পারিবারিক ক্ষেত্রে বহু প্রচেষ্টার পর শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা। সন্তানের কর্ম উন্নতিতে আনন্দ লাভ। অর্থকর্মে শুভ। ... বিশদ
শুক্রবার সকালে কথা হচ্ছিল মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা পেশায় চিকিৎসক রাজীব দে’র সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘আমি চিকিৎসাক্ষেত্রে বহুবার আরএল স্যালাইন ব্যবহার করেছি। বহু রোগী স্যালাইন পেয়ে সুস্থ হয়েছেন। এখন সেই স্যালাইন নিষিদ্ধ। তবে আমার মনে হয়, শুধুমাত্র স্যালাইন ব্যবহার করার ফলেই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে, এমনটা ঠিক নয়। অস্ত্রোপচারেও কোনও সমস্যা থাকতে পারে। আশা করছি, পূর্ণাঙ্গ তদন্তের শেষে সবটাই পরিষ্কার হবে।’
মেদিনীপুর মেডিক্যালে এখনও ভর্তি সন্তোষ সাউয়ের স্ত্রী রেখা সাউ। এদিন সন্তোষবাবু বলছিলেন, ‘সন্তানকে হারালেও স্ত্রী বর্তমানে সুস্থ। আমার মনে হয় চিকিৎসকদের গাফিলতি রয়েছে। যদি স্যালাইনে ত্রুটি থাকে তা হলে কেন সেই স্যালাইন চিকিৎসকরা দিলেন? তা ছাড়াও লক্ষ্যণীয় বিষয়, স্যালাইনে শুধু পাঁচজন প্রসূতির সমস্যা হল। বাকি রোগীদের কেন হল না? এসবের দায় কি চিকিৎসকরা এড়াতে পারেন? শুধু সাসপেন্ড করলে হবে না, কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’
গত ৮ জানুয়ারি বুধবার প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মেদিনীপুর হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগে ভর্তি হন পাঁচ প্রসূতি। ওইদিনই সিজারিয়ান পদ্ধতিতে তাঁদের অস্ত্রোপচার হয়। কিছু সময় তাঁরা ভালো ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একে একে অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করেন। প্রায় ১২ ঘণ্টা তাঁদের প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। ৫ প্রসূতিকে স্যালাইন সহ কমন পাঁচ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। যেমন অক্সিটোসিন, বমির ওষুধ, স্পাইনাল অ্যানাস্থেসিয়া দেওয়ার বুপিভ্যাকেন অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন ও সেপট্রিয়াজোন ইঞ্জেকশন। তাতেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। ১০ জানুয়ারি , শুক্রবার ভোরে মামণি রুইদাস (২২) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। ঘটনাটি সামনে আসার পরেই মেডিক্যাল কলেজ জুড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রসূতিদের পরিবারের সদস্যরা। তড়িঘড়ি তিন প্রসূতিকে গ্রিন করিডর করে কলকাতার পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখনও এক প্রসূতি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। বাকি প্রসূতিদের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল। তারপরেই স্যালাইন নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় গোটা রাজ্যে। স্বাস্থ্যদপ্তরের এক আধিকারিকের মতে, অস্ত্রোপচারে ভুল হয়েছে। সেটা মেনে নিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। সিআইডির তদন্তেও অস্ত্রোপচারের গাফিলতির নানা দিক উঠে এসেছে। সিনিয়র কেউ থাকলে এই সমস্যা হতো না। মেদিনীপুর বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্রতীক দে বলছেন, ‘স্যালাইনে সমস্যা থাকলে তো কয়েকশো প্রসূতি মারা যেতেন। খবরের কাগজ পড়ে মনে হচ্ছে, স্যালাইন কাণ্ড সামনে এনে বাঁচার চেষ্টা করছেন অনেকেই। টানা জেরা করলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।’