উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
সম্প্রতি বিভিন্ন বোর্ডের মাধ্যমিক এবং উচ্চ-মাধ্যমিক স্তরের ফলাফল প্রকাশ পেলে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রী নব্বই শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছে, কেউ কেউ আবার একশো শতাংশ পেয়েছে। এই মূল্যায়ন জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় তাদের প্রস্তুতিতে কতটা সাহায্য করছে বলে আপনি মনে করছেন?
এই দুটি পরীক্ষা একেবারেই আলাদা। আমার দীর্ঘ সাতাশ বছরের শিক্ষকতা জীবনে আমি দেখেছি কেউ মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক বা তার সমতুল পরীক্ষায় সাতানব্বই শতাংশ নম্বর পেয়েও জয়েন্টে ভালো ফল করতে পারেনি। বর্তমানে এই ঘটনা আরও প্রকট হয়েছে। এর প্রধান কারণ হল বোর্ড কিংবা তার সমতুল পরীক্ষার ইভ্যালুয়েশন পদ্ধতি আর জয়েন্টের ইভ্যালুয়েশন পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা। তাই আটের দশকে আমি যেসময় পরীক্ষা দিয়েছি কিংবা এখন দুক্ষেত্রেই এই দুই প্রকারের পরীক্ষার প্রস্তুতি পর্ব সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে থাকে। এখন তা আরও আলাদা হয়েছে। প্রশ্নপত্রের প্যাটার্নও আলাদা।
জয়েন্টের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে পাঠ্যবই পড়া কতটা জরুরি বলে মনে করছেন আপনি? কারণ বর্তমানে কোচিং নির্ভরতা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।
পাঠ্যবই পড়া ভীষণভাবেই দরকারি। এটা মূলত আরও বেশি করে দরকার ছাত্র-ছাত্রীর ফান্ডামেন্টাল নলেজের জন্য। কারণ এখন দেখা যায় ছাত্রছাত্রীরা কোচিং থেকে কিছু তৈরি স্টাডি মেটিরিয়াল পেয়ে যায় এবং সেগুলো পড়ে পরীক্ষা দেয়। এতে তাদের বেসিক নলেজেই কোথাও যেন ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। সাবজেক্ট সম্পর্কে গভীর জ্ঞান কমে যাচ্ছে। তবে স্টাডি মেটিরিয়াল পড়ে পরীক্ষা দিলে হয়তো পরীক্ষা খারাপ হবে না কারণ ওখানে প্রশ্নগুলোই এমনভাবে সাজিয়ে দেওয়া থাকে এবং প্র্যাকটিস হয় যে সেক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। কিন্তু ভবিষ্যতে পড়া এগিয়ে নিয়ে যেতে সমস্যা হবে। কারণ বিষয় নিয়ে গভীরে গিয়ে ভাবনাচিন্তা করার ক্ষমতা তৈরি হয় না।
জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিক্যাল দুটি দু’ঘরানার বিষয়। এই দুই বিষয় প্রস্তুতি নেওয়ার পদ্ধতিটাও কী আলাদা?
দেখুন, এক্ষেত্রে একটি অ্যাডিশনাল সাবজেক্টের ব্যাপার চলে আসে, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে অঙ্ক একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওই বিষয় নম্বরের ওপর কিন্তু জয়েন্টের র্যাঙ্ক অনেকাংশে নির্ভর করে। কারণ দুজন একই নম্বর পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীর ওই বিষয় নম্বর দেখেই র্যাঙ্ক নির্ধারণ করা হয়। আবার মেডিক্যালে বায়োলজি মানে জীবনবিজ্ঞানের বড় ভূমিকা আছে। আমার মনে হয় ছাত্র-ছাত্রীর কোন বিষয়টা ভালো লাগছে সেটা দেখে নেওয়া উচিত। অনেকসময় বিষয়ের প্রতি উৎসাহ থাকলে সেটি আত্মস্থ করাও সহজ হয়। তাই আগে নির্বাচন করে তারপর পরীক্ষায় বসা উচিত।
আমরা জানি রাজ্যস্তরের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় একসময় রাজ্যের বোর্ডের প্রাধান্য ছিল আবার অন্যদিকে জাতীয় স্তরের পরীক্ষায় সিবিএসসি বোর্ডের সিলেবাসের প্রাধান্য, এখনও কী এই ভাগ আছে?
