মানসিক উত্তেজনার বশে ঘরে বাইরে বিবাদে জড়িয়ে অপদস্থ হতে পারেন। হস্তশিল্পীদের পক্ষে দিনটি শুভ। মনে ... বিশদ
বৈদিক পাঠ্যপুস্তকের ধারাবাহিকতাহীন বিজ্ঞান অথবা বাইবেল-বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বকে এড়িয়ে ডারউইনের অভিব্যক্তিবাদ পড়াতে গিয়ে শিক্ষক কুণাল জোসেফ বাস্কে (শ্রমণ) জেলবন্দি হন। কোর্টরুমে তাঁকে কেন্দ্র করে শুরু হয় দুই দুঁদে উকিল রেভারেন্ড বসন্ত কুমার চ্যাটার্জি (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) ও অন্তন ডি’সুজার (নাসিরুদ্দিন শাহ) দীর্ঘ আইনি লড়াই। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার গনগনে আঁচে রাজনৈতিক স্বার্থ সেঁকে নেওয়ার বৃহত্তর ষড়যন্ত্রও যুক্ত হয়। দেশের ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় মেরুকরণে ক্লান্ত ও মোহমুক্ত ডিফেন্স কাউন্সেল অন্তনের সঙ্গে ধর্মীয় নিরাপত্তাবোধের কাল্পনিক অভাবে আক্রান্ত রেভারেন্ড চ্যাটার্জির আইনি লড়াইয়ের মধ্যেও দ্বিপাক্ষিক সম্ভ্রম ও ভালোবাসার আবেগটুকু আগাগোড়া অক্ষুণ্ণ ছিল। ধর্মান্ধ, যুক্তিবাদী ও বিপথগামী, এই তিনটি সামাজিক শ্রেণির নিরন্তর দ্বন্দ্বের মাঝে বিভিন্ন ধর্মীয় মতাদর্শের সহাবস্থান এবং নিজস্ব বিশ্বাসের অনুশীলন ও রক্ষার সংবিধান-প্রদত্ত নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার বাস্তবসম্মত গল্প এটি। কুণাল নয়, আসল বিচারপ্রার্থী এখানে ভাবনার অধিকার। ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত মতবাদকে চেপে রাখার আদিম অভ্যাসেরও গল্প এই ছবি।
১৯৫৫ সালে তৎকালীন মাঙ্কি ট্রায়ালের ভয়াবহতা নিয়ে প্রকাশিত জেরম লরেন্স ও রবার্ট ই লি’র নাটক ‘ইনহেরিট দ্য উইন্ড’ থেকে অনুপ্রাণিত এই ছবির আঙ্গিকে নাট্যমঞ্চের প্রভাব অনস্বীকার্য। ক্ষুদ্র সময়সীমার একটি আঞ্চলিক ঘটনার জাতীয় ও কালজয়ী তাৎপর্য ছবিটিকে ভিন্ন উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার শৈবাল মিত্রের অধিনায়কোচিত নিয়ন্ত্রণ আগাগোড়া বজায় ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে রাজনৈতিক শক্তির প্রভাব উন্মোচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমার্ধের সামান্য গতি-মন্থরতার মেঘও কেটে গিয়েছে। অশোক দাশগুপ্তের সিনেমাটোগ্রাফি ও সুমিত ঘোষের সম্পাদনায় অপর্যাপ্ত পরিসরও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে। পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের সঙ্গীত হৃদয়গ্রাহী।
সর্বভারতীয় দর্শকদের জন্য তাঁর অন্তিম নিবেদনে সৌমিত্র অনবদ্য। পরিস্থিতির গভীরতা উপলব্ধির অনুশোচনা এবং দীর্ঘলালিত বিশ্বাসের অভ্যাস ছাড়তে অপারগতার দ্বন্দ্ব তাঁর অভিনয়ে সমুজ্জ্বল। ভয়ঙ্কর শীতল পেশাদার অথচ ব্যক্তিগত সম্পর্কের উষ্ণতায় ভরপুর অন্তনের চরিত্রে দাপটে অভিনয় করেছেন নাসিরুদ্দিন। কুণালের বাগদত্তা বিশ্বাস ও সত্যের দ্বৈরথে অসহায় রেশমির চরিত্রে অমৃতাও সপ্রতিভ। প্রত্যেক শিল্পীই নিজের চরিত্রের দৃষ্টিকোণ প্রতিষ্ঠায় এতটাই আত্মপ্রত্যয়ী ছিলেন যে, দর্শককেও কোনও পক্ষ অবলম্বন করতে গিয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়েছে।