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা বিনা বাধায় গোল করে গিয়েছেন। মরশুমে মোহন বাগানের এটি ২২তম ম্যাচ। মোহন বাগান ২২ ম্যাচে খেয়েছে ২৪টি গোল। পাঁচ মাস সময় পেয়েও কিবু ভিকুনা রক্ষণ সাজাতে ব্যর্থ। আর বলিহারি তাঁদের স্ট্রাইকাররা। পরিবর্ত হিসাবে নেমে সালভা চামারো তিনটি সিটার নষ্ট করলেন। তার চেয়ে শ্যামনগরের শুভ ঘোষ মাত্র ২০ মিনিট সময় পেয়ে স্কোর শিটে নাম তুললেন। ম্যাচের সেরা হয়েছেন উইলিস প্লাজা। এই সম্মান পেতে পারতেন জুলেন কলিনাস। বেইতিয়া ও জুলেন কলিনাসের জন্য মাঝমাঠে চার্চিল দ্বিতীয়ার্ধেও দাগ কাটতে পারেনি। এই দলের ছ’বিদেশির মধ্যে এখনই জুলেন আর বেইতিয়া ছাড়া বাকিরা থাকলে মোহন বাগান লিগের শেষে প্রথম চারের মধ্যে থাকতে পারবে কিনা সন্দেহ। এখনই একজন শক্তপোক্ত আফ্রিকান ডিফেন্ডার আর স্ট্রাইকার নিয়ে আসা উচিত মোহন বাগানের।
ম্যাচের স্কোর শিট নিশ্চয়ই খেলার সঙ্গে সঙ্গতিসূচক নয়। তবে মনে রাখতে হবে সারা মরশুম ধরে সালভা চামোরো যা খেলছেন তাতে তিনি সুযোগ নষ্টে হ্যাটট্রিক করে অবাক করেননি। প্রতিপক্ষের অ্যাটাকিং থার্ডে চমৎকার পাসিং ফুটবল খেলেছেন মোহন বাগান। কিন্তু দক্ষ স্ট্রাইকারের অভাবে সেটা হয়নি। কিবু ভিকুনা এক অর্থে মোরান্তে, সালভা চামোরো,ফ্রান গঞ্জালেজদের এনে কার্যত প্রতারণাই করেছেন মোহন বাগানের লাখ লাখ সমর্থকদের সঙ্গে। মুনোজ, চামোরো, মোরান্তে মরশুমে চারটি ম্যাচ পরপর খেলেননি। এদের হাঁটু, হ্যামস্ট্রিং, কুঁচকিতে আছে পুরানো চোট। তাই দীর্ঘকায় ডিফেন্ডার হলেও বক্সে বল উড়ে এলে এঁরা স্পট জাম্প দিতে ভয় পায়। এই ম্যাচের ভিডিও রেকর্ডিং ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এটা আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে। এই ম্যাচ প্রমাণ করল ভারতীয় ফুটবলে সফট স্প্যানিশ ফুটবল চলবে না। আফ্রিকান পাওয়ার ফুটবলই এখানে শেষ কথা। ব্রিটো, বেইতিয়া, চামোরোরা যে চারটি সিটার মিস করেছেন তার নেপথ্যে আছে আবু বক্কর আর রবার্টের বিগ বডি আর শক্তি। কিবু ভিকুনা স্প্যানিশ হতে পারেন তবে তাঁর চেয়ে সুব্রত ভট্টাচার্য, সুভাষ ভৌমিক, সঞ্জয় সেন, জহর দাসরা বোধহয় ভালো কোচ। চুলোভার মতো সাইড ব্যাককে কেন ভিকুনা বসিয়ে রাখলেন? গুরজিন্দর কুমারকে দিনের পর দিন কেউ সাইড ব্যাকে খেলায়? চামোরোকে প্রথম থেকে আপফ্রন্টে রাখলে চার্চিলের সেট পিসের সময়ে আবু বক্কর আর রবার্ট পালা করে উপরে উঠতে পারতেন না। প্রথম দিকে মোহন বাগান চার্চিলের বিরুদ্ধে কেন লং বল খেলতে গেল বোঝা গেল না।
ম্যাচের ২ মিনিটেই চার্চিলকে এগিয়ে দেন প্লাজা। বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে সিসের কার্লিং ক্রসে ড্যানিয়েলকে দাঁড় করিয়ে ১-০ করেন প্লাজা। গোল খাওয়ার পর দেখা যায় সবুজ মেরুন ঝড়। দ্বিতীয় গোল খাওয়ার আগে গঞ্জালেস মুনোজ, ব্রিটো দুটি সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন। ২৯ মিনিটে সিসের কর্নার থেকে রবার্টের হেডে চার্চিল ২-০ করে। খেলার গতির বিরুদ্ধে হয় গোলটি। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন মোহন বাগানের ফ্রান গঞ্জালেজ। তিনি ১-২ করেন। বক্সে নাওরেমকে ফাউল করেন চার্চিলের খালিফ আল হাসান। চার্চিলের বিদেশিদের মধ্যে সবথেকে খারাপ খেললেন তিনি। ৪২ মিনিটে প্লাজার ২৮ গজের শট দেবজিৎ মজুমদারের হাতে লেগে গোলে ঢুকে যায়। দেবজিৎ এই ম্যাচটি দ্রুত ভুলতে চাইবেন। তবে তিনি ভিনিল ও মা পুইয়ার কাছ থেকে ৩১ এবং ৩৪ মিনিটে দুটি অব্যর্থ গোল না বাঁচালে মোহন বাগান পাঁচ গোল খেত। এটা ঘটনা, দেবজিতের ওই ভুলটি দলের মনোবল অনেকটাই ভেঙে দিয়েছিল। বিরতিতে ৩-১ গোলে এগিয়ে ছিল চার্চিল।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫৩ এবং ৬৩ মিনিটে ডান দিক থেকে জুলেনের দুটি মাটি ঘেঁষা সেন্টারে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন সালভা চামোরো। আর ৭৭ মিনিটে একা চার্চিল গোলরক্ষক জাফরকে একা পেয়েও বাইরে মারেন। পরিবর্ত ইজরায়েল গুরুংয়ের পাস থেকে বিনা বাধায় গোল করেন স্টপার আবু বক্কর (৪-১)। শেষ লগ্নে জটলার মধ্য থেকে মোহন বাগানের ব্যবধান কমান শুভ (২-৪)। শেষ পর্বে প্লাজার শট ক্রসপিসের অল্প উপর দিয়ে উড়ে না গেলে মোহন বাগান পাঁচ গোল খেত। প্লাজাও করতেন হ্যাটট্রিক।