শহরাঞ্চলে এখন অনেকেই দিল্লি বোর্ডে পড়াশোনা করছে, কিন্তু গ্রামের দিকে এখনও বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রী স্টেট বোর্ডে পড়ে। কারণ তাদের কাছে এখনও সব সুযোগ গিয়ে পৌঁছয়নি। তবে ন্যাশনাল লেভেলের জয়েন্ট পরীক্ষায় সিবিএসসি র সিলেবাসের প্রভাব বেশি। এমনকী রাজ্য জয়েন্টেও গত পাঁচ বছরের টু-ডিজিট স্কোরারদের হিসেব দেখলে দেখা যাবে সিবিএসসি স্টুডেন্টের দাপট সেখানে বেশি। অথচ দশ হাজারের মধ্যে আবার স্টেট বোর্ড এগিয়ে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আর্থ-সামাজিক ব্যাপার চলে আসে। কিন্তু আবারও বলছি, নিজের প্রস্তুতিটাই আসল সেটা সঠিক থাকলে সফলতা আসবেই।
উচ্চ-মাধ্যমিক এবং তার সমতুল পরীক্ষায় এগারো এবং বারো ক্লাস আলাদা। কিন্তু জয়েন্টের পরীক্ষায় কম্বাইন্ড সিলেবাস, এক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া কাম্য?
এক্ষেত্রে আমি নিজেও মনে করি, ছাত্র-ছাত্রীদের বেশ অসুবিধার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আমরা যখন আটের দশক কিংবা ন’য়ের দশকে পরীক্ষা দিয়েছি তখন উচ্চ-মাধ্যমিক এগারো এবং বারো ক্লাস একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছি কিন্তু আজকের দিনে সেই সুযোগ নেই। এখন উচ্চ-মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিতে গেলে জয়েন্টের প্রস্তুতি সেভাবে নেওয়া যায় না। সেক্ষত্রে হয় উচ্চ-মাধ্যমিক নয়, জয়েন্ট যে কোনও একটা দিকে মনোযোগ দিতে হবে। দু’টোই একসঙ্গে হওয়া একটু মুশকিলের। এক্ষেত্রে যেটা দরকার সেটা হল অপ্টিমাম ব্যালান্স। এই ব্যালান্সটা খুব দরকারি। ইলেভেনে শুধু সেই ক্লাসের পড়া করলেও ক্লাস টুয়েলভে উঠে প্রথম ছ-মাস টুয়েলভের সিলেবাসে মনোযোগ দিতে হবে এবং তার পরের পাঁচ-ছ মাস ইলেভেন টুয়েলভ দুই বিষয় একসঙ্গে রিভাইস করতে হবে। তবেই একসঙ্গে বোর্ড এবং জয়েন্ট দেওয়া সম্ভব।
এখন যেহেতু সব ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা খুব বেড়ে গিয়েছে তাই ক্যাম্পাসিংয়ের সময় অনেক কোম্পানি ‘ইয়ার ড্রপ’-এর ব্যাপারটা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এটা কতটা সত্যি? ছাত্র-ছাত্রীদের কী এই বিষয় সাবধানতা দরকার?
অ্যাকাডেমিক কেরিয়ারে কন্টিনিউটিকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটা কিছুটা হলেও সঠিক তথ্য। কিন্তু সর্বাংশে সঠিক এমনটা বলব না। কিছু কিছু কোম্পানি আছে, কিছু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি কিছুক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক কন্টিনিউটিটা দেখে। তবে সব কোম্পানির ক্ষেত্রে এটি সত্যি নয়। অনেকেই এক বছর প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে এবং পরে ভালো কোম্পানিতে নিজেদের কেরিয়ার তৈরি করেছে। তাদের কোনও অসুবিধা হয়নি।
স্কুলের পরীক্ষায় নানা রকম প্যাটার্নের প্রশ্ন আসে কিন্তু জয়েন্ট একটি মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন ভিত্তিক পরীক্ষা। এখানে প্রস্তুতি নেওয়ার ধরন কী আলাদা? আলাদা হলে তা কীরকম?
