মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
আমার দেওয়ালি
মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং নানান রঙের টুনি, মোমবাতি দিয়ে সাজাব বাড়ির অঙ্গন। বন্ধুদের আসতে বলব। সবাই মিলে আনন্দে মাতব। জানি, দেওয়ালির অর্থ শুধুমাত্র আলোর রোশনাই নয়। আসল কথাই হল মনের অন্ধকার দূর করে আলোয় ভরে তোলা। যত অজ্ঞানতা কুসংস্কার আছে তা দূর করে জ্ঞানের বাতি জ্বালানোই তো একমাত্র উদ্দেশ্য। উপনিষদে পড়েছি—
‘...তমসো মা জ্যোতির্গময়...’
আর এই সার্থকতাই পূর্ণতা আনে উৎসব পালনে। এও জানি দেওয়ালি মানেই আলোর উৎসব। পাড়ার পূজামণ্ডপে সারারাত জেগে মায়ের পূজা দেখব। মনের আনন্দে ঢাক বাজাব। সন্ধ্যায় বাড়িতে মা-বাবা-ভাইবোনদের— বন্ধুদের নিয়ে সবাই মিলে প্রাণখুলে আনন্দ করব।
প্রার্থনা করব মাগো, অজ্ঞানতা দূর করে জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাষিত করো!
কিঞ্জল চক্রবর্তী, দ্বাদশ শ্রেণী
কল্যাণী শিক্ষায়তন, কল্যাণী
শুভ শক্তির আরাধনা
বাঙালির উৎসবের মধ্যে সামাজিক উৎসবই সব থেকে বেশি। এই শ্রেণীর উৎসবে সমাজের মানুষ বেশি করে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়। বাঙালির ধর্মীয় চেতনা মজ্জাগত, যে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে তাদের মধ্যে থাকে উৎসবের মেজাজ। দেওয়ালি ও কালীপূজা অনুষ্ঠিত হয় কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে। সব ধর্মের লোকেরাই এই অনুষ্ঠানে নিজেদেরকে আনন্দে মাতিয়ে রাখে। এই উৎসবে অশুভ শক্তিকে বিদায় জানিয়ে শুভ শক্তির আরাধনা করা হয়। উৎসবমুখর বাঙালিরা মেতে ওঠে শক্তির পূজায়। পুরাণে উল্লেখ আছে মাতৃশক্তির আরাধনায় মানবজাতির শক্তি ও জ্ঞানের উন্মেষ ঘটে। আলোক উজ্জ্বলের মধ্যে দিয়ে ও শব্দহীন বাজি ফাটিয়ে আমরা এই উৎসবে আনন্দে মুখরিত হই।
সৌপর্ণ চক্রবর্তী, ষষ্ঠ শ্রেণী, হিন্দু স্কুল
ফানুসগুলো যে কোথায় চলে যায়...
আমার ভাই নীলাব্জকে তোমাদের চেনার কথা নয়। সে সবে কেজি টু হলে হবে কী, কথায় বেশ পাকা। সারাক্ষণ শব্দের খই ফোটে তার মুখে। এই তো সেদিন, আমাদের স্কুলের কাছে যে কুমোর ঠাকুর বানায় সেখানে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে ভাই জিজ্ঞেস করল, ‘বাবা, এগুলি কী ঠাকুর?’ বাবা বলল, ‘কালীঠাকুর’। ভাই জিজ্ঞেস করল, ‘এই ঠাকুরের গলায় ওগুলি কী?’ বাবা বললেন, ‘ওটা তো মুণ্ডমালা’। ভাই সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘ধুস, কোনও মাথামুণ্ডুই বুঝতে পারলাম না’।
আমি অবশ্য জানি, ওই মুণ্ডমালা আসলে সংস্কৃতের পঞ্চাশটি অক্ষরের প্রতীক। বাবা আমাকে গল্প বলেছে কালী ঠাকুরের। কীভাবে শিব মা কালীর পায়ের নীচে এল, কেন মা কালী জিভ কেটে থাকেন, কেন কালীর কোমরে কাটা হাতের মালা— আরও কত কী! সত্যি বলতে, কুমোরের কালীঠাকুর গড়া দেখতে দেখতে আমার সেই গল্পগুলিই বেশি করে মাথায় আসে। তাছাড়া, কালীপুজো এলে আমাদের বাড়ির কাছে আগুয়ান সংঘের মাঠে যে বাজির মেলা বসে, সেখান থেকে নানাধরনের বাজি কিনি। সবচেয়ে ভালো লাগে ফানুস ওড়াতে। উড়তে উড়তে ফানুসগুলি যে কোথায় চলে যায়, কে জানে!
নীলার্ক পাহাড়ি, ষষ্ঠ শ্রেণী, ইয়ং হরাইজন স্কুল
রং-বেরঙের আলো
কালীপুজো ও দেওয়ালি এই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয় অনেক আগে থেকে। আলোর এই উৎসবে আমাদের বাড়ি ভরে ওঠে রং-বেরঙের আলোতে। দুই বোন মিলে আলপনা দিয়ে বিভিন্ন রঙের
আবির দিয়ে তৈরি করি রঙ্গোলি। সন্ধ্যবেলা ১৪ প্রদীপে সেজে ওঠে বাড়ির উঠোন। বাবার সঙ্গে
হাতে হাত মিলিয়ে লাইট লাগাই। সন্ধে নামতেই
বাড়ি ঝলমল করে আলোতে। মা প্রদীপ জ্বালায় উঠোনে। বাড়িতে অনেক আপনজন আসে মিষ্টি খাওয়া চলে। তারপর বাড়ির ছাদে শুরু হয় বাজি ফাটানো। সবাই মিলে আলুবোম, রকেট, সেল, ফুলঝুরি, মশাল, সাপবাজি, চরকা, তারাবাতি, ছুঁচোবাজি, লঙ্কাপটকা, চটপটি ইত্যাদি কতরকম বাজি ফাটানো হয়। আনন্দে মেতে ওঠে সবাই।
জয়শ্রী পাল, ষষ্ঠ শ্রেণী, দেবীশ্বরী বিদ্যায়তন
বাড়িগুলো ঝলমল করে
ছোট থেকেই শব্দবাজি ও আলোবাজিতে আমার বড্ড ভয়। আজও মনে পড়ে দিদি আমাকে
তারাবাতি দিয়ে ভয় দেখাত। আর আমি ভয়
পেয়ে লুকিয়ে পড়তাম মায়ের কোলে। বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে দেওয়ালিতে আমি অন্যভাবে কাটাই। অনেকদিন আগে থেকে প্ল্যান করি বাড়িটা কীভাবে সাজাব। আমি নানান ধরনের লাইট তৈরি করি।
সেই লাইটগুলি দু’দিন ধরে লাগাই। দেওয়ালিতে যখন বাড়িগুলি ঝলমল করে খুব আনন্দ হয়।
তবে সবার থেকে আমার আলোগুলি একটু অন্যরকম লাগে। অমাবস্যার রাত যত বাড়ে
আলোর খেলা আরও সুন্দর হয়। বাবা, মা,
দিদি সবাই মিলে সেই আনন্দ উপভোগ করি।
আর মায়ের কাছে প্রার্থনা করি মাগো, তুমি
সমস্ত পৃথিবীকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে
নিয়ে চলো।
আকাশ সামন্ত, নবম শ্রেণী,
উত্তরপাড়া অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠ
সবার মঙ্গল কামনায় প্রদীপ জ্বালাই
এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরা। কবির এই বাণী আজও সমানভাবে প্রযোজ্য বাঙালি জীবন সম্পর্কে, বাঙালি জীবনে আরও একটি বড় উৎসব কালীপুজা ও দেওয়ালি উৎসব। সারা দেশ জুড়ে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে পালিত হয় এই দেওয়ালি। চারদিকে আলোর রোশনাই ও রকমারী বাজির পশরা দেখা যায়। শক্তিদায়িনী মা কালী অশুভ শক্তিকে বিদায় জানিয়ে শুভশক্তির আগমন ঘটায়। আর উৎসবটি আমি বাজি ফাটিয়ে খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করি। ওই দিনটা মা ও বাবার সঙ্গে সকলের মঙ্গল কামনায় প্রদীপ জ্বালাই।
শুভম রায়, সপ্তম শ্রেণী
ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ইনস্টিটিউশন
মোমবাতির আলোয় সেজে ওঠে
দেওয়ালি। এই শব্দটার মধ্যে লুকিয়ে আছে আনন্দের উৎস। এই উৎসবে আমার মামাবাড়ি যাওয়া হয়। ওখানে দারুণ আনন্দ হয়। সব ভাইবোনরা মিলে খাওয়া-দাওয়া করে বিভিন্ন প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখতে যাই। মা-মামিরা কালীপুজোর উপোস করে। বাড়িতে সবাই মিলে নাড়ু, মোয়া, লুচি, পায়েস, তরকারি ইত্যাদি কতকিছু তৈরি করে। সবাই নতুন জামাকাপড় পরে খুব সুন্দর করে সাজে। বাড়িটাও মোমবাতির আলো, ফুল মালায় সেজে ওঠে। সন্ধে থেকে বাড়িতে কত লোক আসে। তারা জলযোগ সারে। আর তারা আশীর্বাদ করতে করতে বাড়ি যায়। আমাদের হাতে দিয়ে যায় নানা রং-বেরঙের বাজি।
নন্দিনী কর, ষষ্ঠ শ্রেণী, বেথুন কলেজিয়েট স্কুল
ঘুম ভাঙে ঢাকের তালে
সময় চলে যায়। কিন্তু থেকে যায় আনন্দের রেশ। ছোটবেলার ফেলে আসা স্মৃতি। আমার মামা-দাদুর বাড়িতে কালীপুজো হয়। দূরদূরান্ত থেকে আত্মীয়রা আসে। পুজোর আগের দিন সেই বাড়িটা ঝলমল করে ওঠে মানুষের কলতানে। দ্বীপান্বিতা অমাবস্যার আগের রাতে সবাই ঢাক বাজিয়ে ঠাকুর আনতে
যায়। পুজোর দিন পুরানো ঠাকুর মাথায় করে
বিসর্জন দিয়ে নতুন ঠাকুর তোলা হয় বেদিতে। অনেকেই উপবাস করে আর তারাই পুজোর
কাজকর্ম করে আর আমরা নানাপদের রান্না
খেয়ে চুটিয়ে আনন্দ করি। ঢাকের তালে নাচ,
গান, চুরি করে পিকনিক ইত্যাদি করে সারারাত জেগে কাটাই। ভোরবেলা পুজো শেষ হয়। তখন আমরা ঢাকিকে নিয়ে সারা পাড়া পরিক্রমা করি। চেনা লোকের ঘুম ভাঙে ঢাকের তালে। পরদিন
থাকে আনন্দ ভ্রমণ। সবাই একসঙ্গে দল বেঁধে
ঘুরতে যায়। তবে আজ তাদের মধ্যে অনেকেই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছে। রয়ে গিয়েছে
স্মৃতি। প্রতিবছর এভাবেই কাটে দেওয়ালি।
মালবিকা সরকার, নবম শ্রেণী
উত্তরপাড়া চিলড্রেন্স ওন হোম