সাপ্তাহিক বর্তমান

জন্মমাস দেখে ভাগ্যফল জানুন

রাশি, লগ্ন, নক্ষত্রের মতো মানুষের জীবনে জন্মমাসও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা রাশি, লগ্ন জানেন তাঁরা জন্মমাস অনুযায়ী জেনে নিতে পারেন নিজের ভাগ্যফল। আমাদের শুধু ভাগ্যই নয়, তার স্বভাব-চরিত্র, পারিবারিক অবস্থান, অর্থভাগ্য, স্বাস্থ্য, সম্পত্তি লাভ, কোন ব্যবসায় সাফল্য, বিবাহ, সন্তানের ভাগ্য এমনকী আয়ু পর্যন্ত জানা যায়। ঋতু নির্ভর মাস কার জীবন কীভাবে তৈরি করে জানা যায় তাও। সঙ্গে রইল সৌভাগ্য বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় প্রতিকার। লিখেছেন ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
 
মাস বলতে বোঝায় চন্দ্র। কারণ, মাঃ (স) অর্থ চন্দ্র। ইয়স প্রত্যয় বিসর্গ লুপ্ত হয়ে তা ক্রমে ‘স’ হয়েছে— ‘মাস’ শব্দ। প্রাচীন ঋষিগণ তাঁদের সাধনায় দেখেন, সূর্যও নক্ষত্রদের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করেন। তাই তাঁরা উদ্ভাবন করলেন সৌরমাস। একে সবন বা যজ্ঞ মাসও বলে। শতপথ ব্রাহ্মণ, লিঙ্গ, কূর্ম্মপুরাণ, বরাহমিহির মতে দ্বাদশ আদিত্য দেবতা ও মাসের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন, মাধবমাস— চৈত্রমাস, দেবতা— অংশু। শুক্র ও শুচি— বৈশাখ— দেবতা-মধুসূদন, জ্যৈষ্ঠ— দেবতা-ত্রিবিক্রম ইত্যাদি। 
তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে অষ্ট আদিত্যের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে শতপথ ব্রাহ্মণে আদিত্য সংখ্যা বারো— দ্বাদশ্য মাসের সূর্যই হলেন এঁরা। মহাভারতের আদিপর্বের ৬৫ অধ্যায়ে মাস ও আদিত্য সংখ্যা বারোটি— মিত্র, অর্য্যমা, ধাতা, বরুণ, শত্রু, ভগ, অংশ, বিবস্বান, সবিতা, পুষা, বিষ্ণু ও ত্বষ্টা। এত আদিত্যের মধ্যে আমরা দেখি একটি সূর্যকে। কেন? প্রাচীন পারাশরী গ্রন্থে এর উত্তর পাওয়া যায়। পরাশর মুনিকে কৌশিক এই প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, নারায়ণ নিজেকে বারোটি ভাগে ভাগ করে মাতা অদিতি ও মহর্ষি কাশ্যপের মাধ্যমে দ্বাদশ পুত্রের জন্ম দিলেন। এঁরা হলেন— ইন্দ্র, বিষ্ণু, বিবস্বান, মিত্র, অংশুমান, ধাতা, ত্বষ্টা, পুষা, বরুণ, অর্য্যমা, ভগ ও সবিতা। এঁদের মধ্যে পিতামহ ব্রহ্মা সবিতাকেই বরণ করে আশীর্বাদ করেন— সব লোক তোমার আরাধনা করবে। তাই আমরা একটি সূর্যকেই দেখি। নারায়ণ অংশজাত তাই সূর্য-নারায়ণ। কূর্ম্মপুরাণ মতে, নরগণকে যিনি পরিচালনা করেন তিনিই নারায়ণ। বাস্তবে সূর্যই জগৎ পরিচালনা করেন। তাই তিনি সূর্য নারায়ণ। 
গ্রহদের উৎপত্তিস্থল হল সূর্য। সমগ্র জীব জগতের পালনকর্তা বা অধীশ্বরও তিনি। বেদ বা পুরাণে তাঁকেই বলা হয় শ্রীবিষ্ণু ভগবানের প্রতিভূ। ছয়টি ঋতুতে সূর্য বারোটি মাস পরিক্রমা করেন। যে ঋতুর যে মাসে তিনি অবস্থান করেন তখন তিনি সেই সেই স্থানের ভালোমন্দ গুণগুলি আমাদের প্রদান করেন। আমরা চাই বা না চাই, মানি বা না মানি, এগুলির প্রভাব আমাদের জীবনে অবশ্যম্ভাবীরূপে ভোগ করতে হয়। ভারতের মুনিঋষিরা তাঁদের সাধনালব্ধ জ্ঞান ও শক্তিতে এই গোপন তথ্য আবিষ্কার করেছেন যা যুগ যুগ ধরে তাঁদের জ্ঞানভাণ্ডারে সযত্নে রক্ষিত ছিল। তাঁরা এই বিদ্যা দ্বারা মানুষের ভাগ্যের দোষগুণ বিচার করতেন, তাদের অশুভের খণ্ডনে মঙ্গলসাধন করতেন। মানুষের জীবনের এই গুণাগুণকে জ্যোতিষশাস্ত্রেও মান্যতা দেওয়া হয়েছে। তাই মাসফল বিচার সূর্যের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে করা হয়। সারা বছর আমাদের সংসারে সুখ শান্তি বজায় রাখতে বা আনন্দময় করে তুলতে মাসের গুরুত্ব জ্যোতিষমতে অনস্বীকার্য। তাই বারোটি মাসের পৃথক ভাববিচার আর অশুভনাশের জন্য প্রতিকারও এই প্রবন্ধে উল্লেখ করা হল। 
বৈশাখের জাতক জাতিকা
