আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের খামার অধিকর্তা সুধিব্রত মিত্র জানিয়েছেন, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আমনের বীজতলা শুরু করতে হবে। ফলে হাতে যেহেতু এখনও এক মাসের কিছু বেশি সময় রয়েছে, সেজন্য যে জমিতে বীজতলা করা হবে, সেখানে এখনই ধইঞ্চা, কলাই বা মুগের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। শন চাষও করা যায়। কিন্তু সেক্ষত্রে আরও কয়েকটা দিন বেশি সময় লাগবে। মুগের ভালো জাতের প্রয়োজন নেই। ডাল না হলেও চলবে। শুধু গাছ হওয়ার পর তা কেটে ওই জমির মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এই প্রক্রিয়ার সময় একটু ফসফেট সার যোগ করতে পারলে ভালো হয়। এতে একদিকে যেমন পচন প্রক্রিয়া দ্রুত হয়, আবার মাটিতে ফসফেটও কিছুটা থেকে যায়। ধইঞ্চা, কলাই কিংবা মুগ চাষের ফলে মাটিতে অনেকটাই এনপিকে চলে আসে। অর্থাৎ মাটি তৈরি হয়ে যায়।
আমনের বীজতলার জন্য এক ফুট চওড়া এবং যতটা প্রয়োজন লম্বা বেড তৈরি করতে হবে। দু’টি বেডের মাঝে এক ফুট চওড়া নালা রাখতে হবে। এতে জল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো হয়। কিংবা প্রয়োজনে ওই নালার সাহায্যে বীজতলায় জলও দেওয়া যাবে। বীজতলায় বীজ ছাড়া ছাড়া ফেলতে হবে। অর্থাৎ এক জায়গায় যেন বেশি বীজ না পড়ে। যে জমিতে আমন ধান চাষ করা হবে, তার ১০ ভাগের এক ভাগ জমিতে বীজতলা করতে হবে। এখনও যেহেতু এক মাসের বেশি সময় হাতে রয়েছে, সেকারণে ভালো জায়গা থেকে শংসিত বীজ সংগ্রহের পর দিন দু’য়েক ওই বীজ রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। কারণ, বীজটা হয়তো ভালো।
কিন্তু সেই বীজে আর্দ্রতার পরিমাণ কী আছে তা কৃষকের জানা থাকে না। আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকলে বীজের অঙ্কুরোদগম ভালো হয় না। সুতরাং অন্তত ২ দিন বীজ রোদে দিয়ে শুকিয়ে নেওয়া উচিত। বীজতলায় ফেলার আগে অবশ্যই বীজ শোধন করে নিতে হবে। প্রথমে বীজ ভিজিয়ে নিয়ে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি মাখিয়ে তার পর ছায়ায় বীজ আবার শুকিয়ে নেওয়া যেতে পারে। আবার ৮-১০ ঘণ্টা বা সারারাত বীজ ভিজিয়ে রেখে কার্বেন্ডাজিম দিয়ে শোধন করা যেতে পারে। অনেক কৃষক শোধনের পর বস্তা বা খড় চাপা দিয়ে বীজ কলিয়ে নেন। তার পর অঙ্কুরিত বীজ বীজতলায় ফেলেন। এতে বীজতলায় ২দিন সময় কম লাগে।
বীজতলা করার সময় কম থাকলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন কৃষক। না হলে শোধনের পর সরাসরি বীজ ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে বীজতলায়। সেক্ষেত্রে বীজের মুখ ফাটতে মোটামুটি দিন তিনেক সময় লাগে। সুধিব্রতবাবু জানিয়েছেন, কৃষককে মনে রাখতে হবে বীজতলাতেও খাবারের প্রয়োজন হয়। ফলে এনপিকে সার দিতে হবে। তবে প্রথম থেকেই নাইট্রোজেন সার বেশি না দিয়ে গাছের স্বাস্থ্য