মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
কিঙ্কি সৌম্যর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। পরে দোকানির দিকে চশমা-ফোড় চাহনি তুলে বলল, ‘ক্লাস ফাইভের বয়।’ এবার ছেলেটি টুকটুকে লাল, সুন্দর দেখতে একটা বক্স বের করে বলল, ‘তাহলে, এইটা নিন। পছন্দ হবেই।’
নানা সুবিধার চমৎকার বক্সটি লুফে হাতে তুলে নিল কিঙ্কি। দামটাও ভালো। সেটা সানন্দে কিঙ্কিই মেটাল। সৌম্য পার্স হাতে নিয়েও কিঙ্কির অকৃত্রিম খুশির মুখটা তাকে বিরত করল।
ট্যাক্সিতে উঠে সে কিঙ্কিকে বলল, তুমি তো দিব্যি টকটকে লাল পছন্দ করলে, রুকু কী বলে জানো। ওর ঠামিকে একটা ঘুড়ির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলছে। ঘুড়িটা আমাদের ছাদের পাশে সুপুরি গাছে ভোকাট্টা হয়েছিল। রুকু দেখে উত্তেজিত হয়ে ঠামিকে ডাকছে, শিগগির ছাদে এসো ঠামি— দারুণ একটা ধবধবে লাল ঘুড়ি সুপুরি গাছে আটকেছে—!
মা সেটা পেড়ে এনে আমাকে বলল, ‘এই দেখ— তোর ছেলে এটাকে ধবধবে লাল ঘুড়ি বলছে।’
আমি রুকুকে বললাম, ‘তাহলে সাদাকে কী বলবি?’
সে স্মার্টলি উত্তর দিল, ‘কেন, টকটকে সাদা।’
আমি হাসব কী, চিন্তায় পড়ে গেলাম। ছেলে কালার ব্লাইন্ড নয় তো।’
শুনে কিঙ্কি হেসে অস্থির। চশমার কাচ মুছে বলল, ‘তারপর?’ সৌম্য বলল, ‘পরে জানলাম বন্ধুদের মধ্যে রঙের রকমফের নিয়ে ওটা একটা মজার খেলা ওদের। যেমন, মিশমিশে হলুদ— কুচকুচে সবুজ— ফুটফুটে কালো— ক্যাটকেটে সাদা...। এইসব আর কী।’ কিঙ্কি বলল, ‘বাহ বেশ মজার খেলা তো! এতটুকু মাথায় এদের এত বুদ্ধি আসে কী করে।’
বলতে বলতেই কিঙ্কি ‘আরে, রোকো-রোকো’ করে নিজের গন্তব্য এসে গেছে জানাল।
এই ঘটনাটা ভাবতে ভাবতে কখন এসে পড়ল সদা বিষণ্ণ পিয়ালি। তার প্রতিদিনের হাঁটা চলা-কথা বলা, নানা অসন্তুষ্টির সেইসব বিস্বাদ ভাষা। যেমন, আমার কিছু বলার নেই। তোমার ভালো-মন্দ আমি বলার কে। ওসব তোমার মাকে জানিও। হয়তো ঘটনাচক্রে সেদিন কোনও সম্ভাব্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে সৌম্য। পিয়ালির সঙ্গে শেয়ার করতেই এইসব মন্তব্য তার। সৌম্য চুপসে যায়। কথা এগয় না। চুপ করে থাকলেও কোথাও যেন একটা সমস্যা মুখিয়ে আছে মনে হয়। যা এড়ানো যায় না। পিয়ালির এইভাবে সংসারে কোনও মতামতে না-ঢোকা, সৌম্য বুঝে উঠতে পারে না, এটা পিয়ালির স্বভাবের ভালো দিক, না কি উদ্দেশ্যমূলক এড়িয়ে চলা। একসময় বুঝল যখন, সেই বোধ আর পাশ কাটাবার নয়। তাদের মধ্যে অনতিক্রম্য হাইফেন তখন রুকু।
