মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
বলতে বলতেই পঙ্কজ মণ্ডলের কাঁধের পিছন দিয়ে উঁকি দিয়েছে অর্পিতা।
পঙ্কজ কিছু বলার আগেই নাক কুঁচকে সে বলল, ‘বস্তি! বস্তির লোকগুলোকে? এটা একটা দেখার বিষয় হল! রিয়েলি পঙ্কজ! আমি ভাবলাম সুন্দরী কোনও মহিলা টহিলা হবে! অবশ্য... এই পাড়াতে আর!’
গভীর সন্নিবেশের মধ্যে পঙ্কজ। বীরভূমের পরিবেশ ছেড়ে আসার পর থেকেই মন তেমন ভালো নেই। ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি আজ এইখানে তো কাল ওইখানে। কিছু করার নেই। হরিপুর কলোনির এই ফ্ল্যাটটাই পছন্দ হয়েছিল। কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনলে একটু সবুজের ছোঁয়ার মধ্যেই থাকবে এমনই ইচ্ছা বরাবরের। ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য নির্ধারিত বাসস্থানে সপ্তাহের আর পাঁচটা দিন থাকলেও ছুটির দিন সপরিবারে নিজের আবাসেই থাকার বাসনা। যদিও অর্পিতার একেবারেই পছন্দ ছিল না এই ফ্ল্যাট, এই পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। সবুজ থাকলেও সামনেই বস্তি তার অপছন্দের কারণ।
—আরেক কাপ দার্জিলিং?
সোফায় বসতে বসতে বলল অর্পিতা।
ঘাড় না ঘুরিয়েই পঙ্কজ বলল, ‘হলে হয়। তোমাকেই তো হাত পুড়িয়ে করতে হবে, বাদ দাও।’
যথেষ্ট শ্লেষ অর্পিতার কণ্ঠে, বলল, ‘তার জন্য তো তোমার অবদানকেই সেলাম ঠুকতে হয়। কী না, রবিবার কাজের লোকেদের ছুটি দিতে হবে। আর সেটা নাকি বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। এক্সেপশন, বাড়িতে বড় কোনও অসুখবিসুখ বা অনুষ্ঠান! তুমি আর আমার গ্রেট ড্যাড! উহহ!’
জানলার পাশ থেকে সরে এসে বিছানায় বসল পঙ্কজ। বলল, ‘তোমার কি তা মনে হয় না যে সেটাই উচিত? ডোমেস্টিক হেল্পরা অসংগঠিত শ্রমিক বলেই যাবতীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অথচ ওরা না থাকলে তোমার মতো ফ্যাশন সুন্দরীদের হাতে হ্যারিকেন! ওদের গুরুত্বটা বোঝো একটু।’
টি-মেকারে চায়ের পাতা ভেজাতে ভেজাতে ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক তাকাল অর্পিতা, বলল, ‘আওয়াজ দিয়ে নিলে এই ফাঁকে!’
—আওয়াজ নয়, সত্যি বললাম। কখনও তো ভাব না এইসব নিয়ে। অখণ্ড অবসর তোমার, ভাব একটু। ভাবতেও তো পার। একজন ইকনমিক্স ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড, সে ভাববে না তো কে ভাববে অপু? চাকরি তোমায় আমি করতে বলছি না, যখন তুমি চাও না। কিন্তু অন্যরকম কাজকর্মের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিলে দেখবে জীবনের মানে খুঁজে পাচ্ছ! নাহলে এই মল কালচার, অনলাইন শপিং, সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজ দেখে দেখে চারপাশে কী হচ্ছে তার তো কোনও আইডিয়াই পাবে না।
রবিবারের মধ্য সকালের ঘর শান্ত অথচ ভারী এখন। চায়ের কাপ হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল অর্পিতা। পঙ্কজের এই মানসিকতা ইডিওলজির সঙ্গে তাল মেলানো কঠিনই হয় তার পক্ষে, সেটা বিবাহিত জীবনের এই পাঁচ বছরে বুঝে ফেলেছে সে। এই বিষয়ে বাপের বাড়িতে আলোচনা করাও সম্ভব নয়। কারণ সেখানেও বাবা-মা দু’জনেই পঙ্কজের পক্ষে। তার বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক বাবা আবির সরকার আর অধ্যাপক মা রীতাও পঙ্কজকে মাথায় তুলে রাখেন।
সম্বন্ধ করে বিয়ে। একটি বিয়ে বাড়িতে পঙ্কজকে দেখে, তার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ গল্প করে আবির সরকারের মনে হয়েছিল তিনি একটি দুর্মূল্য রত্নের সন্ধান পেয়েছেন। রীতারও দু’-একটা কথা বলার পরেই ভালো লেগে যায় তাকে। অতঃপর পঙ্কজকে বাড়িতে আমন্ত্রণ। কালো রোগা লম্বা তীক্ষ্ণ চোখের রসিক ছেলেটিকে অর্পিতারও ভালো লেগেছিল। অদ্ভুত একটা চুম্বকীয় আকর্ষণ ক্ষমতা আছে পঙ্কজের অনুভব করেছিল সে। দু’পক্ষেরই ভালো লাগা উপলব্ধি করে আবির নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দেন। আত্মীয়স্বজন বলতে পঙ্কজের কেউ নেই সেই সময়েই জেনেছিলেন তাঁরা। পাড়াতুতো এক বিহারি নিঃসন্তান মহিলার কাছেই মানুষ সে। স্থানীয় মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা। তারপর নিজের মেধার জোরেই একেকটা অধ্যায় পেরিয়ে ওকালতি।
অর্পিতার মেজাজ যে খারাপ করে দিয়েছে সে বুঝেই চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই ডাকল, অপু! শুনছ? অপুউউ...!
অপ্রসন্ন মুখ অর্পিতার, বলল, ‘বল, কী?’
—দুর্দান্ত চা বানিয়েছ। এটা কি সেই হোয়াইট টি?
—হুম।
—রাগ করেছেন দেবী?
হাসছেন পঙ্কজ, ‘কী? আরে ধুর, আমার মতো অসামাজিক, অসভ্য লোকের কথায় কেউ রাগ করে? আমি কি আদৌ তোমার যোগ্য? তুমি মিসেস ইন্ডিয়া মিসেস ইউনিভার্স পর্যন্ত হতে পার। চাইলেই বিদেশের কোনও ভালো ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ স্কলার হয়ে জয়েন করতে পার। সেখানে আমি কী? আমার মতো কত ম্যাজিস্ট্রেট! অতি পাতি চেহারার এক বাঙালি লোক! ভিড়ের মধ্যে চেনাও যায় না! তার কথায় রাগ করতে আছে? আরে বাবা আমার আপ ব্রিঙ্গিং আর তোমার কি এক?’
শান্ত হল বুঝি কিছুটা অর্পিতা। দরজার সামনে থেকে ঘরে এসে ধীর পায়ে জানলার সামনে এসে দাঁড়াল। লেন-এর উল্টো দিকেই বিশাল বস্তি। রাতদিন সরগরম। চিল্লামেল্লি হট্টগোলে ভরা এক অদ্ভুত পৃথিবী। এই পৃথিবী সম্পর্কে ঘৃণার প্রবৃত্তি ছাড়া তেমন কোনও উপলব্ধি তার নেই। ছিলও না আবাল্য কৈশোর।
—কী দেখছ অপু? বস্তির লোকগুলো? ওদের লাইফ স্টাইল?
—হুম। আশ্চর্য হই। কীভাবে কামড়াকামড়ি করে থাকে লোকগুলো! কুকুর বেড়ালের...
