পূজা, বর্ষা ও প্রেম তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে রবি ঠাকুরের গান। আর তারই সঙ্গে কিছু গল্প, কিছু কথা, কিছু আলাপচারিতায় এক অসাধারণ সন্ধ্যা উপহার পেলাম আমরা। সম্প্রতি আইসিসিআরে অনুষ্ঠিত হল সার্ভিসেস ওভারসিজ কনসালটেন্সি নিবেদিত পরিপূর্ণ রবীন্দ্র ভাবনায় সাজানো এক অনুষ্ঠান ‘তোমায় গান শোনাব’। বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী অদিতি গুপ্তর সুযোগ্য শিষ্য শ্রী বসু এবং সুতীর্থ বেদজ্ঞ ছিলেন এই সন্ধ্যার প্রধান দুই কাণ্ডারী। কখনও একক, কখনও দ্বৈত সঙ্গীতে এদিনের অনুষ্ঠান ভরিয়ে তোলেন তাঁরা। প্রথম পর্যায়ে কবিগুরুর পূজা পর্যায়ের গান নির্বাচনেও ছিল বৈচিত্র্যের ছোঁওয়া। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘুরে ফিরে গাওয়া কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীতের বাইরেও যে অফুরান সৃষ্টিভাণ্ডার, সেখান থেকে অশ্রুত অচেনা গানগুলিকেই এদিন অসামান্য দক্ষতায় তুলে ধরলেন তাঁরা। ভালো লাগে শ্রী’র কণ্ঠে ‘তোমার আমার এই বিরহের অন্তরালে’,‘আজি শ্রাবণ মেঘের আধেক দুয়ার’, ‘খেলার সাথী বিদায় দাও।’ ভালোলাগার মুগ্ধতা সুতীর্থের নিবেদনেও— ‘আজি নির্ভয় নিদ্রিত ভুবনে’, ‘যুগে যুগে বুঝি আষাঢ়’,‘আমার যেদিন ভেসে গেছে’। ভালোলাগে দ্বৈত নিবেদনে ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’। তবে সবচেয়ে দুরূহ কাজটি যা তাঁরা অনায়াসে সম্পন্ন করলেন, তা হল একই গান দুটি ভিন্ন তালে পরপর পরিবেশন। ‘সংসার তিমির মাঝে’ সুতীর্থর কণ্ঠে তেওড়া তালে গানটি শুনবার পরেই ত্রিতালে সেটি গেয়ে শোনান শ্রী।
অন্যদিকে এদিনের অনুষ্ঠানে দর্শক আসনেও ছিল বহু নক্ষত্রের মেলা। অনুষ্ঠান শুরুতেই সঞ্চালক আরজে (রেডিও জকি) অগ্নির আমন্ত্রণে একে একে মঞ্চে উঠে এলেন প্রখ্যাত বাচিকশিল্পী জুটি জগন্নাথ বসু, ঊর্মিমালা বসু, চিত্রপরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, মীর প্রমুখ। ছিলেন শিল্পী অদিতি গুপ্তও। দুই শিষ্যের আলাপচারিতায় এদিন তাঁর সম্পর্কেও জানা গেল অনেক তথ্য। মুগ্ধ করল পারস্পরিক শ্রদ্ধা-স্নেহের এই অপূর্ব মেলবন্ধন।
দর্শক আসন কানায় কানায় পূর্ণ। সচরাচর এই সময় কলকাতার হলগুলির তুলনায় এ এক বিরল দৃশ্য। বিস্ময় আরজে অগ্নির কথাতেও ‘শুধুমাত্র ভালো কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনবার জন্যেই আজও তবে এত মানুষ প্রতীক্ষায় থাকে!’ আসলে রবীন্দ্রনাথ তো সেই সিংহাসনেই চিরকাল অধিষ্ঠিত থাকবেন, আমাদের মনের মণিকোঠায়।
জয়া মুস্তাফি