নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত তিন সিনিয়র ডাক্তার ঘটনার দিন হাসপাতালে হাজিরা দেওয়ার পর মিনিট দুয়েক ছিলেন। তারপর তাঁরা তড়িঘড়ি বেরিয়ে যান প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে। ঘটনার তদন্তে নেমে এই তথ্য হাতে এসেছে সিআইডির। হাসপাতালে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাঁদের বেরিয়ে যাওয়ার ছবিও হাতে এসেছে তদন্তকারী সংস্থার। এটাকে তাঁরা অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন। তাঁরা কেবলমাত্র হাজিরা খাতায় সই করতে আসতেন। এদিকে অনুসন্ধানের ভিত্তিতে সিআইডির তদন্তকারীরা নিশ্চিত, ডাক্তারদের গাফিলতিতেই প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। সেই কারণেই তাঁদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুন, সরকারি নির্দেশ না মানা সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালের ঘটনায় বৃহস্পতিবারই কেস রুজু করেছে সিআইডি। এদিন ডেপুটি সিএমওএইচের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। তিনি অভিযোগ করেছিলেন পুলিসের কাছে। কারা কারা ওই হাসপাতালে সেদিন ডিউটিতে ছিলেন, ক’টি অপারেশন হয়েছিল, কী স্যালাইন চালানো হয়, সেই সংক্রান্ত একাধিক বিষয় নিয়ে তাঁর কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়। হাজিরা খাতা সহ বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করেন তাঁরা। তদন্তকারীরা হাসপাতাল ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। তা বাজেয়াপ্ত করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। পাশাপাশি ওটি রুমও ঘুরে দেখেন তদন্তকারীরা। অপারেশন কীভাবে চলে, কতজন সিনিয়র থাকেন, কাদের কী দায়িত্ব রয়েছে, সেই সংক্রান্ত বিষয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বুঝে নেন তাঁরা।
সিআইডি তদন্তে উঠে আসছে, তিন সিনিয়র ডাক্তার জুনিয়রদের উপর রোগী দেখার দায়িত্ব ছেড়েছিলেন। আউটডোরের সময় তাঁরা অধিকাংশ দিনই হাজির থাকতেন না। ওই সময় তাঁরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন বলে জানা যাচ্ছে।  আর কালেভদ্রে হাসপাতালে রোগী দেখলেও সেখানে ভর্তি না করে তাঁরা যে প্রাইভেট নার্সিংহোমে চেম্বার করেন, সেখানে ভর্তির জন্য রোগীদের পরামর্শ দিতেন। হাসপাতালের পরিকাঠামো ভালো নয় বলে বিভিন্নভাবে নিরুৎসাহিত করতেন রোগীর পরিবারকে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে কোনও ওষুধ কোম্পানির মাখামাখি ছিল কি না, সেটাও তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে। 
এর সঙ্গে তদন্তকারীরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান, রোগীকে স্যালাইন কোন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দিয়েছিলেন নার্স। স্যালাইন কবে হাসপাতালে এসেছিল, রেজিস্টার খাতা থেকে সেই তথ্য নেন অফিসাররা। স্যালাইন পরীক্ষার পদ্ধতি কী, তাও জেনে নেন তাঁরা। একইসঙ্গে সরকার যে সংস্থার কাছ থেকে এই স্যালাইন কিনেছিল, তার চুক্তিপত্র, ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট কী ছিল, তার নথিও সংগ্রহ করা হয়েছে।