অবশ্যই আলাদা। বড় প্রশ্নের দু’রকম ভাগ হয়। একটি বিশ্লেষণ ভিত্তিক প্রশ্ন যেখানে থিওররি এক্সপ্লেন করতে বলা হয় আর একটা হয়তো সমাধান সূচক যেখানে অঙ্কের কোনও প্রশ্নের উত্তর বার করতে হয়। কিন্তু এখানে সবই ছোট এক কথায় উত্তর। সেখানে বারবার প্র্যাকটিস এবং প্রবলেম সল্ভ করার মধ্য দিয়ে এই ধরনের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, জয়েন্টের মতো পরীক্ষায় প্র্যাকটিসের গুরুত্ব সব থেকে বেশি। আর কম অনুশীলন করে ভালো র্যাঙ্ক করে ফেলার মতো অত্যাশ্চর্য ভাবনার কথা এই ধরনের পরীক্ষার ক্ষেত্রে না ভাবাই ভালো।
আচ্ছা জয়েন্টের ক্ষেত্রে সেলফ স্টাডি কি কোনওভাবে সম্ভব? অনেকেই আছে গ্রামের দিকে কিংবা শহরে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকার জন্য সঠিক কোচিং নিতে পারে না বলে এ ধরনের পরীক্ষায় বসতে ভয় পায়। আপনি তাদেরকে কীভাবে মোটিভেট করবেন?
দেখুন, অসম্ভব বলে কোনও কিছুই হয় না। আমাদের এখানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় অনেক ছাত্র ছাত্রী এসেছে যারা জয়েন্টে থ্রি ডিজিট র্যাঙ্ক করেছে। কিন্তু তাদের কোনও টিউটর ছিল না। তারা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছে হয়েতো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার টাকাটাও তাদের নেই। তারা যেটা করেছে স্কুলের পড়া মন দিয়ে করেছে তার পরে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছ থেকেই দেখে নিয়েছে জয়েন্টের পড়া। এইভাবেই তারা প্রিপারেশান নিয়েছে। তাই অর্থনৈতিক ব্যাকআপ নেই বলে যে তুমি জয়েন্টে র্যাঙ্ক করতে পারবে না সেটা নয়, সাবজেক্টের প্রতি ভালোবাসা এবং জেদ থাকলে সব সম্ভব।
যারা নিজেরা পড়ছে কিংবা যাদের সেভাবে ব্যাক আপ নেই তাদের জন্য একটা গাইডলাইন দেবেন, যাতে তারা সহজে প্রস্তুতি নিতে পারে? এটা যারা কোচিং থেকে গাইড পাচ্ছে তাদের জন্যও মনে হয় দরকারি।
হ্যাঁ, সবার জন্য নিজে পড়ার বেসিক গাইডলাইন দরকারি। কারণ নিজে বিষয়টাকে বোঝা এবং সেটাকে রপ্ত করাটাই আসল। এক্ষেত্রে আবারও বলব পাঠ্যবই সবার আগে খুঁটিয়ে পড়তে হবে। অনেকেই স্টাডি মেটিরিয়াল পড়ছে। সেগুলো যদিও ভালো, কিন্তু পাঠ্যবই না পড়লে, শুধু স্টাডি মেটিরিয়াল পড়লে পরীক্ষায় সমস্যা হতেও পারে। যেটা শহরের ছাত্র ছাত্রীদের হয়। আবার বলছি, প্রবলেম সলভ করাটা খুব দরকারি। এমন কিছু বই থাকে যেখানে প্রবলেম সল্ভ করে দেওয়া থাকে, আবার এমন কিছু বই থাকে যেখানে প্রবলেম সল্ভ করতে হবে। আমাদের দ্বিতীয়টাকে বেশি দরকার। নিজেরা প্র্যাক্টিসের মাধ্যমে বারবার সময় ধরে নানারকম সমস্যার সমাধান করতে হবে। সল্যুশন ম্যানুয়াল না দেখাই ভালো। আগে নিজে চেষ্টা করে সমাধান কর, না পারলে তখন সাহায্য নাও। তাহলে নিজের দুর্বলতা কোথায় সে নিজেও বুঝতে পারবে। সেই অংশ ভালো ভাবে শিখে নিতে হবে।
অনেকসময় দেখা যায় জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ক্ষেত্রে অনেকে ভেবে রাখে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিক্যাল দুটোতেই প্রবেশিকা দেবো এবং যেখানে পাব সেটা নিয়েই এগব, আবার কেউ কেউ ফোকাসড থাকে একটা নির্দিষ্ট দিকে, কোনটা বেশি দরকারি? কোনটায় সফলতা বেশি আসে বলে আপনি মনে করেন?
