মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
তারপর আঙুলের টানে কপাল থেকে ঘামটুকু মুছে উবু হয়ে বসে পড়ে বারান্দার কোণে। সাদা-নীল জামা পরা বাচ্চাগুলো ছোট ছোট থালা হাতে অঙ্গনে ভিড় করেছিল। পেটমোটা হাঁড়ি থেকে সকলের পাতে পাতলা গরম খিচুড়ি তুলে দিচ্ছিল স্কুলের ‘ভোজনমাতা’ রাধামণি। বৃষ্টিটা এসেই সব আয়োজন ভেস্তে দিল। খাওয়া মাথায় উঠেছে ওদের। থালা নিয়ে যে যেদিকে পারছে ছুটছে। সুখেনের বড় মায়া হল। নিজে বারান্দা থেকে নেমে দু-তিনজনকে জায়গা করে দিল সে। বাচ্চাগুলো গায়েগায়ে দাঁড়িয়ে হাপুসহুপুস শব্দে পাত্রের খাবার মুখে তুলছে। পরম স্নেহে অভাবী ঘরের রোগা, কালো ছেলেমেয়ে কটাকে দেখছে সুখু। দীর্ঘক্ষণের জমা বিতৃষ্ণার বোঝা সরে গিয়ে তার মনটা এখন পেঁজা তুলোর মতন হালকা। সুখু বুঝতে পেরেছে, জমিটা চাষের যোগ্য নয় বটে, তবে স্কুলের কাজে লাগতে পারে। পায়ে পায়ে সে এগিয়ে গেল প্রধান শিক্ষকের ঘরের দিকে।
মঙ্গলে ঊষা বুধে পা
যথা খুশি তথা যা।
কথাখানা শোনা। সুখু তাই বেছে বেছে বুধের ভোরেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছে। যাবে গোপীনাথপুর, জমি রেজিস্ট্রি অফিস। পরনে ধোয়াকাচা ধপধপে শার্ট-ধুতি, গলায় টুকটুকে লাল গামছায় চোখে লাগা সবজে চেক, পায়ে ময়লা চপ্পল। মাটির কুঁড়েগুলোর মাঝ বরাবর বিছানো ভাঙাচোরা পথ বেয়ে পাকা রাস্তায় উঠে প্রথমে টেম্পো, তারপর খানিক হেঁটে গেলে সরকারি দপ্তর। সেইখানেই লেখাপড়া করে সুখু জমি দান করবে আজ। খুব দূরের পথ নয়, যানজট থাকলে বড়জোর চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ মিনিট লাগতে পারে, তবুও সাত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়েছে সে।
শাওনের আকাশ আজ কিছুটা ফর্সা। আপন খেয়ালেই প্রকৃতি জানান দিচ্ছে ক’টা দিন পর থেকে ভাদরের রোদ্দুর আদিগন্তে ছড়িয়ে পড়বে। মাটির দাওয়া নিকিয়ে আলপনা আঁকা হবে। রঙিন কাপড়চোপড় পরে মেয়েরা মাতবে নাচে-গানে, পুজোআচ্চায়। ঘরে-ঘরে আসবেন পয়মন্তী ভাদুরানি। সুখু একবার ফিরে তাকায় আজন্মের ঠাঁই ঘুপচি বাসাটার দিকে। বাউড়িদের তিন পুরুষকে পরম স্নেহে নিজের অন্দরে আশ্রয় দিয়েছে এই একচিলতে ঘর। চাল থেকে মাটির দেওয়াল খানিক মেরামতের জন্য আজ হাহাকার করছে। একটানা জল খেয়ে অভিমানে মুখ ফুলিয়েছে খড়ের ছাউনি, এই বুঝি খসে পড়বে সব দায় ভুলে! সুখু নিরুপায়। চালে হাত দিলেই গাদাখানেক খরচা। টাকার অঙ্ক ঠিক কতটা হতে পারে ভাবতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সুখু চোখ মেলে দেয় দূর আসমানে। প্রভাতী স্নিগ্ধতার পোশাক ত্যাগ করে দিনের প্রথম ভাগেই সূর্যের তাপ গনগনে হয়ে উঠেছে, যদিও গোটা বেলা পড়ে! খর তাপে ভেজা খড় যদি খানিক শুকোয়! রোদের ঝলকানি শুষে নিয়ে সুখু চোখ বুজে ফেলে। আলোকোজ্জ্বল গোলোকটি অবিলম্বে তার বন্ধ চোখের পাতায় স্থিরচিত্রের মতো বন্দি হয়। মানুষটা দেখে, আলোর চাকতির চারধারে পাক খাচ্ছে ছেলেবেলার স্বপ্নগুলো। তড়িঘড়ি পা বাড়ায় সে। দৈনন্দিন চিন্তাগুলো ভেসে উঠতে গিয়েও থিতিয়ে পড়ে অতলে, আঁধারে।
সেদিন শেষ বিকালে বুড়ো বটের চাতালে বসে জিরোবার সময় আমতা আমতা করে কথাখানা পাড়ে সুখু।
—চড়াইদিঘির জমিডা ইস্কুলের নামে লিইখ্যা দুব। রুখা মাটিতে ফসল হবেক লাই। তার চেইয়ে উহাদের কামে আসুক কেনে!
হাতেগোনা যে ক’জন ছেলেবুড়োর সঙ্গে সে সুখ-দুঃখের কথা ভাগ করে নিত্য, তারা ‘রে রে’ করে ওঠে। যেন সুখু নেহাতই বেকুব। হরিলাল আঙুল তুলে আজব স্বরে বলে, ‘কও কী বুড়া? জমিনডার ভাও কি মন্দ বটে? দান কইরল্যে উহারা তুমায় পূজবে কত!’
সুখুর কপালে ভাঁজ পড়ে। মানসম্মান বহু দূরের কথা, জমিটুকুর বদলে কোনও প্রত্যাশাই যে তার নেই। সে সংসারী মানুষ। ছেলে-মেয়ের বাপ। বউটা ছিল সাক্ষাৎ লক্ষ্মী প্রতিমা। বছর পাঁচেক আগে মাথাভরা সিঁদুর নিয়ে সগ্গে গিয়েছে সে। বউ বেঁচে থাকতে ‘খোলার জল মালায় মালার জল খোলায়’ করে দিব্যি কেটেছে। কাজ থেকে ফিরে মুড়ির বাটি হাতে দাওয়ায় বসে সুখ-দুঃখের দু’টি কথাতেই পরান জুড়াত সুখুর। মনের মাঝে অভাব এতখানি ঘাই মারত না। ইদানীং ঘরদোর আর টানে না। তবে মাতৃমুখী মেয়েটাকে দেখলে ততক্ষণাৎ নিজের কর্তব্যের কথা মনে পড়ে যায়। বুঁচি মায়ের মতোই লক্ষ্মীমন্ত। মাত্র উনিশেই যৎসামান্য জোগানে ঘর চালিয়ে নিতে পারে। চালেডালে, নুনে-ভাতে কখনও পান্তা-পেঁয়াজে বাপ-বেটির দিন গুজরান। থেকে থেকে সুখুর মনে হয়, মেয়েটাকে এবার পাত্রস্থ করতেই হবে। কিন্তু ঘরের অশান্তি মিটলে তবে না ঠান্ডা মাথায় একটা ছেলে খুঁজবে! অভাবের থেকে অশান্তি বড় বালাই। সুখু বাউড়ির ছেলে কাত্তিক বিয়ে করে ঘর ছেড়েছে আগেই। চার চারটে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা বাপ-বোনের খোঁজ নেয়নি। হালে তার নজর পড়েছে বাপের সম্পত্তির উপর। জমির টুকরোটার টানে দিনে-দুপুরে শকুনের মতো গ্রামে চক্কর কাটে ব্যাটা। এলোপাথাড়ি হাওয়া বওয়া উদাস বিকালে, ভর সন্ধ্যায় আকণ্ঠ পান করে এসে দাওয়ায় বসে দুলতে-দুলতে ঝিমধরা গলায় বলে, ‘কাজের কথা কান খুইল্যা শুন রে বাপ। জমিডা বেইচ্যা দে। উ পয়সা লিয়া শহরে চল লা কেনে! আছেডা কী গাঁয়ে? শহরে যেয়ে ভালো ছেইল্যার সাথে বুঁচির বিয়া দুব।’