রুক্ষ, শুষ্ক, কঠোর বৈরাগী, ধূলির ঘূর্ণিঝড় তুলে বৈশাখ তার আগমন বার্তা স্বদম্ভে ঘোষণা করে। বৈশাখ নতুন বছরের প্রথম মাস। এই মাসে সূর্যদেব তাঁর সপ্তরশ্মির তীক্ষ্ণ, প্রচণ্ড দৃষ্টিতে পৃথিবীকে দেখেন। তাই সূর্যের সপ্ত রঙের মতোই বৈশাখের জাতক-জাতিকাদের বহুমুখী গুণ থাকে। তবে এদের মধ্যে তেজস্বী, জেদি ও একরোখা ভাবও থাকে। কালবৈশাখীর ভয়ঙ্কর রূপের আড়ালে থাকে সৃষ্টির বীজ। সেই রকম বৈশাখের জাতক-জাতিকার মধ্যেও দেখা যায় কঠোরতা ও কোমলতার মিশ্রণ। এঁরা গম্ভীর, শৌর্যবীর্য ও পরাক্রমী, সম্ভ্রমশালী, সৎ কর্মী আর উচ্চ-কর্মের পদাধিকারী। জীবন ঘটনাবহুল। নানা বাধা বিপত্তি জীবনে একাধিকবার আসে। তবে এঁরা আদর্শনিষ্ঠা, কর্তব্য পরায়ণতা আর সহজাত কর্মদক্ষতার গুণে শীঘ্রই তা কাটিয়ে ওঠেন। এঁরা দাতা হন। দান করতে ভালোবাসেন। আর্ত, দীন, ভিখারি, রোগী, সর্বহারারা তাঁর কাছে কোনওদিন খালি হাতে ফেরে না। আন্তরিকতার সঙ্গে সাধ্যমতো তিনি দান করবেনই। সাধারণভাবে এঁরা কোনও অন্যায় কাজ করেন না, যাতে তাঁর সম্মানহানি হতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এঁরা কম কথা বলেন। এই জন্য সাধারণ মানুষ এদের অহঙ্কারী ও দাম্ভিক বলে মনে করলেও আসলে এঁরা মৃদুভাষী, বাস্তববাদী, বাস্তব বুদ্ধি অতুলনীয়। অপরকে সম্মান দিতে পারেন। ভদ্র, সভ্য আচরণের জন্য সকলের ভালোবাসা পান। শৌখিনতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বোধ খুবই বেশি। তবে কখনওই চরম ভোগবিলাসী হন না, খরচ করেন, তবে প্রয়োজনের চেয়ে খরচ বেশি করেন না। কিন্তু পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের জন্য অকাতরে অর্থ খরচ করে থাকেন। সমাজকল্যাণ এবং দেশের কল্যাণের কথাও চিন্তা করেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেন। শত্রুকে সর্বদা সামনে থেকে আক্রমণ করেন। কোনও রূপ কপটতা, সংকীর্ণতা বা পরচর্চা পরনিন্দা পছন্দ করেন না। এঁরা সৃজনশীল শক্তির আধার। তাই জন্মের পর থেকেই প্রতিভা মানুষকে চমৎকৃত করে। অনেক গুণ থাকলেও বেশ কিছু ব্যতিক্রমী স্বভাবও আছে। ষেমন পরস্পর বিরোধী কিছু ভাব দেখা যায়। এক এক সময় অতি অলস হয়ে পড়েন। অলসতাপূর্ণ দিন কাটাতে থাকেন, এঁদের আঠারো মাসে বছর হয়। কাজে অতি উৎসাহ দেখান। আবার কিছু সমালোচনা হলে সেই উৎসাহে ভাটা পড়ে যায়। কর্মোৎসাহটাই হারিয়ে ফেলেন। অসহিষ্ণুতা আরেকটি সহজাত দোষ, যার ফলে অনেক সময় এঁরা বহির্দুনিয়ায় প্রবেশে ভীষণ বাধাপ্রাপ্ত হন। আবার সবকিছুতেই সকলের সামনে নিজেকে জাহির করতে চান। চেহারার মধ্যেও একটা চাপা আকর্ষণীয় ভাব থাকে। খুব স্বাধীনতা প্রিয় হন। স্বাধীন কাজকর্মে উৎসাহ বেশি থাকে। অপরের মতামত গ্রহণে থাকে তীব্র অনীহা।  
ভাগ্য: বৈশাখ মাসের জাতক-জাতিকাদের ভাগ্যোন্নতি সৎপথে বা অসৎপথে হয়ে থাকে। এঁদের মধ্যে ধনী হওয়ার উগ্র বাসনা থাকে। যার জন্য দ্রুত বড়লোক হওয়ার আশায় অসৎ পথ অবলম্বনেও পিছপা হন না। জীবনে প্রচুর অর্থ উপার্জন ও সঞ্চয় করেন ফাটকা, জুয়া, কালোবাজারি প্রভৃতি ক্ষেত্র থেকে। বিপুল অর্থ পেলেও সে অর্থ ধরে রাখতে পারেন না। হঠাৎ বালির বাঁধের মতো তা ধসে পড়ে। এজন্য বিত্তবান হওয়ার উগ্রবাসনা ত্যাগ করাই শ্রেয়। অসৎ পথে ভাগ্যোন্নতির থেকে ভাগ্য অবনতি বেশি হয়। ভাগ্যোন্নতি স্বাভাবিক গতিপথে যদি সততা, পবিত্রতা ও বিশ্বাসকে মূলধন করেন তাহলে সাফল্য ও প্রতিষ্ঠা দীর্ঘস্থায়ী হয়। স্বদেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানে, দেশ-বিদেশে পররাষ্ট্রীয় কর্মচারী রূপে দ্রুত কর্ম সাফল্য, বিশেষ সুযোগ সুবিধা, সম্মান ও অর্থকড়ি লাভ হয়ে থাকে। সুচিকিৎসক রূপে প্রভূত মান, যশ, সুনাম, অর্থ লাভ করেন। বাল্যকাল থেকেই চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রতি আগ্রহ বেশি থাকে। সামরিক বিদ্যালয় বা যৌবনকালে উচ্চপদস্থ সেনার অফিসারও হতে পারেন। পুলিস বিভাগে কাজ করেও এরা উচ্চপদ ও সাফল্য লাভে সক্ষম হন। এঁদের মধ্যে বহুমুখী প্রতিভা, প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কল্পনাশক্তি থাকে। তাই সাহিত্যের ক্ষেত্রেও সফল। চাকরি জীবনে দ্রুত উন্নতি করতে পারেন। কর্মসূত্রে একাধিকবার স্বদেশ বা বিদেশে গমন করতে হতে পারে। স্বাধীনচেতা মনোভাবের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রেও সাফল্য, প্রতিষ্ঠা ও বড় ব্যবসায়ী রূপে সুনাম অর্জন করে থাকেন। সাদা ও ঘিয়ে রঙের যেকোনও দ্রব্য, পাট, কাপড়, কাগজ, তুলা, পশম, বই প্রকাশ, শৌখিন দ্রব্য, ষন্ত্রপাতি প্রভৃতির ব্যবসা বিশেষ শুভ কর। অর্থকড়ি উপার্জনও হয় প্রচুর। তবে লাভের আশায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলে লাভের থেকে ক্ষতি ও বিপদের