সুদীপ্ত রায়চৌধুরী, প্রয়াগরাজ: সার দিয়ে রাখা স্লিপিং পড। রংবেরঙের। ঠিক যেন ‘প্যাসেঞ্জার্স’ কিংবা ‘ইন্টারস্টেলারে’র মতো কোনও সায়েন্স ফিকশন সিনেমার সেট! বিশাল এক মহাকাশযানের পেটের ভিতরের দৃশ্য। চুম্বকের মতো আমাকে টানছে। পিছনে পড়ে রইল প্রয়াগরাজে পূর্ণকুম্ভ মেলা, ত্রিবেণী, জুনা আখড়ার তাঁবু, মোহন্ত, মহারাজ, নাগা সন্ন্যাসী! আর একটু এগিয়ে যাব, তখনই... ‘কেয়া হুয়া ভাইসাব, ইহা রেহনা হ্যায় কেয়া?’ সামনে মাঝবয়সি এক ভদ্রলোক। দু’চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি। বুঝলাম, ভুল হয়ে গিয়েছে। না বলেকয়ে এভাবে ঢুকে পড়াটা উচিত হয়নি।
আসলে ট্রেন ধরার জন্য হাজির হয়েছিলাম স্টেশনের সিটি সাইডে। একটা দোকানে পুরি-সব্জি খেতে খেতেই কানে এল ওপাশে বসা দু’টি ছেলের কথোপকথন। কুয়াশার জন্য ট্রেন প্রায় চার ঘণ্টা লেট। আগেভাগে হোটেল ছেড়ে দেওয়ায় ঘুম হয়নি ভালো করে। এখন পেটে খাবার পড়তেই চোখ টানছে। স্টেশনের ওয়েটিং রুমে আর যা-ই হোক, ঘুম হবে না। অগত্যা অপরজনের প্রস্তাব, স্লিপিং পড! কিন্তু যেতে হবে স্টেশনের উল্টো পারে, সিভিল লাইনসের দিকে। বিষয়টা কেমন, দেখার জন্য ওঁদের পিছু নিলাম। বেশ কিছুটা এগিয়ে ওভারব্রিজ। প্রয়াগরাজ জংশন টপকে, নাক বরাবর কিছুটা এগলেই একটি হোটেল ও রেস্তরাঁর পরেই আইআরসিটিসির স্লিপিং পড। কাচের দরজার বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছে পর পর কমলা রঙের খোপ করা বাক্সগুলি। দুই বন্ধু দিব্যি দুটো পড বুক করে ঘুমোতে চলে গেল। কাছে গিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পডগুলি দেখছিলাম, এমন সময় প্রশ্নটা উড়ে এল ইনচার্জ বিশ্বজিৎ সিংয়ের দিক থেকে। জানালাম, থাকা নয়, শুধু দেখার জন্যই আসা। কলকাতা থেকে কুম্ভে এসেছি শুনে ভীষণ খুশি সিংজি। বললেন, ‘আমরা এখানে কিন্তু দিদির কথা জানি।’
বঙ্গ রাজনীতির একপ্রস্থ খোঁজখবর নিয়ে নিজেই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন পডগুলি। জানালেন, কুম্ভে এবার কয়েক কোটি মানুষ আসবেন। কিন্তু এই শহরে এত হোটেল কোথায়! এই ঠান্ডায় আখড়ার তাঁবুতে থাকা বেশ কষ্টকর। এই সব সমস্যার সহজ সমাধান একটাই, ‘মেড ইন জাপান’ স্লিপিং পড। চার ধরনের মোট ৭০টি পড রয়েছে এখানে। সিঙ্গেল ছেলেদের জন্য কমলা রঙের (৪৮), সিঙ্গেল মেয়েদের জন্য গোলাপি (১০), দম্পতিদের জন্য সবুজ (১) ও চারজনের পরিবারের জন্য রয়েছে হলুদ রঙের দু’টি পড। দোতলা ফ্যামিলি পড একটা আলাদা ঘরে। সেখানে অ্যাটাচড বাথরুমও রয়েছে। রয়েছে আয়না, এসি, চার্জিং পয়েন্ট, জুতো ও জিনিসপত্র রাখার আলাদা লকার আর ওয়াই ফাই। আর সর্বত্র সিসি ক্যামেরা। খরচও খুব বেশি নয়। সিঙ্গেল পডের এক ঘণ্টার ভাড়া ১৫০ টাকা। ২৪ ঘণ্টায় জন্য ১৪৫০ টাকা। ২৪ ঘণ্টার ফ্যামিলি পডে লাগবে ২৩৫০ টাকা। পূর্ণকুম্ভের অগ্নিমূল্য বাজারে যা অনেকটা সস্তা!
আলাদা টাকা দিলে এই পডে শুয়েই মিলবে বেড টি, কফি, ব্রেকফাস্টও। কুম্ভে এসে হোটেলের বদলে একবার মহাকাশযানের ফিল পেতে পডে শুয়ে দেখবেন নাকি?