আমার মনে হয় জীবনে প্রথমেই একটা অবজেক্টিভ ঠিক করে নেওয়া ভালো। অনেকেই আছে দুটোই পরীক্ষা দিচ্ছে এবং সুযোগ পাচ্ছে কিন্তু বাড়ির চাপে তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হচ্ছে। কিন্তু তার ইচ্ছে ছিল মেডিক্যাল পড়ার। সে কিন্তু পরে কেরিয়ারে হতাশ হয়ে পড়ছে। এই দিকগুলো এড়ানোর জন্য আমার মনে হয় আগে থেকে লক্ষ্য ঠিক করে এগিয়ে যাওয়াটা ভীষণ জরুরি। আমি যেমন প্রথম থেকেই জানতাম ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ব। আমি শুধু সেই প্রবেশিকাটি দিয়েছিলাম। সেরকম যেসব ছাত্র ছাত্রী এ বিষয় আগে থেকে ঠিক করে নেয় তাদের বিষয় অনুযায়ী পড়তে সুবিধা হয়। এক্ষেত্রে আমি আবার বলব যে বিষয় ভালো লাগে, যেটায় উৎসাহ আছে সেটা নিয়েই এগনো ভালো। ইলেভেন থেকে টুয়েলভে ওঠার সময় এটা ভেবে নেওয়া দরকার সব ছাত্র ছাত্রীর তাদের কোন সাবজেক্ট বেশি ভালো লাগছে অঙ্ক না জীববিদ্যা। সেই অনুযায়ী এগও।
আপনার কথায় একটা প্রশ্ন মনে এল। জয়েন্ট প্রস্তুতি কবে থেকে নেওয়া দরকার? কেউ কেউ ক্লাস এইট থেকে নেয় আবার কেউ ইলেভেন থেকে। কোন সময়টা থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা দরকারি?
দেখুন, আমার মনে হয় মাধ্যমিকের আগে এসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার কোনও দরকার নেই। সেই সময়টা তাদের ‘নলেজ ফ্লারিশমেন্ট’- এর সময়। সেই সময় সব কটা বিষয় নিয়ে সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়া উচিত। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং দেবো বলে শুধু সায়েন্স ভালো করে পড়ব আর আর্টস পড়বই না এটা উচিত না। মাধ্যমিকের পর জয়েন্টের প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করতে হবে। সেক্ষেত্রে তারা সেইসময় বুঝে যাবে তারা কোন সাবজেক্টে দুর্বল আর কোনটায় ভালো। ফাউন্ডেশন তৈরি করাটা আসল। সেটা মাধ্যমিক স্তরে তৈরি হয়। আমরা জানি এখন অনেক ন্যাশনাল লেভেল জয়েন্ট এন্ট্রান্স এর জন্য বিশেষ করে মেডিক্যাল যেহেতু এখন শুধুই ন্যশানাল লেভেলেই হয় তার জন্য ক্লাস এইট থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে অনেকে। কিন্তু আমি সেটাকে সেভাবে সমর্থন করতে পারি না। জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ম্যাচিওরিটি লেভেল দরকার, যেটা মাধ্যমিকের পর আসে।
সেলফ স্টাডি কতটা দরকারি? জয়েন্ট এবং তার পরেও এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটা কীভাবে সাহায্য করতে পারে?
