শ্রীকান্ত পড়্যা, তমলুক: সামাজিক ব্যঙ্গ বিদ্রুপ ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে তমলুকের সুচন্দ্রা সামন্ত এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হলেন। তমলুকের নিশ্চিন্তবসানের খর্বকায়া সুচন্দ্রা জন্ম থেকেই অ্যাকন্ড্রোপ্লাসিয়ায় আক্রান্ত। একটা সময় উচ্চতা ছিল মাত্র তিনফুট। হাত ও পা বাঁকা। রাস্তায় বেরলেই লোকজন কৃপাদৃষ্টিতে তাকাতেন। ভেলোরে ধারাবাহিক চিকিৎসায় মোট ন’বার অপারেশন হয়। হাত ও পায়ের হাড় কেটে সোজা করা হয়। উচ্চতা তিন ফুট থেকে বেড়ে হয় সাড়ে চার ফুট। সেই সুচন্দ্রা এখন তাম্রলিপ্ত গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী। ১অক্টোবর থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে। জীবন সংগ্রামে নজির তৈরি করা সুচন্দ্রার হাত দিয়েই এবার পুজো উদ্বোধন করাতে চাইছে কোলাঘাটের নতুন বাজার সংকেত ক্লাব। আজ, শনিবার সকাল ১০টায় তাঁর হাত দিয়েই জ্বলে উঠবে মঙ্গলদীপ।সুচন্দ্রারা এক ভাই ও এক বোন। দাদা সৌম্যদীপ শারীরিক গঠন স্বাভাবিক হলেও ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী অবস্থায় জন্ম নেন সুচন্দ্রা। হাঁটাচলা কিংবা দাঁড়ানো কোনওটাই করতে পারতেন না। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, কৃপা ও করুণা ছিল তার নিৎসঙ্গী। পড়াশোনার বরাবরের জন্য ভালো। কিন্তু, শারীরিক গঠনের জন্য নানাভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। সরকারি অফিসার বাবা শম্ভুনাথ সামন্ত ও মা মিতালি সামন্ত মেয়েকে স্বাভাবিক করার জন্য অদম্য লড়াই করেন। ন’দফায় বড় অপারেশন হয়। কোমরে হাড় কেটে পায়ে লাগানো হয়েছে। একটার পর একটা জটিল অপারেশন করে বাঁকা হাত, পা সোজা করা হয়। উচ্চতাও কিছুটা বাড়ে। খর্বকায়া সুচন্দ্রাকে তমলুক শহরের নামী স্কুলে ভর্তি করানোর চেষ্টা করেও এক সময় ব্যর্থ হন বাবা-মা। বাধ্য হয়ে পাঁশকুড়ার হাউরে মামার বাড়িতে থেকে নিবেদিতা গার্লসে ভর্তি হন। ২০২১ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৮১শতাংশ নম্বর পান। এরপর ঘোষপুর হাইস্কুল থেকে ২০২৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক দেন। এবছর সর্বভারতীয় নিটে সুচন্দ্রার র‌্যাঙ্ক ছিল ৩২২৭। তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। খর্বকায় দেহ নিয়ে জীবনে অনেক ঝড়ঝাপটা সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু, নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিলেন সুচন্দ্রা। অপমান, বিদ্রুপ গায়ে না মেখে পড়াশোনা করে নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। এখন তিনি এমবিবিএস পড়ুয়া। এত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এই জায়গায় পৌঁছনো লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা সুচন্দ্রা। তিনি বলেন, জন্ম থেকেই নিজের শরীরের সঙ্গে লড়াই করেছি। এবার চিকিৎসক হয়ে অন্যের রোগের চিকিৎসা করব। সুচন্দ্ররা লড়াইকে জনসমক্ষে তুলে ধরতে কোলাঘাটের সংকেত ক্লাব তাঁর হাত ধরেই পুজো উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংকেত পুজো কমিটির পক্ষে শুভঙ্কর বসু বলেন, এই সমাজে নানাভাবে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে সুচন্দ্রার মতো অনেকে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার নিরন্তর লড়াই করছেন। তাঁদের উৎসাহ জোগাতে, প্রেরণা দিতে আমরা সুচন্দ্রাকে সম্মান জানাতে চাই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছবি আঁকবেন হুইল চেয়ারনির্ভর চিত্রকর বিজয় খাঁড়া। পথ নিরাপত্তা নিয়ে বার্তা দিতে পুজোয় উপস্থিত থাকবেন দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো কলেজছাত্রী সুনীতা ভার্মা ও মেঘা ঘোষ।