উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
সোমবার সন্ধ্যার বৃষ্টি জেলাবাসীকে সাময়িক স্বস্তি দিলেও কয়েকদিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহে জেলাবাসীর নাজেহাল অবস্থা। সূর্যের প্রখর তাপে জেলার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ঘরে ঘোরাফেরা করছে। রোদে তপ্ত বীরভূমের এই পরিস্থিতি সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রপ্রেমীরা বছরভর ভিড় জমান তাঁর বসবাস করা বাড়ি, সামগ্রী ও সৃষ্টি দেখতে। সর্বোপরি বিশ্বভারতী দেখতে মানুষ ভিড় জমান। কিন্তু এবার প্রচণ্ড গরমের কারণে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা মুখ ফিরিয়েছেন শান্তিনিকেতন থেকে। স্কুলগুলিতে টানা দু’মাস ছুটি থাকলেও গরমের ভয়ে কেউই এমুখো হচ্ছেন না। রবীন্দ্র ভবন থেকে পাওয়া তথ্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে পর্যটক কমে গিয়েছে শান্তিনিকেতনে। কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাম্প্রতিককালে ৩০ ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম হয়েছিল রবীন্দ্রভবনে। সেদিন সংখ্যাটা ছিল ৪ হাজার ৪৪৮। এছাড়াও অন্যান্য দিনগুলিতেও চার হাজারের উপরেই থেকেছে সংখ্যাটা। এছাড়া স্কুলগুলিকে শিক্ষামূলক ভ্রমণের জন্যও আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তাই অনেক স্কুলই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আসছেন। এতে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল পড়ুয়া পর্যটক আসার সংখ্যা। মার্চ মাসের একদিন তা প্রায় ১৫০০ কাছাকাছি পৌঁছে যায়। কিন্তু এই গরমে সেই সংখ্যাও কমে গিয়েছে। ১১ মে রবীন্দ্রভবনে আসা পর্যটক সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৯৯, এছাড়া রয়েছে ৩৯ জন পড়ুয়া। ১২ মে ২৮৩জন পর্যটক রবীন্দ্রভবনে এসেছিলেন।
এই পর্যটক শূন্য পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন এখানকার গাইডরা। প্রশিক্ষিত গাইডরা ২৫০ টাকার বিনিময়ে বিশ্বভারতীর নানা এলাকায় পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখান। কিন্তু তাঁদের দাবি, প্রতিদিন গড়ে একটি করে দলও পাচ্ছেন না এক-একজন গাইড। পর্যটক না থাকায় তাঁদের রেটও কমে দাঁড়িয়েছে একশো টাকায়। এই অবস্থায় সংসার চালানো রীতিমতো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে তাঁদের। গাইড সুব্রত ঘোষ বাগ বলেন, অন্য সময়ে এই এলাকায় তিলধারণের জায়গা থাকে না, অথচ এখন পুরো এলাকা ফাঁকা। শনি, রবিবার ছাড়া পর্যটকদের দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছি আমরা। ২১ জন গাইড রয়েছি, কিন্তু একটি পরিবারও এখানে ঘুরতে আসছে না। কী করে আমাদের চলবে।
অন্যদিকে, বসন্ত উৎসব, পৌষমেলার সময়ে যে হোটেলগুলিতে ঘর পাওয়া লটারি পাওয়ার সমান এখন সেইসব হোটেলের ঘরই ফাঁকা পড়ে। ঘর ভাড়া কমিয়েও পর্যটক পাচ্ছেন না তাঁরা। বোলপুর হোটেল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রসেনজিৎ চৌধুরী বলেন, খুবই খারাপ অবস্থা। গত বছরও এমন পরিস্থিতি ছিল না। এবার যেন বেশি প্রভাব পড়েছে।
তবে শুধু গরম নয়, এই পর্যটকশূন্য পরিস্থিতি হওয়ার পিছনে আরও একটি কারণ হল ভোট। এপ্রিল, মে মাসজুড়ে সাত দফায় রাজ্যে লোকসভা নির্বাচন চলছে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা যেমন ভোট নিয়ে ব্যস্ত তেমনই রাজনীতি সচেতন বাঙালিও ভোট উৎসব নিয়েই মেতে রয়েছে। তাই আপতত ভ্রমণে ভাটা পড়েছে বাঙালিদের। যার সরাসরি প্রভাব এসে পড়েছে শান্তিনিকেতনে। এখানে আসা শান্তি চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমাদের এক সাথে ১৫জনের আসার কথা ছিল। কিন্তু গরমের কথা শুনে বাকিরা আসতে চাইল না, আমি একাই চলে এলাম। যা গরম পড়েছে কী করে মানুষ আসবে বলুন। প্রবীণ আশ্রমিক অনিল কোনার বলেন, গরমে পর্যটক সংখ্যা কমে যায়। কিন্তু এবার যেন একটু বেশিই প্রভাব পড়েছে।