সম্ভাবনা বেশি। জীবনে কয়েকবার অর্থ ঋণ হয়। তবে তা থেকে শীঘ্রই মুক্তিও পান। ব্যবসা করলেও মনে উদারতার অভাব হয় না। অনেক সময় দেখা যায় ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোনও ব্যক্তির দায়-দায়িত্বের ভারবহন করতে হয়। বৈশাখ মাসের জাতিকার মাতৃস্থান অনুকূল। সন্তানের প্রতি মায়ের প্রভাব বেশি হয়। তিনি সবসময় সন্তানের দিকে দৃষ্টি রাখেন। এঁদের পিতৃভাগ্য ঈর্ষণীয়। পিতার মাধ্যমে ভাগ্যোন্নতি হয়। সন্তানের বিপদে পিতা সব সময় সঙ্গে থাকেন। ভ্রাতৃ ভাব কমবেশি শুভ। ভাইয়ের ভালোবাসা সহানুভূতি পেলেও কখনও কখনও ভাইয়ের দ্বারা সম্মানহানি অসম্ভব নয়। বিদ্যাস্থান শুভ। নিজ অর্জিত বিদ্যার দ্বারা প্রতিষ্ঠা ও দেশের সেবা করেন। জীবনের প্রথম দিকে বিদ্যায় প্রবল বাধা থাকলেও সময়ের সঙ্গে তা কেটে যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই প্রথমদিকে বাধার জন্য অনেকের শিক্ষা জীবনে ইতি পড়ে। চিকিৎসা, কারিগরি, সামরিক শাস্ত্রের শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এঁদের সহজাত প্রবৃত্তি থাকে, ও এইসব ক্ষেত্রে বিশেষ রূপে প্রতিষ্ঠিত হন। সন্তান ভাগ্য শুভ। তবে বেশি সন্তান হয় না। সন্তান মোটামুটি দীর্ঘায়ু ও যশস্বী হয়। এঁদের কমবেশি শত্রু থাকে এবং শত্রুর দ্বারা ক্ষতির আশঙ্কা থাকায় সারা জীবনই সতর্কতা দরকার। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা ঈর্ষাপরায়ণ হন ও উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করেন। তবে এদের উপস্থিত বুদ্ধি ও বীরত্বের জন্য শত্রুরা মাঝপথে রণে ভঙ্গ দেয়। এদের সমালোচকের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। জীবনের প্রথম কৈশোরে প্রেম হয়। ভালো ও মন্দ উভয় নারীর সান্নিধ্য লাভ হয়। তবে বিপরীত লিঙ্গের আন্তরিক ভালোবাসা পেলেও অনেক সময় জাতকের ভালোবাসায় কৃত্রিমতা থাকে। বিবাহ ভাগ্য একপ্রকার শুভ। জীবনের কোনও সময় দাম্পত্যে বিষণ্ণতা ও মতপার্থক্য দেখা দিতে পারে। শেষ বয়সে এঁরা অনেক সময় স্ত্রীর বিরহে কাতর হন। শরীর-স্বাস্থ্য মোটামুটি। যদিও সব সময় তা খুব ভালো যায় না। মাথার যন্ত্রণা, চোখের রোগ, অর্শ, পা ফোলা, বাত প্রভৃতি রোগে কষ্ট পান সবথেকে বেশি। রক্তচাপের অসাম্যতা এবং হৃদরোগেরও সম্ভাবনা থাকে। দুর্ঘটনা ও রক্তপাতের প্রবণতা বা অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনা বেশি থাকে। ৪৫ ঊর্ধ্ব বয়স থেকে শরীরটা কিছুটা ভাঙতে থাকে।
প্রতিকার: 
১) আদিত্য স্তব পাঠ, প্রণাম, অর্ঘ্যদান। 
২) দক্ষিণাকালীকে জবার মালা ও দীপ দান।
 জ্যৈষ্ঠ মাসের জাতক-জাতিকা
রক্ত, অস্থি-চর্মসার শীর্ণকায় ভয়াল ভৈরবের সাংঘাতিক বেশে শুষ্ক জ্যৈষ্ঠ মাস পৃথিবীর বুকে আবির্ভূত হয়। এটি বছরের দ্বিতীয় মাস। তপ্ত রবি এই মাসের মধ্যভাগ থেকে ক্রমশ কিছুটা শান্ত হন। ফলে এই সময় থেকেই বর্ষার আগমনী বার্তা পাওয়া যায়। জ্যৈষ্ঠ মাসের জাতক-জাতিকারা রজঃগুণ প্রধান শ্লেষ্মাদি-কফ প্রকৃতি যুক্ত। চলাফেরার গতি কিছুটা মন্থর, গজগামী। এঁরা অম্ল রসপ্রিয় ও ক্রীড়ামোদী হন। মনের দিক থেকে সহজ সরল আর দ্বিজগুণের প্রাধান্য দেখতে পাওয়া যায়। এরা মধ্যমাকৃতির হন, তবে সৌম্যদর্শন উজ্জ্বল চোখ, টিকালো নাক এবং মাথায় অনেক চুল থাকে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি এদের টান অনেকটাই বেশি। জ্যৈষ্ঠের জাতক-জাতিকারা বিলাসী হন। সুন্দর জামাকাপড় খুব প্রিয়। এঁরা সদাসুখী ও স্ত্রী অথবা স্বামী সঙ্গের জন্য সদা উৎসুক হয়ে থাকেন। এঁদের অসাধারণ জ্ঞান ও মেধার চমকপ্রদ বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। বিজ্ঞান, সঙ্গীত, সাহিত্য, অভিনয় ও চিত্রবিদ্যার মধ্যে তা প্রকাশ পায়। এঁদের মানসিক চিন্তাধারা খুবই সূক্ষ্ম। জীবনের প্রথম ভাগে নানা ঘাত-প্রতিঘাত বেশি থাকে। তার মধ্যে দিয়েই এগিয়ে চলে জীবন। তাই জীবনের প্রথম ভাগে জীবনযুদ্ধ অতিশয় কঠোর। এঁদের মনের উদারতা দেখার মতো। ধনী, দরিদ্র, উচ্চ-নীচ, সকলের সঙ্গেই ব্যবহার ও উদারতা তারিফ করার যোগ্য। জীবন ফুলে ফলে ভরে তোলেন নিজ গুণে। এরা তৃষ্ণার্ত চাতকের মতন অমৃত বারি পান করতে চান সুখের আশায়। তবে তা কোনও অবস্থাতেই ক্ষণিকের জন্য নয়। ভোগ সমুদ্রে চিরকালের জন্য ভাসতে চান কিন্তু পাকাপাকিভাবে সেটাও হয় না। এঁরা দয়ালু, অন্যের দুঃখে নিজে দুঃখ পান। এত গুণের মধ্যেও পরম শত্রু হল চণ্ডালসম রাগ। একবার রেগে গেলে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সেই সময় তাঁদের শান্ত করা শক্ত। তবে রাগের স্থায়িত্ব খুব বেশি সময় হয় না। আর নিজের ভুল বোঝা বা স্বীকারের গুণটি আছে। জলাশয় খুব প্রিয় তাই জলের ধারের গৃহ ভালোবাসেন। বিপরীত দিকে আগুন আবার তাঁদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে। ভোগবিলাসের লিপ্সায় এঁরা যদি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হন তখন কিন্তু তাঁদের জীবনে নানাবিধ অসামাজিক ক্রিয়াকর্ম, অসৎ বন্ধু এসে জোটে। তাদের সান্নিধ্যে লম্পট, সুরাসক্ত, নির্ধন, মান-অপমান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু শেষ বয়সে নিজের ভুল বুঝতে পারেন। আত্মগ্লানিতে তখন প্রতিনিয়ত দগ্ধ হন। করার মতো কিছুই থাকে না। তবে যাই হোক জ্যৈষ্ঠ মাসের জাতক-জাতিকার কথাবার্তায় মধুর ভাব থাকে। 
ভাগ্য: শিল্প, বিদ্যা, সাহিত্য, বাণিজ্য প্রভৃতির দ্বারা জ্যৈষ্ঠ মাসের জাতক-জাতিকার ভাগ্যোন্নতি হয় অতি দ্রুত। জীবনের প্রথম ভাগে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়। অধ্যবসায় পরিশ্রম ও কষ্ট সহিষ্ণুতার মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রগতি হয়। প্রতি পদক্ষেপে বাধা-বিপত্তি লেগেই থাকে। তবে এত কিছুর মধ্যেও এঁদের উন্নতির গতিরোধ করা সম্ভব হয় না। ৪০ বছর বয়সের পর ভাগ্যের মুখ শুভ দিকে ধীরে ধীরে ঘুরতে থাকে। শাস্ত্রাদির জ্ঞান, উচ্চাভিলাষ আর ধর্মজ্ঞান ভাগ্যোন্নতির পথে মূলধন হয়। অর্থকড়ি উপার্জন হয় কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে। কারণ এদের জীবন যুদ্ধে কেউ সাহায্যকারী থাকে না। চিকিৎসা বিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এঁদের চমৎকৃত প্রতিভা প্রকাশিত হয়। আবার গুরুগিরিতেও জুড়ি মেলা ভার। হুকুম তালিমের চাকরিতে জীবনে ব্যর্থতাই আসে। চাকরি ক্ষেত্রে অন্যের ওপর খবরদারি করতে পারলে তবেই খুশি হন। লোককে দিয়ে কাজ উদ্ধার করার বিষয়ে এঁরা পটু। বন্দর, বিমা, ব্যাঙ্ক, সামরিক বিভাগ, নৌ বিভাগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ভাগ্যোন্নতি হয় দ্রুত। অধ্যাপনা, শিক্ষকতা বা গবেষণাতেও সফল হন। জীবনে বহুবার ভাগ্যের হাতে ওঠা নামা করতে হয়। কর্মজীবনের প্রথম দিকে ঘাত-প্রতিঘাত একটু বেশিই হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে চাকরির পরিবর্তন বা কর্মের স্থানগত বদলি হয় কিংবা উচ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতপার্থক্য হয়। কারণ এঁরা উপরওয়ালার মন জুগিয়ে বা বুঝে কাজ করতে সবসময় পারেন না; সহকর্মীরাও শত্রুভাবাপন্ন হন। ৩০ বছর বয়সের পর কর্মক্ষেত্রে ভাগ্যের শুভ পরিবর্তন ধীরে ধীরে হতে থাকে। ৫০ বছর বয়সের পর জীবনে আসে চমকপ্রদ সাফল্য ও প্রতিষ্ঠা। এই সময়ে নিজ অর্থে যানবাহন, জমি-গৃহাদি সম্পত্তিও হয়ে থাকে। তবে চাকরির থেকে ব্যবসায় এরা বেশি আনন্দ পান। কারণ এঁরা স্বাধীন প্রকৃতির। সাহিত্য, চিত্রশিল্পী, বক্তৃতা দান, নেতৃত্ব প্রদান আর অভিনয় জগতেও প্রভূত প্রতিষ্ঠা মান, যশ, অর্থ পান। ছত্রিশ বছর বয়সের পর থেকে বাধা ক্রমশ কমে আর শুভভাব, কর্মের প্রসার অর্থকড়ি বৃদ্ধি পায়। এদের সৃজনী প্রতিভা থাকে। লৌহ, পাথর, কাগজ, প্রকাশনী, তুলা, পশম, ওষুধ, রাসায়নিক দ্রব্য প্রভৃতি ব্যবসায় দ্রুত উন্নতি হয়। কিন্তু অংশীদারি ব্যবসায় সাফল্য পান না; অংশীদারদের দ্বারা প্রতারিত হন। গৃহাদি নির্মাণ বা সংস্কারাদির ব্যবসা শুভ কর। অতিরিক্ত আর্থিক সচ্ছলতা, ভোগবিলাসী, নেশার রঙিন আকর্ষণ, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মোহ ও কামনার উগ্রতায় এদের পতন হয়। অনেক অর্থ ক্ষতি হয় আর শারীরিক ক্ষতিও হয়ে থাকে। জ্যৈষ্ঠের জাতক-জাতিকার মাতৃ ভাগ্য শুভ হলেও মা একটু কঠিন প্রকৃতির এবং নিয়ম-শৃঙ্খলা পালনে কঠোর হন। পিতৃস্থান শুভ। পিতা ধার্মিক ও কর্তব্য পরায়ণ হন, তিনি শান্তিপ্রিয় ও নির্বিরোধী থাকতে চেষ্টা করেন। এঁদের বিত্ত ভালোই থাকে। ভ্রাতৃস্থান