যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
যে কোনও জ্বর তা ডেঙ্গু হোক বা ম্যালেরিয়া— দেহে প্রোটিনের চাহিদা একটু বাড়ে। কারণ জ্বরের সময় শরীরে ‘ক্যাটাবলিক প্রসেস’ চলে। অর্থাৎ দেহকোষে থাকা বড়সড় অণুগুলি ধ্বংস হতে থাকে। প্রোটিনও নষ্ট হতে থাকে। তাই জ্বরের সময় খাদ্যে প্রোটিনের জোগান বজায় থাকা দরকার। সমস্যা হল জ্বর হলে রোগীর মুখে রুচি চলে যায়। খিদে থাকলেও রোগী খাবার মুখে তুলতে পারেন না। এমন ক্ষেত্রে রান্নায় ছোটখাট কিছু পরিবর্তন করে খাবার একটু মুখরোচক করে তোলা যেতে পারে। তবে হ্যাঁ, খাবার সুস্বাদু করতে গিয়ে পুষ্টির সঙ্গে কোনও মতেই আপস করা চলবে না।
কী খাবেন?
মুখে রুচি নেই বলে একটু চানাচুর, চাউমিন, চিপস, সল্টেড বাদাম, প্রিজারভেটিভ দেওয়া নাগেটস খেয়ে ফেললে তো চলবে না। কারণ এই ধরনের খাদ্যে কোনও পুষ্টিগুণ নেই। আবার, ডিপ ফ্রায়েড চিকেন, এগরোল ইত্যাদি মোটেই খাওয়ানো যাবে না। ভাজা খাদ্যে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। তাছাড়া প্রিজারভেটিভ দেওয়া খাদ্য, নোনতা খাবার শরীরে ডিহাইড্রেশন তৈরি করতে পারে।
জ্বরজারি হলে মূল লক্ষ্য হল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতা কমানো। তার জন্য রোগীকে দিতে হবে প্রোটিন ও উপযুক্ত ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাদ্য। অর্থাৎ জ্বরের রোগীকে খেতে হবে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ সমৃদ্ধ আহার। সেক্ষেত্রে বাড়ির তৈরি ডাল, ভাত, মাছ, মাংস, ডিম উৎকৃষ্ট এবং স্বাস্থ্যকর। সেই খাবারই একটু মুখরোচক করতে খাদ্যে পুদিনা পাতা, ধনে পাতা দিতে পারেন।
মুশকিল হল, যাঁরা নিরামিষ খান তাঁদের শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা একটু চ্যালেঞ্জের হয়ে যায়। বিশেষ করে নিরামিষাশীদের দুধে অ্যালার্জি থাকলে বা তাঁরা বেশি ডাল খেতে না পারলে তা জটিলতা তৈরি করতে পারে। কারণ ডাল ও দুধ প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
জলপান
জ্বর হলে রোগী কাহিল হয়ে পড়েন। তাঁর জলপানের মাত্রা কমে যায়। সেখান থেকে ডিহাইড্রেশন হওয়ার আশঙ্কা দূর করা যায় না। সেক্ষেত্রে রোগী শুধু জলপান করতে না পারলে তাকে লেবু ও চিনি মিশিয়েও জলপান করানো যেতে পারে। দেওয়া যেতে পারে ফলের রস। এছাড়া তিনি খেতে পারেন বাড়িতে তৈরি স্যুপ। হেলথ ড্রিংকস পান করতেও পারেন রোগী। মোট কথা তরলজাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়ানো দরকার। যাতে রোগীর দেহে জলশূন্যতা না তৈরি হয়।
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস
জ্বরের রোগীর রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান। ভিটামিন ও খনিজ হল এই ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস-এর মধ্যে সবচাইতে বেশি জরুরি হল ভিটামিন সি। এই ভিটামিন ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে একথা আমরা জানি।
ভিটামিন সি বেশি পরিমাণে থাকে সাইট্রাস ফ্রুট-এ। তাই রোগীকে দিন পাতি লেবুর রস, কমলা লেবু, মুসুম্বি। আবার, পেয়ারা আর আমলা জ্যুস-এও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। এছাড়া বাদবাকি সব খাবারেই কিছু কিছু ভিটামিন ও খনিজ থাকেই।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ডি -এরও বিশেষ ভূমিকা থাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবুজ শাকসব্জিতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে। ভিটামিন ডি পাওয়া যায় ডিম ও দুধে।