ছেলের মুখ থেকে টাটকা লোভের সঙ্গে সস্তা পানীয়ের কটু গন্ধ বেরিয়ে পড়ে। প্রৌঢ় সুখুর গা গুলিয়ে ওয়াক উঠে আসে। সে হাঁ করে চেয়ে দেখে, ভোলাভালা ব্যাটাটার মুখেচোখে কেমন অচেনা ছাপ। শ্যামলা বদনে ছলচাতুরির উগ্র রং স্পষ্ট! যবে থেকে খাস কলকাতায় গিয়ে উঠেছে, তবে থেকেই কাতুর এই বদল। মাটির টান, রক্তের দাম সব ভুলে কেবল পয়সার পিছে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। শ্বশুরের হাত ধরে রঙের কারখানায় কাজ জুটিয়েছে, মুখে বড়বড় বুলি। সুখু ভালো করে জানে, জমি বিক্রি হলে বিক্রয়মূল্যটুকু হস্তগত করেই মুখ ফিরিয়ে নেবে কাতু। তারপর কে বাবা আর কে বোন! অনেক ভেবে তাই লোভের বস্তুটাকেই সরিয়ে দিতে চায় সুখু। কেউ বুঝুক না বুঝুক, তার প্রাণের কথা ধরতে পেরেছে মনোহর। ওই মানুষটার পেটে বিদ্যে আছে কিছু। চড়াইদিঘির স্কুলে সুখু আর মনোহর একইসঙ্গে নাম লিখিয়েছিল এককালে। সুখুর মাথা মন্দ ছিল না। কিন্তু তার কপালে জন্ম ইস্তক অন্নের অভাব। তিন ক্লাস পার হতে না হতেই স্কুলছুটের তকমা লেগে গেল গায়ে। বেচারা গাঁয়ের ছেলে গাঁয়েই ধরল দিনমজুরের কাজ। একসময় স্পঞ্জ লোহার কারখানাতে, অবৈধ কয়লা খাদানেও মজদুরি করেছে সুখেন। তখন যৌবন ছিল, দানবের মতো খাটতে পারত। উদয়াস্ত শ্রম দিয়েও কতদিন যে উপযুক্ত মজুরি পায়নি, শুকিয়ে থেকেছে, তার হিসেব লেখা নেই কোথাও। দিনে দিনে বাহুবল হ্রাস পেয়ে শরীর এখন জং ধরা যন্ত্র। জীবন দিয়ে সুখু বুঝেছে পেটে একটু বিদ্যে থাকলে জীবনটা এমন ঝরা পাতার মতো হতো না। খেতখামারে কাজের মাঝে আজও যখন দেখে কচি ছেলের দল বই বগলে ইস্কুল পানে ছুটছে তার মনের ভেতরটা শ্মশানের মতো খাঁ-খাঁ করে। ছেলেটাকেও সুখেন পড়াতে পারেনি। প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে বাপের মতো কাত্তিকও ‘স্কুলছুট’ হয়ে থেকেছে গোটা কৈশোর। যৌবনে পা দিয়ে সঙ্গদোষে বেছে নিয়েছে অন্যপথ। কপাল ছাড়া আজ আর কাউকেই সুখু বাউড়ি দোষ দেয় না। সে চায় দীপেন, কিশোর, সুকুমার, ফারুকদের ছেলেমেয়েগুলো অনেক অনেক পড়ালেখা শিখুক। স্কুল পেরিয়ে, কলেজ পেরিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াক। মানুষের মতো মানুষ হোক! আজকালকার বাচ্চারা স্কুলে গেলে একবেলা পেট ভরে খেতে পায়। সুখুদের সময় এমন ব্যবস্থা ছিল না। থাকলে অন্নের টানে জীবনে শিক্ষার আলো পৌঁছত ঠিক। খাবার জোটাতে জোটাতে মুখ থুবড়ে কালোয় হারাতে হতো না। টাকাপয়সার কথা তুলতেই এক ধমকে হরিলালকে চুপ করিয়ে দেয় মনোহর।
—কী বইল্যি? পয়সা! পয়সায় কি সব হয়? লিইখ্যাপড়া শিখলিনি, উহার ভাবনার কদর কী বুঝবি ব্যাটা?