এটা একটা এখন বড় সামাজিক সমস্যা বলা যেতে পারে। কারণ ছাত্র ছাত্রীদের এখন নিজেদের সময় বলে কিছু নেই। তারা স্কুল থেকে কোচিংয়ে যাচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে বাবা-মায়েরা তাদের নানা এক্সট্রা-কারিকুলাম এর সঙ্গে যুক্ত করছেন। ফলে তাদের নিজেদের পড়ার টাইম কমে যাচ্ছে। এটা খুব সমস্যার। তুমি নিজে কী শিখলে, নিজে কী জানলে সেটা সবার আগে। কারণ সেলফ স্টাডি না থাকার জন্য কিন্তু ভবিষ্যতে অনেকের অসুবিধা তৈরি হচ্ছে। শুধু প্রবেশিকা তো নয়, আমাদের আসল লক্ষ্য একটা ভালো কেরিয়ার বেছে নেওয়া, সেটার কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে আর তার জন্য সেলফ স্টাডি দরকার।
অনেকসময় দেখা যায় একজন ছাত্র কিংবা ছাত্রী একটি বিষয়ের সব অধ্যায়ে সমান ভালো নয়। কোনওটাতে একটু পিছিয়ে আবার কোনওটাতে বেশ ভালো, সেক্ষেত্রে কী তারা গোটা সিলেবাস কভার করার দিকে নজর দেবে? নাকি যে বিশেষ অধ্যায় বা চ্যাপ্টারগুলোতে তাদের দখল আছে সেগুলোর দিকে নজর দিয়ে আরও ভালো করার চেষ্টা করবে?
ন্যাশনাল বা স্টেট লেভেলের এই পরীক্ষাগুলোতে পুরো সিলেবাস কভার করেই যাওয়া উচিত। কারণ পরীক্ষায় সব জায়গা থেকেই কিন্তু প্রশ্ন আসবে। আর এই পরীক্ষায় কোনও অল্টারনেটিভ থাকে না। কোনও জায়গা বাদ দিয়ে গেলে সেই জায়গা থেকে প্রশ্ন আসলে তার উত্তর করতে পারব না। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে অপ্টিমাম ব্যালান্স এর কথা, কোনও একটি বিষয়ের যদি দশ শতাংশ ছেড়ে গেলে মনে হয় যে অন্য আর একটি বিষয় আমি আরও ভালো করে প্রস্তুতি নিতে পারব তাহলে সেটুকু ছেড়ে বাকিটায় মনোযোগ দেওয়া যায়। আমার নব্বই শতাংশ নম্বর পাওয়ার জন্য ওই দশ শতাংশ আমি ছাড়ছি। তবে এটার কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম তো নেই। যে যেভাবে প্রস্তুতি নেবে। তবে তা দশ শতাংশের বেশি হওয়া কাম্য নয়।
বর্তমানে যুব সম্প্রদায়ের কাছে সোশ্যাল মিডিয়া একটা বড় জায়গা। এটা এক ধরনের নেশাও বলা যেতে পারে। এই ধরনের অ্যাডিকশন থেকে পরীক্ষার আগে অনেকেই বেরিয়ে যেতে চায় কিন্তু সবাই পারে না। এটা কী আদৌ সম্ভব?
বিশেষ করে শহরের ছেলে মেয়ে এবং যারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে তাদের কাছে এই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডিকশনটা মারাত্মক। সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলেও আসতে পারছে না। আমাদের সময় এটা ছিল না। কিন্তু আবার অন্য দিক থেকে দেখলে এই সোশ্যাল মিডিয়াকে আমরা ভালো কাজে লাগাতে পারি। যেমন অনেক গ্রুপ থাকে যারা ভিন্ন ধরনের প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করে। সেখানে বইয়ের নাম নিয়েও আলোচনা হয় এবং নানা প্রশ্ন সমাধান করা হয়। এইরকম মিডিয়াম সবার ক্ষেত্রেই কিন্তু খুব দরকারি। আবার কোচিং বা যেখানে গ্রুপ স্টাডি করা হয় তাদের যদি একটি মেসেজ গ্রুপ থাকে সেখানেও ক্লাসের বিষয় কিংবা পড়ার বিষয় আলোচনা করা হয়। কোনও নোটস মেল করার ক্ষেত্রেও তা কাজে লাগে। তাই আমার মনে হয় এরকম যে কোনও প্ল্যাটফর্মকে ভালো কাজে ব্যবহার করাটা ভীষণরকম ভাবে দরকারি।
জয়েন্ট এন্ট্রান্স প্রস্তুতি আপনার কথা শুনে বোঝা গেল, প্রায় একটা জার্নির মতো। সেখানে অভিভাবক এর গুরুত্ব কতটা?
