যে কোনও ব্যবসায় শুভ ফল লাভ। বিশেষ কোনও ভুল বোঝাবুঝিতে পারিবারিক ক্ষেত্রে চাপ। অর্থপ্রাপ্তি হবে। ... বিশদ
‘টিক্ টিক্ চলে ঘড়ি, টিক্ টিক্ টিক্,
একটা ইঁদুর এল সে সময়ে ঠিক।’
ঘড়ি চলতে চলতে ইঁদুর এসে হাজির হয়েছিল সুকুমার রায়ের লেখায়। আপনার অভিজ্ঞতায় ইঁদুর নাও আসতে পারে। ঘড়ির শব্দে কখনও মেজাজ শরিফ হয়েছে, কখনও বা বিরক্ত হয়েছেন। ভাবুন তো, পরীক্ষার আগের অ্যালার্ম ক্লকের শব্দ। অথবা শীতের সকালে অফিস যাওয়ার তাড়ায় যখন ঘড়ি তারস্বরে চিৎকার করছে, তখন থাবড়া মেরে তাকে চুপ করিয়ে আবার পাশ ফিরে শোওয়া। দাদুর ঘরের বড় ঘড়িতে ঢং ঢং করে ন’টা বাজলেই খাবার টেবিলে হাজিরা দেওয়ার নিয়ম তো কয়েক বছর আগেও ছিল বিভিন্ন বাড়িতে। সে ঘড়ি খানিক ঐতিহ্য হারিয়েছে। এখন তো মোবাইলেই বন্দি গোটা বিশ্ব। স্মার্ট ওয়াচও হাতে শোভা পাচ্ছে। ফলে দেওয়াল ঘড়ি দেখে সময় মিলিয়ে নেওয়ার অভ্যেস খানিক ব্যাকফুটে। সেই দৈনন্দিন আবার ফিরিয়ে আনতে পারেন। বিশেষত বাড়ির ছোটদের ঘড়ি দেখা শেখানোর জন্য আদর্শ দেওয়ালে ঝোলানো নানা কায়দার ঘড়ি। ঠিক যেমন ভাবে আপনি ছোটবেলায় শিখেছিলেন, ওদেরও দিন এই সহজ পাঠ। নানা আকারের ঘড়ি দিয়ে বাড়ি সাজিয়ে ফেলুন। বাঙালি উৎসবপ্রিয়। হুজুগে তো বটেই। ঘড়ির ঘনঘটায় বছরের শেষভাগে আপনার বাড়িকে খানিক নতুন রূপ দিতেই পারেন।
ঘড়ি দিয়ে ঘর সাজানোর কথা ভাবলে প্রথমেই কোন ঘরে বা কোন দেওয়ালে ঘড়ি রাখবেন, সেটা ঠিক করে নিন। দেওয়ালের মাপ অনুযায়ী ঘড়ি পছন্দ করুন। দেওয়াল ফাঁকা থাকলে একটা বড় ঘড়িতেই কেল্লা ফতে। বাইরে থেকে আসা অতিথিদের চোখ আটকে থাকবে। বিশেষত বসার জায়গায় এমন ঘড়ির কদর আছে। দেওয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কনট্রাস্ট রাখুন ঘড়ির রং। বেডরুম বা স্টাডির ক্ষেত্রে বড় ঘড়ি ভালো লাগবে না। কারণ এই দুটো ঘরই একান্তে সময় কাটানোর জন্য আদর্শ। তাই ছোট অথচ স্মার্ট ঘড়ি মানাবে ভালো।
ইন্টিরিয়র ডেকরেশন নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন বিদিশা বসু। ঘড়ি তাঁর কাছে প্রয়োজন এবং স্মার্টনেসের মেলবেন্ধন। বললেন, ‘ঘড়ি প্রত্যেকের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু ব্যবহার না করে আমরা সাজানোর কথাও ভাবতে পারি। সাধারণত প্রত্যেকের বাড়িতে একটা করে পুরনো ঘড়ি থাকে। কাঠের ছোট দম দেওয়া ঘড়ি। অথবা কারও হয়তো ছোট স্টিলের ঘড়ি রয়েছে। স্কুলের দিনে কর্কশ আওয়াজে ঘুম ভাঙত স্টিলের অ্যালার্ম ক্লকে। সেগুলো নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করতে ভালো লাগে। অথচ আমরা পুরনো জিনিস নতুন করে ব্যবহারের কথা ভাবি না। পুরনো সেই ঘড়ি নতুন করে সাজালে ফেলে আসা শৈশবকে আবার ফিরে পেতে পারেন নতুন মডেলে। সেটি স্টাডি টেবিল বা বুক শেলফ অথবা সেন্টার টেবিলে রাখুন। পাশে একটা ছোট মানিপ্ল্যান্ট রাখুন। দেখতেও সুন্দর, কাজেও লাগবে।’
জীবনটা আসলে সময়ে বাঁধা। আপনার গৃহকোণে পা রাখার মুহূর্তেই সে কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন অতিথিদের। আবার নিজেদের প্রাত্যহিকেও সময় বেঁধে চলার অভ্যেস করুন শুরু থেকেই। সে কারণে সদর দরজার পাশে স্ট্যান্ডে ঝোলানো পুরনো দিনের কাঠের ঘড়ি রাখতে পারেন। এতে পুরনো কলকাতার আমেজ ধরা পড়বে আপনার হাল ফ্যাশনের ফ্ল্যাটেও। রান্নাঘরে দিনের অনেকটা সময় কাটান বাড়ির গিন্নিরা। বাড়ির পুরুষ সদস্যরাও কোনও কোনও দিন বিশেষ কিছু পদ রান্না করেন। কোনও কোনও সংসারে এই ভূমিকা বদলও হয় বটে। তাই সকলের ক্ষেত্রেই সময় মেনে চলা জরুরি। রান্নাঘরের ঘড়িতে নান্দনিক স্পর্শ দিতে পারেন। হাতে তৈরি কাঠের ফ্রেমে পারিবারিক ছবি লাগান। এতে ব্যাটারি সংযোগ করে ঘড়ি তৈরি করতে পারেন। এক থেকে ১২ পর্যন্ত সংখ্যা পর পর লেখা ঘড়ি এখন পুরনো হয়ে গিয়েছে। কালো বা সাদা অংশে শুধু দুটো কাঁটার চলাচল ঘড়িকে স্মার্ট লুক দেয়। বেডরুমে ব্যবহার করতে পারেন এমন ঘড়ি।
ঘড়ির সঙ্গে ছবির সামঞ্জস্য রেখে বাড়ি সাজানোর পরামর্শ দিলেন বিদিশা। তাঁর কথায়, ‘দম দেওয়া ঘড়ি দেওয়ালে সাজাতে পারেন। পাশে পুরনো ছবি দিয়ে সাজান। সাদা-কালো ছবি। আবার কিছু আধুনিক ঘড়িও দারুণ ওয়াল ডেকর হতে পারে। যেমন কাক্কু ওয়াচ। একটা বাড়ি থেকে ছোট্ট কোকিল বেরিয়ে আওয়াজ করে আবার ঢুকে যায়। কটেজ স্টাইলের ঘড়ির পাশ দিয়ে লতানো গাছ রাখুন।’ বসার ঘরে একটা রট আয়রন বা কাঠের বাহারি তাক তৈরি করে তার উপর মাছ, পেঁচা বা সানফ্লাওয়ার মোটিফের ট্রেন্ডি ঘড়ি দিয়েও সাজাতে পারেন। ছোটদের ঘর সাজানোর সময় বিভিন্ন কার্টুন চরিত্রদের নিয়ে তৈরি ঘড়ির কথা মাথায় রাখুন। আসলে কম জিনিসেই গুছিয়ে রাখতে পারেন সাধের বাসা। এতে আপনার নান্দনিকতাই প্রকাশ পাবে।
বংশপরম্পরায় কত কিছুই তো উত্তর প্রজন্ম পেতে অভ্যস্ত। সেই সূত্রে কারও বাড়িতে যদি গ্র্যান্ডফাদার্স ক্লক থাকে, তাহলে আলাদা করে আর কিছু দরকার হয় না। ওটাই অ্যান্টিক পিস। বলা ভালো, মাস্টারপিস। এমন ঘড়ির সঙ্গে পুরনো আমলের ছবি দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন। ঘড়ি দিয়ে ঘরকে নতুন লুক দেওয়ার আগে জরুরি একটি বিষয় মনে করিয়ে দিলেন বিদিশা। ‘ঘড়ি সব সময় চোখের নাগালে রাখুন। আমরা সাধারণত উপরে রাখি। সেটা দেখতে ভালো লাগে না। প্লাস্টিকের হোক বা কাঠের ঘড়ি চোখের আন্দাজে রাখুন।’ রান্নাঘর, বেডরুমে ঘড়ির পাশে নিজস্ব ছবি, বেড়াতে যাওয়ার ছবি লাগান। ঘড়ি দেওয়ালকে সুন্দর করে। তার পাশে ছবি, গাছ অন্দরসজ্জায় আলাদা মাত্রা যোগ করে।
একই ঘরে একাধিক ঘড়ি ব্যবহার করলে তা অতিরিক্ত লাগে। ফলে সাজাতে গিয়ে ঘড়ির বাড়াবাড়ি নিষ্প্রয়োজন। ঘড়িও যে অন্দরসজ্জার উপাদান হতে পারে, তা ভেবে দেখেন না অনেকেই। এবার কম খরচে সেই সাধটুকু পূরণ করার পালা।