অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের উপ-সচিব (অ্যাকাডেমিক)। পদাধিকার বলে নয়া সিলেবাসে অনুমোদন, রিভিউ, বইয়ের টিবি (টেক্সট বুক) নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সিলেবাসে যদি তাঁরই পরিবারের কারও লেখা বইয়ের ‘প্রবেশ’ ঘটে? এমনই বিতর্কে জড়িয়েছেন সংসদ কর্তা সৌভিক ঘোড়ই। কারণ, নয়া সিলেবাসে তাঁর বাবার বইকেই পাঠ্য হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজে এই সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও বিতর্ক থামছে না। এ বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য ‘স্বার্থের সংঘাতে’র বিষয়টি স্বীকার করেছেন। জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেবেন।
উচ্চ মাধ্যমিকের নয়া সিলেবাস অনুযায়ী, পদার্থবিদ্যার একটি বইয়ের সহ লেখক ডঃ সন্তোষকুমার ঘোড়ই। বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থার বইটিতে টিবি নম্বর রয়েছে। অর্থাৎ, পাঠ্য হিসেবেই ব্যবহার করা হবে বইটি। সন্তোষবাবুরই ছেলে সৌভিকবাবু রয়েছেন সংসদের ডেপুটি সেক্রেটারি (অ্যাকাডেমিক) পদে। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, রিভিউয়ের জন্য আসা বইয়ে কোনও প্রচ্ছদ বা তাতে প্রকাশক-লেখক-সঙ্কলকের নাম থাকার কথা নয়। স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষ রিভিউয়ের জন্যই এই ব্যবস্থা থাকে। যদিও, নয়া সিলেবাসের বেশ কিছু বই প্রচ্ছদ সহ রিভিউয়ের জন্য এসেছে বলে তাঁদের দাবি। আর, কেউ যদি আগাম জানতে পারেন কাদের লেখা বই রিভিউয়ের জন্য আসছে, তাহলে স্বজনপোষণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে প্রচ্ছদেরও প্রয়োজন পড়ে না। তাছাড়া, সংশোধিত সিলেবাসের খুঁটিনাটি তথ্য উপ-সচিবের কাছে থাকাটাই স্বাভাবিক। ফলে অস্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠছেই।
লেখক হিসেবে ডঃ ঘোড়ইয়ের যোগ্যতা নিয়ে অবশ্য কেউ প্রশ্ন তুলছেন না। তাঁর এই সম্পর্কিত অনেক বই রয়েছে। তবে, এই ঘটনা সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিপন্থী বলেই তাঁদের একাংশের দাবি। এক আধিকারিক বলেন, সন্তান উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হওয়ায় অতীতে অনেক সচিব, সভাপতিকেই অস্থায়ীভাবে অন্য দায়িত্বে বদলি করা হয়েছে। অনেক সময় সরাসরি পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত নন, এমন আধিকারিকদেরও কম গুরুত্বপূর্ণ পদে সাময়িকভাবে সরানো হয়েছে। এর উদ্দেশ্য একটাই, স্বার্থের সংঘাত আটকানো। তিনি যাতে সন্তানকে কোনও বাড়তি সুবিধা না দিতে পারেন, অথবা সন্তানের কষ্টার্জিত ফলে যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে, তাই এই ব্যবস্থা। এক্ষেত্রেও সেরকম কোনও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।
এ বিষয়ে সৌভিকবাবুর বক্তব্য, ‘বইগুলির রিভিউয়ের সঙ্গে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। তাছাড়া, টিবি নম্বর দিয়েছে সংসদ।’ তাঁর আরও যুক্তি, ‘ডঃ ঘোড়ইয়ের লেখা বই বহু বছর ধরেই পাঠ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’ কিন্তু, সংশোধিত সিলেবাসের বই তো এ বছরই প্রথম। এর পাল্টা যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বিজ্ঞানের বিষয়গুলির সিলেবাসে বড়সড় পরিবর্তন হয়নি। যদিও, আধিকারিকদের একাংশ এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, সেমেস্টার ভিত্তিক এবং নম্বর ভিত্তিক যে বিভাজন এবারের সিলেবাসে হয়েছে, তা একেবারেই নতুন এবং অভূতপূর্ব। আগের সিলেবাস অথবা বইগুলির সঙ্গে কোনও তুলনা চলে না।