খুব একটা শুভ বলা যায় না। বরং দুর্বল বলাই ভালো। বিভিন্ন শাস্ত্রে জাতক-জাতিকারা জ্ঞানলাভ করেন। স্কুল, কলেজের বিদ্যা শিক্ষায় কিছু বাধা থাকে। এঁদের শত্রুরা বুদ্ধিমান ও বলশালী হয়। কোনও অন্তরঙ্গ বন্ধুর সঙ্গে হঠাৎ শত্রুতা হতে পারে। তবুও এঁদের বন্ধু ভাগ্য অপেক্ষাকৃত শুভ। উচ্চবর্ণের লোকেরাই এঁদের ভালো বন্ধু হয়। বিদেশি শিক্ষায় এঁরা পণ্ডিত হন। জাতক-জাতিকার মধ্যে প্রেম বস্তুটির কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে না। কারণ এরা অত্যধিক ভোগপ্রিয়। বিবাহ জীবন কমবেশি শুভ। তবে এদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিলম্বিত বিবাহ যোগ দেখা যায়। সন্তানের জন্য বংশের গৌরব বৃদ্ধি হয়। হঠাৎই এঁরা কিছু রোগভোগ করেন। যেমন টনসিল, নাক, কান, চোখ, যকৃৎ, হার্ট প্রভৃতির আকস্মিক ব্যাধিতে ভুগতে পারেন। বুকের দোষ, রক্তচাপের অসমতা, সুগার প্রভৃতিরও সম্ভাবনা থাকে। জীবনে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যানবাহন থেকে পড়ে বা অন্যভাবে পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাতের সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। তাই সারা জীবনই ঘরে বাইরে বিশেষ সাবধানতা প্রয়োজন।
প্রতিকার: 
১) শ্রীভার্গবের স্তব ও মন্ত্রপ্রণাম। 
২) চন্দ্রশেখর স্তব পাঠ। 
৩) পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। 
আষাঢ় মাসের জাতক-জাতিকা
আকাশে জল ভরা কালো মেঘের ওড়না উড়িয়ে আষাঢ়ের আবির্ভাব। আষাঢ় বর্ষা ঋতুর প্রথম মাস এবং দ্বাদশ মাসের তৃতীয় মাস। গ্রীষ্মের নিদারুণ শুষ্কতার শেষে পৃথিবী যেন অমৃতময় বারিধারাকে সঙ্গে নিয়ে শ্যামলকান্তি স্নিগ্ধ রূপ ধারণ করে। তাই আষাঢ় মাসে যাঁদের জন্ম তাঁদের জন্ম মুহূর্তে সূচিত হয়—নব নব প্রাণ, নব নব সাফল্য। এমাসের জাতক-জাতিকারা প্রকৃতিগতভাবে কিছুটা কোমল হৃদয়, উদার স্বভাব ও ভীষণ চঞ্চল প্রকৃতির। সর্ব শাস্ত্রেই কমবেশি জ্ঞান থাকে। এঁরা খুব তাড়াতাড়ি কথা বলেন। বাকচার্তুয্য বা বাকশক্তি অতুলনীয়। কোথায় কীভাবে কাজ উদ্ধার করতে হবে বা কাজ করাতে হবে বা কীভাবে কথা বলতে হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধহস্ত। শিল্প, বিদ্যা, বুদ্ধি, সাহিত্য, গণিত, জ্যোতিষ প্রভৃতি শাস্ত্রে অবাধ বিচরণ। পতঙ্গ যেমন আলোর দ্বারা আকর্ষিত হয়, এরাও সেভাবে গোপন ও রহস্যময় বস্তু বা পরিবেশের দিকে আকৃষ্ট হয়। কল্পনার রঙে রাঙিয়ে বাস্তব জীবনের ছবি আঁকার চেষ্টা করেন। তাতে মাঝেমধ্যেই বাধাপ্রাপ্ত হন, কল্পনা ও বাস্তব জগতের পার্থক্যের জন্য মাঝে মাঝে মানসিক আঘাত পান। তবুও ভবিষ্যতের নিবিড় স্পর্শ সুখের আশা ত্যাগ করতে পারেন না। প্রথম জীবনে জাতক-জাতিকার ভাগ্যাকাশে বড়ই দুর্ভোগের মেঘ থাকে। এমন রূপ, বাধা প্রবণতা, যে মনে হয় মহাপ্রলয়ের মধ্যেই জীবনটা শেষ হয়ে যাবে। চলে সাংঘাতিক জীবন সংগ্রাম। তবে ৩৪ বছর বয়সের পর থেকে ক্রমশ শুভ পরিবর্তন হতে আরম্ভ করে। নতুন করে জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য যে কর্মযজ্ঞের আরম্ভ হয় তার উপকরণ হল তাঁদের পরিশ্রম, উপস্থিত বুদ্ধি, সাহসিকতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ও ঈশ্বর বিশ্বাস। বড় হন সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায়। জীবনে চলার পথে দু’একজন গুণী মানুষের সাক্ষাৎ হয় এবং তাঁদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সহযোগিতায় জাতক-জাতিকারা জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। অনেক ক্ষেত্রে কেউ উপকার করবে বলেও প্রতারিত করে এবং অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ওইসব লোকেদের সঙ্গে এঁদের সম্পর্ক চিরতরে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। আপাতদৃষ্টিতে এঁদের প্রতিভার দৃপ্ত রূপ বলে মনে হলেও প্রকৃত প্রতিভা কিন্তু কম থাকে। তবে তাতে তাদের সৌভাগ্যের বিশেষ কোনও পরিবর্তন হয় না। বরং মান, মর্যাদা, অর্থ-ঐশ্বর্য্য ভালোই প্রাপ্তি হয়। সাহিত্যিক, অভিনয় শিল্পী, চিত্রপরিচালক, চিকিৎসকরূপে দেশবরেণ্যও হতে পারেন। এঁদের মনে সংকীর্ণতা বা হিংসা, দ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতা থাকে