যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
সাত্যকির মতো অভিজ্ঞতা আপনাদের অনেকেরই হয়েছে। অপারেশন হয়ত সবার লাগেনি। কিন্তু এইরকম কোমরে ব্যথায় কম-বেশি কষ্ট পাননি, পাঠকদের মধ্যে এরকম মানুষ বোধহয় হাতে গোনাই হবে। কিন্তু কেন হয় এইরকম কোমরে ব্যথা? এককথায় এর উত্তর দেওয়া যাবে না। যিনি শ্রমিক, হয়ত ভারী ব্যাগ তুলে তাঁর কোমরে চোট লেগেছে। আর যিনি অফিসের কর্মী, তাঁর কোমরে ব্যথা হচ্ছে একটানা একভাবে বসে থেকে। আবার আপনাদের কারও হয়তো ঘর পরিষ্কার করার সময়ে একদিন সোফা সরাতে গিয়ে বা ছাদে নতুন গাছের টব তুলতে গিয়ে যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রান্নার গ্যাস আসে পাইপলাইনে। কিন্তু আমাদের দেশে রান্নার গ্যাস আসে সিলিন্ডারে। বাড়িতে এই সিলিন্ডার সরাতে গিয়েও কোমরে ব্যথা লাগে আমাদের দেশের অনেকেরই। তাই প্রশ্ন হল, হঠাৎ যদি এরকম ব্যথা শুরু হয়, কী করবেন আর কী করবেন না?
প্রথমেই যেটা বলা দরকার, সেটা হল, ব্যথা নিয়ে কোনও ব্যায়ামই করবেন না। আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে ব্যথার ওপর জোর করে ব্যায়াম করলেই নাকি ব্যথা কমে যাবে। কিন্তু সেটা হয় না। এতে শুধু আপনার কষ্টই বাড়বে। প্রথমেই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তাঁর পরামর্শ মত ওষুধ শুরু করুন এবং কিছুদিন বিশ্রাম নিন। কতদিন বিশ্রাম নিতে হবে, সেটা চিকিৎসকরাই বলে দেবেন। তারপর ব্যথা কমলে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম শুরু করুন। এবং মনে রাখবেন, ব্যায়াম কিন্তু চালিয়ে যেতেই হবে। আমাদের ভারতীয় সমাজে, দুর্ভাগ্যবশত, শরীরচর্চার সংস্কৃতি নেই। যারা খেলোয়াড় বা মিলিটারিতে কাজ করেন, তাঁরা নিয়মিত শরীরচর্চা করলেও বাকি সমাজের সিংহভাগেরই প্রকৃত শরীরচর্চার প্রতি ঝোঁক নেই। নিয়মিত ব্যায়াম এবং অন্যান্য শারীরিক কসরত করলে এরকম কোমরে ব্যথার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
কোমরে ব্যথা কমার পর ব্যায়াম শুরু করলে চেষ্টা করুন সেটা ভবিষ্যতে ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়ার। অনেকে ম্যাসাজ করার লোক রাখেন। সেটা বৃদ্ধ বয়সে করলেও তরুণ বা যুবাদের কোমরে ব্যথার জন্য ম্যাসাজ করে লাভ নেই। নিজেকেই কষ্ট করে ব্যায়াম করতে হবে। এই প্রসঙ্গে বলে দেওয়া ভালো যে জিমে গিয়ে ব্যায়াম করা খুব ভালো। কিন্তু যদি উপযুক্ত গাইড না থাকে, তাহলে কিন্তু জিমে নানারকম মেশিন ব্যবহার করে অনেকের আবার কোমরে ব্যথা বেড়ে যায়। তাই জিমে গিয়ে আগে দেখবেন সেখানে ঠিকমতো ট্রেনার আছেন কি না। প্রথমেই নিজে বাড়িতে মেশিন কিনে ইউটিউব দেখে ব্যায়াম শুরু করবেন না। এরকম করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যথা কমার চেয়ে বেড়ে যাবে। এবং সেই মেশিন কিছুদিন পর থেকে হয়ে যায় কাপড় মেলার স্ট্যান্ড!
আমাদের শহরে কোমরে ব্যথার আরেকটি বড় কারণ হল বিছানার গদি। আজকাল অনেক মনোলোভা বিজ্ঞাপনে ‘অর্থোপেডিক’ গদি বিক্রি করা হয়। মনে রাখবেন যে এরকম মেডিক্যাল গদি বলে কিছু হয় না। ডাক্তাররা বিছানার গদি সম্পর্কে কিছু কোনওদিন বলেন না। এরকম কৃত্রিম ফোমের গদিতে শুলে পিঠে, কোমরে ব্যথা হবেই। তাই আপনার আরাম একটু কম হলেও, চেষ্টা করুন পাতলা তোষকে শুতে। বসার সোফা বা চেয়ার সম্পর্কেও এক কথা। যে চেয়ারে বসে আপনি দিনে দশ ঘণ্টা কাজ করছেন, সেটা শক্ত হলেই ভালো।
প্রথমেই যে গল্পটা বললাম, সেখানে রোগীকে শেষ অবধি অপারেশন করাতে হয়েছিল। এটা কিন্তু খুব বেশি কেসে হয় না। মনে রাখবেন সিংহভাগ কোমরে ব্যথাই ওষুধ আর অন্যান্য চিকিৎসায় সেরে যায়। সব কোমরে ব্যথার মধ্যে হয়তো ৩ থেকে ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অপারেশন লাগে। তাই এই ঘটনার কথা পড়ে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। আসল কথা হল ঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
আর শেষে দুটি কথা বলি। প্রথমত, মহিলাদের মেনস্ট্রুয়েশনের সময়ে অনেক সময়েই কোমরে ব্যথা হয়। এর জন্য অবশ্যই আপনাদের গাইনিকোলজিস্টের কাছে যেতে হবে। এটা স্বাভাবিক ঘটনা ভেবে চেপে রাখবেন না। আর দ্বিতীয়ত, বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে কোমরে ব্যথা কিন্তু কোনও খারাপ অসুখে, যেমন ক্যান্সারের বার্তাবহ হতে পারে। ছেলেদের প্রস্টেট ক্যান্সার অনেক সময়েই কোমরে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে দেখা দেয়। তাই বৃদ্ধ বয়সের কোমরে ব্যথা কখনই তুচ্ছ করবেন না।