দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের সুফল আশা করতে পারেন। শেয়ার বা ফাটকায় চিন্তা করে বিনিয়োগ করুন। ব্যবসায় ... বিশদ
জেশানকে ভালোবেসে এক কথায় নিজের দেশ ছেড়ে তার সঙ্গে গ্রিসে চলে আসে মেদেয়া। এখানেই জন্ম হয় তার দুই পুত্রের। কিন্তু মেদেয়ার ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে রাজা হওয়ার লোভে, সম্পদ আর যশের লোভে, রাজার মেয়েকে বিয়ে করতে সম্মত হয় জেশান। সে মেদেয়াকে ত্যাগ দিতে চায়। তাকে এদেশ ছেড়ে চলে যেতে বলে। চলে যাবার আগে মেদেয়া একবার দেখতে চায় রাজকন্যাকে, যার সঙ্গে বিয়ে হবে জেশানের। মেদেয়া তাকে দিয়ে যেতে চায় পবিত্র ভেড়ার স্বর্ণ লোম। যা একসময় নিজের দেশ থেকে চুরি করে এনেছিল মেদেয়া। জেশান রাজি হয়, রাজকন্যা দেখা করতে আসে মেদেয়ার সঙ্গে। এই সুযোগকে হাতছাড়া করে না মেদেয়া। আগুনে পুড়িয়ে মারে রাজকন্যাকে। অসাধারণ দৃশ্যবিন্যাসের মধ্যে দিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যটির মঞ্চায়ন, মুগ্ধ হয়ে দেখি। প্রতিশোধ নেওয়ার উল্লাসে উন্মাদিনী মেদেয়া নিজেই যেন জলন্ত স্ফুলিঙ্গ! মেদিয়া চরিত্রে কী অসাধারণ হয়ে উঠলেন সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়। বুঝতে পারছিলাম আগামী ১ সেপ্টেম্বর, আলোর বিন্যাসে (সুদীপ সান্যাল), সাজসজ্জার (নিলয় সেনগুপ্ত) চমৎকারিত্বে, মঞ্চ ভাবনার (সৌমিক-পিয়ালি) অভিনবত্বে আর বলিষ্ঠ অভিনয় এবং প্রপসের নিখুঁত ব্যবহারে অন্যরকম উচ্চতা পাবে ‘মেদেয়া’র প্রথম মঞ্চায়ন।
বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতার নিরিখে নির্দেশক তপনজ্যোতি জানালেন, ‘আসলে পুরুষ-নারীর ব্যাপার নয়, রাষ্ট্রের স্বৈরাচারী ভূমিকা, যা সবসময় কুক্ষিগত করতে চায় নারীকে। ছেলেদের ক্ষেত্রে সমাজের এক নিয়ম, মেয়েদের ক্ষেত্রে আবার অন্যরকম। মেয়েদের ক্ষেত্রে সমাজের দেখার চোখই আলাদা। সেই দিক থেকে আজও নারীর অবস্থানগত পরিবর্তন হয়েছে কি? তাই মেদেয়া প্রাসঙ্গিক।’
শুধুমাত্র এটুকুই নয়। মার্কিন সরকারের যে অভিবাসন নীতি বা অমাদের দেশে নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বিতর্ক, সেই বিষয়গুলিকেও একটু অন্যভাবে, নারীর প্রেক্ষিতে এই নাটকে এনেছেন নির্দেশক। তপনজ্যোতি বললেন, ‘যে মেয়ে শুধুমাত্র ভালোবেসে নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে এসে নিজের সবটা দিল, সেই দেশের রাজা তাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলছে। দশ বছর পর রাষ্ট্র তাকে বলছে তুমি এ দেশের কেউ নয়, তুমি বহিরাগত। না তুমি আমাদের ধর্মের, না আমাদের জাতের। কাজেই তোমার থেকে আমাদের ক্ষতি হতে পারে। অর্থাৎ যে কোনও মুহূর্তে রাষ্ট্র আমাদের বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করে দিতে পারে।’
আসলে নারীর কোনও ঘর নেই, পরিচয় নেই, ঠিকানা নেই। সে পুরুকের ওপর নির্ভরশীল। যুগের পর যুগ ধরে এভাবেই সমাজ আমাদের ভাবতে শিখিয়েছে, রাষ্ট্র আমাদের দেখতে শিখিয়েছে। তাই এই সময়ে দাঁড়িয়ে মেদেয়া প্রাসঙ্গিক। পুরুষের তৈরি সমাজে যাবতীয় অত্যাচার, মিথ্যাচার, প্রবঞ্চনার বিরুদ্ধে মেদেয়া এক ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নেয়, যা আজ পর্যন্ত কোনও মা ভাবতে পারেনি। কী সেই সিদ্ধান্ত? জানতে হলে অবশ্যই দেখতে হবে রঙ্গপটের নতুন প্রযোজনা ‘মেদেয়া’। প্রথম মঞ্চায়ন আগামীকাল, রবিবার, অ্যাকাডেমিতে, দুপুর ৩টে এবং সন্ধে ৬-৪৫।