না। বরঞ্চ এদের মধ্যে একটা প্রতিবাদী স্বভাব থাকে আর ওপরের দুঃখে দুঃখী হয়। বিপদগ্রস্ত মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধু হন। তবে এঁদের মধ্যে আবেগ ও খামখেয়ালিপনার আধিক্য একটু বেশিই থাকে। এই অপগুণ দুটির জন্য অনেক সময় বোকার মতো কাজ করে ফেলেন। এটাই এদের চরিত্রের একটি দুর্বল দিক। বায়ু পিত্তের ওঠানামায় মেজাজও প্রবলভাবে ওঠা নামা করে। তবে অন্তর থেকে ঈশ্বর ও আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী বলে তীর্থদর্শনে এঁদের আগ্রহ বেশি থাকে। চিন্তাশক্তি বেশি জাগ্রত হয়। চাটুকারিতায় ভুলে অতীতের শত্রুদের ক্ষমা বা তাদের কথায় কাজ করে বিপদে পড়েন বা সম্মানহানি হয়। এই শত্রুরা নিকটজন বা সহকর্মীও হতে পারেন। 
ভাগ্য: জাতক জাতিকার ভাগ্যোন্নতি হয় একটু বেশি বয়সে। এঁদের আকাঙ্ক্ষা বেশি ও বুদ্ধি প্রখর। ক্ষমতার মার্জিত প্রয়োগ উপভোগ করেন। পরিশ্রমী, কোনওরূপ আলস্যকে কাজের ক্ষেত্রে স্থান দেন না। ফলে বয়সকালে এদের সুখ বাড়ে। ভাগ্য বিপর্যয় হয় না। সাহস, পরাক্রম, শৌর্য্য, বীর্য, ইচ্ছা, স্বাধীন সত্তা, কর্তৃত্বগুণ প্রভৃতি গুণাবলির ওপর নির্মিত হয় ভাগ্যের প্রাসাদ। তাই এঁরা দক্ষ সেনানায়ক, লেখক, কাগজের সম্পাদক, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল বা খনির মালিক, লৌহ বা রাসায়নিক কারখানার কর্তা, ভূমি অধিকারী, কৃষিকার্যে বিশেষজ্ঞ রূপে গগনচুম্বী সাফল্য পান। কুড়ি বছর বয়স থেকে কর্মজীবন শুরু হয়। একাধিক ক্ষেত্রে ঠকেও যান। কর্মে প্রতিষ্ঠা থাকে অধরা। ঘনঘন কর্ম পরিবর্তন হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় জাতক-জাতিকারা একটি চাকরি ছেড়ে অন্য একটি চাকরির ক্ষেত্রে ভাগ্যোন্নতির আশায় চলে যান। ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা আছে। তাই জুয়ায় বড়লোক হতে গিয়ে অনেক সময় বিপদগ্রস্ত হন। সব কাজেই এঁদের পছন্দ দ্রুততা, যেন সময়কেই হার মানাতে চান। কিন্তু সব সময় তা হয়ে ওঠে না। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে লিমিটেড কোম্পানির মালিক বা কর্মী হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন। জীবনে ওঠানামা হয় বেশ কয়েকবার। অর্থকড়ি রোজগারের প্রচেষ্টা করেন সর্বদা। পুস্তক প্রকাশক, চিত্রপরিচালক, শিল্পী, আইনবিদ প্রভৃতি ক্ষেত্রে যথেষ্ট মান সম্মান, অর্থ, প্রভাব, প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। পশু ক্রয়-বিক্রয়, জলীয় দ্রব্যের ব্যবসা, শস্য, কাঠ, পশু খাদ্যের ব্যবসা প্রভৃতি ক্ষেত্রেও সফল হন। জাতক-জাতিকার মাতৃ ভাগ্যের থেকে পিতৃ ভাগ্য বেশি শুভ হয়। কখনও মায়ের ভালোবাসা একপেশে হয় বা আচরণে রুক্ষতা প্রকাশ পায়। কোনও ক্ষেত্রে মায়ের দ্বারা প্রকৃত প্রাপ্তিতে বঞ্চিতও হতে পারেন। তবে পিতার অকৃত্রিম স্নেহ ভালোবাসায় কোনওদিন বঞ্চিত হন না। ভ্রাতৃভাগ্য মোটেই শুভ নয়। এক্ষেত্রে পারস্পরিক চিন্তাধারায় দুপক্ষ দুই মেরুতে অবস্থান করে। ভাইদের দ্বারা এঁরা সম্পত্তির প্রকৃত প্রাপ্তি থেকে অনেক সময় বঞ্চিত হন ও নানান বাধায় জর্জরিতও হতে পারেন। তবে ক্ষেত্র বিশেষে ভাইয়েরা উপকার নিতে চাইবে। বন্ধু ভাগ্য শুভ। বয়স্ক কোনও বিশেষ দু’একজন গুণী ব্যক্তির সান্নিধ্যে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। জাতক-জাতিকার বন্ধুরা বিখ্যাত, পরোপকারী, শহরবাসী বা বিদেশি বন্ধুও হতে পারে। বিদ্যা শিক্ষায় প্রচণ্ড বাধা থাকে। অনেক সময় পরিবেশগত বা অন্য কারণেও এই বাধা আসে। যেমন খামখেয়ালিপনা, চঞ্চলমতি, অর্থনৈতিক কারণ প্রভৃতি। তবে এঁদের জ্ঞান আহরণে ইচ্ছা প্রচণ্ড। যৌবনের প্রথম লগ্ন থেকেই মনে বিচিত্র প্রেমের বসন্ত জাগ্রত হয়। ৮ থেকে ৮০ বিপরীত লিঙ্গের মানুষ এঁদের প্রেমে আকৃষ্ট হন। সান্নিধ্য পেতে চান। কিন্তু এঁদের মনের প্রকৃত হদিশ পাওয়া কঠিন। এরা নিজেরাই জানেন না কী চাইছেন এবং কী পাচ্ছেন আর কী পেতে চান। বিবাহ জীবন সুখ দুঃখের দোলায় দুলে চলে। দাম্পত্য ক্ষেত্রে কিছু বোঝাপড়ার অভাব থাকলেও তা বড় আকার ধারণ করে না। স্ত্রী/স্বামীর শরীর-স্বাস্থ্য একপ্রকার ভালো হলেও কয়েকবার অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনা থাকে। জাতক জাতিকার শরীর স্বাস্থ্য খুবই সাধারণ মানের। ছোটখাট ভোগান্তি প্রায় সবসময়ই কম-বেশি লেগে থাকে। জীবনে চলার পথে দু’তিনবার বড় ভোগান্তি হয়। যদিও তা শীঘ্রই কেটে যায়। মাথার যন্ত্রণা, অজীর্ণ, বুকের ধড়ফড়ানি, সুগার, প্রেশার প্রভৃতিতে ভোগান্তির আশঙ্কা থাকে। কয়েকবার আঘাত বা রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকে। অগ্নিদাহ ও জলে বিপদের আশঙ্কা থাকায় সারা জীবনই এইসব ক্ষেত্রে বিশেষ সর্তকতা প্রয়োজন।
