মৃৎশিল্পী, ব্যবসায়ী প্রমুখদের বিশেষ কর্মোন্নতি যোগ প্রবল। পেশাদারি কর্মে শুভ ফল প্রাপ্তি। মানসিক চাঞ্চল্য। ... বিশদ
বোলপুর কলেজের পিছনের এলাকাটি কলেজপল্লি নামে পরিচিত। সেখানেই বাস লালু শর্মার। তাঁর বর্তমান বয়স ৫০ ছাড়িয়েছে। ছোট থেকেই কাঠের কাজ করেছেন বলে পড়াশোনার গণ্ডি বেশিদূর পেরয়নি। তবে, দীর্ঘদিন ধরে সেই কাজ করছেন বলে দক্ষতার সঙ্গে সারাবছর তৈরি করেন খাট, আলমারি, শৌখিন চেয়ার-টেবিল সহ ঘর সাজানোর সাজ-সরঞ্জাম। বর্তমানে, তার দুই ভাইপো অজিত ও সুরজিৎ শর্মাও রয়েছেন একই পেশায়। ছোটবেলায় এই দুই ভাইপো মিলেই নিজের কাঠমিস্ত্রি কাকাকে রথ বানানোর জন্য প্রতিবছর বায়না করতেন। ভাইপোদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি কখনও তাদের না বলতেন না। রথযাত্রা ও উল্টো রথের দিন দুই ভাই মিলে বোলপুরের চৌরাস্তা, শ্রীনিকেতন রোড, শান্তিনিকেতন রোড চষে বেড়াতেন। কোনও বার ভিজে ভিজেও বেড়িয়ে পড়তেন রথ নিয়ে। সেই উন্মাদনা বলে বোঝানো যাবে না। কাজের ফাঁকে একটু স্মৃতিচারণ অজিত ও সুরজিতের। তবে তাঁরা এখন আর ছোট নেই। দু’জনেরই সংসার হয়েছে। পরিবার ভিন্ন হওয়ার কারণে তাঁদের বর্তমান ঠিকানা কলেজপল্লি থেকে একটু দূরে দেবেন্দ্রগঞ্জে। যদিও কাকা ভাইপোর দোকান একই জায়গায় শ্রীনিকেতন রোডে। সংসার ধর্ম, কর্মব্যস্ততার মাঝে ভুলে যাননি শৈশবের কথা। তাই, সারাবছর অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকলেও অপেক্ষা করে থাকেন কখন রথ আসবে। বর্তমানে কাকা ও দুই ভাইপো মিলে তৈরি করেন রকমারি রথ। ছোটদের সেই রথ তৈরি করতে লাগে কাঠ, ম্যাশনাইড বোর্ড, প্লাইবোর্ড সহ পেরেক ও আঠা। ছোট, মাঝারি ও বড় এই তিন সাইজের রথ তাঁদের কাছে পাওয়া যায়। সেগুলি বিক্রি হয় মূলত ৪০০, ৫০০ ও ৬০০ টাকায়। তাঁদের দোকানের পাশেই রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও বোলপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ফলে, বোলপুরের প্রায় সমস্ত কচিকাঁচারা জানে তাঁদের কাছে রকমারি নানা সাজের রথ পাওয়া যায়। প্রতিবছর প্রায় দুশো থেকে আড়াইশো রথ বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন লালু শর্মা ও তাঁর দুই ভাইপো। তাঁদের কথায়, স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে খুদে পড়ুয়ারা প্রতিদিন রথ তৈরির কাজ দেখতে ভিড় করে। রথ আসতেই তাদের চোখেমুখে অদ্ভুত কৌতুহল ও অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়। কারণ, রথ প্রস্তুত হওয়ার পরেই তাদের বাবা-মার কাছে শুরু হয় বায়না। তারা কিনলে আমাদের উপার্জন হয় ঠিকই, কিন্তু বাচ্চাদের মুখে হাসিটার মূল্য টাকা দিয়ে হয় না। • নিজস্ব চিত্র