হরি জোয়ান ছেলে। তার শিরায় শিরায় গরম রক্ত টগবগিয়ে ফুটছে। সে-ই বা ছাড়বে কেন? সে বলে, ‘পড়ালিইখ্যা শিখি লাই তো কী? পয়সা কি কিছু কম কামাই!’
তর্কাতর্কিতে চাতালের আড্ডাটাই ভেস্তে যায় সেদিন। রোদে-জলে, হিমে-হাওয়ায় সুখুর বহুকালের অভ্যাস। ইদানীং শরীরটা রেহাই চায়। সে ডাকে সুখু কর্ণপাত করে না মোটে। দৌড় থামার সময় আসেনি এখনও! আসলে সুখুর মতো খেটে খাওয়া মানুষরা চিরকালই পেটের দাসানুদাস। পেটের টানের কাছে দেহের ক্লান্তি অচিরেই মাথা নুইয়ে ফেলে। আরও জোরে দৌড়তে চায়। কিন্তু খাটতে জানলে কী? রোজ রোজ কাজ দিচ্ছে কে! কাজের বাজারে বছরভরই মন্দা। উপযুক্ত মরশুমে কাজ কামাই হলে সুখুর মনটা তাই খচখচ করে। আজ তার বিন্দুমাত্র গ্লানিবোধ নেই। আজ সে জেনেবুঝেই কাজে যায়নি। গোপীনাথপুরে না গিয়ে আজ সুখু ধরতেই পারত উল্টোপথ। পুকুর ভরাটের কাজে রোজগার হতো ভালো। ঘরে খানিক স্বস্তিও আসত। কিন্তু শান্তির মায়া পরশে অন্তরটা জুড়াত কি! ভাবতে-ভাবতে গভীর লম্বা শ্বাস ফেলে সুখু বড় রাস্তায় উঠে পড়ল। তার পঞ্চাশ পেরতে চলা সস্তা জীবনের অধরা সুখগুলো রুখা পথের উপর লাল রঙের ধুলোর মতো পাক খেতে খেতে শেষটায় মিলিয়ে গেল সময়ের গায়ে।
লাল হয়ে আসা কাগজের বাণ্ডিল হাতে ধরে সুখেন বাউড়ির দিকে তাকালেন সরকারি কর্মী পুরুষোত্তম। টেবিলের অপর প্রান্তে দাঁড়ানো মানুষটার কালো মুখে অনটনের ছাপ স্পষ্ট। কেবল কোটরে ঢোকা চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে। যেন এক অপার্থিব আলোর খোঁজ পেয়েছে ছাপোষা দৃষ্টি! গণিত অনুযায়ী তিন ডেসিমিল মানে তেরশো ছয় দশমিক আট বর্গফুট। সরকারি হিসাবে ওই জমির দাম প্রায় সাতষট্টি হাজার টাকা। বাজার দর লক্ষাধিক। ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ মানুষের কাছে হাতের মুঠোয় সোনার চাঁদের তুল্য বললেও অত্যুক্তি হয় না। আর সুখেন নির্বিকার চিত্তে ওই তিন ডেসিমিল জমি চড়াইদিঘির স্কুলের নামে লিখে দিতে চাইছে! কী ধাতু দিয়ে গড়া এই মানুষ!