প্রতিকার:
১) জগন্নাথকে ধূপ, দীপ, তুলসী দান। 
২) গণেশ স্তব পাঠ। 
 শ্রাবণ মাসের জাতক জাতিকা
মেঘমেদুর আকাশের নীচে প্রকাশিত শ্যামল স্নিগ্ধ কোমল নবপ্রাণের প্রকৃতি রাজ্য যেন অমৃত বারি সিঞ্চনে প্রাণময় হয়ে ওঠে। প্রকৃতির বুকের এই গুণগুলো দেখা যায় শ্রাবণের জাতক-জাতিকাদের প্রকৃতিতেও তাই বিরাজ করে সত্ত্বগুণী ভাব। সেখানে তপ্ত তপনের তেজের প্রাবল্য থাকে না। প্রতিপদে পার্থিব দুনিয়ার সঙ্গে এঁদের চিন্তাধারার বিরোধ হয়। অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্তে ভুল পথেও চালিত হন। অনেক ক্ষেত্রে প্রথম জীবনে এঁরা কু-লোকের দ্বারা বিপথে চালিত বা প্রতারিত হন। শ্রাবণের উজ্জ্বল স্বঘন শ্যামল কিশলয়ের মতো এদের চরিত্রে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা একদিকে কোমলতায় পূর্ণ অপরদিক থাকে বীরভাব। অনেকবার চাকরির পরিবর্তন হয়। এতে অপ্রত্যাশিত শুভ ফলও লাভ হয়। অনেক সময় সাধারণ কর্মচারী রূপে প্রতিষ্ঠানে ঢুকলেও পরে সর্বোচ্চ পদ লাভ বা মালিকানাও পান। তবু এঁদের মনের মধ্যে আরও ভালো হওয়ার ও আরও ভালো করার স্বপ্ন থাকে। একাধিক জমি-গৃহাদি সম্পত্তিও থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় গৃহ থাকার পরেও মনোমতো অন্য বাসার প্রচুর খোঁজের পরেও সফলতা পাচ্ছেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে স্থায়ী গৃহ এদের থাকেও থাকে না। দুঃখ বিরহ ও মিলনের লুকোচুরি খেলা জীবনে চলতে থাকে। কখনও এরা কোনও কাজে প্রবল উৎসাহ দেখান আবার কখনও হঠাৎই ঝিমিয়ে পড়েন। যার ফলে তাঁদের অনেক ক্ষেত্রে আঠারো মাসে বছর হয়। এঁদের মধ্যে বিপরীতমুখী এই দুটি ভাগ ক্রিয়া করে সর্বদা। যার জন্য এঁরা খুবই অস্থিরমতি হন এবং এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকা পছন্দ করেন না। কোথাও কাজ অতি দ্রুত করতে চান কিন্তু প্রতি পদেই থাকে বাধা। আত্মীয়রা সব সুখের পায়রা, দুর্দিনে কেউ কাছে আসেন না খোঁজখবর করেন না। কিন্তু স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের প্রকৃত উপকারী বন্ধু। অনেক সময় আত্মীয় বিরোধে পারস্পরিক সম্পর্কেরও ইতি হয়। এদের চেহারা কিছুটা খর্বাকৃতি, না লম্বা না খাটো। একটু হৃষ্টপুষ্ট হন এবং যুবা যুবা ভাব থাকে। জলের সঙ্গে এদের সম্পর্ক অতি গভীর ও প্রেমময়। লাক্সারি জলযানে যাত্রা ও আমোদ প্রমোদ-ভ্রমণ এঁদের আনন্দ অতিশয় বৃদ্ধি করে। আবার তা অনেক ক্ষেত্রেই ভীষণ দুঃখের কারণ হয়। সকলের সঙ্গে মেলামেশা আর পরিশ্রমের ক্ষমতা এদের স্বতন্ত্রতা প্রদান করে। সঙ্গীত সাধনা, গীতবাদ্য ও নৃত্যের মধ্যে তাঁরা শান্তি খুঁজে পায়। সঙ্গীতে সুরমূর্ছনায় বাস্তবের দুঃখ ভুলে থাকতে পারেন। এদের দানবীর বলা যায়। তবে সকলকে দান করেন না। যেখানে বোঝেন, যেখানে মন চায়, যেখানে প্রকৃত প্রয়োজন সেই সব ক্ষেত্রে দান করতে পিছপা হন না। এঁরা নিরহংকারী দাতা, তবে উপকৃতজনের দ্বারা কোনও মূল্য পান না। কীভাবে সংসার ধর্ম পালন করতে হয় তা জানেন। শান্তির পূজারী। অনেক সুখ দুঃখকে চেপে রাখতে পারেন। সন্তান এদের নয়নের মণি, প্রাণাধিক প্রিয়। এঁদের জীবনে খারাপ দিকও প্রচুর। যেমন অতিরিক্ত চঞ্চলমতি, অতীব উচ্চাশা, ক্ষণিকের জন্য মন্দমতি, মনের ভীরুতা, সুরাপানের উগ্র বাসনা, কুসঙ্গে মেলামেশা প্রভৃতি। নীচ কাজের প্রবৃত্তি ও প্রকৃতি তাঁদের সমাজে অবহেলার পাত্র করে তুলতে পারে। যদি একবার ব্যভিচারে লিপ্ত বা নেশাগ্রস্ত হন বা অসৎ পথে যান তাহলে সেখান থেকে সহজে ফিরে আসতে পারেন না। তখন দুর্বিসহ দারিদ্রপূর্ণ জীবনটা হয়। স্থান কাল পাত্র না বুঝে অন্যের সমালোচনা বা মন্তব্য প্রকাশ করে শত্রুবৃদ্ধি ও সন্মানহানিও। 
