শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
ঠিক কী হয়েছিল ফুলবাগানে? ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তথা স্থানীয় বাসিন্দা মায়া হরি জানাচ্ছেন, সন্ধ্যা তখন সাতটা হবে। হিজাবে মুখ ঢাকা বোরখা পরিহিত এক মহিলা কার্যত দৌড়ে পালাচ্ছিল। পিছনে সবাই ‘ছেলে ধরা’ বলে চিৎকার করে তাড়া করছিল। ফুলবাগান নিউ স্পোর্টিং ক্লাবের সামনে তাকে ধরে ফেলে সবাই। জিজ্ঞাসা করলেও ওই মহিলা কিছুতেই নাম বলছিল না। এমনকী কেন এখানে এসেছে, তারও কোনও জবাব দেয়নি।
ততক্ষণে এলাকার বাসিন্দাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে শুরু করেছে। বাড়ছিল সন্দেহের বাতাবরণ। এরমধ্যেই স্থানীয় এক মহিলা বোরখা পরা ওই মহিলার হিজাব সরাতেই দেখা গেল, আর পাঁচজন মহিলার মতো মাথায় চুল নেই! বদলে মাথায় রয়েছে টুপি। এবার বোরখার একাংশ সরাতেই দেখা গেল, আদৌ মহিলা নয়, সে আসলে প্যান্ট-শার্ট পরা যুবক! ফলে ‘ছেলে ধরা’র তত্ত্ব আরও জোরদার হয়ে উঠল। ‘ছেলে ধরা’ হানা দিয়েছে, এই বার্তা রটে গেল ডোমপাড়ায়। সন্দেহের বশেই শুরু হল মারধর।
স্থানীয় একটি অটো পার্টস-এর দোকানের মালিক শঙ্কর দাস জানালেন, ‘ছেলে ধরা’ সন্দেহে তখন হইচই শুরু হয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতা পুলিসের ‘১০০ ডায়াল’-এ ফোন করি। কিন্তু কেন জানি না, ফোনটা বাজল না। হঠাৎ দেখলাম, বাইকে চেপে ফুলবাগান থানার দুই পুলিস কর্মী ঘটনাস্থলে এলেন। এরপরই আসেন আরও দুই পুলিস কর্মী। কিন্তু উন্মত্ত জনতার তাড়া খেয়ে তাঁরা বাধ্য হন এলাকা ছাড়তে। পরে ডিসি (ইএসডি) দেবস্মিতা দাসের নেতৃত্বে এসি (ইএসডি) উত্তম মুখোপাধ্যায় ও ফুলবাগান থানার ওসি বাড়তি পুলিস এনে হাল্কা লাঠিচার্জ করে উদ্ধার করে বোরখা পরা ওই যুবককে। কিন্তু ততক্ষণে জনতার রোষে জখম হয়েছেন ফুলবাগান থানার এক সাব ইন্সপেক্টর সহ অন্তত জনা তিনেক পুলিস কর্মী। তবে লাঠিচার্জের কথা লালবাজার স্বীকার করেনি।
গুরুতর জখম অবস্থায় ওই যুবককে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মাথায় ১৫-১৬টি সেলাই পড়েছে। যুবকের পাঁজর ও বাঁ হাতের কব্জির হাড় ভেঙেছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। ওই যুবক আদতে নারকেলডাঙা থানার চমরু সিং লেনের বাসিন্দা, নাম আসিফ। বাবা নেই। বাড়িতে মা আর সাত ভাই রয়েছে। এই যুবক এলাকায় ‘রূপান্তরকামী’ বলে পরিচিত। অতীতেও বোরখা পরে রাস্তায় ট্যাক্সি থামিয়ে টাকা তুলতে গিয়ে প্রহৃত হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিসকে এমনই তথ্য দিয়েছেন আসিফের এক দাদা।
‘ছেলে ধরা’ গুজব নিয়ে ঘন ঘন মাইকে প্রচার চালাচ্ছে কলকাতা পুলিস। কিন্তু তবুও ফুলবাগানে এমন ঘটনা কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ডোমপাড়ার বাসিন্দা দুলারি বাল্মিকীর বললেন, আমরা কী করব? শুনেছি, শুক্রবার দুপুরে ফুলবাগান সুরোকন্যা স্কুল থেকে দুটি মেয়েকে চুরি করে পালিয়েছে বোরখা পরা এক মহিলা। আবার, ২১ ফেব্রুয়ারি কাদাপাড়া থেকে একটি মেয়ে চুরি গিয়েছে। তাই আমরা খুব ভয়ে আছি। যদিও পুলিসের কাছে ছাত্রী নিখোঁজের এমন কোনও তথ্য নেই। সত্যি কথা বলতে, ফুলবাগান থানার এই বস্তিতে এমনই হাজার গুজব ভেসে বেড়াচ্ছে। যার পরিণতিতে শুক্রবার সন্ধ্যার ওই গণপিটুনি!