অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়: বাজারে সবসময় ডালশস্যের চাহিদা ও দাম ভালোই থাকে। কারণ, রাজ্যে যতটা পরিমাণ ডালশস্য উৎপাদন হয়, তাতে রাজ্যের চাহিদা পূরণ হয় না। অন্য রাজ্য থেকে আসা ডালের উপর নির্ভর করতে হয়। যদিও আগের চেয়ে রাজ্যে ডালশস্যের উৎপাদন অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও রাজ্য কৃষি দপ্তরের উদ্যগে বিভিন্ন জেলায় ব্লকের কৃষি আধিকারিকদের মাধ্যমে চাষিদের বিভিন্নভাবে ডালের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। চাষিরা এইসময় মুগ ডালের চাষ করলে ভালো লাভ পাবেন। কারণ, এখন মুগ ডাল চাষ করার সঠিক সময় বলে জানাচ্ছেন কৃষি আধিকারিকরা। তাঁরা বলেন, মুগ ডালের চাষ বছরে দু’বার করা যায়। ফাল্গুন-চৈত্র এবং ভাদ্র মাসে মুগ লাগানো যায়। বাজারে অন্যান্য ডালের থেকে মুগ ডালের চাহিদা এবং দাম সবচেয়ে বেশি থাকে। মুগ চাষের উপযুক্ত জল দাঁড়ায় না, এমন দোআঁশ বা বেলে-দোআঁশ মাটি। বেশি নোনা মাটিতে চাষ করা যাবে না। ভালো জাতের মধ্যে রয়েছে সোনালী, পান্না (বি-১০৫), সম্রাট (পিডিএম-৮৪-১৩৯), বাসন্তী (পিডিএম-৮৪-১৪৩)। এই জাতগুলির বেশিরভাগ শুঁটি একসঙ্গে পাকে। আবার ২-৩ পর্যায়ে তুলতে হয়, এমন উন্নত জাতের মধ্যে রয়েছে কে-৫৮১, পিডিএম-৫৪, পন্থমুগ-৪। কিছুদিন আগে ছাড়পত্র পাওয়া সম্রাট ও বাসন্তী জাত দু’টি হলদে কুটে রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ম্যাঙ্কোজেব ৭৫ শতাংশ ৩ গ্রাম বা থাইরাম ৭৫ শতাংশ ২ গ্রাম বা ক্যাপটান ৭৫ শতাংশ ২ গ্রাম হারে ভালোভাবে মিশিয়ে বীজ শোধন করা যেতে পারে। বীজ শোধনের কমপক্ষে ৭ দিন পরে বীজের সঙ্গে রাইজোবিয়াম কালচার মেশাতে হবে। এরপর বীজ বসাতে হবে সঠিক নিয়ম মেনে। ছিটিয়ে বা সারিতে বুনলে বিঘা প্রতি বীজ লাগাবে ২.৫-৪ কেজির মতো। বীজ বসানোর দূরত্ব হবে ২০/১০ সেমি। জমিতে ঘন গাছ থাকলে পাতলা করে নিতে হবে। প্রতি বর্গমিটারে ৫০-৫৫টি গাছ রাখতে হবে। বীজের সঙ্গে জীবাণুসার রাইজোবিয়াম মিশিয়ে বুনতে পারলে ভালো। জমি তৈরির সময় বিঘা প্রতি ৩ কেজি নাইট্রোজেন বা ৭ কেজি ইউরিয়া, ৫ কেজি ফসফেট বা ৩১ কেজি একক সুপার ফসফেট ও ৫ কেজি পটাশ বা ৮ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করা উচিত। পরিমাণমতো ভালোমানের জৈবসার ব্যবহার করতে হবে। ভালো ফলন পেতে ঠিকমতো পরিচর্যা করা জরুরি। বীজ বোনার তিন সপ্তাহ পর জমিতে থাকা আগাছা ভালোভাবে তুলে ফেলতে হবে। অতিরিক্ত গাছ ও দুর্বল গাছ জমিতে থেকে থাকলে তা তুলে ফেলতে হবে। ভাদ্র মাসে লাগানো হয় বলে সাধারণভাবে মুগ চাষের প্রাথমিক অবস্থায় সেচ লাগে না। তবে কোনও কারণে জমিতে টান দেখা দিলে ফুল আসার আগে অর্থাৎ বোনার ২৫ দিন থেকে ৩০ দিনের থাকায় একটা হাল্কা সেচ দিয়ে নিতে হবে। রোগপোকার আক্রমণ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সাদা মাছির দ্বারা কুটে রোগ ছড়ায়। এই রোগ দমনে এন্ডোসালফান ২ মিলিলিটার হিসেবে প্রতি লিটার জলে গুলে প্রতি বিঘায় ৭০ থেকে ৮০ লিটার ওষুধ মেশানো জল স্প্রে মেশিনের সাহায্যে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। চোষিপোকা মুগের খুবই ক্ষতি করে। এই পোকা দমনে মনোক্রোটোফস দেড় মিলিলিটার হিসেবে প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে গাছে প্রয়োগ করতে হবে। বিছের আক্রমণ দেখা দিলে এন্ডোসালফান জাতীয় ওষুধ দেড় মিলিলিটার হিসেবে প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে মেশিনের সাহায্য জমিতে ছড়াতে হবে। সঠিক নিয়ম মেনে চাষ করলে বিঘা প্রতি ১৫০ থেকে ১৭৫ কেজি ফলন পাওয়া যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন কৃষি আধিকারিকরা।