ডেঙ্গু নিয়ে সামান্য সতর্কতা
ডেঙ্গু হলে রোগীর প্লেটলেট কাউন্ট কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ডেঙ্গু রোগীর ডায়েট নির্ধারণের সময় ডায়েটিশিয়ানরা একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেন। কারণ রোগীর মাড়ি থেকে বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গ থেকেও রক্তপাত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সেজন্য রোগীকে গলা বা নরম খাবার খেতে দেওয়ারই পরামর্শ দেন ডায়েটেশিয়ান।
রোগী অনেকসময় এমন ডায়েট নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। কারণ নরম খাবার সাধারণত মুখরোচক হয় না। কিন্তু প্লেটলেট কাউন্ট কমে গেলে দেহের অভ্যন্তরে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। ফলে রান্নায় বেশি ঝালমশলা ব্যবহার করলে সেই প্রদাহের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে রক্তপাত হওয়াও অসম্ভব নয়। এছাড়া রোগীকে খুব গরম খাবার খেতেও নিষেধ করা হয়। কারণ পেটের ভিতরে আলসার বা প্রদাহ তৈরি হলে বা মাড়িতে প্রদাহ হলে উষ্ণ খাদ্য থেকে জ্বালা ভাব তৈরি হতে পারে।
মিথ ও জ্বর
মনে রাখবেন, ডেঙ্গুর চিকিৎসায় ম্যাজিক মেডিসিন বলে কিছু হয় না। কিছু অসাধু ব্যক্তি জালিয়াতি করার উদ্দেশে ডেঙ্গুর জন্য ভেষজ ওষুধ বিক্রি করেন। তাঁদের দাবি থাকে, ভেষজ ওষুধ প্লেটলেট কাউন্ট বাড়িয়ে দিতে পারে। অথচ, মডার্ন মেডিসিন দিয়ে চিকিৎসা করার সময় এভাবে ভেষজ ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কারণ সেক্ষেত্রে মডার্ন মেডিসিনের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করতে পারে ওষুধগুলি। রোগীর ভালো হওয়ার বদলে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
• কেউ কেউ প্লেটলেট কাউন্ট বাড়ানোর উদ্দেশে গাছের পাতা বা কোনও নির্দিষ্ট ফলের রস খাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন। সত্যি বলতে কী, প্লেটলেট বাড়াতে আলাদা করে কোনও ফল বা পাতার ভূমিকা নেই। পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণের সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে ও প্রাকৃতিকভাবেই ধীরে ধীরে প্লেটলেটের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
• লোকের কিছু কিছু ব্যাপারে ভুল ধারণা থাকে যেমন ভাত খেলে জ্বর বাড়ে, টক খেলে গলা ব্যথা হয়, আমিষ খেলে গা গরম হতে পারে ইত্যাদি। ‘জ্বরে ভাত খাওয়া যাবে না, শুধু রুটি খেতে হবে’— এমন কোনও বিধিবদ্ধ নিয়ম নেই। কলা কিংবা দই খেলে ঠান্ডা লাগবে তাই খাওয়া যাবে না এমন ভাবনাও ভুল। পুষ্টিকর যে কোনও খাদ্য মুখে রুচলেই খেতে পারেন রোগী।
• ডেঙ্গু রোগীকে তরল খাদ্য বেশি করে পান করতে বলা হয় ঠিকই, তবে তাই বলে মাত্রাতিরিক্ত জল পান করানোর দরকার নেই। সারাদিনে জল ও অন্যান্য তরল ৩ লিটার মতো পান যথেষ্ট। আবার, কিডনির সমস্যায় ভোগা ব্যক্তি, হার্ট ফেলিওরের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে ৩ লিটার জল পানও বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া জল বা অন্য ধরনের তরল খাদ্য গ্রহণ করা উচিত হবে না এই ধরনের রোগীর।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক