সমাজের দুটো ভিন্ন শ্রেণি থেকে উঠে আসা মানুষ। তাঁদের স্বভাব চরিত্র আলাদা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মিল একটাই— দু’জনেই জীবনের থেকে পালাতে চাইছে। ফলে সন্দীপ আর পিঙ্কির পথচলাও এক হয়ে যায়। পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রেক্ষাপটেই তাঁর ‘সন্দীপ অউর পিঙ্কি ফারার’ ছবিটিকে তৈরি করতে চেয়েছেন। আগাপাশতলা সোশ্যাল স্যাটায়ার। ছবির পরতে পরতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের একাধিক ইস্যু নিয়ে নাড়াচাড়া করা হয়েছে। দিবাকরের চেনা ছন্দেই সেখানে রয়েছে কমেডির ছোঁয়া। কিন্তু তারপরেও যেন শেষ রক্ষা হয় না। 
গল্পের মোড়ক বেশি না খুলে বরং চরিত্রগুলোকে চেনা যাক। কর্পোরেট ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ কর্মী সন্দীপ (পরিণীতি চোপড়া) অন্তঃসত্ত্বা। বসের অন্যায় মেনে নিতে পারছে না বলেই সে পালাচ্ছে। অন্যদিকে হরিয়ানা পুলিসের সাসপেন্ড হওয়া অফিসার পিঙ্কি (অর্জুন কাপুর) ফিরে পেতে চাইছে চাকরি। চরিত্র দুটোর নামকরণে রয়েছে মজা। যাইহোক, শুরু হয় ছোটাছুটি। কী লেখা রয়েছে তাদের ভাগ্যে? উত্তর পেতে দু’ঘণ্টা সিনেমা হলে বসে থাকাটা কিন্তু কষ্টকর। কারণ দিবাকর এই ছবিকে সাসপেন্স থ্রিলার বলতে চাইলেও গোড়ায় গলদ করে ফেলেছেন। গল্পের গতি বেশ ধীর। একাধিক প্লটের পুনরাবৃত্তি এবং মোটের উপর ট্যুইস্টের অভাব প্রথমার্ধের শেষেই ছবির গতি প্রকৃতি বুঝে নেওয়া যায়। তাই দর্শকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটা স্বাভাবিক। 
ভুলে গেলে চলবে না, দিবাকর প্রায় চার বছর আগে এই ছবির শ্যুটিং সেরেছিলেন। তারপর সময় অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। ফলে অর্জুন বা পরিণীতির তখনকার অভিনয় দর্শকমনে জায়গা পাবে কি না সন্দেহ জাগে। অর্জুন-পরিণীতি এই নিয়ে তৃতীয়বার জুটি বাঁধলেন। অর্জুনের অভিনয় আহামরি নয়। চরিত্রটার গভীরতা ফুটিয়ে তুলতে মাঝেমধ্যে তাঁর প্রচেষ্টাকে অতি-অভিনয় ছাড়া কিছুই বলা যায় না। বরং পরিণীতি কয়েকটি জায়গায় প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। স্মার্ট ও নারী ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী সন্দীপ চরিত্রটার একাধিক স্তরকে তিনি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। তবে অর্জুনের চরিত্রটির ব্যাক স্টোরিকে কেন সামনে আনলেন না পরিচালক, তা বোঝা গেল না। ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজের পর এই ছবিতে রঘুবীর যাদব ও নীনা গুপ্তার কেমিস্ট্রি পছন্দ হওয়া কঠিন। জয়দীপ আহলাওয়াতের মতো শক্তিশালী অভিনেতাকেও ব্যবহার করতে ব্যর্থ পরিচালক। অনু মালিকের সুরারোপিত ছবিতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেনি। বরং অনিল মেহতার ক্যামেরায় বেশকিছু শট প্রশংসনীয়।
আসলে দিবাকরের মতো পরিচালকের থেকে দর্শকের প্রত্যাশা থাকাটা স্বাভাবিক। স্টার ভ্যালুতে বিশ্বাস না রেখে, স্রোতের বিপরীতে হেঁটেই বলিউডে তিনি স্বাধীন চিন্তাধারার প্রবর্তক। কিন্তু পরিণীতি ও অর্জুনের মতো স্টারকে নিয়ে তিনি এবারে যে দৌড়ে নেমেছিলেন তা অনন্ত দিবাকরসুলভ হল না।