কথা শেষ হওয়ার আগেই হাত তুলে থামিয়ে দিলেন পঙ্কজ। বললেন, ‘ব্যস! অপু, ব্যস। ডাক্তার উকিল অভিনেতার জীবন কিন্তু সমাজের ক্রিম... কিন্তু আসল জীবন এইটা যেটা ওদের। আমার পঙ্কজ নাম কেন? তুমি জানো। স্কুলে বাবু নামে ভর্তি হয়েছিলাম। আমার একলা অসুস্থ মা বাবুর চেয়ে ভালো নাম আর খুঁজে পায়নি! অত সময় কোথায় ছেলের জন্য ডিকশনারি খুলে নাম ঠিক করবে? তাও সেই মায়ের কাছে প্রতিপালিত হয়েছি! নিজের মা কবেই নিরুদ্দেশ! বাবা ছেড়ে গেছে...! ইংলিশের টিচার আমার নাম চেঞ্জ করে দিলেন!’ স্বগতোক্তির মতো বলে চলেছে পঙ্কজ। এই গল্পটা বার কয়েক বলা হয়ে গেছে যদিও, তবুও বলে প্রায়ই। যেন নিজেকে মনে করাতে চায়। ‘পবিত্রবাবু স্যার একদিন বললেন, তুই তো অনেক বড় হবি— তোর মেধা, পরীক্ষার রেজাল্ট বলে দিচ্ছে। এই বাবু নাম চলবে না। চলবে, বল? আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম স্যারের দিকে, বুঝলে? স্যার বললেন, নতুন ক্লাসে উঠছিস। নতুনভাবে তোর নাম রেজিস্ট্রি করছি। তোর আপত্তি থাকলে বল। পঙ্কজ দিচ্ছি। পাঁকে পদ্মফুল ফোটে জানিস তো? পদ্মের আরেক নাম পঙ্কজ।’ মৃদু হাসি মুখজুড়ে খেলে গেল এই মুহূর্তে। চোখ ক্ষণিকের জন্য বুজে গিয়েছে! যেন দূর অতীতে সাঁতার কাটছেন।
শান্ত, অতি শান্ত ঘরের আবহ। এই সময়গুলোতে অর্পিতা দ্বন্দ্বে পড়ে নিজের কাছে। দুটো ভিন্ন সম্পূর্ণ পৃথক পরিবেশ থেকে উঠে আসা জীবনের একত্র থাকা, বসবাস, সম্পর্ক সব গুলিয়ে যায়!
একটু সময় নিল পঙ্কজ। চায়ের কাপ ঠান্ডা হয়ে গেলেও চুমুক দিল। বলল, ‘আমি ওই জীবনটার কঠিনতম দিনগুলো জানি অপু। তুমি বা তোমাদের তো আসলে কোনও দোষ নেই। কারণ তুমি বা তোমরা কী দেখেছ? সত্যিই তো পশুর মতো জীবন! বস্তির একটা শিশু চার-পাঁচ বছর বয়সেই যৌনতা জেনে যায়, জানো কি? তার পক্ষে কী মারাত্মক অভিঘাত সেটা...হরিবল! কেন জানো? একটা ছ’ফুট বাই চার ফুট ঘরে একটা চৌকি, সেটাকে ইট দিয়ে উঁচু করে আরেকটা আস্তানা তৈরি করা হয়। একটা ঘরে অন্তত পাঁচ ছ’জন মাথা গুঁজে থাকে। চৌকির নীচে বাপ-মা শোয় রাতে, আর থাকে রাজ্যের বাসনকোসন চাল ডাল...! বাচ্চারা চৌকির ওপর! সেই ঘরেই মা গর্ভবতী হয় বারবার। আর বাচ্চারা রাতের অন্ধকারে ভয় পেয়ে, আরেকটু বড় হলে চোখ কান বুজে যৌনতার শব্দ ও দৃশ্য দেখে শুনে অসময়েই বড় হয়ে যায়, অপু! খুব অস্বাস্থ্যকর! কিন্তু বাস্তব। তার মধ্যেই খেস্তাখিস্তি, মারামারি! তোমরা ঘৃণা কর কারণ তোমরা তো ওই পরিবেশের মধ্যে বড় হওনি! কত ক্ষোভ! না পাওয়ার জ্বালা! বঞ্চিত তো? ওদের জীবন লক্ষ কর অপু। দূর থেকেই লক্ষ কর। একটা জলের কলে জল ভরা নিয়ে যদি ভোর থেকে মারামারি করতে হয় তাদের মুখ দিয়ে কি রবি ঠাকুর বেরবে অপু? না বোধহয়।’
স্থাণুবৎ অর্পিতা। কখন যে পাশে এসে বসে পড়েছে পঙ্কজের খেয়াল নেই। মুখ থেকে অস্ফুটে বেরল একটাই শব্দ, হুম!
