পরিবারের কারও স্বাস্থ্য অবনতিতে মানসিক চিন্তা। অপ্রিয় সত্য কথার জন্য সামাজিক ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারেন। ... বিশদ
মোবাইল বাজার দখল করার পর যখন অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে বলে, ‘গেল গেল রব’। তখন একটি খবর দিল গ্রিটিংস কার্ড। জানা গেল, নববর্ষ প্রাক্কালে কার্ডের বিক্রি কমেও কমেনি। শহরে চল একটু কম বটে তবে মফস্সলে চুটিয়ে দৌড়চ্ছে এই বার্তাবাহক। তাতে লেখা চমৎকার সব প্রেম-বিরহের কথা। যা আজকাল বাঙালি পড়েও পড়ে না। যেমন, ‘মিলেমিশে আছি এই স্নেহ মায়া বন্ধনে/ দুঃখ যদি আসে সুখের ঠিকানা মন জানে।’ ইত্যাদি।
এ বছর এসব লেখা কার্ডগুলির নাম হল, ‘চিরসাথী’, ‘শুধু দু’জনে’ ইত্যাদি। এগুলি বড়দের। আর বাচ্চাদের পছন্দ ‘ছোটা ভিম’, ‘মোটু-পাতলু’ ‘টেডি বিয়ার’ আরও কত কি! বড়বাজারের ক্যানিং স্ট্রিটে দেদার বিক্রি ছোট-বড়-মাঝারি গ্রিটিংসের। শহরতলি বা গ্রামের ছোট দোকানদাররা ডজন ডজন কিনছেন। তাঁরা বলেন, ‘ছোটদের কার্ড ছাড়া একেবারে চলে না।’ হুগলির ব্যান্ডেল থেকে এসেছিলেন প্রিয়া দাস। বললেন, ‘সাত হাজার টাকার কিনলাম। ব্যান্ডেলে ভালো বিক্রি।’ একই সুর হাওড়ার ডোমজুড়ের বৃন্দাবন প্রামাণিকের। বললেন, ‘আমার দোকান কোচিং সেন্টারের পাশে। ছোটরা গ্রিটিংস কেনার জন্য এ সময় হামলে পড়ে।’ ছোটরা শুধু কেন? তরুণ-তরুণীরাও কম কিনছেন না। ‘চিরসাথী’ এবং ‘শুধু দু’জনে’ কার্ড এ বছরের হট কেক। পেল্লাই সাইজের সে কার্ড খুললেই নজরকাড়া নকশা। সঙ্গে ভালোবাসার ছড়া। উল্টোডাঙার সুপ্রকাশ বসাক কিনে বললেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় পাঠানো মেসেজ ডিলিট হয়ে যাবে। কিন্তু এই কার্ড থেকে যাবে। তাই এখনও অনেকের কার্ডই পছন্দ।’ বালির এক দোকানদার বললেন, ‘আমাদের ওখানে এখনও প্রিয়জনকে নিজের হাতে কার্ড দেওয়ার রেওয়াজ। একটা আলাদা অনুভূতি, বুঝলেন তো।’ ইংরেজির পাশাপাশি চাহিদা বাংলায় লেখা কার্ডেরও। তার ছত্রে ছত্রে বাংলার হৃদয়ের কথা। বড়বাজারের এক দোকানদার বললেন, ‘আগের মতো বিক্রি নেই তবে খুব একটা কমেছে বলা যায় না। এ বছর ৪০ হাজার টাকার কার্ড তুলেছি। বিক্রি ভালোই হচ্ছে।’
সবমিলিয়ে দেখা গিয়েছে, মোবাইলের প্রবল ধাক্কার পরও বাংলার গ্রিটিংস মোটেও পিছু হটেনি। মেসেজ মুছে যাচ্ছে কিন্তু ছাপার অক্ষরে লেখা কবিতা থেকে যাচ্ছে স্থায়ী হয়ে। বোঝা গেল, কাগজে নাম লিখলে ছিঁড়ে যাবে, মান্না দে’র এ আশঙ্কা গ্রিটিংস কার্ডের জন্য মোটেও ছিল না। নববর্ষ উল্টে জানিয়ে দিল, কার্ডে লেখা বার্তা কাগজ থেকে উঠে লেখা হয়ে থেকে যাচ্ছে হৃদয়ে-‘মনের কোণে আমার আমি/তোমায় ছুঁতে চাই/হয়ত তোমার চোখের জলে/বৃষ্টি হতে চাই।’