বুঝে ৭দিন ও ১৫দিনের মাথায় দু’বার প্রয়োগ করা যেতে পারে। বীজতলায় দানা জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে পারলে ভালো। এতে রোগপোকার আক্রমণ অনেকটাই ঠেকানো যায়। যেসব কৃষক আমন ধান চাষ করবেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে জমির অবস্থানের উপর নির্ভর করে জাত নির্বাচন করা উচিত। সেক্ষেত্রে নিচু জমিতে চাষের জন্য স্বর্ণ সাব ওয়ান জাতটি বাছাই করা যেতে পারে। যাঁদের মাঝারি নিচু জমি, তাঁরা প্রতীক্ষা জাতটি চাষ করতে পারেন। যেসব এলাকায় জলের সমস্যা রয়েছে, সেখানকার জন্য সহভাগী জাতটি উপযুক্ত। এটি একটি খরা সহনশীল জাত। এছাড়া আমনচাষিরা শতাব্দী, রাজেন্দ্র ভাগবতী জাতগুলি চাষ করতে পারেন। সুন্দরবন এলাকার জন্য দেশি ধান চাষ করাই ভালো। সেক্ষেত্রে দুধেশ্বর, বাঁশকাঠি, তালমুগুর, বহুরূপী এগুলি চাষ করা যেতে পারে।
পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ব্লকের সহকারি কৃষি অধিকর্তা পরিমল বর্মন বলেছেন, আমরা কৃষকদের বলছি এখন থেকেই আমনের ভালো জাতের বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ যেন অবশ্যই শংসিত হয়। বীজ সংগ্রহ করার পর বাড়িতে ১০০টি বীজ নিয়ে জলে ভিজিয়ে রেখে দেখে নিতে হবে, কতগুলি বীজ অঙ্কুরিত হচ্ছে। এমনিতে বলা হয়, ১০০টির মধ্যে ৮০টি বা তার বেশি বীজ অঙ্কুরিত হলেই সেই বীজে চাষ করা যায়। কিন্তু আমরা বলছি, এমন বীজ সংগ্রহ করুন যার ১০০টির মধ্যে ১০০টিই অঙ্কুরিত হবে। বীজ সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে জাতটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পুরনো জাত অর্থাৎ যেসব জাতের বয়স ১০ বছর বা তার বেশি হয়ে গিয়েছে, সেগুলিকে এবার বাদ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ললাট, স্বর্ণ, শতাব্দী এসব জাতগুলি অনেক হয়েছে। এবার সুপার শ্যামলী, রাজেন্দ্র ভাগবতী বা পুরুলিয়ার মতো খরাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত সহভাগী জাত, এসব চাষ করতে হবে। আমনের জমি প্রস্তুতির কাজও এখন থেকে ধীরে ধীরে শুরু করতে হবে। প্রথমে ২-৩টি আড়াআড়ি চাষ দিয়ে মাটি ওলোট-পালোট করে দিতে হবে। জমির আল ঠিক করতে হবে। আলে যাতে আগাছা না জন্মায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগাছাই ফসলের অন্যতম শত্রু। অবশ্যই বীজ শোধন করতে হবে। প্রতি কেজি বীজের জন্য কার্বেন্ডাজিম ২ গ্রাম মাত্রায় দিয়ে বীজ শোধন করা যেতে পারে।
কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে বীজ শোধনের জন্য কার্বেন্ডাজিম দেওয়া হয়ে থাকে। সময়ে বীজতলা করা উচিত। সেক্ষেত্রে ১৫ জুন থেকে ৩০ জুনের মধ্যে বীজতলা করে ফেলতে পারলে ভালো। কিন্তু পুরুলিয়ায় জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ হয়ে যায়। বৃষ্টি নির্ভর চাষ, সেকারণে বৃষ্টির দিকে তাকিয়েই চাষ শুরু করে থাকেন কৃষকরা।