মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
পরামর্শ দিচ্ছেন হিন্দু স্কুলের বাংলার শিক্ষক স্বাগত বিশ্বাস।
‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে কৈশোরের আত্মগরিমা, ‘বহুরূপী’ গল্পে শিল্পের জন্য আত্মত্যাগ, ‘পথের দাবী’ উপন্যাসাংশে দেশাত্মবোধ , ‘অদল বদল’ গল্পে বন্ধুত্বের মূল্য ও ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে নদীর জন্য মমত্ববোধ কৈশোরের নীতি, আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করবে। শুধুমাত্র পরীক্ষার পড়া ভেবে বাধ্য হয়ে পড়ো না, ভালোবেসে গল্প পড়ো। MCQ ও অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নের (৩+৪ নম্বরের) জন্য সব গল্পগুলো, একমাত্র ব্যাখ্যাভিত্তিক প্রশ্নের (৩ নম্বর) জন্য বহুরূপী, অদল বদল ও পথের দাবী। রচনাধর্মী প্রশ্নের (৫ নম্বর)জন্য জ্ঞানচক্ষু, পথের দাবী ও অদল বদল থেকে তৈরি হও।
‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের প্রথম বোধোদয় ঘটে, ‘লেখক মানে কোনো আকাশ থেকে পড়া জীব নয়’। তাই তপনের লেখক হতে বাধা নেই। ‘এমন সময় ঘটল সেই ঘটনা’। ‘পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে?’ ‘প্রথম দিন’ গল্পটি শ্রী তপন কুমার রায়ের নামে ছাপা হলেও নতুন মেসোর ছাপিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব বেশি গুরুত্ব পায়। নেহাত কাঁচা হাতের লেখাকে সম্পাদনার নামে নতুন মেসো এতটাই পরিবর্তিত করে ফেলেছেন যে ‘এর মধ্যে তপন কোথা?’, ‘মনে হয় আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন’। এই আঘাত তার প্রকৃত বোধোদয় ঘটায়। কৈশোরের অনভিজ্ঞতা থেকে প্রতিষ্ঠা পায় ‘লেখক’ তপনের আত্মসম্মানবোধ। ‘শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন’, কী সংকল্প করে ও কেন? উদ্ধৃত লাইনগুলোর পাশাপাশি তপন চরিত্র ও গল্পের নামকরণ গুরুত্বপূর্ণ।
‘পথের দাবী’তে ‘পলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ সব্যসাচী মল্লিককে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তার বর্ণনা এবং তাঁর অদ্ভুত বেশভূষা ও শখ-শৌখিনতার পরিচয় জানতে চায়। দেশপ্রেমিক যুবক অপূর্বর বিনা দোষে ফিরিঙ্গি যুবকদের কাছে অপমানিত হওয়ার ঘটনা ও উপস্থিত ভারতীয়দের প্রতিবাদহীন কাপুরুষের মতো আচরণে ব্যথিত অপূর্বর উপলব্ধি —‘অবিচারের দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না রামদাস’, ‘এমন তো নিত্য-নিয়তই ঘটচে’, ‘মনে হল দুঃখে লজ্জায় ঘৃণায় নিজেই যেন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে যাই।’
অনূদিত ‘অদল বদল’ গল্পটি দুই কিশোরের বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে সমাজে জাতি, ধর্মের ঊর্ধ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুলে ধরে। গ্রামের ছেলেরা হোলির দিন দুই বন্ধুর মধ্যে কুস্তি লড়িয়ে দেওয়ার মতলব করে, অমৃতকে জোর করে মাটিতে ফেলে দেয়,তাতে ‘ইসাবের মেজাজ চড়ে গেল’।অমৃতের বিপদে পাশে দাঁড়াতে গিয়ে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায় । ইসাবকে তাঁর বাবার প্রহারের হাত থেকে বাঁচাতে অমৃত বুদ্ধি করে নতুন জামা অদল-বদলের । এই ঘটনা আড়ালে থেকে ইসাবের বাবা দেখেন এবং বন্ধুত্বের জন্য আত্মত্যাগ দেখে তাঁর বুক ভরে যায় ‘.... ও আমাকে শিখিয়েছে, খাঁটি জিনিস কাকে বলে’।
‘বহুরূপী’ গল্পে হতদরিদ্র বহুরূপী হরিদার দশটা-পাঁচটার বাঁধাধরা কাজ পছন্দ নয়। ‘হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে’। বাহ্যিক সাজপোশাকে ও নিখুঁত অভিনয়ে যে কোন চরিত্রকে জীবন্ত করে তোলেন। একবার বেশি বকশিশ পাওয়ার আশায় অবস্থাপন্ন জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগী সন্ন্যাসীর বেশে গেলেন ‘এবার মারি তো হাতি, লুঠি তো ভাণ্ডার’। হরিদাকে চিনতে না পেরে ‘চমকে উঠলেন জগদীশবাবু’। বিরাগী বললেন ‘আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো?’ জগদীশবাবু তীর্থ ভ্রমণের জন্য একশো এক টাকার প্রণামী দিতে চান, সব উপেক্ষা করে বিরাগী চলে গেলেন ‘আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি, তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি’। পরে বিরাগী সন্ন্যাসীরূপী হরিদার পরিচয় শুনে ‘চমকে ওঠে ভবতোষ’। আর জগদীশবাবুর দান গ্রহণ না করা প্রসঙ্গে হরিদা বলেন, ‘তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়’। ‘হরিদার একথার সঙ্গে তর্ক চলে না’।
‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে ত্রিশ বছর বয়সি স্টেশন মাস্টার নদেরচাঁদের নদীর প্রতি মায়া একটু অস্বাভাবিক। শৈশব, কৈশোর ও প্রথম যৌবন কেটেছে নদীর ধারে। একবার অনাবৃষ্টির বছরে গ্রাম্য নদীটি শুকিয়ে যাওয়ার জোগাড় হলে সে কষ্টে কেঁদে ফেলেছিল। তাই অবিরাম বৃষ্টি হওয়ার জন্য পাঁচ দিন নদীকে দেখা হয়নি বলে স্টেশন থেকে এক মাইল দূরে ব্রিজের কাছে সে চলে আসে। ‘নদেরচাঁদের ভারী আমোদ বোধ হতে লাগল’। ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে এল,‘বড়ো ভয় করিতে লাগিল নদেরচাঁদের’। নদীর এই উন্মত্ততাকে নদেরচাঁদ নদীর বিদ্রোহ বলে মনে করে। যান্ত্রিক সভ্যতায় নিজেদের শৌখিন সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কারণে মানুষ নদীর স্বাভাবিক গতিপথকে রুদ্ধ করেছে। বাঁধ, ব্রিজ, জলাধার যেন নদীর শৃঙ্খল। নদী সেই শৃঙ্খলমোচন করে আপন ছন্দে বয়ে যেতে চায়। কিন্তু মানুষ আবার তাকে বেড়ি পরায়। অন্যমনস্ক নদেরচাঁদের ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু, একটু অস্বাভাবিক মনে হলেও, এ যেন যন্ত্র সভ্যতার প্রতি এক নীরব প্রতিবাদ।