যে কোনও ব্যবসার বৃদ্ধি ও অর্থকড়ি আয় বৃদ্ধি। ধর্মাচরণে মনযোগ বৃদ্ধি। বন্ধুর শত্রুতায় ক্ষতি। ... বিশদ
ব্রহ্মপুত্রের তীরে বাংলা লাগোয়া ধুবরি। অসমের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র। স্বাধীনতার পর থেকেই ধুবরি লোকসভা আসন ছিল কংগ্রেসের দখলে। বার কয়েকের ব্যতিক্রম বাদ দিলে এই আসন কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলেই বিবেচিত হতো। সেই ধুবরির রাজনৈতিক বিন্যাস বদলে গিয়েছে আতর বাদশা বদরুদ্দিন আজমলের এআইইউডিএফ-এর সুবাদে। প্রথমে বিধানসভা, তারপর ২০০৯ সাল থেকে টানা এআইইউডিএফ-এর প্রতিনিধি হিসেবে আজমল সংসদ সদস্য। তবে তিনি একাই নন, বিদায়ী লোকসভায় তাঁকে নিয়ে তিনজন প্রতিনিধি রয়েছে ফ্রন্টের। গত এক দশকে অসমের রাজনীতিতে মুসলমান বাঙালির মসিহা আজমল এবার একটু অস্থির। এনআরসি আর নাগরিকত্ব বিলের তুমুল প্রতিবাদ করে গোটা দেশেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ঝড় তুলে দিয়েছেন, তাতেই বেসামাল ধুবরির নির্বাচনী পরিমণ্ডল। তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন মুখের উপস্থিতিতে মুসলমান ভোটের একচেটিয়া দখলদারিতে বদরুদ্দিন আজমলের এতদিনের লালিত হিসেব গুলিয়ে গিয়েছে। এর উপর বোঝার উপর শাকের আঁটি এনডিএ শরিক অসম গণ পরিষদের প্রার্থীও মুসলমান। আবার কংগ্রেসের সঙ্গে নাকি তাঁর গোপন বোঝাপড়া আছে। তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সবমিলিয়ে আতর বাদশার এবারের দিল্লির যাত্রাপথে কয়েকশো কাঁটা ছড়িয়ে পড়েছে।
নুনিয়া পট্টির বিষ্যুদটকিজের সামনে পানের দোকানে দেখা মাঝবয়সি ইউনুস বিশ্বাসের সঙ্গে। পেশায় মণিহারি দোকানদার। ভরদুপুরে ফোনে যে কথা বলছিলেন, সেখানেও এল মমতা প্রসঙ্গ। তাই আলাপ জমাতেই হল। তাঁর কথাতেই জানা গেল, এনআরসি নিয়ে যেভাবে মমতা সরব হয়েছেন তা দেখে সকলের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছে। বললেন, দেখবেন ওই মহিলা দিল্লি গেলেন বা না গেলেন, নাগরিকত্ব বিল পুড়িয়ে দেবেনই। নরেন্দ্র মোদির সাধ্য নেই তা রোখার। ভরদুপুরে তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতায় রাজনীতির গরম হওয়া বইতে শুরু করায় ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা জনাকয়েক হাজির হলেন। নাগরিকত্ব বিল আটকাতে আজমলও বদ্ধপরিকর। কিন্তু তা কতটা ‘এফেক্টিভ’হবে সে বিষয়ে সকলেরই সংশয় আছে। কলকাতায় কর্মসুত্রে থাকলেও, ভোট দিতে বাসায় ফেরা তরুণ মইদুলের এই ব্যাখ্যা উড়িয়ে দেওয়ার নয়। বাংলার বাইরে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের উপস্থিতির পটভূমিটাই যেন সংক্ষেপে তুলে ধরলেন এই যুবক। নেতাজি সুভাষ রোডের হকার মার্কেটের সামনে দেখা হল হাই মাদ্রাসার শিক্ষক সামসের আলি বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি আজমলের জয় নিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী। ধুবড়ির উন্নয়ন এবং মুসলমান সমাজের স্বার্থ রক্ষায় আজমলের সংসদে যাওয়া কেন খুবই দরকার তাও ব্যাখ্যা দিলেন। আগন্তুক সাংবাদিককে এসব কথা বোঝানোর পরেও কিন্তু বললেন নাগরিকত্ব বিল চিরতরে ঠেকাতে হলে মমতার দিল্লি যাওয়া উচিত।
কী বলছেন, ধুবরির তৃণমূলের প্রার্থী নুরুল ইসলাম চৌধুরী? মমতাদি তাঁকে প্রার্থী করেছেন। নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে মমতা প্রথম পর্বে এই ধুবরিতেই জনসভা করেছেন তাঁকে নিয়ে। দু’দিন আগে বাংলার বসিরহাটের প্রার্থী চিত্রতারকা নুসরত জাহান রোড শো করেছেন। বাংলার মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই রাজ্যের পর্যবেক্ষক। দফায় দফায় এসেছেন। সংগঠন তৈরিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সেই সুবাদেই ধুবরির বিশিষ্ট আইনজীবী এবং অল অসম ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি নুরুলের শিক্ষিত সমাজে পরিচিতি আছে। তিনি বললেন, ‘আমি মনে করি, এআইইউডিএফের সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই হলেও, মমতাদির কল্যাণে সংখ্যালঘু ভোটে ভাঙন ধরবেই। তার সঙ্গে ভাষাগত সংখ্যালঘু অর্থাৎ অসমিয়া ছাড়াও কিছু হিন্দিভাষী ও জনজাতির ভোট জোড়া ফুলে পড়লে সব হিসেব উল্টে যেতে পারে।
আজমলের এই হিসেব উল্টোনোর কাজ আরও এগিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। গোপনে বোঝাপড়া করে ১১টি আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছিলেন আজমল। তিনটি আসনে লড়ছিল তাঁর দল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সব হিসেব বদলে দিয়ে কংগ্রেস গোলকগঞ্জের দু’বারের বিধায়ক আবু তাহের ব্যাপারিকে এই কেন্দ্রে টিকিট দিয়েছে। বিজেপি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে অগপকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছে। তাদের প্রার্থী আবার কংগ্রেস থেকে বিতারিত মানকাছারের প্রাক্তন বিধায়ক। কিন্তু বাঙালি মুসলমানের কাছে মমতার ভাবমূর্তিকে পুঁজি করেই লম্বা রেসের জন্য তৈরি হয়েছে তৃণমূল।