অর্থকর্মের ক্ষেত্রে প্রগতি বজায় থাকবে। মরশুমি দ্রব্যের ব্যবসায় লাভ বাড়বে। শরীর-স্বাস্থ্য এক প্রকার থাকবে। ... বিশদ
কিন্তু এতটুকুও দেরি করেনি ধর্ম আর জয়শ্রী। ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলে পুকুর পাড়ে প্রায় শুয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় জলে। ততক্ষণে নাকানিচোবানি খাচ্ছে মাহির। কোনওরকমে তার হাত ধরতে সক্ষম হয় ধর্ম। জয়শ্রী খামচে ধরে জামা। টেনেহিঁচড়ে ছোট্ট শরীরটাকে ডাঙায় তোলে দুই শিশু। নতুন জীবন পায় মাহির। সম্প্রতি রাজ্যের নারী, শিশু বিকাশ ও সমাজ কল্যাণ দপ্তর এই বাচ্চাদুটিকে দিয়েছে ‘বীরপুরুষ’ ও ‘বীরাঙ্গনা’ পুরস্কার। দু’টি বাচ্চার সাহসিকতা, বন্ধুর প্রতি স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ মুগ্ধ করেছে আধিকারিকদের। তাঁদের জন্য গর্বিত শিক্ষাদপ্তর। ‘তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে... আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার পরে... এমন সময় হারেরেরেরেরে...।’ এরপর খোকা ডাকাতদের পরাস্ত করে। মাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনে। রবীন্দ্রনাথের বীরপুরুষ ডাকাতদের কচুকাটা করেছিল। আমতার বীরপুরুষ বন্ধুকে বাঁচিয়ে পুরস্কার পেল। তাদের হাতে স্মারক, শংসাপত্র, স্কুল ব্যাগ, শিক্ষার আনুষঙ্গিক উপকরণ ও পাঁচ হাজার টাকার আর্থিক পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে। নিম্নবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান জয়শ্রী ও ধর্ম। দু’জনেরই বাড়িতে দু’বেলা ভাতের অভাব। কিন্তু তারা সাহসিকতার পাঠ পেয়েছিল বাবা-মায়ের কাছ থেকে। এই দু’জনকে নিয়ে এখন রীতিমতো গর্ব গুজারপুর গ্রামের বাসিন্দাদের। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ‘আমরা স্বার্থহীনতার পাঠ পেলাম দুই শিশুর কাছ থেকে। ওরা দেখিয়ে দিল কিভাবে বন্ধুর বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়।’ হাওড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলি পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি শিশুদের মূল্যবোধের শিক্ষাও দেয়। শিশুরা যে সেই শিক্ষা পাচ্ছে, এটাই তার উদাহরণ।’
স্কুলে স্কুলে পড়াশোনার ইঁদুর দৌড়ের মধ্যেও যে বন্ধুত্বের নিখাদ মনোভাব মুছে যায়নি, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমতার প্রাথমিক স্কুলের এই দুই শিশু। নিজেরা তলিয়ে যেতে পারত পুকুরে। তার তোয়াক্কা না করে বাঁচাল বন্ধুকে। এই বীরপুরুষ-বীরাঙ্গনার কাহিনি নিয়ে নিশ্চয় কেউ লিখবেন ভবিষ্যতে। তা নিশ্চয় পড়বে ভবিষ্যতের অন্য কোনও এক বীরপুরুষ।