দরজায় বেল বাজতেই সংবিত ফিরে পেয়েছে দু’জনে।
—কে?
বলতে বলতে দরজা খুলে অবাক পঙ্কজ।
—হরিপুর থানা থেকে আসছি স্যার। স্যরি টু ডিস্টার্ব ইউ।
—ভেতরে আসুন। ভেতরে আসুন, কী ব্যাপার? এনি প্রবলেম?
—স্যার আপনার গাড়িটা গাছের ডাল দিয়ে মেরে মেরে ভেঙেছে, আই মিন উইন্ড স্ক্রিন। স্ক্র্যাচ করে দিয়েছে অপগণ্ডগুলো, বস্তির ছেলেগুলো স্যার।
অবাক পঙ্কজ, বলল, ‘আমার গাড়ি! আই সি... হ্যাঁ, কাল গ্যারাজে ঢোকানো হয়নি! বাইরে ছিল। কখন করল?’
—স্যার আধ ঘণ্টা আগে। অ্যারেস্ট করেছি।
—বয়স কত যাদের অ্যারেস্ট করেছেন?
—স্যার বর্ন ক্রিমিনাল এরা। ছোট থেকে অপরাধ করতে শুরু করে দেয়। যে ক’টাকে পেয়েছি সেগুলোর বয়স আট থেকে বারো-তেরো হবে। কী আক্রোশে ভাঙছিল জানেন? হরিপুর বস্তিতে তো আমাদের পোস্ট থাকেই জানেন। রোজই মারপিট লেগে রয়েছে। যে দু’জন সাব ইনসপেক্টর আর কনস্টেবল ছিলেন, তাঁরা দেখতে পেয়ে ছুটে আসতে না আসতে কয়েকটা পালায়। কয়েকটাকে ধরতে পেরেছি।
নির্লিপ্ত কণ্ঠস্বর পঙ্কজের, বলল, ‘ছেড়ে দিন। কেস দেবেন না।’
অর্পিতা চিৎকার করতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়েছে, বলল, ‘মানে? গাড়িটার এত বড় ক্ষতি করল আর তুমি ছেড়ে দিতে বলছ! এদের উত্তম-মধ্যম দিলে তবে যদি শিক্ষা পায়। এই বয়স থেকেই হার্ডকোর ক্রিমিনাল!’
ইনসপেক্টর ইতস্তত করে বললেন, ‘স্যার! এদের এইভাবে ছেড়ে দেওয়া কি ঠিক হবে? ফারদার আরেকটা বড় ক্রাইমে জড়িয়ে পড়বে তো।’
অতীতে ফিরে গেছে পঙ্কজ একলহমায়। সেই দৃশ্যের মধ্যে অন্তর্লীন। প্রচণ্ড রাগ হয়েছিল বছর দশেকের কয়েকটি ছেলের। তাদের জন্ম বস্তিতে। পুজোর কিছুদিন আগে রোজগারের জন্য কিছু বেলুন কিনে বিক্রি করছিল রাস্তার লাল আলোর সামনে দাঁড়ানো গাড়িগুলোতে। দু’-একজন কিনলেও বাকিরা বাপ-মা তুলে গালাগাল দিয়ে গাড়ির কাচ তুলে দিচ্ছিল। এসি গাড়িতে বসা একটি লোক জানলার কাচ নামিয়ে হাত দিয়ে কুৎসিত ইঙ্গিত করে। এক মাথাভর্তি ক্রোধ নিয়ে ফিরে এসেছিল তারা। তারপরই ঘটেছিল সেই ঘটনা। দুপুরের দিকে একটি অপরিচিত গাড়ি বস্তির গলিতে কেউ পার্ক করে চলে গিয়েছিল। মাথাভর্তি ক্রোধের কীটেরা জেগে উঠেছিল। গাছের ভাঙা ডাল রড দিয়ে চুরমার করে দিয়েছিল গাড়ির সমস্ত কাচ। পালাতে গিয়ে কয়েকজন ধরা পড়ল। তারমধ্যে সে একজন।
—স্যার! কী করব? ছেড়ে দেব?