বাবা-মায়ের গুরুত্ব এখানে অনেকটাই। ছোট থেকেই একটি ছেলে বা মেয়ে তার বাবা-মাকে দেখে আসছে। তাদের কাছে তারা সবথেকে আপন। তাই বাবা-মায়ের সবার আগে দরকার ছেলেমেয়েকে প্রপার গাইড করা। তাদের আইডল হয়ে ওঠা। শুধু পড়ার ক্ষেত্রে নয় তাদের সুন্দর জীবন ধারণের ক্ষেত্রেও তাঁদের চাই। বিশেষ করে স্কুল লেভেলে এটা আরও দরকার। কলেজে উঠলে সেখানে তাদের পরিচিতি অনেক বাড়ে তখন কেরিয়ার নিয়ে তারা আলোচনা করার জায়গা পায় কিন্তু স্কুল লেভেলে বাবা-মায়ের উচিত ছেলেমেয়ের কাছে কেরিয়ার অপারচুনিটিগুলো খুলে ধরা।
সাবজেক্ট স্পেসিফিক কোনও সাজেশন দেবেন, এবারের জয়েন্ট পরীক্ষার্থীদের জন্য?
যে কোনও সাবজেক্টের একদম বেসিক লেভেল থেকে পড়া শুরু করে আস্তে আস্তে নানা বইপত্র ঘেঁটে উপরের দিকে পড়ার পরিধি বাড়াতে হবে। এর ফলে কী হবে? না জয়েন্ট-এ শুধু স্টেট লেভেল নয় একই সঙ্গে ন্যাশনাল লেভেলে যে সকল পরীক্ষা আছে সেগুলোর জন্য প্রস্তুতি তৈরি হয়ে যাবে। মনের ভিতর প্রশ্ন থাকতে হবে যে কেন এটা হয়? কেন এটা হচ্ছে? এগুলো নিজের মধ্যে প্রশ্ন তুলে তার উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। চট করে কিছু করা সম্ভব নয়, তার জন্য একটা বড় সময় ধরে অধ্যয়ন এবং অভ্যাস দরকার।
জয়েন্ট এন্ট্রান্স একটি একদিনের পরীক্ষা। সেখানে যে কোনও ক্ষেত্রেই কারও ফল খারাপ হতে পারে। এবং সেই সব ছাত্র-ছাত্রীরা সেটা নিয়েই খুব ভেঙে পড়ে। এর কী কোনও সমাধান আছে?
আমি এরকম অজস্র দৃষ্টান্ত দেখেছি। তাদেরকে বলব কখনও ভেঙে পড় না। কারণ এটাই জীবনের শেষ পরীক্ষা নয়। জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় আছে। আজ হয়তো একজন ছাত্র বা ছাত্রীর ইচ্ছা ছিল যাদবপুরে পড়ার কিন্তু র্যাঙ্ক ফোর ডিজিটের আসায় সে পারল না। তাদের জন্য বলব যেখানেই সুযোগ পেয়েছ লড়াই করে যাও। কারণ এরপর ‘গেট’ এবং তার সমগোত্রীয় কিছু পরীক্ষা আছে সেখানে ভালো ফল করতে পারলে তুমি হায়ার স্টাডিজ করতে যাদবপুরে কিংবা আরও ভালো জায়গায় যেতে পারবে। তাই কোনওটাই জীবনের শেষ পরীক্ষা নয়, শুধু লেগে থাকার জোর আর লড়াই করে যাওয়ার ক্ষমতাটা থাকা জরুরি।