মৃৎশিল্পী, ব্যবসায়ী প্রমুখদের বিশেষ কর্মোন্নতি যোগ প্রবল। পেশাদারি কর্মে শুভ ফল প্রাপ্তি। মানসিক চাঞ্চল্য। ... বিশদ
এই গ্রামটি রাজনগর থেকে ৮ থেকে ১০ কিমি দূরে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামতাড়া জেলার অন্তর্গত। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, এই গ্রামের সকলেই বাংলা ভাষাতে কথা বলছেন। নিজেদের বাঙালি বলে গর্বও করছেন। জানা যায়, ১৮৫৬ সালে যখন সাঁওতাল পরগনা ভাগ হয়, সেই সময় থেকে বিহারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় এই গ্রামগুলি। খাজুরী গ্রাম এর মধ্যে অন্যতম। ওই পঞ্চায়েত এলাকায় এই একটি মাত্রই দুর্গাপুজো হয়। কেউ কেউ সিংহ বাড়ির পুজো বলেন। গ্রামে দেড়শোর উপর রাজপুত সিংহ পরিবারের বসবাস। তাঁরা সকলে মিলে এই দুর্গাপুজো করে আসছেন। তবে ঠিক কোন সময় থেকে এই পুজো হয়ে আসছে, তা কেউই বলতে পারলেন না। কেউ বলছেন, দেড়শো বছরের কেউ বলছেন ২০০ বছরের। তবে জানা গেল, সিউড়ির কোনও গ্রামের উত্তরাধিকার সূত্রে এই পুজো হয়ে আসছে। মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে এই নিয়ে কথা হচ্ছিল জয়ন্ত সিংহের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, এটা গোটা গ্রামের পুজো। আর মহালয়া থেকেই নিরামিষ খাওয়া শুরু করেছেন গ্রামের প্রত্যেকেই। যেখানে যত আত্মীয় আছেন, তাঁরা সকলে এই পুজোর ক’টা দিন গ্রামে হাজির থাকেন। পুজোয় কুমড়ো বলি হয়। গোটা গ্রামের লোক একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেন। আশপাশের ১০ কিমি এলাকা জুড়ে কোনও দুর্গাপুজো নেই। ফলে সকলেই এখানে ছুটে আসেন। সিউড়ি থেকেও লোকজন পুজো দেখতে আসেন।
পুজো কমিটির সভাপতি অশোককুমার সিংহ বলেন, মায়ের নামে প্রচুর সম্পত্তি আছে। সেই সম্পত্তি থেকেই পুজোর যাবতীয় খরচপাতি ওঠে। এছাড়াও যাত্রা, পালাকীর্তন হয়ে থাকে। খয়রাশোল থেকে পুরোহিতরা পুজো করতে আসেন। গোটা গ্রাম মহালয়ার দিন থেকেই আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে। এখন চলছে প্রস্ততির শেষ লগ্নের কাজ।
অন্যদিকে, বাঙালিদের দুর্গাপুজোকে ঘিরে উন্মাদনা দেখা গেল বীরভূম লাগোয়া এই সব গ্রামগুলিতে। এখনও কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ না পৌঁছলেও মানুষজন পুজোকে কেন্দ্র করে রাজনগর বাজারে এসে কেনাকাটা করেন। সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পার্থশঙ্খ মজুমদার বলেন, সাঁওতাল বিদ্রোহকালীন এই বাঙালি অধ্যুষিত গ্রামগুলি ভিন রাজ্যের দিকে চলে যায়। তা সত্ত্বেও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি তাঁরা বহন করে চলেছেন। দুর্গাপুজোকে ঘিরেও তাঁরা ব্যাপক উন্মাদনায় মাতেন। খাজুরীতে দুর্গাপুজোর ইতিহাসও বোধহয় সেইরকমই।