রুকুর একটু একটু বড় হওয়া, এগিয়ে আসা মানে অদ্ভুতভাবে পিয়ালির পিছুহটা। ধীর লয়ে তার মুঠি গুটিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিক থেকে সম্ভবত আড়চোখের জরিপে, অবস্থা বুঝে দু’হাতের বেড়ে ঠাম্মি তার নাতিকে ঠাঁই করে দিচ্ছে নিজের বলয়ে। তবু পিয়ালিময় একটা ছায়া যে আজও অনস্বীকার্য রুকুর জন্য, সেটাই বোধহয় অবচেতনে হুট করে এসে যায় যখন-তখন।
বাস্তবত সৌম্যর দিনগুলো এইভাবে কাটলেও, নিজের মতো করে বেঁচে থাকার উপকরণ কী তার নেই। আছে। ভেবে দেখলে যথেষ্টই আছে। এই তো গত পরশুদিন কিঙ্কির ইচ্ছায় ঢুকতে হল ক্যান্টিনে। পর্দা ফেলা কেবিনে কী শুধুই খাওয়া। কত কথায় যে মুখরিত কিঙ্কি, কত জলতরঙ্গ হাসিতে উপচে-পড়া তার। ঝকঝকে পঁচিশের উচ্ছ্বাস, ছত্রিশের পিতৃত্বপ্রাপ্ত সৌম্যর গাম্ভীর্যে মিলেমিশে একাকার। সৌম্য ভাবে, ভালোলাগার আবেদনে সে কী ক’ধাপ পিছলে নেমে এল! নাকি অনেকটাই উঠল কিঙ্কি স্বয়ং প্রাপ্তমনস্ক হয়ে। তবে যেটাই হোক ভালোলাগার কোনও সময়সীমা নেই, এটা ঠিক।
কিঙ্কির দিক থেকে বোঝা যায়, সৌম্যর সঙ্গে সমতা রাখতে প্রতি কথায় রুকুকে সে টানবেই। খাওয়ার বিল মিটিয়ে বলবে, ‘রুকুর একটা প্যাক নিচ্ছি— মোগলাই ওর খুব পছন্দ।’
‘...আজ থাক না।’ সৌম্য বলে, ‘ও তো ঠামির সঙ্গে সল্টলেক গেছে। খেয়ে ফিরবে।’
কিঙ্কি মৌরি-মুখে চেয়ে থাকল। সৌম্যর প্রসারিত হাতখানা ততক্ষণে গিয়ে উঠল বিছিয়ে থাকা আঙুলগুলিতে। অন্যতর গাঢ় স্বরে বলল সে, ‘কিঙ্কি, তুমি রুকুকে খুব ভালোবাসো, তাই না?’
আচমকা প্রশ্নে কিঙ্কি বলল, ‘এমন বলছ কেন? বাসব না! ওর জন্মদিনে দেখনি সবাইকে ছেড়ে কেমন আমাকে জাপটে ধরল। বাচ্চারা ভালোবাসার গন্ধ পায়।’
সৌম্যর বুকটায় একরাশ বাতাস খেলে গেল। অতর্কিতে বেখাপ্পা এক প্রত্যাশাও। যেন বন্যা তার বিপদসীমা পেরতে যাচ্ছে।
বোধহয় সেই শুরু...। আবারও আধখানা আকাশের আশা। মূলত অফিস কলিগ হিসেবেই তাদের পরিচিতি। খুব বেশিদিনের আলাপও নয়। সৌম্যর চাকরির বহু পরে কিঙ্কির জয়েনিং।
প্রথমস্তরে দাদাসুলভ মান্যতা ও নিজস্ব সহবত দিয়েই কাজকর্ম শিখে নিত। পরে, সম্মানিত আপনি সম্বোধন ক্রমশ মেলামেশার মধুর তুমিতে নামল। মন-পছন্দে উত্তীর্ণ হতে বাকি নেই বুঝল দু’জনেই।
এইরকম— একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জন্যই কি না কে জানে, কিঙ্কিও তার বিভোর কথা বলার সময়ে, বিশেষ আসা ফোনটি সে নির্মম হাতে কেটে দেয়। সে ফোন কার সৌম্য জানে। বরাবরের পরিচিত বন্ধু ভাস্বরের ফোন এভাবে আসে। আসতেই পারে। সৌম্য ভদ্রতাবশত বলে, ‘কাটলে কেন?’
কিঙ্কি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে উত্তর দেয়, ‘ছাড় তো! যা বলার সকালে তো বলেইছি—’
হাসছে সৌম্য— ‘কী বলেছ?’
‘...আজ আমার অফিসে কাজের চাপ আছে। বেরতে দেরি হবে।’
তার মানে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। সৌম্য সেটা বুঝে বলল, ‘আর সত্যি যেদিন কাজের চাপ থাকবে?’
কিঙ্কি কফিতে চুমুক দিয়ে কাঁধ ঝাকাল, ‘একই কথা বলব!’
কিঙ্কির এরকম প্রতিক্রিয়ায় সৌম্য যে অবাক হয় না, তা নয়।
ভাবে, পোড় খাওয়া, বয়সে ওজনদার এমন সংসারি পুরুষই কী আজকাল মেয়েরা পছন্দ করছে নাকি! না হলে অফিস-ফেরত এই মহার্ঘ সময়-যাপন তো তার প্রাপ্য নয়!
তার অবস্থা-বিপাকের অনুকম্পার ধারণাটিও মেলে না তেমন। কিঙ্কি তার খেয়ালখুশির শপিংয়ে, অফ-এর দিনেও ডাক দেয়। গত সপ্তাহে একটি নতুন তৈরি মল-এ বেরতে ডাক এল, একটু এসো না প্লিজ। বাইকটা নিয়ে বেরিয়ে পড়, বেশি সময় লাগবে না। কয়েকটা জিনিস কিনব তুমি থাকলে ভালো হয়।
‘আমাকে শপিং-মাস্টার ভাবলে কী করে?’
কিঙ্কি বলেছে, ‘আমার মতো অন্তত আনাড়ি তো নও।’
সৌম্য বরাবর ছুটির দিনগুলো রুকুর সঙ্গে কাটায়। রুকুও নানা প্ল্যান নিয়ে হা-পিত্যেশ থাকে এটুকুর জন্য। কিন্তু নেহাতই তার সেকেন্ডহ্যান্ড-হদ্দ গেরস্থ তকমাটি সরাতেই তাকে বোধহয় হুট করে বেরিয়ে পড়তে হল কিঙ্কির ডাকে। রুকু এখন ঘরে এক ঘণ্টার ড্রয়িং স্যারের কাছে।
কিঙ্কিও তার মা ও বোন নিয়ে ছোট্ট সংসারের একমাত্র চাকুরে। কেনাকাটা পাশে একজন অভিজ্ঞের মতো সৌম্যকে তার খুব পছন্দ। দু’জনেই তাই কেনাকাটা সেরে ব্রেকফাস্টও সেরেছে একত্রে। কিঙ্কির দাবিতে রুকুর জন্য চিকেন-পাব তো নিতেই হয়েছে। ব্যাগ বোঝাই হয়ে কিঙ্কি ট্যাক্সিতে উঠলেও সৌম্যকে ফিরতে হল বাইকে। বাড়ি ঢুকতেই রুকু জড়িয়ে ধরে বাবাকে। বাবার গায়ে মাথা ঘষে ঘষে ফোঁপায়। কিঙ্কির দেওয়া বড় বল আর খাবার প্যাক সৌম্যর হাতেই থেকে যায়। মা এসে কিছু একটা আন্দাজ করে, কেন যেন কিছু বলে না। সরে যায়। কিন্তু রুকুর জল-ভরা চোখ থমকে থাকে বিস্ময়ে বাবার দিকে।
‘তুমি কোথায় গিয়েছিলে বাবা? কত-কতক্ষণ ধরে আমি যে তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না!’ সৌম্য থতমত অস্পষ্টতায় বলে, ‘এই তো এসেছি, এই তো আমি।’
নাছোড় শিশু গুমরে ওঠা কান্না সৌম্যর পিতৃত্বে ধাক্কা দেয়। কী এক অপরাধবোধের কুণ্ঠা নিয়ে নীরব থাকে। রুকুর যে সমান্তরাল প্রাপ্তির দুইপাল্লার একটা ফাঁকা। বাবাময় জগৎ তাই মুহূর্তের অদর্শনে সংশয়ে ভরে ওঠে। কোন সেই হাঁটি হাঁটি বয়সে— সবটুকু মাতৃত্বের দায় ঝেড়ে ফেলে সরে পড়েছে পিয়ালি তার পুরনো পিছুটানে, পুরনো কিনারে। সে বন্ধু তারই প্রতীক্ষায় ছিল এতদিন অবিবাহিত। এখন তাদের সুদূর লন্ডনের সংসারে— রুকুর কোনও ছায়া নেই। ছায়া নেই রুকুর মনেও। বাবা আর ঠামির ঘেরাটোপে, বাবার পাশে মা দেখা তো তার হয়ে ওঠেনি। সে পরিসরের সবটুকুই তার বাবাময়। বাবার অভাব তাকে মুহূর্তেই অসহায় করে দেবে— এ স্বাভাবিকতা সৌম্যকে মেনে নিতেই হয়। হাতের জিনিসগুলি টেবিলে রেখে, ছেলের মাথায় পিঠে হাত বোলাতে থাকে কৈফিয়তহীন স্নেহাদরে। রুকু মুখ গুঁজে গুমরাল কতক্ষণ। কতকিছু অনুযোগের ভাষাহীন অসহায়ত্বে শুধু বড় বড় কাতর চোখ তুলে চেয়ে থাকে ঠায়। একসময় বলে উঠল, ‘বাবা, তুমি আমাকে ছেড়ে কোত্থাও যাবে না বল! বল যাবে না?’
সৌম্য ছেলের মাথাটি বুকে আঁকড়ে ধরে থাকল। ভাবল, সব যাওয়া একরকম না হলেও যাওয়া তো যাওয়াই। পিয়ালির স্পষ্টতর পলায়নের পাশে, এ-ও কী এক পলায়নী উদ্যোগ! সবই কী সেই দর্পী জীবনের চাহিদা।
ছেলের মাথায় হাত রেখে যেন অঙ্গীকারের মতো বলল সৌম্য ‘ঠিক আছে। কোত্থাও যাব না আমি। কোত্থাও না।’
এইসঙ্গেই সৌম্যর যাবতীয় ভালোলাগার ভিতর দিয়ে থিতু হয়ে রইল এই কান্না কাতর শিশমুখ।
অফিসের কাজে বরাবর যত্নবান সৌম্য। এখন কিছুটা তৎপর হল সংসারে। অনেকদিন পর ঝুলে থাকা একটি প্রোমোশন তার জুটেছে। মায়ের ইচ্ছায় পুজো দিতে পুরীধামে বেরতে হল নাতি-ঠাম্মাকে নিয়ে হঠাৎ। কিঙ্কি অবাক হল। ফোনে উষ্মা জানাতেও ভুলল না সৌম্যকে কনগ্র্যাচুলেশনের সময় দেওয়া হল না বলে।
সৌম্য বলল, ‘তোমার এত দেওয়ার পাশে, প্রোমোশন তো নেহাত ক্ষুদ্র পাওয়া কিঙ্কি! তো বেশ, আমি তো ফিরছিই, কী দেবে তুমি?’
‘বলো কী চাও।’
সৌম্য একটু চুপ করে থেকে উত্তর দিল, ‘চেয়ে নেওয়ার কোনও চমক নেই যে।’
কিঙ্কি তার জলতরঙ্গের মতো হাসিটি হেসে বলল, ‘ভেবে দেখি তাহলে।’
সপ্তাহের মধ্যেই ফিরে এল সৌম্যরা। কাজপাগল মানুষরা অফিস ছাড়া থাকতে পারে না বোধহয়। মনে মনে হাসল কিঙ্কি, নাকি প্রেমপাগল। প্রবল উৎসাহে কিঙ্কি তার ছোট্ট ফ্ল্যাটবাড়ির ঘরদোর সাজিয়ে গুছিয়ে ফেলল। কিন্তু কনগ্র্যাটস-এর জন্য বেছে নিল একান্ত নিভৃতের পরিচিত রেস্টুরেন্টের সেই কেবিনটি। দু’জনের জন্য। বরাবর প্যান্টশার্টে স্বচ্ছন্দ সৌম্যকে কিঙ্কির নির্দেশে বিচিত্র অ্যাজটেক নকশার পাঞ্জাবি পরতে হয়েছে পাজামার সঙ্গে। পাঞ্জাবিটি কিঙ্কিরই কখনও দেওয়া উপহার। লম্বা সুঠাম সৌম্য নাকি কিঙ্কির মতো, পুরুষোচিত হ্যান্ডসাম। আজ নিজেও কিঙ্কি লাল সিল্ক শাড়িতে আগুনের মতো চমকাচ্ছে। সৌম্যর মুগ্ধতা নজর করে— রুকুর রঙের ধাঁধাটি টেনে বলল, ‘কী মনে হচ্ছে, একদম ধবধবে লাল তো?’ বলেই একচোট হেসে কিঙ্কি একটু গুছিয়ে বলল, ‘রঙের রকমফের মানুষের মধ্যেও আছে। রুকু ঠিকই বলে, লাল যদি সাদা হয়, সাদাও কী লাল হয় না!’
সৌম্য অন্যমনস্কের মতো বলল, ‘হবে হয়তো।’ আবার এ-ও বলল, ‘যার মধ্যে সব রঙেরই সমাহার সেই সাদার লাল হওয়ার দরকার কী!’
কিঙ্কির আজ অত ভেদকরণে সময় নেই। খুশির চটুল মেজাজে সাজানো খাবার টেবিলে সৌম্যর মুখোমুখি বসে পড়ে বলল হাত পাতো! সৌম্যর প্রসারিত হাতের পাতায় দামি পারফিউমের শিশিটি গুঁজে দিয়ে বলল ‘কেমন?’
সৌম্য হেসে বলল, ‘সেটা এখন বলব! না মাখার পর!’
কিঙ্কি বলল, ‘যা খুশি।’
এরপর সে চাপা উচ্ছ্বাসের মৃদু গুঞ্জনের মতো স্বর নামিয়ে বলল, ‘তুমি বলেছিলে, কী দেব তোমাকে। আজ শুধু পারফিউম নয়, যদি বলি পুরো আমাকেই তুলে দিচ্ছি তোমার হাতে! তুমি তো নিজে মুখে কথাটা বলতে পারলে না, আমাকেই বলতে হল। কী খুশি নও?’
হকচকিয়ে যায় সৌম্য। ঠিক শুনছে তো! সৌম্যর চিন্তা তো কখনও ভাবনা-বিলাস হয়েও এতদূর পৌঁছতে পারেনি। কিঙ্কির সরাসরি এ প্রস্তাব তা-ও কি না এক মধ্যবয়সের সপুত্র পুরুষের কাছে। প্রাপ্যের অধিক এই প্রাপ্তি তার, কিঙ্কির সঠিক সিদ্ধান্ত থেকেই এল তো। স্পষ্টতই কিঙ্কির দিকে, এতগুলি নীরব প্রশ্ন নিয়ে সৌম্য তাকিয়ে থাকে। কথা সরে না।
কিঙ্কি সৌম্যর অবাক মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে, বলে, ‘রুকু শুনলে খুশিই হবে— তুমি কী বল।’
রুকু। রুকুর কথায় বুকের মধ্যে ঘন হয়ে ওঠে সেই মায়া-মুখ। জাপটে-ধরা তার একক অধিকারের উষ্ণতা। বড়ই আকস্মিক যে, নাহলে তো এতক্ষণ করতলের সুগন্ধির শিশিটিও ঘেমে উঠছিল এক মধুর তপ্ততায়। অনতিক্রম্য এক বোধ তাকে থিতিয়ে দেয় হঠাৎ। শেষ পর্যন্ত যা সে বলব ঠিক করেছিল, যা সঙ্গত ছিল এবং প্রত্যাশিত ছিল কিঙ্কির কাছেও সেসব বলবার আগেই যেন দিক-নির্ণয়ের সঙ্কেতে সৌম্যকে সচেতন করে বেজে উঠল চেনা রিংটোন। হতচকিতের মতো একপলক চেয়ে দেখল সৌম্য কিঙ্কিকে। কিঙ্কির অগ্রাহ্যভাবকে উপেক্ষা করেই বলল বা বলতে হল— ‘ভাস্বরের ফোন। ফোনটা ধর কিঙ্কি।’