—আমি যাচ্ছি। হ্যাঁ, ছেড়ে দেবেন আমি যাওয়ার পর। আপনারা যান, আসছি। ওদের কোনওরকম মারধর করবেন না।
অর্পিতা হতবাক। ক্রুদ্ধ। বলল, ‘মানছি গাড়ির ইনস্যুরেন্স আছে। তা বলে অপরাধ তো অপরাধই। এরা এখনই এসব করছে এরপর তো ডাকাত হবে! কী স্পর্ধা!’
গভীর ভাবনার ভেতরে ডুবে গিয়েছে পঙ্কজ। সে এক অতীত যা সে ভুলতে পারে না! অপমান-উপেক্ষা-অবহেলা কত ক্রোধের কীটের জন্ম দিতে পারে সে জানে!
লকআপে দাঁড়িয়ে কাঁপছে তিনটে দশ বছরের ছেলে। এক ভদ্রমহিলা এলেন। লপআপের সামনে দাঁড়িয়ে চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে তাকালেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কেন ভেঙেছ আমার গাড়ি? এত রাগ হল কেন? আমাকে কি চেন? কখনও তোমাদের বকেছি?’
ক্রোধ কীটগুলো কেমন গুটিয়ে গেল মাথার ভিতরে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তারা।
মহিলা লকআপের দরজা খুলে দিতে নির্দেশ দিলেন। বললেন, ‘ওদের কেস দেব না। ওরা ইচ্ছা করে ভাঙেনি।’
তিনজন তখন বিস্ময়ের অধিক অবস্থায়।
ভদ্রমহিলা কাছে টেনে নিলেন তাদের। বললেন, ‘আমি জানি, এইসব গাড়ি নয়, আসলে গাড়ির মালিকদের ওপর রাগ তোমাদের। তাই তো? বল। আমি কিচ্ছু বলব না।’
সে বলেছিল, হুঁ।
তিনি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘আমি জানি। শোনো, পড়াশোনা করে বড় হতে হবে। তাহলে এরকম গাড়ি কিনে তোমরাও দেখিয়ে দেবে আমরাও পারি। আমি সাহায্য করব। পারবে তো?’
—অপু! সময় বদলেছে, কিন্তু সমাজ নয়। আজও তাই ক্রোধের প্রকাশ... সেইদিন আমরা কাঁদতেও ভুলে গিয়েছিলাম। এরকমও হতে পারে, এই কথাই শুধু ভেবেছি কয়েকটা দিন। নিজেরা আলোচনা করতাম সবাই খারাপ নয়। আমরা সবাইকে বলেছি, এইভাবে রাগ না দেখাতে। আমিও তো বস্তির ছেলে ছিলাম! ওইটাই তো আসল আমি! তুমি কিন্তু সব জেনে আমাকে ভালোবেসেছিলে! বিয়েতে সম্মত হয়েছিলে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল পঙ্কজ। বলল, ‘আসল ভারতবর্ষ তো ওরাই! আমিও। অল্প বয়সে এমন জীবন দেখে ফেলেছিলাম... হয়তো তাই ভালোমন্দের বিচার অন্যভাবে করতে পারি। যাই, বাচ্চাগুলোকে ছাড়িয়ে আনি। তুমি যাবে? ইচ্ছে না হলে থাক।’
শিলাস্তূপের মতো বসে অর্পিতা। ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল, ‘হ্যাঁ।’