মৃৎশিল্পী, ব্যবসায়ী প্রমুখদের বিশেষ কর্মোন্নতি যোগ প্রবল। পেশাদারি কর্মে শুভ ফল প্রাপ্তি। মানসিক চাঞ্চল্য। ... বিশদ
সীমান্তবর্তী ব্লক করিমপুর। সেখানকার বাসিন্দারা বলছিলেন, এই সময়টার জন্যই তো বছরভর সকলে অপেক্ষায় থাকি। ঘরবাড়ি, পরিবার পরিজন ছেড়ে এলাকার বহু মানুষে কষ্ট-যন্ত্রণা উপেক্ষা করে ভিন রাজ্যে বা ভিন দেশে কাজ করেন। তাই পুজোর আগে তাঁদের বাড়ি ফেরায় আনন্দ-উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে পারেন না কেউই।
মুরুটিয়ার দীঘলকান্দি গ্রামে এখন সাজোসাজো রব। ভাল রোজগারের জন্য এই গ্রামের প্রায় চারশো জন ছেলে বিভিন্ন রাজ্যে কিংবা বিদেশের নানা জায়গায় কাজ করেন। গত দশ দিনে তাঁদের মধ্যে প্রায় আড়াইশো ছেলে ঘরে ফিরেছেন। তাঁদেরই একজন নির্মাণ কাজের ঠিকাদার প্রসেঞ্জিৎ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘কাজের সূত্রে দীর্ঘ সময় আমি বেঙ্গালুরুতে থাকি। বছরের অন্য সময়ে আসা হোক বা না হোক পুজোতে প্রতি বছর বাড়িতে আসতেই হয়। বাড়িতে বাবা মা, স্ত্রী ও এগারো বছরের ছেলে রয়েছে। তাদের তো পুজোর ক’টা দিন আমার সঙ্গে আনন্দে কাটাতে মন চায়। তাই অন্য বছরের মত এবারেও সাত দিন আগেই বাড়ি ফিরেছি। ওখান থেকে বাড়ির সকলের জন্য নতুন পোশাক ও অন্যান্য জিনিস কিনে এনেছি। বাড়ির সকলেই খুশি।’ দশ দিন আগে বাড়ি ফিরেছেন মুরুটিয়ার হরকুমার বালা। তাঁর স্ত্রী সুপ্রিয়া বালা বলেন, ‘আমার স্বামী গত একুশ বছর আগে থেকে দুবাইয়ে কাজ করেন। বাড়িতে দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে থাকি। গত দু’ বছর ইচ্ছে থাকলেও স্বামী আসতে পারেন নি। বাধ্য হয়েই পুজোর মধ্যে আমার ছেলে-মেয়ের বাবাকে ছাড়াই পুজো কেটেছে। এবার সবাই মিলে খুব ঘুরব বলে পরিকল্পনা রয়েছে।’
পুজোর ছুটি মিলতেই কেরালা থেকে ট্রেনে চাপেন হোগলবেড়িয়ার উত্তম বিশ্বাস। সংরক্ষিত আসন না পেয়ে সাধারণ টিকিটেই ৪৮ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে সাঁতরাগাছি স্টেশন। সেখান থেকে বাসে শিয়ালদহ। তারপর প্রায় পাঁচ ঘণ্টার পথ তিনি ট্রেনে দাঁড়িয়ে বহরমপুর হয়ে বাড়ি পৌঁছন। উত্তম জানান, ‘খুব লম্বা রাস্তা। ট্রেনে বাসে আসতে কোমরে অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছিল। কিন্তু বাড়ি ফিরে ছেলেকে দেখার আনন্দে ওই কষ্টকে কিছু মনে হয়নি।’ উত্তমের মা চায়নাদেবী বলেন, ‘পুজোর সময় বাড়ির লোকজন বাইরে থাকলে কারও ভাল লাগে না। এখন গোটা বাড়ি তো বটেই, সারা পাড়া জুড়েই পুজোর আনন্দ শুরু হয়ে গিয়েছে।’
পেশায় রাজমিস্ত্রি বিবেক মণ্ডল কর্মসূত্রে দিল্লি থাকেন। বিবেক বলেন, ‘গতবছর পুজোতে বাড়ি ফিরতে পারিনি। এবারেও ছুটি পাচ্ছিলাম না। ট্রেনের টিকিট কাটার সময় দেখি ট্রেনের সব আসন সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছিল। শেষে বেশি টাকা দিয়ে বিমানের টিকিট কেটে অল্প সময়ে বাড়ি চলে এসেছি। প্রথমে বিলাসিতা মনে হলেও এখন মনে হচ্ছে ঠিক করেছি। পুজোর আগে বাড়িতে তো ফিরতে পারলাম।’
স্বজনদের কাছে পাওয়ার আনন্দও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের মাহাত্ম্য। করিমপুরে না এলে তা আঁচ করা যায় না।