ভাগ্য: শ্রাবণের জাতক জাতিকাদের ক্ষেত্রে ভাগ্য উন্নতি সূচক বহু ক্ষেত্র আছে। যেমন কৃষি কাজ, গৃহাদি নির্মাণ, রাসায়নিক ও জলীয় দ্রব্যের ব্যবসা, লৌহজাত দ্রব্য, মদ, এজেন্সির ব্যবসা, কাগজ, মুদ্রণ প্রভৃতি। এইসব ক্ষেত্রে ভাগ্যোন্নতি হয় খুব তাড়াতাড়ি। অনেক কম বয়স থেকেই কর্মজীবন শুরু হয় এবং অর্থকড়ি রোজগার আরম্ভ হয়। কঠোর পরিশ্রম ও কর্ম প্রতিভার গুণে অর্থ উপার্জনের আপ্রাণ চেষ্টা করেন। অনেক আশা জাগিয়ে শুরু করলেও তা মাঝে মধ্যেই বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এতে হতোদ্যম না হয়ে আবার উৎসাহ নিয়ে পরক্ষণেই ভাগ্যোন্নতির কাজে লেগে পড়েন এবং ভাগ্যোন্নতিতে সমর্থ হন। সামাজিক সুনাম ও আর্থিক উন্নতির ক্ষেত্রে বিশেষ কারও সাহায্য ও সহযোগিতা অযাচিতভাবে পেয়ে থাকেন। তবে নিজের শ্রমশীলতা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জীবনে সমৃদ্ধি ও সাফল্য লাভ করে। ব্যবসা প্রথম কয়েক বছর ভালো যায় না। ব্যবসায় উন্নতির জন্য ঋণ গ্রহণ করতে হতে পারে। কিন্তু অচিরেই সব বাধা কেটে ভাগ্যের আকাশে নতুন সূর্যোদয় হয়। শিক্ষকতায় জাতক-জাতিকা খুবই সৎ ও হৃদয়বান। স্থানীয় স্তরে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন ও ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় হন। জীবনে বিশেষ কোনও মহিলার উৎসাহ ও আন্তরিক সহযোগিতায় পেশার প্রসার ও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। সূক্ষ্ম বস্তুর ব্যবসায় সুনাম ও আর্থিক উন্নতি বেশি হয়। চাকরিতে ওপরওলার মন জয় করতে পারলে তবেই পদোন্নতি সম্ভব হয়। সেলসম্যান হিসেবে সাফল্য ও দক্ষতা প্রশ্নাতীত। শিক্ষকতা, রাজনৈতিক এবং সঙ্গীত বিদ্যায় যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন ও উপার্জন বৃদ্ধি হয়। কর্মস্থলে প্রচুর শত্রু থাকে। উপকৃতরা বা শত্রু ভাবাপন্ন সহকর্মীরা এঁদের পদোন্নতি সহ সব ক্ষেত্রেই বাধা সৃষ্টি করে। ব্যাঙ্ক, জীবন বিমা, লৌহ সংক্রান্ত কারবার, মোটর ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রভৃতি, মুদ্রণ-সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানে, এঁদের কর্ম সুখকর হয় এবং প্রভূত উন্নতি করতে পারেন। কর্মসংক্রান্ত বিষয়ে একাধিকবার স্থানান্তর গমন করতে হয় এবং বিভিন্ন উচ্চ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেও চলতে হয়। এক্ষেত্রে একটা সহজাত কর্মক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়। এইসব ক্ষেত্রে এঁরা খুবই মার্জিত ও মিষ্টভাষী; কী করে কাজ উদ্ধার করতে হয় তা ভালোই জানেন ও কর্ম উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে সিদ্ধহস্ত। শ্রাবণ মাসের জাতক-জাতিকার মাতৃ ভাগ্য অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ শুভ হয় না। চিন্তাভাবনা ও মতাদর্শের দিক থেকে মা ও সন্তানের মধ্যে পারস্পরিক মিল থাকে না। তাই অশান্তি কলহের সম্ভাবনা থাকে বেশি। অনেক সময় দেখা যায় মা তাঁর অন্য সন্তানকে বেশি ভালোবাসেন। তবু শ্রাবণে জাতক/জাতিকারা মাতৃ আজ্ঞা পালনে তৎপর হন। বার্ধক্য জনিত, পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা মস্তিষ্কের অসুখে মা দীর্ঘদিন ভুগতে পারেন বা শয্যাশায়ী হতেও পারেন। মায়ের বিপদে-আপদে সন্তান পাশে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও হয়। পিতৃভাগ্য এক প্রকার শুভ। তবে পিতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্ত্রীর কথা শুনে চলেন। ফলে তাঁর কাছ থেকেও শ্রাবণের জাতক-জাতিকা প্রকৃত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন। স্ত্রীর প্রতি তাঁদের এতই আসক্তি থাকে যেখানে অন্যায় জেনেও তার বিরুদ্ধাচরণ করেন না। এটা তাদের একটা বড় দুর্বলতা। ভ্রাতৃ ভাগ্য শুভাশুভ। তবে ?
5d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

গৃহসুখ বৃদ্ধি ও সপরিবারে আনন্দ উপভোগ। অন্যের দোষের দায়বহন করতে হতে পারে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.০৭ টাকা৮৪.৮১ টাকা
পাউন্ড১০৮.৬৫ টাকা১১২.২০ টাকা
ইউরো৯১.৫৭ টাকা৯৪.৭৬ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
17th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা