বিনোদন

পর্দায় ইতিহাস রক্ষা
সিনেমার  সমালোচনা:  শ্যাম বাহাদুর

বায়োপিক, দেশপ্রেম ও যুদ্ধ নিয়ে সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে পরিচালকের কাছে সবথেকে কঠিন প্রতিবন্ধকতা কী? মেলোড্রামা, অতি নাটকীয়তা, রোমাঞ্চকর মুহূর্ত নির্মাণ এবং লার্জার-দ্যান-লাইফ একটি ক্যানভাস তৈরির চরম হাতছানি থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা। কেন কঠিন? কারণ, ওই প্রতিটি ফ্যাক্টর সহজেই একঝাঁক ডিভিডেন্ড দেয় সিঙ্গল স্ক্রিন অথবা মাল্টিপ্লেক্সে। সেটি হল, তুমুল হাততালি, চোখে জল আসা অথবা আবেগরুদ্ধ প্রতিক্রিয়া। ধন্যবাদ মেঘনা গুলজার। এই প্রবল হাই ভোল্টেজ দেশপ্রেমের যুগে এই প্রতিটি সহজলভ্য ফর্মুলাকে আপনি এড়িয়ে গিয়েছেন সাহসিকতার সঙ্গে। ইতিহাস লেখা এবং ইতিহাসকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণের সময় লেখক ও পরিচালকের সামনে একটি অদৃশ্য দড়ি থাকে। সেই দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে হয়। দড়ির নাম নির্লিপ্ত নিরপেক্ষতা। মেঘনা সক্ষম হয়েছেন। তিনি, ভবানী আইয়ার ও শান্তনু শ্রীবাস্তব যখন ভারতীয় আর্মির সুপারহিরো শ্যাম মানেকশর জীবনের ৪০ বছরের জার্নির চিত্রনাট্য লিখেছেন, তখন একটি শব্দের উপর জোর দিয়েছেন— ডকুমেন্ট। বুদ্ধিহীন এবং অ্যাজেন্ডানির্ভর মোটাদাগের প্রোপাগান্ডা ছবি দেখতে দেখতে হিন্দি সিনেমার দর্শক যখন বিরক্ত, ঠিক তখন শ্যাম বাহাদুর টাটকা বাতাস। মিথ্যে ইতিহাসের উচ্চকণ্ঠের যুগে মেঘনা এনেছেন সত্যি ইতিহাস।
স্টার চাইবেন প্রতিটি চরিত্রে যেন তাঁর গনগনে ক্যারিশমার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে দক্ষ অভিনেতাদের স্বপ্ন থাকে, তিনি যে চরিত্রে রূপদান করছেন, নিজের অস্তিত্ব মুছে পর্দায় ওই চরিত্র হয়েই যেন ফুটে ওঠেন। স্টার ইগোকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। ধন্যবাদ ভিকি কৌশলকে। যুবক থেকে প্রৌঢ় শ্যাম মানেকশ হয়ে ওঠার প্রতিটি নাটকীয় মুহূর্ততে তিনি প্রাঞ্জল করে দর্শকের সামনে উপস্থাপিত করেছেন স্যাম মানেকশকে, ভিকি কৌশলকে নয়। শ্যাম হতে গিয়ে ভিকি একঝাঁক ম্যানারিজম নিয়ে এসেছেন। ঝুঁকে চলা। উচ্চকিত সংলাপভঙ্গি, শরীরী বিভঙ্গ। ভিকি কৌশল তাঁর কেরিয়ারের একটি মাইলফলকই নির্মাণ করলেন বলা যায়। 
ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ শিখরে ওঠার কাহিনি শ্যাম বাহাদুর।  প্রত্যাশিতভাবেই তাঁর হাত ধরে পর্দায় এসেছে ১৯৪২ সালে জাপানের আক্রমণ। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, ১৯৬২ সালের চীনের আক্রমণ এবং ফিল্ড মার্শাল শ্যামের সেরা সাফল্য— ১৯৭১ বাংলাদেশ যুদ্ধ। মাত্র আড়াই ঘণ্টায় এত বড় ক্যানভাসকে ধরা সম্ভব নয়। তাই মেঘনা স্বল্প সময়ে ইতিহাসের মুহূর্তগুলিকে নির্মাণ করার চেষ্টা করেছেন। কিছু পেরেছেন। কিছুটা তাড়াহুড়ো করে দেখানো।  যুদ্ধক্ষেত্রগুলি আরও বিশ্বাসযোগ্য হওয়া দরকার ছিল। অবশ্য মাত্র ৫৫ কোটি টাকার বাজেটের কথা ভেবে মনে হল, যা হয়েছে তাও বা কম কী?
শ্যামের স্ত্রী সিল্ল বোবদের ভূমিকায় আর কেউ কি এই স্নিগ্ধ সৌন্দর্যের সঙ্গে ডিসেন্ট ব্যক্তিত্বের মিশ্রণের অভিনয় আনতে পারতেন? যা দেখালেন সানিয়া মালহোত্রা। তাঁকে আশ্চর্য ব্যবহার করেছেন মেঘনা। সংলাপ কম দিয়েছেন। শুধু চোখের চাউনি দিয়ে গভীর মুহূর্ত নির্মাণে পুরোদস্তুর সফল সানিয়া। এই ছবির সম্পদ হল প্রত্যেকের সংযমী পারফরম্যান্স। এ ছবির ধ্রুবপদ, মাত্রাজ্ঞান। শঙ্কর-এহসান-লয়ও তাই। গুলজারের কথায় শঙ্কর-এহসান-লয় বরং বহুকাল পর একটি চমৎকার দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার গান উপহার দিলেন।  
এবং ফতিমা সানা শেখ। ইন্দিরা গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করা যেকোনও নায়িকার কাছে কঠিনতম কাজ। তাঁর আশ্চর্য ব্যক্তিত্বকে স্পর্শ করা অসাধ্য। ইন্দিরা গান্ধী কঠোর, উচ্চাশী ও অন্তর্মুখী। তাঁর মনের হদিশ পাওয়া দুঃসাধ্য ছিল। ফতিমা অন্তর্মুখী ইন্দিরা গান্ধীকে বেছে নিয়েছেন কা঩ঠিন্যের মোড়কে। শ্যাম মানেকশ সামনে এলেই যে ইন্দিরা গান্ধীর ভিতরে যেন একটা শান্ত দিঘি তৈরি হয়। আবার আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার হেনরি কিসিঙ্গারকে সামনে বসিয়ে ব্রেকফাস্ট টেবলে শীতল কণ্ঠে হুমকি দেন, ‘পাকিস্তানকে সামলান, নইলে...।’ মনে পড়ায় ইন্দিরাকেই। 
শ্যাম ও ইন্দিরার মধ্যে রহস্যময় একটি অঘোষিত রসায়নের আভাস দিয়েছেন মেঘনা। তাঁরা দু’জনে নীরবে তাকিয়ে রয়েছেন, চরাচর স্তব্ধ হয়ে যায় প্রাইম মিনিস্টারের অফিসে। আবহসঙ্গীতও নিস্তব্ধ। পর্দায় ভেসে ওঠে মধ্যান্তরের বিরতি! মেঘনা গুলজার নিশ্চিত ভালো ছাত্রী। বাবার কাছে তিনি শিক্ষা পেয়েছেন যে, কীভাবে নিছক দু’টি শব্দ, জানলা থেকে আসা একটুকরো আলো, দু’টি চোখ পরস্পরের দিকে নীরবে তাকিয়ে থাকার মতো জীবনের মণিমুক্তো দিয়ে একটি শায়েরি লেখা যায়। 
যাঁর পদবি গুলজার, তিনি শুধুই কেন যুদ্ধের ছবি তৈরি করবেন? তাই ওই মধ্যান্তরের প্রাক মুহূর্তের নাম— কবিতা!
সমৃদ্ধ দত্ত
7Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা