বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে বুধবার কালীঘাট গিয়েছিলেন রানাঘাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রুপালি বিশ্বাস। রাতেই ফিরে এসেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হাঁসখালির ফুলবাড়িতে নিহত বিধায়কের কার্যালয়ে ভিড় করেছিলেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা। দলীয় কর্মীদের আব্দার ছিল রুপালিদেবীর প্রচার শুরু করা। কিন্তু প্রথমদিকে রাজি ছিলেন না তিনি। দু’এক দিন পরে প্রচার শুরু করবেন বলেও জানান। কিন্তু দলীয় কর্মীদের নাছোড় আব্দারে শেষ পর্যন্ত এদিন প্রচার শুরু করে দিলেন। নিজের গ্রাম ফুলবাড়ি থেকেই প্রচার শুরু করলেন তিনি।
আগাম কোনও কর্মসূচির কথা না জানিয়ে দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে গেলেন রুপালিদেবী। হাতজোড় করে নমস্কার করে ভোট দেওয়ার আর্জি জানালেন। রাস্তায় দেখা হওয়া সাধারণ মানুষকেও নমস্কার করলেন। তাঁর সঙ্গে দলবেঁধে দলীয় কর্মীরা যেমন সারাক্ষণ থাকলেন, তেমনই থাকলেন সাধারণ গ্রামবাসীরা। প্রতিবেশী মহিলারাও সারাক্ষণ থাকলেন। তবে এদিন তিনি বেশিক্ষণ প্রচার করলেন না। বেশ কিছু বাড়ির দুয়ারে দুয়ারে যাওয়ার পরেই বাড়ি ফিরে এলেন।
রুপালিদেবী প্রচারে নামায় সত্যজিতের আবেগ ফুটে উঠল। যাঁর বাড়ির দুয়ারেই দাঁড়াচ্ছেন রুপালি, তাঁর চোখ ছলছল করে উঠছে। সকলেই দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন। গ্রামের শিবানী বিশ্বাস, তনুশ্রী দাস বললেন, সত্যজিৎ আমাদের বিপদে আপদে সব সময় থাকত। তার শূন্যস্থানটা আমরা এখন অনুভব করছি প্রতিনিয়ত। তার স্ত্রী ভোটে দাঁড়িয়েছে। তাকে তো আমরা ফেরাতে পারি না। এই গ্রামের সবাই রুপালিকে ভোট দেবে। ও আমাদের ঘরের মেয়ে। ঘরের মেয়ে এমপি হলে আমাদের এলাকার উন্নয়ন আরও হবে।
বস্তুত, রুপালিদেবী প্রচারে নামলে সত্যজিতের ছায়াকেই দেখবেন সাধারণ ভোটাররা এবং এই ‘সিমপ্যাথি’ ভোট রানাঘাট কেন্দ্রে তৃণমূলকে এগিয়ে রাখছে। এছাড়া মতুয়া মতাবলম্বীদের মুখ ছিলেন নিহত বিধায়ক। অসমে এনআরসি রিপোর্টের পর একাধিক আন্দোলন করেছেন সত্যজিৎ। মতুয়াদের নিয়ে একাধিক জনসভাও করেছেন তিনি। ফলে মতুয়াদের ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখবেন সত্যজিৎ জায়া। এদিন রুপালিদেবী বলেন, দলনেত্রী বা দল যা নির্দেশ দেবে, সেই অনুযায়ী কাজ করব। প্রচার শুরু করলাম। আরও করতে হবে। আমার স্বামীকে সকলেই পছন্দ করতেন, তেমনই সকলের আশীর্বাদ পাব আশা রাখি এবং মমতাদির মুখ রাখব। তৃণমূলের দক্ষিণপাড়া অঞ্চল সভাপতি বিজয় বিশ্বাস বললেন, আগাম কর্মসূচি ছাড়াই এদিনের প্রচার। তাতেই প্রচুর মানুষের সমর্থন পেয়েছেন আমাদের প্রার্থী। আগামীদিনে প্রচার আরও জোরদার হবে। ইতিমধ্যে দেওয়াল লিখন প্রায় শেষ। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, দলনেত্রী প্রার্থী করেছেন সত্যজিতের স্ত্রীকে। বিজেপিকে রেকর্ড ভোটে হারিয়ে তিনি জয়ী হবেন।
এদিন রানাঘাট-২ ব্লকের মাঠকুমড়ার একটি মাঠে আয়োজিত মতুয়া মহাসঙ্ঘের অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন রুপালিদেবী। এদিন মতুয়া মহাসঙ্ঘের ধর্মগুরু হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ এর প্রতিকৃতিতে প্রণাম জানিয়ে তাঁর রাজনৈতিক প্রচার শুরু করলেন। মতুয়া সম্প্রদায়ের অসংখ্য মহিলা এদিন তাঁকে বরণ করার জন্য বরণডালা সাজিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। দুপুরের পরপরই মহাসঙ্ঘের অনুষ্ঠানে এসে উপস্থিত হন রুপালি। সঙ্গে কোলে ছিল তাঁর এক বছরের ছেলে সৌম্যজিৎ। মতুয়া মহাসঙ্ঘের মূলমঞ্চে এদিন দুপুরের পর উপস্থিত হয়ে প্রথমেই মঞ্চে রাখা স্বামী সত্যজিৎ বিশ্বাসের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে তাঁকে প্রণাম জানান। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী প্রমথনাথ বসু। তিনি আবার নদীয়া জেলা মতুয়া মহাসঙ্ঘের সভাপতিও। রুপালিদেবীকে রাজনৈতিক পারদর্শী করে তুলতে সকাল থেকেই তাঁর সঙ্গে ছিলেন রানাঘাট উত্তর পূর্ব বিধানসভার বিধায়ক সমীরকুমার পোদ্দার। পরে অনুষ্ঠানে অংশ নেন নদীয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডু ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্প প্রতিমন্ত্রী রত্না ঘোষকর।
এদিন মূলত মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে রুপালিদেবীকে পরিচয় করিয়ে দেওয়াটাই ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের প্রধান লক্ষ্য। মঞ্চ থেকে এদিন তিনি বলেন, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমি রাজনীতিতে এসেছি। স্বামীর রেখে যাওয়া মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য অসম্পূর্ণ কাজগুলি আমি করতে চাই।