মৃৎশিল্পী, ব্যবসায়ী প্রমুখদের বিশেষ কর্মোন্নতি যোগ প্রবল। পেশাদারি কর্মে শুভ ফল প্রাপ্তি। মানসিক চাঞ্চল্য। ... বিশদ
উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়া রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা রুহিদাস ধরের বয়স প্রায় ৮৭। বাড়িতে দুই ছেলে ও বউমারা রয়েছে। তবে, বৃদ্ধকে দেখে না কেউই। বার্ধক্য ভাতার টাকায় ওষুধটুকু হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর জন্য রান্না করে দিতে নারাজ পুত্রবধূরা। অভিযোগ, সপ্তাহ দুয়েক আগে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় রুহিদাসবাবুকে। অপমানে কোনওক্রমে কাঁচড়াপাড়া স্টেশন থেকে শান্তিপুরগামী লোকাল ট্রেনে চেপে বসেন তিনি। এরপর শান্তিপুর শহরের রাস্তাই তাঁর ঠিকানা। গত এক সপ্তাহ থানাপাড়া এলাকার বাসস্টপে শুয়েই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। যাত্রীরা ভিখিরি ভেবে দু’টাকা, পাঁচ টাকার কয়েন ছুঁড়ে দেন তাঁর দিকে। কিন্তু, বৃদ্ধের যন্ত্রণা নজর এড়ায়নি তন্তুবায় হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া দীপ মণ্ডলের।
শান্তিপুর থানার পিছনেই লেবুতলা পাড়ার বাসিন্দা দীপ। স্কুলে যাওয়া আসার পথে বৃদ্ধকে পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসেছে সে। কখনও রুটি, জল, বিস্কুট, আবার কখনও মুড়ি-ঘুগনি কিনে বৃদ্ধকে যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে বসে খাইয়ে দিচ্ছে সে। কিশোরের মানবিকতাকে দেখে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় দোকানদাররাও। এখন দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জোগান দিচ্ছেন থানার পাশে থাকা অস্থায়ী ভাতের হোটেলের মালিক। বাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করতেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে বৃদ্ধের। ধুলোমাখা ডান হাতে দু’চোখ মুছে কাঁপা গলায় তিনি বলেন, ভালো করে চিবিয়ে খেতে পারি না আমি। ছেলের বউয়েরা বলেছে, আমার জন্য রুটি তৈরি করে দিতে পারবে না। তাই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি।
শুক্রবার সকালেও অশীতিপর রুহিদাসবাবুকে জল ও বিস্কুট খাইয়ে স্কুলে গিয়েছিল দীপ। সে বলে, কয়েকদিন ধরে দেখছি, দাদু ওভাবেই বাসস্ট্যান্ডে পড়ে রয়েছে। ঠিক করে হাঁটতেও পারে না। দাদুকে দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। তাই টিফিনের জমানো টাকা থেকে দাদুকে খাবার কিনে খাওয়াচ্ছি।
বৃদ্ধের পাশে দাঁড়ানো দীপ নিজের যন্ত্রণার উপলব্ধি থেকেই। দীপ থাকে তার বৃদ্ধ ঠাকুমার সঙ্গে। বাবা ভিনরাজ্যে হোটেলে রাঁধুনির কাজ করেন। দীপের যখন তিন বছর বয়স তখন ওকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছে ওর মা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পরিবার মুখ ফিরিয়ে নিলে কত কষ্ট হয়, তা ওই কিশোর জানে। তাই সবাই বৃদ্ধকে এড়িয়ে গেলেও দীপ পারেনি। স্থানীয় কাউন্সিলার প্রভাতকুমার বিশ্বাস বলেন, পুরসভার নিজস্ব বৃদ্ধাবাসে রুহিদাসবাবুকে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। ওই কিশোর যা করেছে তাতে সব প্রশংসাই কম হয়ে যাবে। নিজস্ব চিত্র