মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
ঠং, ঠং, ঠং!! রাজদরবারে হাজিরা দেওয়ার ঘণ্টা বেজেছে। মন্ত্রী, সান্ত্রি, শয়ে শয়ে প্রজার ভিড়। তবে রাজা কোথায়? সিংহাসনেই বা কে বসে আছে? মণি-মুক্তার সাজ নেই, পরনে প্রজাদের মতো মোটা কাপড়ের আলখাল্লা, জয়ন্তী ফুলের মুকুট মাথায়, উনি কে?
‘ইনিই আমাদের শাসক, তবে রাজা নন, রাজারূপিণী রানি।’ পাশ থেকে বলল একটা লোক। জয়ধ্বনি পড়ল, ‘জয় রানিমার জয়!’ সেই বর্ধিষ্ণু, মহামায়া রূপিণী কেবলই যেন এক স্নিগ্ধ আলোড়ন সৃষ্টি করছে। মন্ত্রী, সান্ত্রি সকলেই নারী, শক্তিরূপেণং নারী। মহিলারা সামলান শাসনভার, রাজ্যপাঠ এবং পুরুষরা হেঁশেল ও সন্তান। এ এক চক্ষুস্থির ঘটনা। পুরুষ, নারী উভয়ই সোৎসাহে নিজের দায়িত্ব পালন করে, তাতে থাকে না কোনও লজ্জা বা কুণ্ঠাবোধ। আজ মারাত্মক ভিড় হয়েছে। এক নির্বাত আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিচার হচ্ছে। এক চাষি অপর চাষির শস্য চুরি করেছে, এমনই নালিশ এসেছে। সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে আজ তাই রানিমার অন্তিম রায় ঘোষণার পালা। ঘণ্টা দেড়েকের বিচারসভায় ঠিক কী হল, কারই বা শাস্তি হল বলতে পারব না তবে এক নারীর সুরুচিপূর্ণতা যেন রাজ দরবারকে অতিকায় রাজকীয় করে তুলল। সত্যিই তিনি রানি নামে সার্থকনামা। তাঁর শান্ত, স্নিগ্ধ, মায়াময়ী রূপ যেন তাঁর গলার গাম্ভীর্য ও কাঠিন্যের সঙ্গে সুসামঞ্জস্য। ঠিক যেন দেবী দুর্গা। দুষ্টের দলন ও শিষ্টের পালন করাই তার কর্তব্য।
‘ধর্মতলা, ধর্মতলা!!’ অমন কর্কশ, বিরক্তিকর কণ্ঠস্বরে ঘুমের দফারফা হওয়াই স্বাভাবিক। সেই চিরাচরিত শহর, চেনা অলিগলি। বাস কলকাতায় এসে পৌঁছাল। মনটা বড় বিষণ্ণ হয়ে গেল। সবটাই তাহলে স্বপ্ন ছিল? সবটাই কি রয়ে গেল সেই সুদূর অতীতে? মাঞ্জিপুরের দেড়শো বছর আগের রানি রাজত্ব আমার না দেখাই থেকে গেল। বাস থেকে নেমে পড়ে একটা খবরের কাগজ কিনলাম।
প্রথম পাতায় গোটা গোটা অক্ষরে শিরোনাম, ‘পণের জন্য বধূহত্যা। খুনি এখনও অধরা।’ মেজাজটা বরবাদ করে দিল। সত্যিই তবে রানি রাজত্ব সুদূর অতীত। তাতে আর কোনও দ্বিধা রইল না।