—ভালো করে ভেবে দেখেছেন তো বিষয়টা? একবার লেখাপড়া হয়ে গেলে ওই তিন ডেসিমিল জমির উপর আপনার আর কোনও অধিকার থাকবে না। স্কুলের সম্পত্তি হয়ে যাবে ওটা। জমিটা বিক্রি করলে একসঙ্গে অনেকগুলো টাকা পেতেন কিন্তু!
সরকারি বাবুর কথায় সুখু মুচকি হেসে চুপ করে থাকে। চোখভরা বিস্ময় নিয়ে মানুষটাকে জরিপ করতে করতেই রেজিস্ট্রি অফিসে সারা হয়ে যায় জমি হস্তান্তরের কাজ। ইতিপূর্বেই জমিদানের চুক্তিপত্র স্কুলের প্রধান শিক্ষককে দিয়ে এসেছিল সুখু। দপ্তরের অন্য এক কর্মচারী জিজ্ঞাসা করেন, ‘সুখেনবাবু, জমিটা আপনি চড়াইদিঘির স্কুলকেই দিলেন কেন? অন্য কোনও কাজেও তো...’
মৃদু আপত্তি জানিয়ে সুখু বলে, ‘শিক্ষার কাজে দিলম বাবু। দুফুর রোদে বাচ্চাগুলো খাবার খায়। মনে ব্যথা লাগে। হামাদের সময় ইসব ছিল কই? একমুঠা অন্নের খোঁজে স্কুলছুট হইলাম! লিইখ্যাপড়া বন্ধ হইল। উহাদের খাওয়া হোক, পড়াও হোক।’
সামান্য একজন দিনমজুরের মুখে শিক্ষার কথা শুনে রেজিস্ট্রি অফিসের লোকজন মুগ্ধতায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
চড়াইদিঘির স্কুলের পাশে সুখু বাউড়ির জমিতে এখন বড় ছাউনি পড়েছে। স্কুলের বাচ্চারা ডাইনিং শেডে বসে শান্তিতে খাবার খায়। বাড়তি জায়গায় তৈরি হয়েছে ছোট একটি কিচেন-গার্ডেন। জলে-কাদায় গড়াগড়ি খেয়ে মহানন্দে সেখানে শাকসব্জি ফলায় পড়ুয়ারা। যাতায়াতের পথে মাঝেমধ্যে স্কুলের খবর জানতে আসে সুখেন বাউড়ি। দেখে, তার জ্ঞাতিদের জমির বুকে গড়ে ওঠা স্কুলটা ক্রমে যেন এক স্বতন্ত্র দেশ হয়ে উঠছে। মারামারি নেই, বিভেদ নেই, আছে কেবল প্রাণের ঘ্রাণ, শিক্ষার অমলিন স্পর্শ। পরম উৎসাহে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিশোরবয়স্ক প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে নিজেদের সঙ্গে সঙ্গেই খেয়াল রাখছে সহপাঠীদের। প্রয়োজনে নেতৃত্ব দিচ্ছে, আগলে রাখছে আবার পথও দেখাচ্ছে। পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি এইভাবেই একটি গাঁয়ের স্কুল অকৃত্রিম জীবনবোধের শিক্ষায় সত্যিকারের মানুষ গড়ে তুলছে। আনন্দের অশ্রুভারে সুখেন বাউড়ির দু’নয়ন ছলছল করে। মহাকালের দরবারে সে মনে মনে আর্জি জানায়, পরের জীবনে যেন এই আলোর অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত না হতে হয়।