পক্ষে
শ্বেতা চট্টোপাধ্যায়
সরস্বতী পুজো মানেই একটা নস্টালজিয়া জড়িয়ে থাকা। আর স্কুলই এর জন্য সেরা সময়। সরস্বতী পুজো মানেই মনে পড়ে স্কুলের সেই আনন্দ আর মজার দিনগুলো। সেই আনন্দে কত কীই না মজুত ছিল! এই একটা দিনের জন্য যেন গোটা বছরের অপেক্ষা! পুজোর আগের দিন ঠাকুর আনা থেকে পুজোর খাওয়াদাওয়ার দিন পর্যন্ত সবেতেই স্কুলজীবনের স্মৃতিই উজ্জ্বল। স্কুলের সরস্বতী পুজোয় থাকে নানা নির্মল দুষ্টুমিও। সেসব দিন অনেক আগে পেরিয়ে এলেও আজও সেই উৎসাহ, আনন্দ, মজা কিছুই ভুলিনি। স্নাতকোত্তর ছাত্রী
দীপমাল্য চন্দ্র
জগদ্ধাত্রী পুজোর পর থেকেই সরস্বতী পুজোর প্রহর গোনা শুরু। বাল্যকাল থেকেই সরস্বতী পুজো মানে স্কুল ছাড়া অন্য কোনও ঠেকের প্রসঙ্গ মাথাতেই আসত না। পুজোর ক’দিন আগে থেকে চলত গলদঘর্ম ব্যস্ততা। শ্রীপঞ্চমীর দিন শুধু বাড়ির পুজোটা হওয়ার অপেক্ষা। তারপরই দৌড় বিদ্যাপীঠে। বন্ধুরা মিলে অঞ্জলি দেওয়া, দুপুরে স্কুলবাড়ির চাতালে কব্জি ডুবিয়ে ভোগ খাওয়া! এই প্রাঞ্জল আনন্দ আজ অতীত। তবু এখনও ওই একটি দিন এক অদ্ভুত ভালোবাসার টানে ফিরে যাই স্কুলবাড়িতে।
গৃহশিক্ষক
মিতা ঘোষ দেবী
সরস্বতী জ্ঞান, শিক্ষা, সংগীত, শিল্প এবং সংস্কৃতির দেবী। স্কুলে সরস্বতী পুজো করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানার্জনের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়, যা তাদের মানসিক উন্নতি ও ব্যক্তিগত গুণাবলি বিকাশে সহায়ক। এই পুজো প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্য । স্কুলে সরস্বতী পুজোয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একযোগে অংশগ্রহণ করেন, যা তাঁদের মধ্যে এক সুসম্পর্ক তৈরি করে। সরস্বতী পুজোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জীবনের মূল্যবান শিক্ষা নিয়মানুবর্তিতা এবং শ্রদ্ধার গুরুত্ব বুঝতে পারে, ফলে স্কুলের পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। স্কুলের এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মানসিক, আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক বিকাশেও সাহায্য করে। তাই সরস্বতী পুজোর যাবতীয় মজা স্কুলজীবনেই বেশি।
গৃহবধূ
সৈকত কর্মকার
পুজোর দিন ভোর হতে না হতেই মায়ের তাগাদায় তড়িঘড়ি আমি আর বোন বিছানা থেকে উঠে পড়তাম। তারপর ছোট্ট বাটিতে গুলে রাখা কাঁচা হলুদ আর সরষের তেল গায়ে মেখে স্নান করে নিতে হতো, এরপর পুরোহিত মশাই এসে যেতেই শুরু হয়ে যেত তাড়াহুড়ো...! বাড়িতে পুজো শেষ হওয়ার পর একটু বেলার দিকে স্কুলে গিয়েও সহপাঠীদের সঙ্গে অঞ্জলি দিতাম এবং খিচুড়ি ভোগ খেতাম! কালের অমোঘ নিয়মে একসময় স্কুলের গণ্ডি অতিক্রম করে যথাক্রমে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি ঠিকই, কিন্তু সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে স্কুলজীবনের সেই আবেগ আর মাহাত্ম্যকে আর কখনও ফিরে পাইনি।
সিভিক ভলান্টিয়ার
বিপক্ষে
দিশা পালনদার
জয় জয় দেবী চরাচর সারে...! এই সংস্কৃত বন্দনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের ছাত্রবেলার নস্টালজিয়া। বসন্তপঞ্চমী মানে বাগদেবীর চরণে অঞ্জলি, একটা দিন পড়াশোনা থেকে এক্কেবারে ছুটি। বীণাপাণির বন্দনার মাহাত্ম্য যে কেবল স্কুলজীবনের গণ্ডিতেই আটকা পড়েছে, সে ব্যাপারে সহমত নই। সরস্বতী পুজো মানে সকল শিক্ষার্থীর কাছে একটা বিশেষ দিন। পুজোর আগে অবধি কুল না খাওয়া হোক কিংবা পুজোর দিন শাড়ি-পাঞ্জাবিতে সেজে মায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হোক— সেক্ষেত্রে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা সমান উৎসাহে যোগদান করে। এই একটা দিনের জন্য সকল ছাত্রছাত্রীই অপেক্ষা করে থাকে। স্কুল
হোক বা কলেজ, সবক্ষেত্রেই সকলে বীণাপাণির চরণে জড়ো হয়। পরীক্ষায় পাশ করার অভিলাষের সঙ্গে যোগ হয় এলোমেলো প্রেম!
ছাত্রী
বিপাশা বসু
সরস্বতী পূজা, যা বিদ্যার দেবীর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। এটি বিদ্যালয়ের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয় এই উৎসব, এটি বিদ্যা, জ্ঞান এবং সংস্কৃতির প্রতি গভীর সম্মান ও উদযাপনের প্রতীক। প্রাচীন এই রীতি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঘরোয়া পরিসরেও সমান গুরুত্বে পালনীয়। বিদ্যার প্রকৃতি সর্বজনীন, যা কোনও নির্দিষ্ট স্থান বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আবদ্ধ হতে পারে না। সরস্বতী পূজার মাধ্যমে বিদ্যার পূর্ণতা এবং তার প্রতি নতশির হওয়ার বার্তা সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অতএব, এই মহৎ উৎসবকে বিদ্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে তার গভীরতা ও তাৎপর্যকে ক্ষুণ্ণ করা অনুচিত। এটি সর্বত্র উদযাপন করার মধ্যেই এর প্রকৃত মহিমা নিহিত।
গবেষক
চন্দন পাঠক
নয়ের দশক পর্যন্ত সরস্বতী পুজোর মাহাত্ম্য স্কুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। একবিংশ শতাব্দীতে এর পরিসর অনেক বেশি পরিব্যাপ্ত। থিম পুজোর আঙিনায় এখন সরস্বতী পুজোও চলে এসেছে। বর্ধমান জেলার অন্তর্গত অম্বিকা কালনাতে সরস্বতী পুজো মহোৎসব রূপে উদ্যাপিত হয়। এখন স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে সরস্বতী পুজো পাড়ায় পাড়ায়, হাউজিং কমপ্লেক্সে, ক্লাবে, প্রায় সর্বত্রই পালিত হয়। সঙ্গে খিচুড়ি, আলুর দম, লাবড়া, চাটনি, পাঁপড় সহযোগে দিনটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে।
বেসরকারি কর্মী
প্রভাস চন্দ্র
সরস্বতী দেবী লেখাপড়া, শিল্পকলা ইত্যাদির দেবী। গৃহে, পাঠাগারে, ব্যাঙ্কে ও স্কুলে পূজিত হন তিনি। এদিন হাতেখড়ি দিয়ে শিশুকে শিক্ষায় নিয়োজিত করার পরম্পরা চলে আসছে। দেবী সরস্বতী, জগদ্ধাত্রীর এক অংশবিশেষ। তাই তিনি শুধু স্কুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। হস্তে পুস্তক ও বীণা, শুভ্রবসন, শ্বেত চন্দনে চর্চিতা, শ্বেতালঙ্কারে ভূষিতা দেবীর বাহন শ্বেত রাজহংসী। তিনি সকলের।
অবসরপ্রাপ্ত